Inqilab Logo

রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ভারতীয় নেতার ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্য

| প্রকাশের সময় : ২২ জুলাই, ২০১৮, ১২:০২ এএম

বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব নিয়ে ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপির একাধিক নেতা বিভিন্ন সময়ে অত্যন্ত আপত্তিকর ও অবমাননাকর বক্তব্য দিয়েছেন। তাদের এসব বক্তব্য সরাসরি স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি হুমকিস্বরূপ। একটি দেশকে নিয়ে আরেকটি দেশের ক্ষমতাসীন ও রাজনৈতিক নেতাদের এমন বক্তব্য বিশ্বের আর কোথাও দেখা যায় না। সর্বশেষ বিশ্ব হিন্দু পরিষদের (ভিএইচপি) সাবেক নেতা তোগাড়িয়া বলেছেন, ভারতীয় সেনাবাহিনীর উচিত বাংলাদেশের একাংশ দখল করে নিয়ে সেখানে ‘অবৈধ অভিবাসীদের’ থাকার বন্দোবস্ত করা। গত বুধবার গৌহাটিতে এক সভায় তোগাড়িয়া এ কথা বলেন। তিনি ভিএইপির একাংশ ভেঙে আন্তঃরাষ্ট্রীয় হিন্দু পরিষদ (এএইচপি) গঠন করেছেন। আসামে তোগাড়িয়ার সভা আয়োজন দুই মাস নিষিদ্ধ করা হলেও এই সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় তিনি দাবী করেন, সেখানে প্রায় ৫০ লাখ অবৈধ অভিবাসী থাকলেও গত দুই বছরে মাত্র ১৭ জনকে ফেরত পাঠানো হয়েছে। এখন বাংলাদেশ এদের ফেরত নিতে অস্বীকার করলে ভারতীয় সেনাবাহিনীর উচিত বাংলাদেশের ভূমি দখল করে তাদের থাকার ব্যবস্থা করে দেয়া। তোগাড়িয়ার এ বক্তব্য নিশ্চিতভাবেই বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি চরম অবজ্ঞা প্রদর্শনের নজির ও অস্বীকার করার শামিল।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব নিয়ে ভারতের ক্ষমতাসীন দলের গুরুত্বপূর্ণ একাধিক নেতা ও উগ্রবাদী হিন্দু নেতাদের বক্তব্য নতুন কিছু নয়। বিগত কয়েক বছর ধরে তারা এ ধরনের বক্তব্য একের পর এক দিয়ে যাচ্ছেন। কয়েক বছর আগে সেখানের এক রাজনৈতিক নেতা বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল দখল করে নেয়ার কথা বলেছেন। কেউ কেউ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধকে ‘ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। বলিউডের বিভিন্ন সিনেমায়ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধকে ‘ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ’ বলে উপস্থাপন করা হয়েছে। ২০১৪ সালে ভারতের লোকসভা নির্বাচনের আগে বিজেপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, ভারত থেকে এক কোটি অবৈধ বাংলাদেশী বিতাড়ন করা হবে। কয়েক মাস আগে আসামে বসবাসরত বাঙালিদের বাংলাদেশী আখ্যায়িত করে এবং বাংলাদেশ থেকে এসে সেখানে অবৈধভাবে বসবাস করছে বলে বলা হয়েছে। তাদের বিতাড়িত করার জন্য প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে। গত ২১ ফেব্রæয়ারি ভারতের সেনাপ্রধান জেনারেল বিপিন রাওয়াত বলেছেন, আসামসহ উত্তর-পূর্ব ভারতকে পাকিস্তান দখলে নিতে চায়। বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব নিয়ে এ ধরনের আপত্তিকর কথা ক্রমাগত বলা হচ্ছে। বলা বাহুল্য, তারই ধারাবাহিকতায় তোগাড়িয়া উল্লেখিত বক্তব্য দিয়েছেন। অত্যন্ত দুঃখের বিষয়, ভারতীয় নেতাদের এসব আপত্তিকর ও হুমকিমূলক বক্তব্য নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের প্রতিবাদ দূরে থাক ন্যূনতম মন্তব্যও করা হয়নি। সরকার ‘স্পিকটি নট’ হয়ে রয়েছে। অথচ বাংলাদেশে কোনো রাষ্ট্রদূতের বক্তব্য নিয়ে সঙ্গে সঙ্গে সরকারের পক্ষ থেকে তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত এবং রাষ্ট্রদূতকে ডেকে প্রতিবাদ করা হয়। অন্যদিকে আমাদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব নিয়ে ভারতের ক্ষমতাসীন দলের নেতা থেকে শুরু করে উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের নেতারা যখন আপত্তিকর বক্তব্য প্রদান করে তখন তার কোনো প্রতিক্রিয়া ও প্রতিবাদ করা হয় না। শুধু সরকার নয়, দেশের কোনো রাজনৈতিক দলের তরফেও এ নিয়ে প্রতিবাদ করতে দেখা যায় না। এক্ষেত্রে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মূল দায়িত্ব হলেও সে চুপ করে থাকে। বলার অপেক্ষা রাখে না, ভারতের সাথে তথাকথিত বন্ধুত্বের নামে বাংলাদেশ তার সব চাওয়া-পাওয়া পূরণ করে দিয়েছে। ভারত যা চেয়েছে, তার সবই সে কড়ায়-গন্ডায় আদায় করে নিয়েছে। বিনিময়ে কিছু পায়নি। কিছুদিন আগে সরকারের সর্বোচ্চ মহল থেকেও বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ভারতকে যা দিয়েছে তা সে আজীবন মনে রাখবে। বাংলাদেশ কী পেয়েছে, তা বলা হয়নি। এই যে ভারতের চাহিদা মতো তাকে সব দেয়া হয়েছে, তারপরও তার রাজনৈতিক নেতারা যখন আমাদের দেশের স্বাধীনতার অস্তিত্ব নিয়ে কথা বলে, তখন কেন সরকার কোনো ধরনের প্রতিবাদ করে না? সরকারের কেন এই অবনত মানসিকতা? আমাদের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব নিয়ে ভারতের নেতারা যখন-তখন যা খুশি তা বলে যাবে, এর কোনো প্রতিবাদ হবে না, এটা কি করে ভাবা যায়? এই প্রতিবাদ না হওয়া নতজানু পররাষ্ট্রনীতি ছাড়া আর কী হতে পারে? ত্রিশ লাখ শহীদের আত্মদান এবং দুই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমহানির বিনিময়ে আমরা যে স্বাধীনতা অর্জন করেছি, সেই স্বাধীনতার প্রতি কটাক্ষ কিংবা বিরূপ মন্তব্য বরদাশতযোগ্য হতে পারে না। এর যথাযথ প্রতিবাদ না হওয়া দুঃখজনক।
ভারতের ক্ষমতাসীন দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতা, উগ্র হিন্দুত্ববাদী নেতা থেকে শুরু করে সেনাবাহিনী প্রধানের বিভিন্ন সময়ের বক্তব্যে এটাই স্পষ্ট হয়, তারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে গুরুত্ব দেয় না। অন্যদিকে এসব বক্তব্যের প্রতিবাদের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকার ও তার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নিশ্চুপ থাকায় ভারত আরও প্রশ্রয় পাচ্ছে। আমরা প্রতিবেশির সাথে সমমর্যাদায় বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতে চাই। তার অর্থ এই নয়, বন্ধুত্বের নামে বৃহৎ প্রতিবেশি আমাদের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব নিয়ে যাচ্ছে তাই বলে যাবে, তার অবমূল্যায়ন করবে। আমরা আশা করব, বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি হুমকি স্বরূপ ভারতীয় নেতাদের বিভিন্ন সময়ে দেয়া বক্তব্য এবং সর্বশেষ তোগাড়িয়া যে বক্তব্য দিয়েছেন সরকারের পক্ষ থেকে এর সরাসরি প্রতিবাদ ও বক্তব্য রাখা হবে। পাশাপাশি অন্যান্য রাজনৈতিক দলও ভারতীয় নেতাদের ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানাবে। জনসাধারণকেও এ ব্যাপারে সচেতন ও সোচ্চার হতে হবে।



 

Show all comments
  • md ২২ জুলাই, ২০১৮, ৩:২০ এএম says : 0
    Amra gnrib hote pari kintu sadin. + muslim amader potibad janie din varot jeno moder deser beapare nak golano bondo kore.jati somggo akono roese.tai gil te parsena .এখানে আপনি আপনার মন্তব্য করতে পারেন
    Total Reply(0) Reply
  • হাসিব ইকবাল কানন ২২ জুলাই, ২০১৮, ১১:৫৬ এএম says : 0
    আসসালামুয়ালাইকুম জনাব, আপনাদের সম্পাদকীয় মেইল টা কি পাওয়া যাবে?
    Total Reply(0) Reply
  • Nannu chowhan ২২ জুলাই, ২০১৮, ১:৩৩ পিএম says : 0
    Manonio shompadok,apnara shompadioke ja lekhesen iha amader desher manusher moner kotha eaijonno ami apnake mobarokbad janai,tar shathe ami eaktu jog kore bolte chai eto kisu korar por amader shorkarer kono protibadto nai borong nijshrthohin vabe varotke shob dia dei.amader deshe kisu potrika ase jara eai shomprke kono din eakta likha sapaina o protibado korena,apnake eai kolamti sapanor jonno oshesh dhonnobad....
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভারত


আরও
আরও পড়ুন