পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
পাকিস্তানে সফলভাবে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। গত ২৫ জুলাই অনুষ্ঠিত এই নির্বাচনের প্রাথমিক ফলাফলে একসময়ের জগদ্বিখ্যাত ক্রিকেট অধিনায়ক ইমরান খানের নেতৃত্বাধীন তেহরিক-ই- ইনসাফ পার্টির বিজয় নিশ্চিত হতে চলেছে। মহিলা ও উপজাতীয়দের জন্য সংরক্ষিত আসনগুলো বাদ দিলে নির্বাচনের মাঠে গড়ানো ২৭২ টি আসনের মধ্যে কোন দলের ১৩৭ আসন নিশ্চিত হলেই সরকার গঠন করতে পারবে। এই নিবন্ধ লেখা পর্যন্ত প্রাপ্ত সর্বশেষ বেসরকারী ফলাফলে ইমরান খানের তেহরিক-ই-ইনসাফ পার্টি ১১৯ আসনে এগিয়ে আছে। তার নিকটতম প্রতিদ্ব›দ্বী দল শাহবাজ শরীফের নেতৃত্বাধীন মুসলিমলীগ(এন)’র এগিয়ে থাকা আসন সংখ্যা ছিল ৬৫টি এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভ‚ট্টোর পুত্র বিলওয়াল ভ‚ট্টোর নেতৃত্বাধীন পাকিস্তান পিপলস পার্টির আসন সংখ্যা ৪৩। ইমরান খানের তেহরিক-ই-ইনসাফের প্রাপ্ত আসন সংখ্যা ইতিপূর্বে ক্ষমতায় থাকা প্রধান দুই দলের আসন সংখ্যার চেয়ে বেশী।
উপমহাদেশ ও বৈশ্বিক বাস্তবতায় পাকিস্তানের জাতীয় নির্বাচন এবং রাজনৈতিক পরিস্থিতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বস্তুতপক্ষে পাকিস্তানের রাজনৈতিক পরিস্থিতি উপমহাদেশের অন্য যে কোন দেশের চেয়ে ভিন্নতর। আফগানিস্তানসহ মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক বাস্তবতা, পশ্চিমাদের সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ এবং চীন-মার্কিন বা ভারতের মধ্যকার ক‚টনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্কের উত্তাপ পাকিস্তানকে সরাসরি প্রভাবিত করে। পাকিস্তানের রাজনীতিতে পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষভাবে সেনাবাহিনী সর্বদাই গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করে থাকে। দেশ পরিচালনায় সরকার ও সেনাবাহিনীর মধ্যকার দূরত্ব বা সমন্বয়হীনতার কারণে পাকিস্তানের জাতীয় রাজনীতি ও সামাজিক বাস্তবতায় বিরূপ প্রভাব পড়তে দেখা যায়। এ দু’য়ের সুুসমন্নয়ই টেকসই সরকার বা শাসনের পূর্বশর্ত। নির্বাচনে বিচ্ছিন্ন সহিংসতা ও প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। কোয়েটা ও বেলুচিস্তানে আত্মঘাতি বোমা হামলাসহ নির্বাচনী সহিংসতায় অন্তত ৩৪ জনের প্রাণহানির খবর পাওয়া গেছে। পাকিস্তানের বাস্তবতায় এটি কোন অস্বাভাবিক ঘটনা নয়। অতীতের প্রায় সব জাতীয় নির্বাচনেই এ ধরনের ঘটনা ঘটতে দেখা গেছে। সহিংসতা এবারের নির্বাচনে সবচেয়ে কম হয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, পাকিস্তান প্রধান সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন সম্পন্ন করতে সক্ষম হল। অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ক্ষমতার পালাবদল এবং নির্বাচিত সরকারের মেয়াদ পূর্ণ করার অভিজ্ঞতা সমৃদ্ধ হল। এটা পাকিস্তানের গণতন্ত্র ও জাতীয় রাজনীতিতে অবশ্যই তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা।
পাকিস্তানে এবারের জাতীয় নির্বাচনে সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণের পাশাপাশি ভোটারদের উপস্থিতি বা অংশগ্রহণও ছিল অতীতের যে কোন জাতীয় নির্বাচনের চেয়ে বেশী। সামাজিক বিধি-নিষেধ ডিঙিয়ে মহিলা ভোটারের উপস্থিতিও ছিল চোখে পড়ার মত। সব দল এবং ভোটারদের সরব উপস্থিতির জন্য নির্বাচনী পরিবেশ ও নির্বাচন কমিশনের প্রতি সাধারণ মানুষের যে আস্থা থাকা প্রয়োজন এই নির্বাচনে তা অনেকটাই নিশ্চিত করা হয়েছিল। পাকিস্তানের সব রাজনৈতিক দলের ঐক্যমত্যে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ তত্ত¡বধায়ক সরকার ব্যবস্থার প্রতি আস্থা ও স্বীকৃতি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের মূল ভিত্তি নির্মান করেছে। নির্বাচনকালীন তত্ত¡াবধায়ক সরকার, দলনিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশন, জননিরাপত্তায় সেনাবাহিনী ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পেশাদার ভ‚মিকার পাশাপাশি গণমাধ্যম ও দেশিবিদেশি নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের ব্যাপক উপস্থিতির মধ্য দিয়ে পাকিস্তানের জাতীয় নির্বাচন জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্যতা লাভ করেছে। সেনাবাহিনীসহ নিরাপত্তা বাহিনীর প্রায় ৮ লাখ সদস্য এবং দেশি-বিদেশী প্রায় ৫৩ হাজার পর্যবেক্ষক নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেছেন বলে জানা যায়। ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিদেশি ও দেশী পর্যবেক্ষকদের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় নির্বাচন সম্পর্কে ইতিবাচক মন্তব্যই উঠে এসেছে। প্রাপ্ত ফলাফল অনুসারে ইমরান খানই পাকিস্তানের পরবর্তী সরকারের প্রধানমন্ত্রী হতে চলেছেন, এটা নিশ্চিত। ইমরান খান একই সঙ্গে আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত এবং ইসলামী মূল্যবোধের প্রতি একনিষ্ঠ। তেহরিক-ই- ইনসাফ পার্টির নির্বাচনী ইশতিহারটিও ছিল সময়োপযোগী এবং জনগণের প্রত্যাশার কাছকাছি। জননিরাপত্তা ও প্রাদেশিক পুলিশি ব্যবস্থার উন্নয়ন, পানি সমস্যার সমাধান, আবাসন সংকট মোকাবেলায় সুস্পষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণ এবং পাকিস্তানের অর্থনৈতিক উন্নয়নে চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডর বাস্তবায়নে ইমরান খানের ইতিবাচক ও দৃঢ় ভ‚মিকার প্রতি জনগণ ব্যালটের মাধ্যমে সমর্থন দিয়েছেন। পাকিস্তানে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং ক্ষমতার শান্তিপূর্ণ পালাবদল উপমহাদেশে একটি ইতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি করতে পারে। একটি তাৎপর্যপূর্ণ বিজয়ের সন্ধিক্ষণে আমরা পাকিস্তানের জনগণ ও তেহরিক-ই-ইনসাফ পার্টির নেতা ইমরান খানের প্রতি অভিনন্দন জানাই।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।