শেখ ফজলুল করিমের জীবন ও সাহিত্য
বাঙ্গালী মুসলমানদের লুপ্ত গৌরব ও ইতিহাস ঐতিহ্য নিয়ে যে কয়জন খ্যাতনামা মুসলিম সাহিত্যিক স্মরণীয় বরণীয়
আজকের দিনে এসে হয়তো বাঙলা ভাষার লোকজন ভুলে গেছে বিৃটিশ নির্যাতনের কথা। সে সময়ের দিনগুলোতে কী যন্ত্র নাই না ভোগ করতে হয়েছিল বাঙালি জাতিকে। তখন বাংলার বিপ্লবী কবি কাজী নজরুল ইসলাম তার লেখনির মাধ্যমে ব্রিটিশদের ভীত কাঁপিয়ে দিয়েছিলেন। বাঙালি জাতির পক্ষে কবিতা, গান, গল্প, প্রবন্ধ, উপন্যাস ও বত্তৃর্তা দিয়ে জাগ্রত করে ছিলেন কাজী নজরুল ইসলাম। তাই নজরুল অবিভক্ত বাংলার চেতনার কবি হিসেবে নিজের অবস্থান পাকা পোক্ত করে ছিলেন। তার লেখায় বাঙালি জাতীয়তাবাদ ও শোষণহীন সমাজ অগ্রাধিকার পেত। তাই তো বাঙালি জাতির পক্ষ থেকে নজরুলকে বাংলার জাতীয় কবি হিসেবে বরণ করা হয়। তা ভারত ভাগ হওয়ার আট বছর আগে।
১৫ ডিসেম্বর ১৯২৯ সাল ২৯ অগ্রহায়ণ ১৩৩৬ বাংলা রোজ রবিবার। এই দিনটিতে বাঙালি জাতীর পক্ষ থেকে কলকাতায় কাজী নজরুল ইসলামকে বাংলার কবি হিসেবে বরণ করে নেয়া হয়। কলকাতার এলবার্ট হলে কবি নজরুলকে বাঙালী জাতির পক্ষ থেকে জাতিয় সংবর্ধনা দেয়া হয়। এ সংবর্ধনায় সভাপতিত্ব করেন আচার্য্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায়। সভায় প্রধান অতিথি থেকে আলোচনা করেন সর্বভারত নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু। সম্মাননা পত্র বা অভিনন্দন পত্র পাঠ করেন ব্যারিষ্টার এস.ওয়াজেদ আলী। সভায় বাংলার খ্যাতিমান ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন। নজরুলকে বাঙালী জাতির পক্ষ থেকে বরণ করে নেওয়া হয়েছিল এখন থেকে ঠিক ৮৮ বছর আগে। এরপর গঙ্গা ভাগিরথী ও পদ্মা দিয়ে কত জল প্রবাহিত হলো। কত ইতিহাস চাপা পড়ে গেলো লেখনির অভাবে। কে এর খোঁজ রাখে। তারপর আলোচনা পর্যালোচনা অথবা স্মৃতিচারণে উঠে আসে অনেক ফেলে আসা চীর সত্য তথ্য।
‘‘বিদ্রোহী’’ খেয়াপারের তরনী ‘‘মানুষ’’ নজরুলকে বাঙালি জাতীয়তাবাদের কবি হিসেবে প্রতিষ্ঠা হতে সাহায্য করে। নজরুলের সমাজ চেতনা ছিল বাস্তবিক। সৈনিক জীবনে প্রবেশ করে কঠিন সত্য উপলব্ধি করতে সক্ষম হয়েছিলেন। নজরুল দেখেছিলেন ব্রিটিশদের অন্য রাষ্ট্রের প্রতি দমন নিপীরন নীতি। তাই তার কবিতা স্বাধীনতা কামী ভারতীয় বাঙালিদের সাহস ও শক্তি যোগাতো। আর এই প্রেক্ষাপটেই আচার্য্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায় ও নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু সহ অসংখ্য পন্ডিত বাঙালী জাতির পক্ষ থেকে কাজী নজরুল ইসলামকে জাতীয় সংবর্ধনা দেয়া হয় কলকাতার এলবার্ট হলে।
কাজী নজরুল ইসলাম বাংলাদেশের ‘‘জাতীয় কবি’’ হিসেবে রাষ্ট্রীয় ভাবে স্বীকৃত । ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করে। আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় নজরুলের অনেক গান গল্প কবিতা মুক্তিযোদ্ধাদের সাহস যোগিয়েছে। তাই কবি নজরুল ইসলামকে বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১০ জৈষ্ঠ ১৩৭৯ বাংলা সনে ঢাকায় নিয়ে আসেন। পরের দিন ১১ জৈষ্ঠ ২৪ মে ছিল কবির ৭৩ তম জন্ম দিন। ভারত থেকে কবি নজরুলকে বহন করা ফকার ফ্রেন্ডশীপ বিমানটি যখন ঢাকা বিমান বন্দরের মাটি স্পর্শ করলো তখন বেলা ১১:৪০ মিনিট। কবিকে শ্রদ্ধা জানাতে হাজার হাজার মানুষ ঢাকা বিমান বন্দরে সমাবেত হয়। খ্রিষ্টিয় হিসেবে সালটি হলো ১৯৭২। ২৪ মে ১৯৭৩ সাল। ধানমন্ডির কবি ভবনে ৫০ হাজারের মতো ভক্ত উপস্থিত হয়ে নজরুল ইসলামকে জন্ম দিনের শুভেচ্ছা জানায়। সেদিন বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বাধীন সরকার জাতীয় ভাবে পালন করেছিল। ২৫ জানুয়ারী ১৯৭৫ সাল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কবি কাজী নজরুল ইসলামকে সম্মান সূচক ডক্টরেট ডিগ্রী প্রদান করে। এর আগে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় নজরুলকে জগত্তারিণী স্বর্ণপর্দক প্রদান করেন। ১৯৬০ সালে ভারত সরকার নজরুলকে পদ্য ভূষণ উপাধী ও সম্মাননা প্রদান করেন।
২২ জুলাই ১৯৭৫ সালে কবি নজরুল খুবই অসুস্থ্য হয়ে পড়েন। তাকে ঢাকা পিজি হাসপাতালে ভর্তি করে এবং মেডিকেল বোর্ড গঠন করে সরকারি ভাবে। ঔষধ পত্র সরকারি ভাবে প্রদান করা হতো। ১৯৭৬ সালে কাজী নজরুল ইসলামকে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব প্রদান করা হয়। একই বছর ২১ ফেব্রয়ারিতে নজরুলকে ‘‘একুশে পদকে’’ ভূষিত করা হয়। ১১ জৈষ্ঠ ১৩৮৩ বাংলা ২৪ মে ১৯৭৬ খ্রিষ্টাব্দ নজরুলের ৭৭ তম জন্মবার্ষির্কীতে বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর প্রধান কাজী নজরুল ইসলমাকে ‘‘আর্মি-শ্রেষ্ঠ’’ পদকে ভূষিত করে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান কবিকে নিজ হাতে পি.জি হাসপাতালের ১১৭ নম্বর কেবিনে গিয়ে পদক প্রদান করেন। কবি নজরুল ইসলাম ১৯৪২ থেকে ১৯৭৬ পর্যন্ত দীর্ঘ দিন নির্বাক ছিলেন।
দীর্ঘ ৩৪ বছর নির্বাক থাকার পর ২৯ আগষ্ট ১৯৭৬ খ্রিষ্টাব্দ বাংলা ১২ ভাদ্র ১৩৮৩ সালে ঢাকার পি.জি হাসপাতালে জাতিয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম মারা যান। সময়টা ছিল রবিবার সকাল ৯.৪০ মিনিট। কাজী নজরুলের জন্ম ১১ই জৈষ্ঠ ১৩০৩ বাংলা, ২৪ মে ১৮৯৯খ্রি: ভারতের পশ্চিমবঙ্গে আসানসোলের চুরুলিয়া গ্রামে। কাজী নজরুলকে সম্পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের পাশে দাফন করা হয়। কবি নজরুল ইসলাম প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় সৈনিক ছিলেন। তাই কবির সমাধীতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সর্বোচ্চ সম্মান দেখায়। নজরুলের দাফনের পর সেনাবাহিনীর প্রধান ‘‘চল্ চল্ চল্’’ কবিতাটিকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর রণসঙ্গীত হিসেবে ঘোষণা দেন। কাজী নজরুল সর্বহারা দূঃখি ও নির্পীবিতদের কন্ঠস্বর ছিলেন। তার লেখনিতে থাকতো স্বাধীনতা, বিপ্লব ও সাম্য। তাই নজরুল সকল শ্রেণীর সকল মানুষের কবি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।