পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
গাজীপুর সিটি নির্বাচনে যেন খুলনা সিটি নির্বাচনেরই পুনরাবৃত্তি ঘটল। গাজীপুর ও খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের একই সাথে তফশিল ঘোষিত হয়েছিল। একটি রিট পিটিশনের কারণে গাজীপুর সিটি নির্বাচন স্থগিত হয়ে যায়। গত ১৫ মে যথারীতি অনুষ্ঠিত হয় খুলনা সিটি নির্বাচন। দেশের স্থানীয় নির্বাচনে অনিয়ম-কারচুপির এক নতুন মডেল হিসেবে পরিচিতি লাভ করে এই নির্বাচন। বিএনপি প্রার্থীর পোলিং এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়া, ভয়ভীতি প্রর্দশন করা এবং জোর করে নৌকার ব্যালটে সিল মেরে বাক্স ভরে দেয়ার মত ঘটনা সংঘটিত হয় এই নির্বাচনে। নির্বাচনে নানা অনিয়ম ও ভোট জালিয়াতির তথ্য সম্পর্কে বিএনপিসহ প্রতিদ্ব›দ্বী প্রার্থীদের অভিযোগ, গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত হলেও সরকারীদলের প্রার্থী ব্যাপক ব্যাবধানে জয়লাভের পর নির্বাচন শান্তিপূর্ণ, সুষ্ঠু ও অবাধ হয়েছে বলে দাবী করে নির্বাচন কমিশন। গাজীপুর সিটি নির্বাচনের আগেও নির্বাচনে বিজয় এবং অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষতার প্রশ্নে সরকারীদল ও বিরোধি দলের প্রার্থীদের তরফ থেকে যে আশাবাদ ও আশঙ্কার কথা প্রকাশিত হয়েছিল তাতে উভয়েই গাজীপুরে খুলনার পুনরাবৃত্তির আশা ও আশঙ্কা করেছিল। গাজীপুর সিটি নির্বাচন খুলনা সিটি নির্বাচনের চেয়েও বেশী অনিয়ম-কারচুপির দৃষ্টান্ত স্থাপিত হয়েছে বলে নানা মাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যে জানা যায়।
বিরোধীদলের এজেন্ট বের করে দিয়ে নৌকায় সিল মারা, ভোটকেন্দ্রের গেটে তালা দিয়ে সিল মেরে বাক্স বোঝাই করা, শত শত ভোটার লাইনে থেকে ভোট নিতে না পারলেও ব্যালট শেষ হয়ে যাওয়ার মত ঘটনা ঘটেছে এই নির্বাচনে। বিভিন্ন কারনে নির্বাচন কমিশন ৯ কেন্দ্রের ভোট স্থগিত করে দিলেও শত শত চার শতাধিক ভোটকেন্দ্রের মধ্যে অধিকাংশ কেন্দ্রেই এ ধরনের অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে নির্বাচন স্থগিত রাখতে বিএনপি প্রার্থীর দাবী আমলে নেয়নি নির্বাচন কমিশন। ভোটকেন্দ্রের বাইরে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ, ভোটারদের লম্বা লাইন দেখে বাইরে থেকে বোঝার উপায় ছিলনা যে ভেতরে আসলে কী ঘটেছে। নির্বাচনে দায়িত্ব পালনে রিপোর্টারদের জন্য পাস ইস্যু এবং নির্বাচন পর্যবেক্ষক নির্বাচনেও নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ ছিল। অন্যদিকে নির্বাচনের আগে বিএনপি নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার হয়রানির অভিযোগসহ স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের বিরুদ্ধে নির্বাচনকে সরকারী দলের পক্ষে প্রভাবিত করার যে সব অভিযোগ তোলা হয়েছিল, নির্বাচনের দিন তার কিছু বাস্তব নমুনাও দেখা গেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিপুল সংখ্যক সদস্য, র্যাব ও বিজিবি মোতায়েন থাকলেও কয়েকটি ভোটকেন্দ্র স্থগিত করা ছাড়া বেশীরভাগ ভোটকেন্দ্রের অভ্যন্তরে এবং বাইরে সরকারীদলের ক্যাডারদের উপস্থিতির বিরুদ্ধে এসব বাহিনীকে তেমন সক্রিয় ভ‚মিকা রাখতে দেখা যায়নি। এমন আশঙ্কা সামনে রেখেই বিএনপি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েনের দাবী জানিয়েছিল। অনিয়ম-কারচুপি ও কেন্দ্র দখলের মাধ্যমে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে বিজয় নিশ্চিত করার যে দৃষ্টান্ত স্থাপিত হয়েছে তাতে নিরপেক্ষ ও অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশনের সক্ষমতা যেমন প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে, একইভাবে নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের দাবীর যৌক্তিকতাও প্রমানিত হয়েছে।
বাইরে দৃশ্যত শান্তিপূর্ণ ভেতরে যত অনিয়ম-কারচুপি ও দখলবাজি, খুলনা ও গাজীপুর সিটিতে নির্বাচনের এমন বাস্তবতারই প্রতিফলন ঘটেছে। নির্বাচনকালীন সরকার এবং নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা ও আইনগত ক্ষমতার সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করা সম্ভব না হলে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও এমন অনিয়ম-কারচুপি ও জবরদখলের পুনরাবৃত্তি ঘটবে বলে বিরোধী দলের পক্ষ থেকে আশঙ্কা প্রকাশ করা হচ্ছে। স্থানীয় নির্বাচনগুলোতে নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসন নিরপেক্ষ ভ‚মিকা পালন করলে সংবিধান অনুসারে দলীয় সরকারের অধীনে অংশগ্রহণমূলক ও ক্রেডিবল নির্বাচনের দাবী করতে পারত সরকার ও নির্বাচন কমিশন। গতানুগতিক সংস্কৃতির অনুসরণে ইতিমধ্যেই নির্বাচন কমিশন এবং সরকারীদল গাজিপুরে নির্বাচন শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠু হয়েছে বলে দাবী করেছে। পক্ষান্তরে এজেন্টদের বের করে দিয়ে সিল মারার অভিযোগ করেছে বিএনপি। সরকার এবং বিরোধিদলের দাবী ও পাল্টা অভিযোগের বাইরে সাধারণ ভোটাররাই যে কোন নির্বাচনের নিয়ামক শক্তি। শেষ মুহূর্তে উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা জারি হলেও নির্বাচনের আগে বিরোধিদলের নেতা-কর্মীদের পুলিশি হয়রানি, সম্ভাব্য এজেন্টদের ভয়ভীতি প্রর্দশন, অধিকাংশ কেন্দ্রে ধানের শীষের এজেন্টদের অনুপস্থিতি এবং ভোটের দিন বহিরাগত ক্যাডারদের সমাবেশ অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের উদাহরণ নয়। উপরন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে গাজীপুর সিটি মেয়রসহ স্থানীয় নির্বাচনে বিজয়ী বিরোধিদলীয় মেয়র-কাউন্সিলরদের প্রতি সরকারের হয়রানিমূলক আচরণ এবং দায়িত্ব পালনে বাঁধা প্রদানের যে সব উদাহরণ সৃষ্টি হয়েছে, তাতে প্রকারান্তরে স্থানীয় নির্বাচনে বিরোধী দলের প্রার্থীদের অনুক‚লে ভোট দিতে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে এবং নির্বাচনে সত্যিকারের জনমতের প্রতিফলনকে বাঁধাগ্রস্ত বা প্রভাবিত করা হয়েছে। কোন গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় নির্বাচনকে প্রভাবিত করার এমন প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ তৎপরতা গ্রহণযোগ্য হতে পারেনা। এহেন বাস্তবতার নিরিখে আসন্ন তিনটি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন এবং আগামী জাতীয় নির্বাচনে সব রাজনৈতিকদল ও ভোটারদের আস্থা ও অংশগ্রহন নিশ্চিত করতে নির্বাচনকালীন সরকারের নিরপেক্ষতা এবং নির্বাচনব্যবস্থায় গুণগত পরিবর্তনের কোন বিকল্প নেই।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।