পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
প্রায় ৮০ বছর আগের ঘটনা। তখনো ফুটবল বিশ্বের কিংবদন্তি ব্রাজিলের পেলের জন্ম হয়নি। আর আরেক কিংবদন্তীর ম্যারাডোনার কথা তো বহুদূরে। সালটা খুব সম্ভবত ১৯৩৩ কি ৩৪ হবে।
ফুটবল তখন হালের ক্রেজ। সর্বভারতীয় ফুটবল দল সফরে গেছে ইন্দোনেশিয়া। খেলার মাঠে প্রজাপতির মতো উড়ছেন ৬ ফিট উচ্চতার এক কৃষ্ণকায় যুবক। ইন্দোনেশিয়ার ৪-৫ জন প্লেয়ারকে কাটিয়ে বল মারলেন গোলপোস্ট বরাবর। আফসোস, গোল হলো না। বল লাগলো গোলবারে।
কী অদ্ভুত ব্যাপার স্যাপার। মিনিট ৫ এর ভেতর আবারো সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি। এইবার গোধরে বসেছেন যুবকটি। তার শর্ট মেজারমেন্ট তো এমন হবার কথা না। তিনি সরাসরি ম্যাচ পরিচালনা কমিটির কাছে নালিশ করে বসলেন। গোলপোস্টের মাপ ছোট আছে। অবিশ্বাস্যের সুরে মাপা হলো গোলপোস্ট। হ্যাঁ, আসলেই ইঞ্চি চারেক ছোট গোলপোস্ট!
কী আর করা। শেষে বারে লাগা সবগুলো শর্ট গোল হিসেবে ধরা হলো! যে মানুষটির কথা এতক্ষণ বলা হলো তিনি আর কেউ নন। আমাদের দেশের মানুষ। সামাদ জাদুকর। ফুটবল জাদুকর সামাদ। যিনি কিনা পেলে, ম্যারাডোনা, স্টেফানো, গারিঞ্জা, বেকেনবাওয়ার, পুস্কাসের বহুবছর আগেই ফুটবলকে দান করেছিলেন শৈল্পিকতা, আর নৈপুণ্যতা। যিনি কিনা পায়ের জাদুতে হতবাক করেছেন হাজারো দর্শককে।
আমাদের ফুটবল জাদুকর সামাদ মূলত তার একক নৈপুণ্যে সর্বভারতীয় ফুটবল টিম তৎকালীন গ্রেট ব্রিটেনের মতো শক্তিশালী টিমকে ৪-১ গোলে আর ইউরোপীয় টিমকে ২-১ গোলে পরাজিত করে। হতবাক হয়ে যায় পুরো ইউরোপের ফুটবল বোদ্ধারা। ফুটবল জাদুকর সামাদ তার বর্ণাঢ্য ফুটবল ক্যারিয়ারে এমন অনেক বিস্ময়ের জন্ম দিয়েছেন।
তার ২৫ বছরের বর্ণাঢ্য ফুটবল ক্যারিয়ারের সূচনা হয় কিন্তু রংপুরের তাজ ক্লাবের হয়ে। সেখান থেকে তিনি যোগদেন কলকাতার এরিয়েন্স ক্লাবে। পরবর্তীতে তিনি ইস্টবেঙ্গল রেলওয়ে ক্লাব, কলকাতা মোহনবাগান, ভিক্টোরিয়া স্পোর্টিং ক্লাবের হয়েও খেলেছেন। ক্যারিয়ারের শেষের দিকে তিনি কলকাতা মোহমেডানের হয়ে কিছু দিন খেলেছেন।
খুব কষ্ট লাগে আমাদের দেশের তরুণরা পেলে চেনে, ম্যারাডোনা চেনে, হালের মেসি, রোনাল্ডো, নেইমারকে চেনে, কিন্তু দেশের গর্ব সামাদ জাদুকরকে চেনে না। ভালো মতো জানে না। অবশ্য তাদের দোষ দিয়ে লাভ নেই। সরকারই যখন জানানোর ব্যাবস্থা করে না, পর্যাপ্ত সুযোগ সৃষ্টি করে না, তখন তরুণেরা জানবেই বা কীভাবে?
সৈয়দ আব্দুস সামাদের নামের আগে যাদুকর উপাধিটি দিয়ে ছিলেন তৎকালীন বাংলার গভর্নর। তিনি তাকে ডাকতেন রিুধৎফ ড়ভ ভড়ড়ঃনধষষ বলে। সা¤্রাজ্যবাদী পশ্চিমা খেলোয়াড়দের প্রভাবের কারণে আর পশ্চিমা সংস্কৃতির দরুণ দেশীয় ফুটবলার তথা ফুটবলের যাদুকরের কথা কেউ মনে রাখে না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।