পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
একদা গরুর জন্য বাংলাদেশের অনিবার্য নির্ভরতা ছিল ভারতের ওপর। বিশেষ করে ঈদুল আজহার সময় কোরবানির পশুর চাহিদা পূরণে লাখ লাখ গরু ভারত থেকে আসতো। বৈধ পথে যত আসতো, অবৈধ পথে আসতো তার চেয়ে অনেক বেশি। এটা ছিল অনেকটাই স্বাভাবিক ব্যাপার। এই স্বাভাবিকতায় ছেদ পড়ে ভারতে উগ্র সাম্প্রদায়িক বিজেপি ক্ষমতাসীন হওয়ার পর। হঠাৎ করেই বাংলাদেশে গরু রফতানি বন্ধ করে দেয় বিজেপি সরকার। সীমান্তে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়। বিএসএফ’কে বলে দেয়া হয়, বাংলাদেশে যেন একটি গরুও প্রবেশ করতে না পারে। এই আকস্মিক সিদ্ধান্ত ও ব্যবস্থার কিছুটা হলেও এদেশের মানুষ বিপাকে পড়ে যায়। গরুর দাম বেড়ে যায়। গোশতের দাম বেড়ে যায়। কোরবানির পশুর সংকটও দেখা দেয়। ভারতের চাপিয়ে দেয়া এই দুর্ঘট পরিস্থিতিকে বাংলাদেশের মানুষ, বলাই বাহুল্য, মেনে নেয় না। সরকার গবাদি পশু পালনকে উৎসাহিত করে। কৃষক ও খামারিরা বিপুল উদ্যমে গরু লালন-পালন ও খামার স্থাপনে মনোনিবেশ করে। তারপর আর বাংলাদেশকে পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। গত ক’বছরে কোরবানির পশুর সংকট হয়নি। দেশের গরুতেই সারা বছর যেমন চলেছে, কোরবানির চাহিদাও তেমনি মেটানো সম্ভব হয়েছে। বলা যায়, গবাদী পশু উৎপাদন ও লালন-পালনে একটা বিপ্লব সাধিত হয়েছে। দেশ গবাদি পশু ও গোশতের ক্ষেত্রে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। এতে হাজার হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় হয়েছে। আসন্ন ঈদেও গবাদী পশুর কোনো সংকট হবে না। বরং লাখ লাখ গবাদী পশু উদ্বৃত্ত থেকে যাবে। প্রাণীসম্পদ অধিদফতরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এবার কোরবানি উপলক্ষে গরু, মহিষ, ছাগল ও ভেড়া মিলিয়ে ১ কোট ১৬ লাখ গবাদি পশু প্রস্তুত রয়েছে। কোরবানির চাহিদা ১ কোটি ৪ লাখ গবাদি পশু। এই হিসাবে চাহিদা পূরণের পরও ১২ লাখ গবাদি পশু উদ্বৃত্ত থাকবে। এই অর্জন অনন্য ও অসাধারণ। এ জন্য দেশের কৃষক ও খামারিদের অকুণ্ঠ ধন্যবাদ প্রাপ্য।
অত্যন্ত দু:খের বিষয়, এই কৃতিত্ব ও সাফল্যকে ম্লান করে দেয়ার জন্য ভারতের গরু ব্যবসায়ী এবং এদেশে তাদের সহযোগী ব্যবসায়ীরা মাঠে নেমে পড়েছে। প্রকাশিত খবর থেকে জানা গেছে, দু’দেশের ব্যবসায়ীদের নিয়ে গড়ে ওঠা সিন্ডিকেট সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্টে তৎপর হয়ে উঠেছে। তারা অবৈধপথে গরু নিয়ে আসছে। খবরে উল্লেখ করা হয়েছে, ভারত সীমান্তের ৩৬টি পয়েন্ট দিয়ে গরু আসার ব্যাপারে আগের কঠোর অবস্থান শিথিল করেছে বিএসএফ। জুলাই মাসে এসব পয়েন্ট বা পথ দিয়ে প্রায় এক লাখ গরু প্রবেশ করেছে। এছাড়া সীমান্তের ১৭টি করিডোর এলাকায় সেখানকার ব্যবসায়ীরা প্রায় পাঁচ লাখ গরু এনে জড়ো করেছে। রাতের আধারে এসব গরু পর্যায়ক্রমে ঢুকবে, এমন প্রস্তুতিও রয়েছে। বলা দরকার, গরু আমদানির ব্যাপারে দু’দেশের মধ্যে কোনো চুক্তি নেই। অর্থাৎ গরু যা এসেছে তা অবৈধ পথেই আসছে। যা আসবে তাও ওই পথেই আসবে। অর্থের জন্য ভারতের একশ্রেণীর ব্যবসায়ী করতে পারেনা এমন কাজ নেই। এই অসাধু ব্যবসায়ীদেরই সাঙ্গাত হয়েছে এদেশের কিছু অসাধু ব্যবসায়ী। এই যোগসাজসের লক্ষ্য, ভারতকেই লাভবান করা। ওয়াকিবহাল মহলের অজানা নেই, ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে গরু জবাই নিষিদ্ধ করার পর ভারত গরু নিয়ে মহাসংকটে পড়েছে। এই সংকটের আংশিক লাঘবের উপায় হলো, যে কোনো প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশে যতটা সম্ভব গরু ঢুকিয়ে দেয়া। যে বিএসএফ শপথ নিয়েছে, একটি গরুও বাংলাদেশে ঢুকতে দেবে না, সেই বিএসএফ এখন গরু চোরাচালানে সহযোগিতা করছে। সীমান্তে এই বিএসএফই গরু ব্যবসায়ীর নামে বহু বাংলাদেশীকে গুলি করে হত্যা করেছে। সেই গুলিকরা হাত এখন গরু চোরা চালানে সহযোগীর হাতে পরিণত হয়েছে। সঙ্গতকারণেই প্রশ্ন ওঠে, আমাদের সরকার তাহলে কি করছে? কি করছে আমাদের বিজিবি? বিজিবি কেন হাত গুটিয়ে বসে আছে? গরু চোরাচালান বন্ধে তারা কেন কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছে না? কেন তারা বলতে পারছেনা, একটি গরুও আমরা বাংলাদেশে ঢুকতে দেবো না?
শুধু ভারত থেকে নয়, মিয়ানমার থেকেও গরু আসছে বলে খবর পাওয়া গেছে। নেপাল-ভুটান থেকে ভারত হয়ে গরু আসছে, এমন খবরও আছে। সরকার, বিজিবি, আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী যদি এক্ষেত্রে এখনো গা ছাড়া ভাব প্রদর্শন করে যায় তাহলে বিপুল সংখ্যায় গরু দেশে ঢুকে পড়বে এবং মাথায় বাড়ি পড়বে কৃষক ও খামারিদের। ইতোমধ্যেই তারা তাদের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার কথা জানিয়েছে। তারা আশংকা প্রকাশ করেছে, ভারত ও অন্যান্য দেশ থেকে গরু ঢুকলে তারা গরুর ন্যায্য দাম থেকে বঞ্চিত হবে, আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এর প্রতিক্রিয়া কি হতে পারে তা অনুমান করা কঠিন নয়। তারা গরু উৎপাদন ও লালন-পালনে উৎসাহ হারিয়ে ফেলবে। ইতোমধ্যে দেশে যে ছোট বড় অসংখ্য খামার গড়ে উঠেছে, তা টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে পড়বে। একথা কেনা জানে, গরুর খামার ও লালন-পালনে গ্রামীণ অর্থনীতিতে একটা নতুন প্রাণাবেগ সঞ্চারিত হয়েছে। শুধু গরুর সংখা বৃদ্ধি নয়, দুগ্ধ এবং দুগ্ধজাত খাদ্যের ক্ষেত্রেও একটা বড় ধরনের অগ্রগতি হয়েছে। বিরাট সংখ্যক মানুষের কর্ম সংস্থান হয়েছে। এমতাবস্থায়, গ্রামীণ অর্থনীতিতে একটা বড় ধরনের চোট পড়বে। এসব দিক বিবেচনায় নিয়ে ভারতীয় গরুর অনুপ্রবেশ যে কোনো মূল্যে ডেড স্টপ করতে হবে। একটি গরুও যেন না ঢোকে তা নিশ্চিত করতে হবে। এ ব্যাপারে সরকারের সুস্পষ্ট ঘোষণার পাশাপাশি সীমান্তে বিজিবির কঠোর অবস্থান নিশ্চিত করতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।