শেখ ফজলুল করিমের জীবন ও সাহিত্য
বাঙ্গালী মুসলমানদের লুপ্ত গৌরব ও ইতিহাস ঐতিহ্য নিয়ে যে কয়জন খ্যাতনামা মুসলিম সাহিত্যিক স্মরণীয় বরণীয়
জন্মের পর হয়ত কিছু বুঝে ওঠার আগেই আমাদের জীবনের লক্ষ্য আমাদের কাছের মানুষদের দ্বারা নির্ধারিত হয়ে যায়। আবার কেউ কেউ হয়ত নিজেই বেছে নেয় নিজের জীবনের লক্ষ্য, ছোটবেলা থেকেই নিজেকে একটা অবস্থানে চিন্তা করেন। খুবই ভাগ্যবান যারা তাদের স্বপ্নকে বাস্তবে রুপান্তর করতে পারে। কারো কারো ক্ষেত্রে দেখা যায় তীব্র ইচ্ছা থাকা সত্তে¡ও জীবন তাদেরকে এমন এক পরিস্থিতির সামনে নিয়ে এসে দাঁড় করিয়ে দেয় যে, সেই লক্ষ্য প‚রণ আর সম্ভব হয় না। কেউ কেউ হয়ত ভেঙ্গে পড়েন, কেউ হয়ত ভাগ্যের দোষ দিয়ে বাকী জীবনটা ভাগ্যের কাঠপুতুল হয়েই কাটিয়ে দেন। আবার কেউ সেই ভাগ্যের সাথে পাল্লা দিয়ে নিজেকে আইকন বানিয়ে তোলে, হয়ে ওঠেন অনন্য। ফ্রিদা কাহলো হলেন জীবন দ্বারা অনুপ্রাণিত এমনি এক চিত্রশিল্পী।
ফ্রিদা কাহ্লো : ফ্রিদা কাহ্লো বিশ্বব্যাপী একজন সেলফ পোর্ট্রেইট চিত্রশিল্পী হিসেবে খ্যাতইমান। অর্থাৎ তার আঁকা ১৪৩ চিত্রকর্মের ভেতরে ৫৫টি ছিল তার নিজের ছবি। ফ্রিদা তার সেলফ পোর্ট্রেইটগুলোর মাধ্যমে তার শারীরিক এবং মানসিক ক্ষত উপস্থাপন করতেন।
ফ্রিদা কাহ্লো জন্মগ্রহণ করেন ৬ জুলাই ১৯০৭ সালে মেক্সিকান সিটিতে। তার জন্মের তিন বছর পর মেক্সিকান রেভলুশন ঘটে। ফ্রিদা তার জন্মসালকে আধুনিক মেক্সিকোর সাথে স্মরণীয় রাখতে পরবর্তীতে তার জন্ম সাল ঘোষণা দেন ৭ জুলাই ১৯১০ সাল।
ছয় বছর বয়সে ফ্রিদা পোলিও রোগে আক্রান্ত হন, যার কারণে তার ডান পা বাম পায়ের চেয়ে চিকন হয়ে যায়। ফ্রিদা তার বাবার প্রশংসা করতেন এবং তার বাবার মতো পোশাক পরতেন ও চুল ছোট রাখতেন যা ঐ সময় একজন তরুণীর জন্য বেশ দুঃসাহসিক বলে বিবেচনা করা হতো। তিনি তার অসম্প‚র্ণতাকে লুকিয়ে রাখার জন্য পরবর্তীতে নিজের পোশাক নিজেই ডিজাইন করতেন।
ফ্রিদার নিজস্ব ডিজাইন করা কিছু ড্রেস যা তার মৃত্যুর পর বেশ জনপ্রিয় হয়
ফ্রিদার বয়স যখন আঠারো, তখন তিনি বাস ও ট্রলি দুর্ঘটনার সম্মুখীন হন এবং খুব খারাপভাবে হলেও বেঁচে যান। তার তলপেটে ভয়ানকভাবে একটি লোহার হ্যান্ডেল ঢুকে যায়। তার পেল্ভিস, কলারবোন, মেরুদন্ড, দুইটি পাঁজরের হাড় ভেঙ্গে যায়। প্রায় ৩৫টি অপারেশন করা হয় তার শরীরে। এই দুর্ঘটনার প্রায় তিন মাস পর থেকে ফ্রিদা বেশ কিছু চিত্রকর্ম তৈরী করেন তার বেডের সামনে আয়না রেখে। তখন থেকেই তিনি চিত্রশিল্পী হিসেবে চর্চা শুরু করেন ও ডাক্তারী পড়ার ইচ্ছা জলাঞ্জলি দেন।
দুর্ঘটনা ফ্রিদার চিত্রশিল্পে : বিছানায় পড়ে থেকে একাকীত্বকে তিনি তার চিত্রশিল্পে তুলে ধরেছিলেন সুনিপুণভাবে। তার চিত্রশিল্পে অক্ষমতা এবং মনঃকষ্টের ব্যাপারটি চমৎকারভাবে উঠে এসেছে। চিত্রশিল্পটি তার আশাহত জীবনের এক অর্থবহন করে
নিজের ভেতরের ক্ষতকে ফ্রিদা সবসময় শিল্পের মাধ্যমে প্রকাশ করার চেষ্টা করতেন
ফ্রিদা বিখ্যাত মেক্সিকান চিত্রকার ডিয়াগো রিভেরার কাজের প্রশংসা করতেন এবং ১৯২৭ সালে তিনি প্রথমবারের মতো তাঁর সাথে পরিচিত হন। রিভেরা তার কাজকে প্রভাবিত করেছিল এবং তাকে উৎসাহিত করেন, যা পরবর্তীতে ফ্রিদাকে একজন সফল শিল্পী হয়ে উঠতে সাহায্য করেছিল। বেশ দ্রæত তাদের সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠে এবং তারা ১৯২৯ সালের ২১ আগস্ট বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। ফ্রিদা আতিœক সম্পর্কে চিত্রে তুলে আনার চেষ্টা করেছেন
১৯৫৪ সালের ২৬ জুলাই তার ৪৭ তম জন্মদিনের ২০ দিন পর ফ্রিদা মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুর মাত্র কয়েক বছর পরই তার কাজ ব্যাপকভাবে প্রশংসিত ও আলোচিত হওয়া শুরু করে
যদিও ফ্রিদা কাহ্লোর জীবনে অনেক কষ্ট সহ্য করেছিলেন, তবুও তিনি বেশ বর্ণিল জীবনযাপন করেছিলেন শিল্পের প্রতি আবেগের জন্য। তিনি জীবনের প্রতিটি আঘাতের উত্তরে আরো শক্ত প্রতিউত্তর দিয়েছিলেন এবং নিজের ভেতরের শিল্পসত্ত¡াকে কেন্দ্র করে জীবনের অর্থ খুঁজে পেয়েছিলেন।
আসলে দিন শেষে আমরা যতটা কল্পনা করি, তার চেয়েও বেশী কষ্ট সহ্য করতে পারি। ফ্রিদা কাহ্লোর মতো ব্যক্তিত্বরা কষ্টকে উপেক্ষা করে নিজের কর্মকে পৃথিবীতে স্মরণীয় করে রেখে যান।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।