Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

পোশাকপণ্য রফতানির সুযোগ কাজে লাগাতে হবে

| প্রকাশের সময় : ১১ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ১২:০৫ এএম

চীনা পণ্যের ওপর দ্বিতীয় দফা বর্ধিত শুল্ক আরোপ করতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। এই দফায় প্রায় ২০ হাজার কোটি ডলার মূল্যের পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপ করা হতে পারে। যে কোনো সময় এ ব্যাপারে ঘোষণা আসতে পারে। ইতোপূর্বে পাঁচ হাজার কোটি ডলার মূল্যের চীনা পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে দেশটি। পর্যায়ক্রমে প্রায় সকল চীনা পণ্যে শুল্ক বসানোর পরিকল্পনা রয়েছে তার। উচ্চ শুল্ক আরোপের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে চীনা পণ্যের প্রবেশ ও প্রাধান্য কমানোর এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে চীনও পাল্টা ব্যবস্থা নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে একে চীন-মার্কিন বাণিজ্যযুদ্ধ হিসাবে অভিহিত করা হচ্ছে। এটা ঠিক, বর্ধিত শুল্ক আরোপের ফলে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে চীনা পণ্যের প্রবাহ কমবে এবং প্রতিযোগী দেশগুলোর পণ্য রফতানীর সুযোগ বাড়বে। এই সুযোগ যেসব দেশের বাড়তে পারে, তার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। যুক্তরাষ্ট্র পোশাকপণ্যের একটা বড় বাজার। সেখানে প্রতিবছর প্রায় ১১ দশমিক ৪০ বিলিয়ন ডলার মূল্যের পোশাকপণ্য রফতানি করে চীন। বাংলাদেশের পোশাকপণ্যেরও অন্যতম বড় বাজার দেশটি। সেখানে বাংলাদেশ প্রতিবছর প্রায় ৫ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলারের পোশাকপণ্য রফতানী করে। তবে পোশাকপণ্য রফতানিতে চীন ও বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে আছে ভিয়েতনাম। ভিয়েতনাম সেখানে প্রায় ১১ দশমিক ৫০ বিলিয়ন ডলারের পোশাকপণ্য রফতানি করে। পর্যবেক্ষকদের মতে, চীন-মার্কিন বাণিজ্যযুদ্ধের এই পটপ্রেক্ষায় যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের পোশাকপণ্যের রফতানি বৃদ্ধির ব্যাপক সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশের রফতানি আয়ের সিংহভাগ আসে পোশাকপণ্য রফতানি থেকে। ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে রফতানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৯ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে ৩২ হাজার ৬৮৯ কোটি ডলার আসবে পোশাক খাত থেকে, যা মোট রফতানি আয়ের ৮৩ দশমিক ৮২ শতাংশ। গত বছর এখাত থেকে এসেছে ৮৩ দশমিক ৫ শতাংশ।
বাংলাদেশের পোশাকপণ্যের দুটি বড় বাজারের একটি যুক্তরাষ্ট্রে রফতানি বৃদ্ধির যে সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে তা কাজে লাগাতে পারলে এখাতের রফতানি আয় বর্তমান অপেক্ষা আরো বাড়বে, তাতে সন্দেহ নেই। পোশাক শিল্প ও রফতানির সঙ্গে যারা জড়িত তারাও এমনটাই প্রত্যাশা করছেন। এব্যাপারে ইতিবাচক আলামতও লক্ষ্যণীয়। যুক্তরাষ্ট্রের পোশাক তৈরি ও বিক্রেতাদের সংগঠন ইউএস ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রিজ এসোসিয়েশনের এক জরিপ প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, চীন-মার্কিন বাণিজ্যযুদ্ধের প্রেক্ষিতে জরিপে অংশ গ্রহণকারীদের ৬৭ শতাংশই মনে করেন, আগামী দু’বছর চীনা পোশাকপণ্যের আমদানি কমে যাবে, আর বাংলাদেশের পোশাকপণ্যের আমদানি রেকর্ড মাত্রায় বাড়বে। জরিপ প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাশন শিল্পগুলোতে পোশাক সরবরাহকারী দেশের তালিকায় গত বছর বাংলাদেশের অবস্থান ছিল সপ্তম, আর এ বছর পঞ্চম। জরিপে অংশগ্রহণকারীদের অনেকেই বাংলাদেশকে চীনের বিকল্প হিসাবে বাংলাদেশ থেকে আমদানি বাড়ানোর আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। জরিপে অংশগ্রহণকারীদের মতে, বাংলাদেশের পোশাকপণ্যের আমদানি বাড়বে এবং তা ২০১৭ সালের তুলনায় ৩২ শতাংশ বেশি হতে পারে। অপর এক খবরে জানা গেছে, ভারত ৩০০টিরও বেশী চীনা পোশাকপণ্যে আমদানিশুল্ক ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২০ শতাংশ করেছে। চীনা পোশাকপণ্যের আমদানি নিয়ন্ত্রণই এর লক্ষ্য। ভারতের বাজারে চীনা পোশাকপণ্যের আমদানি কমলে সঙ্গতকারণেই সেখানে অন্যান্য দেশের রফতানি বাড়বে। ভারত যেসব দেশ থেকে পোশাকপণ্য আমদানি করে, বাংলাদেশ তার মধ্যে একটি। ফলে ভারতে বাংলাদেশের পোশাকপণ্যের রফতানিও এর ফলে বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
চীনা-মার্কিন বাণিজ্যযুদ্ধ ও চীনা-ভারত বাণিজ্যদ্ব›দ্ব ওই দুটি দেশে বাংলাদেশের পোশাকপণ্যের রফতানি বৃদ্ধির যে সম্ভাবনা ও সুযোগ সৃষ্টি করেছে, অবশ্যই তা কাজে লাগাতে হবে। এ জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে, সক্ষমতা বাড়াতে হবে, শিল্পে শৃংখলা সুরক্ষা করতে হবে, পরিবেশ স্থিতিশীল রাখতে হবে। এই সঙ্গে রফতানি বাড়ানোর ক্ষেত্রে বিশেষ উদ্যোগ নিতে হবে। বিজিএমইএ ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে গোটা বিষয়টি নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে, উপযুক্ত সিদ্ধান্ত ও পদক্ষেপ নিতে হবে। লক্ষ্য কেবল শূণ্যস্থান পূরণ করা হলে চলবে না। পারসুয়েশনও অব্যাহত রাখতে হবে যাতে বর্ধমান বাজার স্থায়ীভাবে ধরে রাখা সম্ভব হয়। মনে রাখতে হবে, প্রতিযোগীর সংখ্যা কিন্তু কম নেই। তারাও সুযোগটা তাদের অনুকূলে কাজে লাগানোর চেষ্টা করছে। ভিয়েতনাম পোশাকশিল্প ও পোশাকপণ্য রফতানিতে যে অগ্রগতি অর্জন করেছে তা বিস্ময়কর। এরকম আরো দেশ আছে যারা এই শিল্প ও পণ্য রফতানিতে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে অবশ্যই আমাদের প্রতিযোগিতা-সক্ষমতা বাড়াতে হবে। আর একটি বিষয়ও আমাদের খেয়াল রাখতে হবে, সেটি হলো, আমাদের পোশাকপণ্যের দাম কম হওয়ার কারণেই আমরা বাজার ধরে রাখতে সক্ষম হচ্ছি। এতে আমরা আর্থিকভাবে বঞ্চিত হচ্ছি। গত ২০ বছরে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকপণ্যের দাম ৪০ শতাংশ কমেছে। এতে শিল্পমালিকদেরই ক্ষতি হয়নি, পোশাককর্মীরাও কাম্য সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়েছে। তাই পোশাকপণ্যের দাম যাতে বাড়ানো যায় সে জন্যও চেষ্টা-তদবির অব্যাহত রাখতে হবে। গত বছর পোশাকপণ্য রফতানিতে ৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। আশা করি, আগামী বছরগুলোতে এই প্রবৃদ্ধি আরো বাড়বে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: চীন


আরও
আরও পড়ুন