পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
কথায় বলে, History repeats itself, অর্থাৎ ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটে। কথাটি সব সময় সর্বক্ষেত্রে খাটে না। কিন্তু অনেক সময় অনেক ক্ষেত্রেই খাটে। গত ২২ সেপ্টেম্বর মহানগরী নাট্যমঞ্চে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য ঘোষণা উপলক্ষে যে দৃশ্য দেখা গেল সেই দৃশ্য দেখে আবার নতুন করে মনে হচ্ছে যে, ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটছে। ২৩ সেপ্টেম্বর রবিবার ফেসবুকে অসংখ্য ছবি এবং ক্যাপশন দেখা গেল। ঐসব ছবিতে দেখানো হয়েছে যে, বৃহত্তর জাতীয় ঐক্যের ঘোষণা দেওয়ার জন্য মহানগরী নাট্যমঞ্চে যে সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছিল ঐ সমাবেশের মঞ্চে একদিকে যেমন ড. কামাল হোসেন, আসম আব্দুর রব, মান্না প্রমুখ ছিলেন তেমনি সেই একই মঞ্চে উপবিষ্ট ছিলেন জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম নেতা এবং হেফাজতে ইসলাম নেতা মওলানা নূর মোহাম্মদ কাশেমী। বৃহত্তর জাতীয় ঐক্যের ঘোষণা পাঠ করেছেন ইঞ্জিনিয়ার শহিদুল্লাহ। তিনি তেল ও গ্যাস রক্ষা কমিটির চেয়ারম্যান। এই কমিটির প্রধান নেতা হলেন অধ্যাপক আনু মোহাম্মদ। এরা কমিউনিস্ট হিসেবেই পরিচিত। এসব দেখে অনেকের খটকা লেগেছে। কিন্তু তাদের খটকা লাগার কোনোই কারণ নেই। কারণ তারা ১৯৫৪ সালের অবিভক্ত পাকিস্তানের রাজনীতি দেখেননি। তারা দেখেননি ষাটের দশকের পাকিস্তানি রাজনীতি। যদি দেখতেন তাহলে তারা স্মরণ করতেন মার্ক টোয়েনের সেই অবিস্মণীয় উক্তি, Truth is stranger than fiction অর্থাৎ সত্য কল্প কাহিনীকেও হার মানায়। দেশে এবং বিদেশের রাজনীতি যারা পর্যবেক্ষণ করেন তারা দুটি শব্দবন্ধ প্রায়ই লক্ষ করেন। সেটি হলো strange bed fellows অর্থাৎ অদ্ভুদ শয্যাসঙ্গী। এই যে একটু আগে বললাম, পাকিস্তান আমলে আমরা এই ধরনের ঘটনা ঘটতে দেখেছি। আবার আজও দেখলাম। পাকিস্তান আমলের ঘটনাবলী কিছুক্ষণ পরে বলবো। তার আগে সেদিন মহানগরী নাট্যমঞ্চে আপনাদের নজরে আর কী কী এসেছে সেগুলোও বলছি।
এদেশের সাধারণ মানুষ এবং পত্রপত্রিকার পাঠকবৃন্দ প্রথমে দেখলেন ২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাস, যখন তিনটি দল মিলে যুক্তফ্রন্ট গঠিত হলো। দল তিনটি হলো বি. চৌধুরীর বিকল্প ধারা, রবের জেএসডি এবং মান্নার নাগরিক ঐক্য। তারপরে বৃহত্তর ঐক্যের কথা শুনলেও তার কোনো অগ্রগতি দেখা যায়নি। দীর্ঘ ৮ মাস পর ২০১৮ সালের ১৫ অগাস্ট যুক্তফ্রন্ট এবং ড. কামাল হোসেনের গণফোরাম একযোগে কাজ করতে রাজি হয় এবং সেই মর্মে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়া হয়। এরপর গত ২৮ অগাস্ট যুক্তফ্রন্ট এবং গণফোরামের ঐক্যের আনুষ্ঠানিক রূপ দেওয়া হয়। কিন্তু দেশের কোটি কোটি মানুষের মনে প্রশ্ন ছিল, বিএনপির খবর কী? কামাল হোসেন ও বি. চৌধুরীরা কি বিএনপির কাছে যাচ্ছে? নাকি বিএনপিই তাদের কাছে যাচ্ছে? যে যার কাছেই যাক না কেন, কামাল হোসেন ও বি. চৌধুরীর সাথে বিএনপির একটি ঐক্য হোক সেটি মানুষ চাচ্ছিল। সেই চাওয়ার ভিত্তি কিন্তু অন্য কিছু ছিল না। ছিল, বর্তমান সংসদ বাতিল করে একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন। এই দুটোই জনগণের প্রধান দাবি বা আকাক্সক্ষা ছিল। সাথে আর যে দুই একটি জনদাবি ছিল সেগুলো হলো, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন এবং নির্বাচনের আগে বিচারিক ক্ষমতা দিয়ে সেনাবাহিনী মোতায়েন। জনগণের এই আকাক্সক্ষা পূরণ হচ্ছিলো না।
অবশেষে গত ২২ সেপ্টেম্বর সেই জনআকাক্সক্ষা পূরণ হলো। আর পূরণ হলো এমনভাবে যেটা তারা প্রত্যাশাও করেনি। মঞ্চে দেখা গেল বিএনপির ৪ স্টলওয়ার্টকে। এরা হলেন মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্ট্যান্ডিং কমিটির মেম্বার এবং সাবেক মন্ত্রী ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, স্ট্যান্ডিং কমিটির মেম্বার এবং সাবেক মন্ত্রী ব্যরিস্টার মওদূদ আহমেদ এবং স্ট্যান্ডিং কমিটির মেম্বার ও সাবেক মন্ত্রী মঈন খান। সম্ভবত এ পর্যন্তই জনগণের প্রত্যাশা ছিল।
দুই
কিন্তু বাস্তবে দেখা গেল এর আরো অনেক বেশি কিছু। মহানগরী নাট্যমঞ্চের ঐ সভায় শুধু মাত্র বিএনপিই যোগদান করেনি, খেলাফত মজলিস এবং জমিয়তে উলামায়ে ইসলামও মিছিল ব্যানার ও ফেস্টুনসহ যোগদান করেছে। জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) মহাসচিব মোস্তফা জামাল হায়দার, জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার সদস্য সচিব আ ব ম মোস্তফা আমিন, বিজেপি চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ, এনপিপি চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদীন, নিতাই রায় চৌধুরী প্রমুখ। এছাড়া খেলাফত মজলিস নেতা অধ্যাপক আহমেদ আব্দুল কাদেরের নেতৃত্বে একটি ছোট মিছিল ব্যানার ফেস্টুনসহ ঐ মিটিংয়ে হাজির হয়েছে। জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম এবং খেলাফত মজলিসের ঐ সভায় যোগদান এটা প্রমাণ করে যে, ২০ দলীয় জোট থেকে আলাদাভাবে শুধু মাত্র বিএনপিই জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ায় শামিল হয় নাই, ২০ দলের অন্যান্য শরিক দলও এই প্রক্রিয়ায় শামিল হয়েছে। এই সভায় উপস্থিত ছিলেন এবং বক্তব্য রাখেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন, গণসংহতির প্রধান সমন্বয়ক বামপন্থী জোনায়েদ সাকী। আরো উপস্থিত ছিলেন, গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি ড. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি সুলতান মোহাম্মদ মনসুর, মুক্তিযোদ্ধা মোস্তফা মহসিন মন্টু, কাজী জাফরপন্থী জাতীয় পার্টির মহাসচিব মোস্তফা জামাল হায়দার, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ, গণ দলের সভাপতি এটিএম গোলাম মওলা চৌধুরী, জাগপার সাধারণ সম্পাদক লুৎফর রহমান, এনপিপির চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, গণ দলের মহাসচিব আবু সৈয়দ প্রমুখ। যারা উপস্থিত ছিলেন তাদের এই লম্বা তালিকা এই বিষয়টিই প্রমাণ করার জন্য দিলাম যে, শুধুমাত্র বিএনপিই নয়, ২০ দলীয় জোটের প্রায় সমস্ত শরিক দল এই বৃহত্তর ঐক্যে শরিক হয়েছেন। ফেসবুকে যারা বিস্মিত হয়ে বলেছেন যে, এখানে বাম, ডান, মধ্যপন্থী, কট্টরপন্থী ও ইসলামপন্থী সকলের সমন্বয় ঘটেছে তারা ঠিকই বলেছেন। সেই সাথে আমি এটাও বলছি যে, এই যে সব দলের সমন্বয়, এটিও বাংলাদেশ এবং পাকিস্তানের ইতিহাসে কোনো বিরল ঘটনা নয়। সেই সাথে আর একটি কথা বলতে চাচ্ছি যে, এই ঘটনা অত্যন্ত ইতিবাচক।
দৈনিক ইনকিলাব বলেছে যে, একমাত্র সরকারপন্থী ছাড়া অবশিষ্ট সমস্ত রাজনৈতিক দল ও নেতৃবৃন্দের এটি ছিল একটি মিলন মেলা। কিন্তু সেই মিলন মেলার উদ্দেশ্য কী? জাতিকে মহাসংকট থেকে উদ্ধার করা। সেই মহাসংকট হলো নিবার্সিত গণতন্ত্রকে পুনরুদ্ধার করা, হরণ করা ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনা, নির্বাচিত কর্তৃত্ববাদী শাসনের অবসান এবং বাংলাদেশকে লুণ্ঠন, চুরি ও দুর্বৃত্তায়নের চারণ ভূমি হওয়া থেকে রক্ষা করা। এটি আজ পরিষ্কার হয়ে গেছে যে, একটি রাজনৈতিক দল বা একটি রাজনৈতিক গোষ্ঠি এই দুঃশাসনের কবল থেকে দেশকে উদ্ধার করতে পারবে না। অতীতেও গণতন্ত্রকামীরা একনায়কতন্ত্রের কবজা থেকে দেশকে মুক্ত করতে পারেনি। তাই দলমত, আদর্শ নির্বিশেষে একটি ন্যূন্যতম কর্মসূচির ভিত্তিতে সমস্ত রাজনৈতিক দল, নেতা ও কর্মী তথা সমগ্র দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধ করা এবং গণতন্ত্র বিরোধী, গণ বিরোধী দুঃশাসনের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক ও নিয়মতান্ত্রিকভাবে লড়াই করা। এটি নতুন কোনো ঘটনা নয়। ৫০ ও ৬০ এর দশকে আমরা যখন অবিভক্ত পাকিস্তানের অংশ ছিলাম তখনও আমরা নুরুল আমিন বা আইয়ূব খানের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়ে রাজনৈতিক লড়াই চালিয়ে ছিলাম। তেমনি দুই একটি ঘটনা এখন বিবৃত করছি।
তিন
১৯৫৪ সালে তৎকালীন পূর্ব বাংলায় ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগের বিরুদ্ধে ৫টি দলের সমন্বয়ে যুক্তফ্রন্ট গঠিত হয়। এই দলগুলি হলো: সোহরাওয়ার্দী ও মওলানা ভাসানীর নেতৃত্বাধীন আওয়ামী মুসলিম লীগ (আওয়ামী মুসলিম লীগ থেকে তখনও মুসলিম শব্দটি বাদ দেওয়া হয়নি), শেরে বাংলা এ. কে ফজলুল হকের নেতৃত্বাধীন কৃষক-শ্রমিক পার্টি, মওলানা আতাহার আলী খানের নেতৃত্বাধীন নেজামে ইসলাম পার্টি, অলি আহাদ এবং মাহমুদ আলীর নেতৃত্বাধীন গণতান্ত্রিক পার্টি এবং অবিভক্ত বাংলার মুসলিম লীগের জেনারেল সেক্রেটারি সুপন্ডিত আবুল হাশিমের নেতৃত্বাধীন খেলাফতে রব্বানী পার্টি। এই পাঁচটি দল মিলে যুক্তফ্রন্ট গঠিত হয় এবং ১৯৫৪ সালের প্রাদেশিক সাধারণ নির্বাচনে মুখ্যমন্ত্রী নুরুল আমীনের নেতৃত্বাধীন মুসলিম লীগ ধরাশায়ী হয়।
১৯৫৮ সালে গণতন্ত্রের কবর রচনা করে পাকিস্তানের রাজনৈতিক সরকারের নিকট থেকে ক্ষমতা ছিনিয়ে নেন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল মোহাম্মদ আইয়ূব খান। ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত তিনি ক্ষমতায় ছিলেন। আইয়ূব খানের একনায়কতন্ত্র থেকে পাকিস্তানকে বের করে আনা এবং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য সারা পাকিস্তান ভিত্তিতে অন্তত ৪ বার ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা চালানো হয়। ১৯৬২ সালে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য গঠিত হয় ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক ফ্রন্ট বা এনডিএফ। এর নেতৃত্বে বসানো হয় নিখিল পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সভাপতি হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীকে। পশ্চিম পাকিস্তান এনডিএফের প্রধান হন নবাবজাদা নসরুল্লাহ খান। ১৯৬৪ সালে গঠিত হয় সম্মিলিত বিরোধী দল বা কপ। ১৯৬৫ সালে মৌলিক গণতন্ত্রের অধীনে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই নির্বাচনে বিরোধী দল অর্থাৎ কপের তরফ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হয় পাকিস্তানের স্রষ্টা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর ভগ্নি ফাতেমা জিন্নাহকে। যেসব দল নিয়ে কপ গঠিত হয় সেসব দল হলো: খাজা নাজিমুদ্দিন এবং মিয়া মমতাজ দৌলতনার নেতৃত্বাধীন কাউন্সিল মুসলিম লীগ, শেখ মুজিবের নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ, মওলানা ভাসানীর নেতৃত্বাধীন ন্যাপ, ওয়ালী খানের নেতৃত্বাধীন উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ ন্যাপ, সাবেক প্রধানমন্ত্রী চৌধুরী মোহাম্মদ আলী এবং ফরিদ আহমেদের নেতৃত্বাধীন নেজামে ইসলাম পার্টি এবং মওলানা আবুল আলা মওদূদীর নেতৃত্বাধীন জামায়াতে ইসলামী। এছাড়া বিভিন্ন সময় যে এনডিএফ, পিডিএম বা ডাক গঠিত হয় সেগুলোতেও ছিল এসব রাজনৈতিক দলই।
ওপরে দেখা যাচ্ছে যে শেখ মুজিব এবং আওয়ামী লীগ অতীতে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য মওলানা মওদূদীর জামায়াতে ইসলামী, মওলানা ফরিদ আহমেদের নেতৃত্বাধীন নেজামে ইসলাম এবং আল্লামা আবুল হাশিমের নেতৃত্বাধীন খেলাফতে রব্বানী পার্টির সাথেও জোট বেঁধেছিলেন। আজ সেই একই গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ড. কামাল হোসেন ও বিএনপি যদি খেলাফত মজলিশ, জময়িতে উলামায়ে ইসলাম এবং বামপন্থী দলগুলোর সাথে জোট গঠন করেন তাহলে দোষ কোথায়? আওয়ামী লীগ ইসলামিক পার্টিদের সাথে জোট করলে সেটি জায়েজ হয়, আর বিএনপি বা কামাল হোসেন তাদের সাথে জোট করলে নাজায়েজ হয়? কী অদ্ভুত যুক্তি! আসন্ন নির্বাচনে কামাল হোসেন, বি. চৌধুরী এবং বিএনপির নেতৃত্বে এই ২০/২৫টি দল আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে নির্বাচনে অবতীর্ণ হবে। যদি সেই নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ হয় তাহলে আজ আমি ঘোষণা করছি যে, আওয়ামী লীগ বিরোধী ঐ জোট অকল্পনীয় ভোটে বিজয়ী হবে।
চার
বৃহত্তর ঐক্য জোটের একটি কৌশলগত দিক আছে। আওয়ামী সরকার এতদিন বিএনপি এবং সেই সুবাদে ২০ দলীয় জোটকে ঢালাওভাবে স্বাধীনতা বিরোধী, মৌলবাদী ও পাকিস্তানের দালাল বলে অনবরত গালাগালি করে আসছে। তাদের এই নিরন্তর বৈরী প্রচারণার ফলে খুব অল্প করে হলেও কিছু সংখ্যক মানুষ বিভ্রান্ত হয়েছেন। কিন্তু এখন আর সেটি বলে আওয়ামী লীগ পার পাবে না। কারণ ড. কামাল হোসেন স্বয়ং ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ সহচর। বাংলাদেশের সংবিধানের তিনি অন্যতম প্রণেতা। সারা জীবন তিনি ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতি করেছেন এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনার জয়গান গেয়েছেন। এই জোটে আরো আছেন আ স ম আব্দুর রব, যিনি ১৯৭১ সালের ৩ জানুয়ারি স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেছিলেন। ড. কামাল হোসেনের সাথে আছেন মোস্তফা মহসিন মন্টু এবং ডাকসুর সাবেক ভিপি সুলতান মোহাম্মদ মনসুর। মন্টু এবং সুলতান মনসুর দুই বীর মুক্তিযোদ্ধা। মাহমুদুর রহমান মান্না স্বাধীনতার পূর্বে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের নেতা ছিলেন এবং ঐ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ইউনিয়ন বা চাকসুর জিএস বা সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। মান্না ডাকসুর দুই বারের নির্বাচিত ভিপি ছিলেন। এছাড়া তিনি বেশ কিছুদিন আওয়ামী লীগের সাংগঠিনক সম্পাদক ছিলেন। ঐক্য প্রক্রিয়ায় আরো আছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, যিনি বিলাতে ডাক্তারি পড়া শেষ করে মুক্তিযুদ্ধে যোগদানের জন্য সুদূর লন্ডন থেকে ভারতে এসেছিলেন। তারপর দেশ স্বাধীন ও মুক্ত হলে তিনি বীরের বেশে ঢাকা আসেন। আরো আছেন বামপন্থী জুনায়েদ সাকি এবং ইঞ্জিনিয়ার শহিদুল্লাহ। এদেরকে আর যাই বলা হোক না কেন, রাজাকার, আলবদর, মৌলবাদী এবং স্বাধীনতা বিরোধী বলা যাবে না।
অনেকে আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন যে জাতীয় ঐক্যের এই মঞ্চ থেকে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি উত্থাপন করা যাবে না। কিন্তু সেই আশঙ্কাও গত শনিবার ভ্রান্ত প্রমাণিত হয়েছে। বিএনপির নেতৃবৃন্দ প্রত্যেকেই বেগম জিয়ার মামলাকে মিথ্যা মামলা বলেছেন এবং অনতিবিলম্বে তার শর্তহীন মুক্তি দাবি করেছেন। নাগরিক ঐক্যের নেতা মাহমুদুর রহমান মান্না তার বক্তৃতায় বেগম খালেদা জিয়ার মামলাকে মিথ্যা মামলা বলেছেন এবং অবিলম্বে তার নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করেছেন। এছাড়াও সভার মধ্যে মুহুর্মুহু বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে স্লোগান দেওয়া হয়। সুতরাং যারা ধারণা করেছিলেন যে, বেগম জিয়ার মুক্তির দাবিকে বিসর্জন দিয়ে বিএনপি এই ঐক্য প্রক্রিয়ায় শামিল হচ্ছে তাদের ধারণা ভ্রান্ত প্রমাণিত হয়েছে।
সব কিছু মিলিয়ে বলা যায় যে, শনিবার যে বৃহত্তর জোট গঠিত হয়েছে সেটি গঠিত হয়েছে ১৯৫৪ সালে নুরুল আমিন সরকারের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ ও ফজলুল হকের কৃষক-শ্রমিক পার্টিসহ ৫ দল যে যুক্তফ্রন্ট গঠন করেছিল সেই যুক্তফ্রন্টের আদলেই। আগামী দিন যতই এগিয়ে আসবে ততই নতুন আশাবাদ সৃষ্টি হবে। ততই এই জোটের নেতা কর্মীরা সমস্বরে স্লোগান দেবেন,
ঐ নতুনে কেতন ওড়ে
কাল বোশেখীর ঝড়ে
তোরা সব জয়ধ্বনি কর।
[email protected]
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।