বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
কুমিল্লায় আবারও ভুল চিকিৎসায় এবার এক গর্ভবতী মহিলার মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় হাসপাতালের সামনে গতকাল সোমবার মৃতব্যক্তির স্বজনরা হাসপাতালেরা সামনে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ করেন। ঘটনাটি ঘটেছে কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার গৌরীপুর রংধনু হাসপাতালে।
স্থানীয় ও পরিবার সূত্রে জানা যায়, গত শুক্রবার বিকালে রংধনু হাসপাতালে ডাক্তার শাহনাজ পারভীন গর্ভবতী নুরজাহানের (২২) সিজার করান একপর্যায়ে রোগীর অবস্থা অবনতি ঘটতে থাকলে নুরজাহানকে দ্রæত ঢাকায় পাঠানোর জন্য রেফার করেন। পরবর্তীতে ঢাকা মেডিকেল কলেজে নুরজাহানকে নিয়ে গেলেও সেখানে ভর্তি করাতে ব্যর্থ হয়ে পরে গ্রিন রোড ইউনিহেলথ স্পেশালাইজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেই হাসপাতালে রোববার দিবাগত রাতে তার মৃত্যু হয়।
এর আগে কুমিল্লার দাউদকান্দির গৌরীপুর লাইফ হসপিটাল অ্যান্ড ডিজিটাল ডায়াগনোস্টিক সেন্টারে কুমিল্লার হোমনা উপজেলার দৌলতপুর গ্রামের আউয়াল হোসেনের স্ত্রী খাদিজা আক্তারকে (২২) সিজারিয়ান অপারেশন করা হয়। এসময় তার পেটের জমজ সন্তানের একটি বের করে অপরজনকে গর্ভে রেখেই পেট সেলাই করে দেন হাসপাতালের ডাক্তার। পরে ঘটনাটি জানাজানি হলে পালিয়ে যায় হসপিটাল মালিকপক্ষ। এই ঘটনাটি শেষ পর্যন্ত মহামান্য হাইকোর্ট পর্যন্ত গড়ায় ।
এছাড়াও গৌরীপুরের খিদমা হসপিটালে ভুল চিকিৎসায় মা ও নবজাতকের মৃত্যু হয়। ব্যতিক্রম নেই গৌরীপুর সিটি হাসপাতালও। গৌরীপুরে সরকারী নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করেই অপচিকিৎসা দিয়েই চলছে বে-সরকারী ক্লিানিক, হাসপাতাল ও প্যাথলজি। এই সমস্ত সেবা দানকারী প্রতিষ্ঠানে ভুল চিকিৎসায় প্রাণও গেছে অনেকের। হয়রানি ও ক্ষতিগ্রস্থের শিকার হয়েছে এমন রোগীর সংখ্যাও কম নয়। ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে একাধিকবার জরিমানার টাকাও গুনতে হয়েছে অনেক নামি-দামি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের। কিন্তু তারপরও টনক নড়ছে না কর্তৃপক্ষের।
গৌরীপুরে বিশাল সাইনবোর্ড লাগিয়ে বিলাস বহুল ভবনসহ নিম্নমানের ভবন ভাড়া করে সরকারি নিয়ম-নীতির কোন কিছু না মেনেই চলছে বে-সরকারি ক্লিনিক, হাসপাতাল ও প্যাথলজি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, মহাখালী, ঢাকা থেকে এই সমস্ত ক্লিনিক, হাসপাতাল ও প্যাথলজির নিবন্ধন নেয়।
উল্লেখ্য নিবন্ধনে এই সমস্ত হাসপাতালগুলোতে যদি অনুমোদন থাকে ১০ শয্যা বেড সেখানে রাখে ১৫ শয্যা, আর ১৫ শয্যা থাকলে রাখে ২৫ শয্যা। নিবন্ধনে মেডিসিন, সার্জারী, গাইনী ও অবস বিষয়ে সেবা দানের কথা লেখা থাকলেও মুলত নেই কিছুই। অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে হাতুড়ে নার্স দিয়ে রোগীদের সেবা প্রদান করা হয়। ভাড়া করা ডাক্তার দিয়ে চলে এই সমস্ত ক্লিনিক, হাসপাতাল ও প্যাথলজি। সার্বক্ষণিক এমবিবিএস ডাক্তারের বদলে থাকে ম্যানেজার, ওয়ার্ডবয় ও ক্লিনিক মালিক নিজেই। তারাই মূলত এই সেবা প্রতিষ্ঠানগুলো দেখভাল করেন। অ্যানেসথেটিস্ট (অজ্ঞানকারী ডাক্তার) ছাড়াই করা হয় বিভিন্ন রোগের অপারেশন। ক্লিনিকের সাইনবোর্ডে কিছু সুনামধন্য ডাক্তারের নাম লেখা থাকলেও তারা কখনো আসে না ক্লিনিকে। গৌরীপুরের বে-সরকারী ক্লিনিক ও হাসপাতালে ভর্তি হওয়া কয়েকজন অপারেশন করা রোগী অভিযোগ করেন বে-সরকারী হাসপাতালে এসেছি ভালো চিকিৎসার জন্য সার্বক্ষণিক ডাক্তার ও নার্স পাব বলে।
কিন্তু এখানেও এসে দেখি দুর্গন্ধযুক্ত পরিবেশ ও সেবার মান নিম্ন। রোগীরা জানায়, কোন সমস্যা দেখা দিলে তাৎক্ষনিক কোন সমাধান মেলে না কারণ ক্লিনিকে সার্বক্ষণিক ডাক্তার নেই। অপারেশন করে গেছে তারপর থেকেই আর ডাক্তারের দেখা মেলেনা। কম টাকায় ভাল চিকিৎসা সেবা পাওয়ার আশায় এই সমস্ত ক্লিনিক ও হাসপাতালে এসে রোগীরা বিভিন্নভাবে প্রতারিত হচ্ছে। ভর্তি হওয়ার সময় চুক্তি (প্যাকেজ) হয় যে টাকা, সে টাকায় অপারেশন থেকে শুরু করে সেলাই কাটা পর্যন্ত ঔষধ সরবরাহ করবে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ। অভিযোগ রয়েছে এই সমস্ত ঔষধও নাকি নিম্নমানের। যাই হোক এসব দেখার কথা যাদের তারা রয়েছেন অজ্ঞাত কারণে নিরব ভুমিকায়। এই সমস্ত বাহারি নামের ক্লিনিক লাইসেন্স নবায়ন করতে হয় জেলা সিভিল সার্জন অফিস কর্তৃক। সিভিল সার্জেন অফিস সূত্রে জানা যায়, আরো নতুন এই সমস্ত প্রতিষ্ঠানের অনুমতির জন্য বেশ কিছু কাগজ জমা রয়েছে। জানা যায়, কিছু সংখ্যক ক্লিনিক, হাসপাতাল ও প্যাথলজির লাইসেন্স নবায়ন হয় রাজনৈতিক ব্যক্তিদ্বয়ের হস্তক্ষেপে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।