Inqilab Logo

বুধবার, ২৬ জুন ২০২৪, ১২ আষাঢ় ১৪৩১, ১৯ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

৭ বছরে বিপিসির মুনাফা ৪৩ হাজার কোটি টাকা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৩ এপ্রিল, ২০২২, ১২:০৪ এএম

আন্তর্জাতিক বাজারে লম্বা সময় ধরে নিম্নমুখী ছিল জ্বালানি তেলের দাম। বিশেষ করে করোনা সংক্রমণ শুরুর পর ২০২০ সালে বিশ্ববাজারে তেলের দাম রেকর্ড পর্যায়ে নেমে যায়। তবে দেশের বাজারে ছয় বছর তা কমানো হয়নি। এতে উচ্চ হারে মুনাফা করে যাচ্ছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)। সাত বছরে প্রায় ৪৩ হাজার কোটি টাকা মুনাফা করেছে দেশে জ্বালানি তেলের একমাত্র আমদানিকারক ও বিপণনকারী সংস্থাটি। বিপিসির কয়েক বছরের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন বিশ্লেষণে এ তথ্য পাওয়া গেছে। সম্প্রতি সংস্থাটির সর্বশেষ (২০২০-২১ অর্থবছর) আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। এতে দেখা যায়, গত অর্থবছর বিপিসি তার ইতিহাসে সর্বোচ্চ মুনাফা করেছে। আর মুনাফা বৃদ্ধির হারও ছিল রেকর্ড ৮০ শতাংশ।

তথ্যমতে, বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম অনেকটা হ্রাস পাওয়ায় ২০১৪-১৫ অর্থবছর বড় অঙ্কের মুনাফার দেখা পায় বিপিসি। সে অর্থবছর সংস্থাটি মুনাফা করে চার হাজার ২১২ কোটি দুই লাখ টাকা। যদিও এর আগে টানা ছয় অর্থবছর লোকসান করেছিল বিপিসি। তবে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম আরও কমায় পরের অর্থবছর সংস্থাটির মুনাফা বেড়ে দাঁড়ায় ছয় হাজার ৬৩ কোটি ৩২ লাখ টাকা। অর্থাৎ ২০১৫-১৬ অর্থবছর বিপিসির মুনাফা বৃদ্ধি পায় প্রায় ৪৪ শতাংশ। বিশ্ববাজারে তেলের দাম নিম্নমুখী থাকায় সংস্থাটির মুনাফার একই ধারা অব্যাহত থাকে পরের অর্থবছরও। এতে ২০১৬-১৭ অর্থবছর বিপিসির মুনাফা বেড়ে দাঁড়ায় আট হাজার ৪৪ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। অর্থাৎ ওই অর্থবছর মুনাফা বৃদ্ধির হার ছিল ৩২ দশমিক ৬৭ শতাংশ। তবে এত উচ্চ মুনাফার পরও দেশের বাজারে জ্বালানি তেলের দাম না কমানোয় সমালোচনার মুখে পড়ে বিপিসি ও জ্বালানি বিভাগ। এতে অনেকটা বাধ্য হয়ে সব ধরনের জ্বালানি তেলের দাম কমানো হয় ২০১৬ সালের ২৫ এপ্রিল।
সে সময় প্রতি লিটার অকটেন ও পেট্রোলের দাম ১০ টাকা করে কমানো হয়েছিল। এতে প্রতি লিটার অকটেনের দাম দাঁড়ায় ৮৯ টাকা ও পেট্রোলের দাম ৮৬ টাকা। আর কেরোসিন ও ডিজেলের দাম কমানো হয়েছিল লিটারে তিন টাকা হারে। এতে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম পড়ে প্রতি লিটার ৬৫ টাকা। এর আগে ১ এপ্রিল লিটারে ১৮ টাকা কমানো হয়েছিল ফার্নেস অয়েলের দাম। এতে জ্বালানি পণ্যটির দাম দাঁড়ায় লিটারে ৪২ টাকা।
জ্বালানি তেলের দাম কমানোয় পরের অর্থবছর বিপিসির মুনাফা কিছুটা হ্রাস পায়। এতে ২০১৭-১৮ অর্থবছর সংস্থাটির মুনাফা দাঁড়ায় ছয় হাজার ৫৩৩ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। এরপর আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম কিছুটা বৃদ্ধি পায়। এতে বিপিসির মুনাফা আরও হ্রাস পায়। ফলে ২০১৮-১৯ অর্থবছর সংস্থাটি মুনাফা করে তিন হাজার ৯৮০ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। এরপর বিশ্ববাজারে তেলের দাম খুব বেশি ওঠানামা করেনি।
সূত্রমতে, করোনা সংক্রমণ শুরুর পর বিশ্ববাজারে তেলের দাম আবার নিম্নমুখী হতে শুরু করে। এতে বিপিসির মুনাফাও বাড়তে শুরু করে। ফলে ২০১৯-২০ অর্থবছর সংস্থাটি মুনাফা করে পাঁচ হাজার ৬৫ কোটি ৩০ লাখ টাকা। ২০২০ সালের মাঝামাঝি বিশ্ববাজারে তেলের দাম রেকর্ড নিচে নেমে যায়। যদিও গত বছরের শুরুর থেকে তা আবার ঊর্ধ্বমুখী হতে শুরু করে। যদিও ২০২০ সালের সে নিম্ন দামের প্রভাবে বিপিসির মুনাফা ২০২০-২১ অর্থবছরে রেকর্ড পর্যায়ে পৌঁছে। গত অর্থবছর বিপিসি মুনাফা করে ৯ হাজার ৯২ কোটি ৬১ লাখ টাকা। মুনাফা বৃদ্ধির হার দাঁড়ায় প্রায় ৭৯ দশমিক ৫০ শতাংশ। এটিও বিপিসির ইতিহাসে রেকর্ড। আর সাত বছরে বিপিসির মুনাফা দাঁড়ায় ৪২ হাজার ৯৯১ কোটি ৮৫ লাখ টাকা।
এদিকে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম ক্রমশ বাড়তে থাকায় গত ৪ নভেম্বর দেশের বাজারে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম বাড়ানো হয়েছে প্রতি লিটারে ১৫ টাকা হারে। এতে বর্তমানে জ্বালানি পণ্য দুইটি প্রতি লিটার ৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া ফার্নেস অয়েলের দামও চলতি অর্থবছর ছয়বার বাড়ানো হয়েছে।
এতে ৪২ টাকা থেকে বেড়ে বর্তমানে ফার্নেস অয়েল বিক্রি হচ্ছে ৭৪ টাকায়। পাশাপাশি জেট ফুয়েল ও মেরিন ফুয়েলের দামও চলতি অর্থবছর বেশ কয়েকবার বাড়ানো হয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ৭ বছরে বিপিসির মুনাফা ৪৩ হাজার কোটি টাকা
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ