Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

রমনা পার্কের লেকে ডুবে দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যু

উদ্ধারে না এগিয়ে অনেকেই মোবাইলে ভিডিও করছিলেন

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১৪ আগস্ট, ২০১৮, ১২:০৩ এএম

রাজধানীর রমনা পার্কের লেকে গোসল করতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছে দুই স্কুল শিক্ষার্থী। গতকাল রোববার দুপুরে এ ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলো- কাকরাইল উইলস্ লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী আদনান (১৫) ও মাহফুজ (১৫)। নিহতদের লাশ ময়নাতদন্তের জন্যে হাসপাতাল মর্গে রাখা হয়েছে।
তাদের সহপাঠী ও বন্ধু আরিফ হোসেন জানান, সকালে তারা ৩ বন্ধু রমনা পার্কে যায় ফুটবল খেলতে। সকাল সাড়ে ১০টা থেকে প্রায় ৩টা পর্যন্ত তারা ফুটবল খেলে। খেলা শেষে পার্কের ভেতরের অস্থাচল গেট সংলগ্ন লেকের পানিতে গোসল করতে নামে। সহপাঠী আরিফ সাঁতার জানতো না। মাহফুজ ভালো সাঁতার জানতো। তবে আদনান একটু একটু সাঁতার জানতো। গোসল করতে নেমে লেকের পাশে অল্প পানিতে দাড়িয়ে গোসল করছিলো আরিফ। মাহফুজ সাঁতরে গভীর পানিতে যায়। আদনানকেও গভীর পানিতে ডাকে। আদনান গভীর পানিতে গিয়ে আর সাঁতরাতে না পেরে মাহফুজকে আকড়ে ধরে। এর পরপর ২ জনই ডুবে যেতে থাকে। এসময় আরিফ সাঁতার না জানায় সে আর তাদের ২ জনকে উদ্ধার করতে যেতে পারেনি। এসময় আশেপাশের বিভিন্ন জনকে ডাকতে থাকে তাদেরকে বাঁচাতে। লেকের আশে পাশে অনেকে দাঁড়িয়ে থাকলেও কেউ তাদের উদ্ধারে এগিয়ে যাননি।
প্রাইভেটকার চালক মোফাজ্জল হোসেন জানান, ব্যক্তিগত কাজ শেষে রমনা পার্কের ভিতর দিয়ে ধানমন্ডির বাসায় ফিরছিলেন তিনি। এ পানিতে তলিয়ে যাওয়ার কথা শুনে তিনি সঙ্গে সঙ্গে নিজের পরনের সব কাপড় খুলে নিমিশেই নেমে পড়েন পানিতে। একটি বাশ নিয়ে গভীর পানিতে গিয়ে ডুব দিয়ে তাদের খোঁজ পান। পরে দু জনকে উদ্ধার করে পাড়ে নিয়ে আসেন।
তিনি বলেন, আমি পানিতে নামার আগে ও পরে লেকের পাশে অনেকে দাঁড়িয়ে ঘটনাটি দেখছিলো। আবার কেউ মোবাইলে ভিডিও করছিলো। এসব বাদ দিয়ে তাদের মধ্যে কেউ যদি ছেলে ২টিকে বাঁচাতে এগিয়ে আসতো তাহলে আজ ওদের এভাবে মৃত্যু হতোনা।
তাদেরকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে আসা অনেকেই অভিযোগ করে বলেন, তাদেরকে উদ্ধারে কেউ পানিতে নামতে না চাইলে ফায়ার সার্ভিসে ফোন করা হয়। তবে অনেক সময় পেরিয়ে গেলেও তাদের কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। ঢামেক পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ এসআই বাচ্চু মিয়া বলেন, বিকেল সোয়া ৩টার দিকে দু’জনকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা।
কিশোরগঞ্জ কটিয়াদি উপজেলার মীরেরপাড়া গ্রামের মাসুদ মিয়ার ছেলে মাহফুজ। ২ ভাই ১ বোনের মধ্যে বড় সে। থাকতো তেজগাঁও গভমেন্ট পিন্টিং প্রেস স্টাফ কোয়াটারে। প্রেসে মনু অপারেটর হিসেবে চাকরি করতেন বাবা মাসুদ মিয়া। তিনি জানান, উইলস্ লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল এন্ড কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের ৯ম শ্রেণির ছাত্র তার ছেলে মাহফুজ। সকালে বাসা থেকে স্কুলের কথা বলেই বের হয়েছিলো। পরে দুর্ঘটনা খবর শুনতে পেয়ে হাসপাতালে এসে তার লাশ দেখতে পাই। আদনানও একই বিভাগে একই ক্লাসে পড়তে। সে পরিবারের সাথে মালিবাগের গুলবাগ ২৭৬/এ নম্বর বাসায় থাকতো। বাবার নাম হাসানুজ্জামান চৌধুরি। গ্রামের বাড়ি নোয়াখালী সদর মাইজদি এলাকায়। ২ ভাই ১ বোনের মধ্যে ছোট সে। আদনানের ভগ্নিপতি মোঃ শাওন জানান, আদনানের বাবা বস্ত্র অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক। ২০১৬ সালে অবসরে যান তিনি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মৃত্যু


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ