২০৩৫ সালের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত মোটা হবেন ৪০০ কোটি মানুষ
২০৩৫ সালের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত ওজন বা মোটা হবেন বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি মানুষ। সংখ্যার বিচারে যা
একটি সুন্দর ফুল বাগানকে বিনষ্ট করার জন্য যেমনি একটি হুতোম পেঁচাই যথেষ্ট। তেমনি তরুণ সমাজকে বিনষ্ট করার জন্য মাদকই যথেষ্ট। মাদক একটি সামাজিক ব্যাধি। বর্তমানে মাদকাসক্তি আমাদের সমাজে এক সর্বনাশা ব্যধিরুপে বিস্তার লাভ করছে। আজকাল তরুণ প্রজন্মের কাছে অতি সহজেই মাদকদ্রব্য পৌঁছে গেছে। । সাধারণত মানুষ নেশার জন্য যা ব্যবহার করে তাই মাদক দ্রব্য। আবার সেটা হতে পারে ইনজেকশন, ধূমপান বা যে কোন মাধ্যমে। বিভিন্ন মাদক দ্রব্যের মধ্যে রয়েছে যেমন- হিরোইন, কোকেন, আফিম, গাঞ্জা, ফেনসিডিল বিভিন্ন রকমের ইনজেকশন, ইয়াবা ট্যাবলেট।
বর্তমান সময়ে গোটা দেশে যত সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, ধর্ষণ, অপহরণ বাণিজ্যের মত সংঘবন্ধ অপরাধ, মাস্তানি হয়ে থাকে মাদকাসক্তিকে তার অন্যতম প্রধান কারণ। একটি সবল জাতি গঠনের জন্য তরুণ প্রজন্মের উপযুক্ত পরিচর্যা উপযুক্ত পরিচর্যা দরকার। শিক্ষা ও স্বাস্থ্য গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। এরচেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ অশিক্ষা ও ভুল চিকিৎসা থেকে বেঁচে থাকা। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য প্রকৃত শিক্ষা দেয়া যাচ্ছে কি না সেই ব্যাপারে বিতর্কের মধ্যে জানা যাচ্ছে-তরুণদের বড় একটি অংশ মাদকের দংশনের শিকার। মধ্য যুগে বিশাল চীনকে বশীভুত ও চরম দুর্বল করে রেখেছিল ঔপনিবেশিক শক্তিগুলো । মাদকের বিস্তারের মাধ্যমেই এটি সম্ভব হয়েছিল। বাংলাদেশকে এমন পরিণতি থেকে বাঁচতে হলে ব্যাপক সচেতনতামূলক উদ্যোগ এখনই নিতে হবে। সংবাদমাধ্যমে মাদক বিস্তারের যে খরব পাওয়া যাচ্ছে, তা ভয়াবহ । বিপুলভাবে ছড়িয়ে পড়া মাদকের বিরুদ্ধে কড়া অবস্থান নিতে না পারলে বাংলাদেশ ভবিষ্যতে অসুস্থ হয়ে পড়বে।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর ও আইনশৃঙ্ঘলা রক্ষাকারী বাহিনীর উদ্ধৃতি দিয়ে সংবাদমাধ্যমে জানা যাচ্ছে- বছরে প্রায় চার কোটি পিস ইয়াবা উদ্ধার হচ্ছে। জাতিসঙ্ঘ মাদক নিয়ন্ত্রক সংস্থার মতে, উদ্ধার হওয়া ইয়াবার সংখ্যা বিক্রি হওয়া মাদকের সংখ্যার মাত্র ১০ শতাংশ। সেই হিসাবে ইয়াবা বিক্রি হচ্ছে ৪০ কোটি পিস। এর বাজারমূল্য প্রায় ছয় হাজার কোটি টাকা। জাতিসঙ্ঘ মাদক ও অপরাধবিষয়ক কার্যালয়ের তথ্য মতে, এই অঞ্চলে ইয়াবা সরবরাহ করে মিয়ানমার। প্রতিবেশী দেশগুলো মাদকের বিরুদ্ধে সতর্ক অবস্থান নেয়ায় সেসব দেশে মাদক পাচার করতে পারে না মিয়ানমার । অন্য দিকে বাংলাদেশে ক্রমে এর বিস্তার বেড়ে চলেছে। দৈনিক একটি জাতীয় পত্রিকার মাধ্যমে জানতে পারলাম যে, ২০১০ সালে দেশে মাদকসেবীর সংখ্যা ছিল ৪৬ লাখ, বর্তমানে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৬ লাখে। প্রাপ্ত তথ্য মতে, মাদকের সবচেয়ে বড় শিকার তরুণেরা। প্রতি ১৭ তরুণের মধ্যে একজন মাদকাসক্ত। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ বার্ষিক প্রতিবেদন থেকে জানা যাচ্ছে, ২০১২ সালে মোট মাদকসেবীর মধ্যে ইয়াবায় আসক্ত রোগীর সংখ্যা ছিল প্রায় ছয় শতাংশ। কতটা দ্রæত ইয়াবার ব্যবহার বাড়ছে পরিসংখ্যান থেকে সেটা বোঝা যায় । ২০১৬ সালে এ হার বেড়ে প্রায় ৩২ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। ২০১১ সালে জব্দ হওয়া ইয়াবার সংখ্যা ছিল ১৩ লাখ ৬০ হাজার, আর ২০১৬ সালে সেটা দাঁড়ায় দুই কোটি ৯৪ লাখে। মাত্র এক বছরের ব্যবধানে ২০১৭ সালে সেটা দাঁড়ায় তিন কোটি ৮০ লাখ ৯১ হাজার পিসে। অন্য দিকে মাদক কারবারি হিসেবে অনেকের আত্মপ্রকাশ ঘটছে।
এমনও পরিবার পাওয়া যাচ্ছে, যেখানে সবাই মাদক কারবারের সাথে জড়িত। একইভাবে কোনো এলাকা কুখ্যাতি অর্জন করছে মাদক চোরাচালানিদের স্বর্গ হিসেবে। এর মূল কারণ হচ্ছে, অল্প সময়ে বিপুল বিত্তবৈভবের মালিক হওয়া যায় মাদক কারবার করে। একজন ছোট দোকানি যার বিরুদ্ধে ইয়াবা কারবার করার প্রমাণ রয়েছে, তার অ্যাকাউন্টে পাওয়া গেছে ১১১ কোটি টাকা। কোনো জাতিকে যদি দুর্বল করে দিতে হয় তাহলে তার তরুণ প্রজন্মকে মাদকাসক্ত করে দাও। বাংলাদেশের সীমান্ত রয়েছে দু’টি দেশের সাথে। প্রথমে ভারত থেকে আমাদের এখানে নানা ধরনের মাদক আসত। পরে মিয়ানমারও একই পথ অবলম্বন করছে। ধারণা করা হচ্ছে, ইয়াবা বিক্রি করে বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমারের আয় হচ্ছে বছরের তিন হাজার কোটি টাকা। টাকার এই অঙ্ক বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর বাজেটের সমান। এই শুরুতর পরিস্থিতি পরিবর্তনের জন্য দরকার সমন্বিত মাদক প্রতিরোধ। সরকার, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও নাগরিক সমাজ সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে এই উদ্যোগে। তাই আসুন ‘মাদককে না বলি, মাদক মুক্ত সুস্থ-সুন্দর দেশ গড়ি’ ¯েøাগানে নিজে সচেতন হই এবং অন্যকে সচেতন করে মাদকের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলি। আর মাদকাসক্তি তরুণ-তরুণীদেরকে মাদকের নীল দংশন থেকে রক্ষা করি এবং সুস্থ সুন্দর জীবন গড়ার সুযোগ করে দিই।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।