Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

পদ্মার গর্ভে মুলফৎগঞ্জ বাজার

শরীয়তপুর থেকে মো: হাবিবুর রহমান হাবীব | প্রকাশের সময় : ২ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ১২:০২ এএম | আপডেট : ১২:১৯ এএম, ২ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার মুলফৎগঞ্জ বাজারটি ২শ’ বছরের পুরনো একটি সমৃদ্ধশালী বাজার। এখানে রয়েছে নড়িয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, ঐতিহাসিক মুলফৎগঞ্জ মাদরাসা ও মসজিদ কমপ্লেক্স, কেদারপুর ইউনিয়ন পরিষদ ভবন, কেদারপুর ইউনিয়ন ভ‚মি অফিস, কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক, সরকারি বেসরকারি ব্যাংক ও বিমা অফিস, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ প্রায় পাঁচ শতাধিক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। পদ্মার আগ্রাসী থাবায় কালের গর্ভে হারিয়ে যেতে চলেছে গুরুত্বপূর্ণ এই বাজারটি। গত বুধবার (২৯ আগস্ট) সকাল থেকে এ পর্যন্ত বাজারের দুটি মসজিদসহ প্রায় ২০টি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও আশপাশের অর্ধশতাধিক কাঁচা-পাঁকা বসতঘর পদ্মার গর্ভে চলে গেছে।
ভাঙনের মুখে মূলফৎগঞ্জ বাজারের চারতলা বিশিষ্ট দেওয়ান ক্লিনিক এন্ড কম্পিউটারাইজড ডায়াগনস্টিক সেন্টার, লাইফ কেয়ার হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ৫০ শয্যাবিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ভবনসহ শতাধিক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের মালামাল অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। হুমকির মুখে রয়েছে ঐতিহাসিক মুলফৎগঞ্জ মাদরাসা কমপ্লেক্স ভবন, দুটি প্রাইমারি স্কুল ও পাঁচ শতাধিক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানসহ পুরো মুলফৎগঞ্জ বাজার।
এ ছাড়া হুমকির মুখে রয়েছে নড়িয়া উপজেলা শহর, নড়িয়া পৌরবাজার, পৌরভবন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়, নড়িয়া সরকারি খাদ্য গুদাম, নড়িয়া সরকারি কলেজ, নড়িয়া বিএল উচ্চ বিদ্যালয়, নড়িয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়সহ অসংখ্য সরকারি-বেসরকারি অফিস, ব্যাংক-বীমা অফিস, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও পুরনো ঐতিহ্যবাহী সহস্রাধিক স্থাপনা।
গত ১৮ আগস্ট মুলফৎগঞ্জ বাজার সংলগ্ন গাজী কালুর মেহমানখানা নামে পাঁচতলা বিশিষ্ট প্রায় পাঁচ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত বিলাসবহুল একটি বাড়ি, খানবাড়ি জামে মসজিদ ও দিলুখার দ্বিতল পাকা বাড়ি একসাথে পদ্মার গর্ভে চলে যায়। ভাঙনের মুখে হজরত খাজা মইনুদ্দিন গাজী কালু মঞ্জিল নামে চারতলা বিশিষ্ট আরেকটি বিলাসবহুল বাড়ি ভেঙে গুরুত্বপূর্ণ মালামাল সরিয়ে নেয়া হয়েছে। ওইদিন থেকে এ পর্যন্ত নড়িয়া-মুলফৎগঞ্জ সড়কের কয়েকটি পয়েন্টে প্রায় ৩শ’ মিটার এলাকা পদ্মায় বিলিন হয়ে নড়িয়া-মুলফগঞ্জ যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। সাধুর বাজার, কেদারপুর, বাঁশতলা, চরজুজিরা, সেহেরআলী মাদবর কান্দি বিলিন হয়ে গেছে কিছুদিন আগে।
এর আগে গত ৭ আগস্ট দুপুরে হঠাৎ করে মুলফৎগঞ্জ বাজার সংলগ্ন লঞ্চঘাটের বিস্তীর্ণ এলাকা ধসে গিয়ে ৩০ জন লোক পদ্মায় তলিয়ে যায়। এদের মধ্যে নিখোঁজ হয় ৯ জন। নিখোঁজের সাতদিন পর চাঁদপুর সীমান্ত এলাকা থেকে দুইজনের মরদেহ উদ্ধার করা গেলেও বাকিদের এখনো কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি।
ভাঙন আতঙ্কে দিশেহারা পদ্মা পাড়ের মানুষ আশ্রয়ের সন্ধানে ছুটছেন। তিন সহস্রাধিক মানুষ তাদের সাজানো ঘরবাড়ি ভেঙে অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছেন। খোলা আকাশের নিচে অনাহারে-অর্ধাহারে মানবেতর জীবন যাপন করছেন তারা। ভাঙন কবলিতদের আহাজারিতে ভারি হচ্ছে পদ্মার পাড়। পদ্মার আগ্রাসী রূপ দেখতে প্রতিদিন ভির করছে হাজারো মানুষ। ভাঙন রোধে দ্রæত ব্যবস্থা নিতে দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
এদিকে পদ্মার ভাঙন থেকে নড়িয়া উপজেলা শহরকে বাঁচাতে গত ১১ জুলাই থেকে ভাঙন এলাকায় বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
শরীয়তপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম বলেন, এ পর্যন্ত লক্ষাধিক ব্যাগ নদীতে ফেলা হয়েছে। কিন্তু তীব্র স্রোতের কারণে কিছুতেই ভাঙন রোধ করা যাচ্ছে না।
নড়িয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সানজিদা ইয়াসমিন বলেন, পদ্মার অব্যাহত ভাঙনে হুমকির মুখে রয়েছে নড়িয়া উপজেলা শহর। ইতোমধ্যে নড়িয়ার মানচিত্র থেকে নদীগর্ভে হারিয়ে গেছে বিস্তীর্ণ জনপদ, বসতবাড়ি, গাছপালাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। উদ্ধাস্তু হয়েছে কয়েক হাজার মানুষ। ভাঙনের শিকার মানুষগুলোর তালিকা তৈরি করে আমরা সরকারিভাবে যথাসাধ্য সাহায্য সহযোগিতা চালিয়ে যাচ্ছি।



 

Show all comments
  • মোহাম্মাদ আনিসুর রহমান ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ২:৩৫ পিএম says : 0
    asole nijer bolte amra je sompod nia gorbu kori .ta kinto amader na .but sob uprallah ar ..........allahr kase khoma chai islamer phote choli
    Total Reply(0) Reply
  • মোহাম্মাদ আনিসুর রহমান ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ২:৩৬ পিএম says : 0
    khobi kharab lage .... aisob kostto dkhe .sorkarer ki kisu korar nai
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পদ্মা

১১ জানুয়ারি, ২০২৩
৩১ অক্টোবর, ২০২২
৪ অক্টোবর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ