Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

এটা একটা শুভ লক্ষণ

| প্রকাশের সময় : ২৯ জুলাই, ২০১৮, ১২:০২ এএম

আগামী একাদশ জাতীয় নির্বাচন নিয়ে রাজনীতিতে এক ধরনের অচল ও স্থবির অবস্থা বিরাজ করছে। নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য এবং সবদলের অংশগ্রহণে হবে কিনা তা নিশ্চিত নয়। যদিও দেশি-বিদেশি বিভিন্ন মহল থেকে এ ধরনের একটি নির্বাচনের কথা বহু দিন থেকেই বলে আসা হচ্ছে। তবে সরকারের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে তেমন কোনো সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। দেশের বাস্তব রাজনীতির কথা বিবেচনা করলে এবং আগামী নির্বাচন অবাধ ও গ্রহণযোগ্য করতে হলে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি ও তার জোটের অংশগ্রহণ করাটা যে জরুরী, তা একজন সাধারণ মানুষও বোঝেন। সমস্যা দেখা দিয়েছে, ক্ষমতাসীন দলের প্রধান প্রতিপক্ষ বিএনপির সাথে নির্বাচন সংক্রান্ত কোনো ধরনের আলাপ-আলোচনা ও সংলাপের ব্যাপারে আগ্রহ দেখানো হচ্ছে না। যখনই সংবাদকর্মীরা ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে বিএনপির সঙ্গে সংলাপের বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়, তখনই তিনি সরাসরি জবাব দেন, সংলাপের প্রয়োজন নেই। তবে গত শুক্রবার তিনি তার এ অবস্থান থেকে কিছুটা সরে এসে বলেছেন, বিএনপির সাথে আনুষ্ঠানিক সংলাপের প্রয়োজন নেই, তবে দলটির সঙ্গে দূরত্ব ঘোচাতে চান। তিনি বলেন, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে ফোনে কথা বললে দূরত্ব অনেকটা কমে আসতে পারে। রাজনীতিতে ওয়ার্কিং আন্ডারস্ট্যান্ডিংয়ের জন্য বিএনপির নেতাদের সঙ্গে ফোনে কথা হতে পারে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা ওবায়দুল কাদেরের এ বক্তব্যকে রাজনীতিতে যে ডেডলক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে তা খোলার প্রাথমিক ধাপ হিসেবে বিবেচনা করছেন। তার এ বক্তব্য নিঃসন্দেহে ইতিবাচক এবং সাধুবাদযোগ্য। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, আলোচনার জন্য আওয়ামী লীগকে ফোন করা হবে কিনা। উত্তরে তিনি বলেছেন, তারা ফোন করলে আমরা ফোন করবো। তার এ বক্তব্যও ইতিবাচক।
রাজনীতি তো বটেই যে কোনো সংঘাত, সমস্যায় কথা বলার বিকল্প নেই। পরস্পর বিরোধী পক্ষের মধ্যে যদি বছরের পর বছর ধরে হিংসা, প্রতিহিংসা, পারস্পরিক দোষারোপ ও সংঘাত লেগে থাকে, তাতে কোনো দিনই শান্তি আসে না। দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতির ক্ষেত্রে সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে মতের বিরোধিতা থাকলেও দেশের স্বার্থে পারস্পরিক সমঝোতা থাকা অত্যন্ত জরুরী। দুঃখের বিষয়, আমাদের রাজনীতিতে প্রধান দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি’র মধ্যে যুগের পর যুগ ধরে বিরোধ লেগেই আছে। এক দল আরেক দলকে ঘায়েল করার জন্য হেন কোনো চেষ্টা নেই, যা করে না। বিশেষ করে আওয়ামী লীগ যেন বিএনপিকে সহ্যই করতে পারে না। ফলে রাজনীতিতে বরাবরই এক ধরনের উত্তপ্ত পরিস্থিতি বিরাজমান রয়েছে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির বিতর্কিত নির্বাচনের পর থেকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বিএনপির ওপর এমনভাবে চড়াও হয়েছে যা নজিরবিহীন। দলটির শীর্ষ নেতা থেকে শুরু করে একজন সাধারণ কর্মীও দলন-পীড়ন, হামলা-মামলা, জেল-জুলুম থেকে রক্ষা পাচ্ছে না। এই যে তিন সিটি নির্বাচন হতে যাচ্ছে, এগুলোর নির্বাচনী পরিবেশের দিকে তাকালেই বোঝা যায়, ক্ষমতাসীন দল কীভাবে বিএনপির নেতা-কর্মীদের ভয়-ভীতি, গ্রেফতার ও নির্যাতনের মাধ্যমে দৌড়ের ওপর রেখেছে। এ নিয়ে প্রতিদিনই পত্র-পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশিত হচ্ছে। অর্থাৎ ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ বিএনপির ওপর এতটাই ক্রুদ্ধ যে কোনোভাবেই ছাড় দিতে রাজী নয়। এমন বৈরী পরিস্থিতিতে ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বিএনপির নেতাদের সাথে টেলিফোনে আলাপ হতে পারে বলে যে কথা বলেছেন, তা টানেলের শেষ প্রান্তে আলোকাভাস হিসাবে বিবেচনা করা যায়। বলার অপেক্ষা রাখে না, রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু নেই। চরম বৈরী পরিস্থিতিতেও বিবদমান পক্ষের মধ্যে আলাপ-আলোচনা ও আন্তরিক পরিবেশ সৃষ্টি হতে পারে। এজন্য দীর্ঘ সময়ের প্রয়োজন নেই। সাত দিনেই তা পরিবর্তন হয়ে যেতে পারে। আগামী জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ ও সবদলের অংশগ্রহণে গ্রহণযোগ্য করে তোলার জন্য দীর্ঘদিন থেকেই যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে শুরু করে বিভিন্ন দেশ এবং দেশের নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে তাকিদ দেয়া হচ্ছে। এমনকি ভারতও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের কথা বলেছে। এ প্রেক্ষিতে, নির্বাচনকে সর্বমহলে গ্রহণযোগ্য করে তুলতে প্রধান দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি এবং অন্যান্য দলের মধ্যে পারস্পরিক আলাপ-আলোচনা ও সংলাপ হওয়া আবশ্যক। ওবায়দুল কাদের বলেছেন, কাদের সিদ্দিকি তাকে ফোন করেছেন। তিনি কথা বলতে চান। আমি বলেছি, আসেন অনানুষ্ঠানিক আলাপ আলোচনা হতে পারে। এছাড়া ওবায়দুল কাদের কমিউনিস্ট পার্টির মুজাহিদুল ইসলাম সেলিমের সাথেও দেখা করে কথা বলেছেন। তার এই উদ্যোগ এবং কথা বলা নিঃসন্দেহে আগামী রাজনীতির জন্য ইতিবাচক।
রাজনীতিতে দলগুলোর মধ্যে বিরোধ, মতপার্থক্য থাকা অস্বাভাবিক নয়। এই মতবিরোধ চিরস্থায়ীভাবে চলতে দেয়া যায় না। দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতির ক্ষেত্রে ক্ষমতাসীন ও বিরোধী দলের মধ্যে ঐকমত্য ছাড়া এগিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। যতই মতবিরোধ থাকুক না কেন, তা পারস্পরিক আলাপ-আলোচনা ও সমঝোতার মাধ্যমে মিটিয়ে ফেলা উচিৎ। রাজনৈতিক মতাদর্শের ভিন্নতা নিয়ে বছরের পর বছর ধরে বিরোধ থাকা দেশের জন্য কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। শুধু বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রেই সংলাপ প্রয়োজন, তা নয়। সবসময়ই ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী দলের মধ্যে পারস্পরিক সৌহার্দ্যমূলক পরিবেশে আলাপ-আলোচনা প্রয়োজন। যুদ্ধক্ষেত্রেও উভয় পক্ষ আলাপ-আলোচনা করে মিমাংসার উদ্যোগ নেয়ার অনেক নজির রয়েছে। কোনো বিরোধই চিরকাল চলতে পারে না। রাজনীতির ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। বিরোধী দলগুলো ক্ষমতাসীন দল বা সরকারের সমালোচনা ও বিরোধিতা করতেই পারে। তার মানে এই নয়, বিরোধী দলের কথা উড়িয়ে দিতে হবে। বরং ক্ষমতাসীন দলের মূল দায়িত্ব বিরোধী দলগুলোর সাথে আলাপ বা সংলাপের মাধ্যমে বিরোধ নিষ্পত্তির উদ্যোগ নেয়া। তাকেই সবার আগে হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। আমরা আশা করব, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সাথে অনানুষ্ঠানিকভাবে টেলিফোনে কথা বলার যে ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন, তা এক সময় রাজনৈতিক ঐক্যমত্য প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে আনুষ্ঠানিক রূপ লাভ করবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: নির্বাচন

২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন