Inqilab Logo

সোমবার ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮ আশ্বিন ১৪৩১, ১৯ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

কেটে গেছে ৭ বছর অর্গানোগ্রাম ছাড়াই ঢাকার দুই সিটি

সায়ীদ আবদুল মালিক | প্রকাশের সময় : ৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ১২:০১ এএম

 ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন জনবল কাঠামো (অর্গানোগ্রাম) গত সাত বছরেও ঠিক করতে পারেনি। ২০১১ সালে অবিভক্ত ঢাকা সিটি কর্পোরেশনকে উত্তর, দক্ষিণ দুই সিটিতে বিভক্ত করার পর এখন পর্যন্ত তাদের নেই কোন সুনির্দিষ্ট জনবল কাঠামো। পুরাতন অর্গানোগ্রাম আর প্রস্তাবিত অর্গানোগ্রামের সংমিশ্রনে সুবিধামত পরিচালিত হচ্ছে দুই সিটির বর্তমান জনবল কাঠামো। দুই সিটির স্থায়ী কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বলছেন, প্রেষণে নিয়োজিত কর্মকর্তাদের অবহেলার কারণেই জনবল কাঠামো অনুমোদন হতে এত দেরি হচ্ছে। যদিও এসব অভিযোগের কথা অস্বীকার করেছেন সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, জনবল কাঠামোর অনুমোদন প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে জনবল কাঠামো অনুমোদন পাবে। অর্গানোগ্রামের জটিলতায় নিয়োগ প্রক্রিয়ার স্বাভাবিক গতি না থাকায় ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনে জনবল সংকটে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে সেবা কার্যক্রম।
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের সচিব রবীন্দ্র শ্রী বড়–য়া গতকাল ইনকিলাবকে বলেন, নতুন অর্গানোগ্রামের কার্যক্রম দ্রæত এগিয়ে চলছে। এটি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে এখন আইন মন্ত্রাণালয়ে আছে। খোঁজ নিয়ে জেনেছি আইন মন্ত্রণালয় এ কাজটি দ্রæত শেষ করার জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছে। তিনি বলেন, নতুন অর্গানোগ্রামের অভাবে উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্রত্যহ কার্যক্রম পরিচালনায় আমাদেরকে পদে পদে বিপত্তিতে পড়তে হচ্ছে। আমরা আশা করি অল্পদিনের মধ্যে এই কাজটি শেষ হবে। সেই সাথে শেষ হবে দুই অর্গানোগ্রামের জটিলতা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের জনবল কাঠামো অনুমোদন না হওয়ায় স্থায়ীপদে কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। পুরনো জনবল কাঠামো অনুযায়ী প্রায় অর্ধেক জনবল দিয়ে খুঁড়িয়ে চলছে দুই সিটির সেবা কার্যক্রম। রুটিন কার্যক্রম চালিয়ে নিতে দুই সংস্থা স্থানীয় সরকার, পলী উন্নয়ন ও সমবায় (এলজিআরডি) মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিয়ে পরিচ্ছন্নতাকর্মী পদে অস্থায়ী ভিত্তিতে কয়েক দফায় প্রায় এক হাজার কর্মচারী নিয়োগ করেছে। জনবল শূন্যতার কারণে ওইসব পদে নতুন নিয়োগ দেয়া এসব পরিচ্ছন্নতাকর্মী দিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করানো হচ্ছে। অবশ্য পরিচ্ছন্নতাকর্মী পদে নিয়োগকৃত এ কর্মচারীদের অনেকেরই শিক্ষাগত যোগ্যতা বিএ ও এমএ পাশ।
জানা গেছে, ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন গঠনের পর ২০১২ সালের জানুয়ারিতে দুই সংস্থার পক্ষ থেকে বিদ্যমান প্রয়োজনের আলোকে দুটি জনবল কাঠামোর প্রস্তাবনা স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় এবং অর্থ মন্ত্রণালয় দুই সিটি থেকে পাঠানো সাংগঠনিক কাঠামো পর্যালোচনা করে উত্তরের জন্য ১ হাজার ৮৫৮ এবং দক্ষিণের জন্য ২ হাজার ৪৮২ জন জনবল চূড়ান্ত করে। অবিভক্ত সিটি কর্পোরেশনের মোট জনবল ছিল ৫ হাজার ১১৭ জন। নতুন জনবল কাঠামোতে বিভক্ত দুই সিটি কর্পোরেশনের মোট জনবল রাখা হয় ৪ হাজার ২৮০। জনবলের চাহিদা বাড়লেও পদ কমানোয় শুরুতে প্রশ্নবিদ্ধ হয় নতুন জনবল কাঠামো। এই অবস্থায় অনুমোদনের পথে এগোতে থাকে দুই সিটির জনবল কাঠামো। এরপর জনবল কাঠামো স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় যাচাই-বাছাই করে অর্থ মন্ত্রণালয়ের রাষ্ট্রায়ত্ত¡ শাখায় পাঠায়। ২০১২ সালের ৭ মে অর্থ মন্ত্রণালয়ের রাষ্ট্রায়ত্ত¡ বিভাগ থেকে দুই সিটির জনবল কাঠামোর পদ ও পদসংখ্যা চূড়ান্ত করা হয়। ২০১৩ সালের ১৯ আগস্ট অর্থ মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন শাখা জনবল কাঠামোর বেতন গ্রেড চূড়ান্ত করে। এরপর ওই জনবল কাঠামো দুই সিটিতে পাঠানো হয়। জনবল সংখ্যা কমানো, বিভাগীয় প্রধান, উপপ্রধানসহ প্রত্যেক বিভাগের শীর্ষ পদের বেশির ভাগ পদ প্রেষণের জন্য বরাদ্দ রাখায় কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। পরে দুই সংস্থার প্রত্যেক বিভাগের মতামতসহ ওই জনবল কাঠামো স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পুনরায় পাঠানো হয়। এক্ষেত্রে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের জনবল ১ হাজার ৮৫৮-এর স্থলে ২ হাজার ৫০০ এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের জনবল ২ হাজার ৪৮২-এর স্থলে ৩ হাজার ৪০০ করার প্রস্তাব করা হয়। একই সঙ্গে প্রেষণের পদ কমানোর জন্য প্রস্তাব পাঠানো হয়। এরপর থেকে এটা নিয়ে ফাইল চালাচালি হচ্ছে। কবে এর সমাধান হবে দুই সংস্থার কর্তাব্যক্তিদের কাছে সেটাও অজানা।
দুই সিটি কর্পোরেশন বিভক্তির সাত বছর পার হলেও ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের জনবল কাঠামো, নিয়োগবিধি এবং চাকরি বিধিমালা অনুমোদন না হওয়ায় জনবল সংকটের পাশাপাশি বহুবিধ জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে।
একদিকে সংস্থার প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পদোন্নতি দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। অন্যদিকে জনবলশূন্যতায় কর্পোরেশনের কার্যক্রম মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। পুরনো ও নতুন জনবল কাঠামোর মিশ্রণ ঘটেছে অনেক ক্ষেত্রে।
এ প্রসঙ্গে ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা খান মোহাম্মদ বিলাল বলেন, অনেক আগ থেকেই নতুন জনবল কাঠামো প্রণয়ন কাজ চলছে। মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে নানা ধরনের সংশোধনী দিয়েছে, সেসব সংশোধন করে পরে পাঠানো হয়েছে। এছাড়া ডিএসসিসির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কিছু সংশোধন ও সংযোজন প্রস্তাব রয়েছে। সেসব অন্তর্ভুক্ত করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। আশা করছি, দ্রæততম সময়ে ডিএসসিসির নতুন সাংগঠনিক কাঠামো অনুমোদন পাবে।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ৭ বছর

২৫ এপ্রিল, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ