পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
২৬ জুন অনুষ্ঠিতব্য গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপির নেতাকর্মীদের গ্রেফতার ও হয়রানি করার অভিযোগ উঠেছে। দলটির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, বুধবার দিবাগত রাত থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত তার নির্বাচন পরিচালনা কমিটির ৯ জনকে আটক করেছে পুলিশ। অথচ ওই বুধবারই নির্বাচনে সবপক্ষকে সমান সুযোগ দেয়ার প্রতিশ্রæতি দিয়েছিলেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার। প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও জানিয়েছিলেন, কোনো পক্ষকে হয়রানি করা হবে না। তবে নির্বাচন কমিশনরের বক্তব্যের ২৪ ঘন্টা পার না হতেই বিএনপির নেতাকর্মীদের গ্রেফতার ও হয়রানি করা শুরু হয়েছে। যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে, তাদের নামও ইতোমধ্যে পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। গাজীপুরের পুলিশ সুপার জানিয়েছেন, এতজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে কিনা তা তার জানা নেই। পরোয়ানাভুক্ত দুজনকে গ্রেফতারের কথা তিনি স্বীকার করেন। তার দায়িত্বাধীন এলাকায় কাকে, কখন এবং কতজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে, তা তার জানা থাকবে না, এটা বিশ্বাস করা কঠিন। বিশেষ করে যখন স্পর্শকাতর একটি সিটি কর্পোরেশন এলাকায় বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার ও হয়রানির শিকার হতে হয়, তখন তার অজানা থাকার কথা নয়। এটা অনুমাণ করা কঠিন নয়, নির্বাচনের আগ পর্যন্ত বিএনপির নেতাকর্মীরা গণগ্রেফতার ও হয়রানির শিকার হতে পারেন। অন্যদিকে হাইকোর্টও বিএনপি নেতাকর্মীদের কেন গণগ্রেফতার করা হচ্ছে, এর জবাব চেয়ে সরকারকে চার সপ্তাহের একটি রুল জারি করেছেন। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে দেখা যাচ্ছে, গাজীপুরে এসবের কোনো তোয়াক্কা করা হচ্ছে না। নির্বাচন কমিশনকেও তেমন কার্যকর ভূমিকায় দেখা যাচ্ছে না। তার দায়সারা বক্তব্য, অভিযোগ পেলে খতিয়ে দেখব। এই খতিয়ে দেখতে দেখতে দেখা যাবে, নির্বাচন বিতর্কিত ও প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েছে।
রাজধানীর অতি সন্নিকটে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন অন্য যেকোনো সিটি নির্বাচনের চেয়ে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ নির্বাচন দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষকরা খুব কাছ থেকে পর্যবেক্ষণ করবেন। এতে যেকোনো অনিয়ম সহজেই দৃষ্টিগোচর হবে। নির্বাচন কমিশন যেভাবে বক্তব্য রাখছে, তাতে মনে হচ্ছে নির্বাচন কমিশন খুব সিরিয়াস। অথচ বাস্তবে তার তেমন কোনো প্রতিফলন নেই। খুলনা সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনের আগেও যে কোনো অনিয়মের বিরুদ্ধে কঠোর হুশিয়ারি উচ্চারণ করা হয়েছিল। দেখা গেছে, সেই নির্বাচনটি দেশে-বিদেশে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। এমনকি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত বার্নিকাট পর্যন্ত দাবী জানিয়েছেন, খুলনা নির্বাচনের অনিয়মের বিষয়টি তদন্ত করতে হবে। এ থেকে বুঝতে অসুবিধা হয় না, সেই নির্বাচনটি আপাত দৃষ্টিতে শান্ত হলেও ভেতরে ভেতরে প্রশাসন ও ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী নেতাকর্মীরা বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের গণহারে গ্রেফতার, ভয়ভীতি ও হুমকি দিয়ে এলাকাছাড়া করে নির্বাচন করেছে। এ নির্বাচনকে স্থানীয় নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা এক নতুন অপকৌশলের নির্বাচন হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। সে সময় বিএনপির প্রার্থী ও নেতারা নির্বাচন কমিশনে অভিযোগের পর অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার পাননি। নির্বাচন কমিশন বিষয়টি দেখছি, দেখব বলে তাদের আশ্বস্ত করেছে। অর্থাৎ বিএনপির অভিযোগের ব্যাপারে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে সে কেবল লিপ সার্ভিস দিয়েছে। অন্যদিকে ক্ষমতাসীন দল যে দাবী করেছে, তা তাৎক্ষণিকভাবে বাস্তবায়ন করেছে। এ থেকে প্রতীয়মাণ হয়, নির্বাচন কমিশন সরকারের আজ্ঞাবহ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছে। নির্বাচন কমিশনের এ ভূমিকা নিয়ে নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা তুমুল সমালোচনা করেছেন। তাতে অবশ্য নির্বাচন কমিশনের কিছু যায় আসেনি। ক্ষমতাসীন দলের সাথে সুর মিলিয়ে ‘নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে’ বলে বক্তব্য দিয়ে ইতি টেনেছে। এখন গাজীপুর নির্বাচনেও খুলনার নির্বাচনী ‘স্টাইল’ পরিলক্ষিত হচ্ছে। গত বুধবার প্রধান নির্বাচন কমিশনার নির্বাচন সুষ্ঠু করার জন্য বেশ কড়া বক্তব্য দিয়েছেন। সেখানের প্রশাসনের কোনো কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ পেলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার হুশিয়ারিও দিয়েছেন। তার এ বক্তব্যের পরপরই বিরোধীদল বিএনপির নির্বাচনী পরিচালনা কমিটির ৯ জনকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে, আতঙ্ক ছড়িয়ে দলটির নেতাকর্মীদের হয়রানি ও গ্রেফতার করছে বলে জোরালো অভিযোগ উঠেছে। পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, যাদের বিরুদ্ধে পরোয়ানা রয়েছে তাদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠতে পারে, সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে পরোয়ানাভুক্ত হোক আর পরোয়ানা ছাড়া হোক, বিরোধীদলের নেতাকর্মীদের গ্রেফতারের বিষয়টি নির্বাচনকালীন সময়টিতে কি স্থগিত করা যেত না? নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ ও লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড ঠিক রাখার জন্য এ সময়টিতে গ্রেফতার না করে অনেক আগে বা পরে কি গ্রেফতার করা যেত না? বিরোধী নেতাকর্মীদের গ্রেফতারের জন্য নির্বাচনের এ সময়টিকেই কেন বেছে নেয়া হচ্ছে? নির্বাচনকে সামনে রেখে বিরোধীদলের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার, হুমকি ও ভয়ভীতি দেখিয়ে দৌড়ের ওপর রাখার অর্থই হচ্ছে, ক্ষমতাসীন দলকে একচ্ছত্র প্রভাববিস্তারের সুযোগ করে দেয়া। যেমনটি করা হয়েছিল, খুলনার সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে। গাজীপুরের নির্বাচনের পরিবেশ দেখে পর্যবেক্ষকদের মনে হতে পারে, খুলনার মতোই আপাতদৃষ্টিতে আরেকটি ‘আইওয়াশ’ মার্কা সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের মাঠ তৈরি করা হচ্ছে। বিস্ময়ের বিষয় হচ্ছে, এক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের কার্যকর কোনো ভূমিকা দেখা যাচ্ছে না। বিরোধীদলের অভিযোগের পরও সে গতানুগতিক বক্তব্যের মধ্যে সীমাবদ্ধ রয়েছে। এতে প্রতীয়মাণ হচ্ছে, নির্বাচন কমিশন ক্ষমতাসীন দল বা সরকারের প্রভাবের বাইরে যেতে পারছে না। আজ্ঞাবহ হয়েই থাকতে চায় এবং মেরুদÐ সোজা করে দাঁড়াতে চায় না।
সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনের সময় সংশ্লিষ্ট এলাকার প্রশাসন নির্বাচন কমিশনের অধীনে থাকার কথা। সেখানে সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী নির্বাচন কমিশন। পর্যবেক্ষকরা দেখছেন, কমিশনের আচরণে তা যথাযথভাবে প্রকাশিত হচ্ছে না। প্রশাসনের ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ না করে, উল্টো প্রশাসনের ওপর নির্ভর করার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন করা তার পক্ষে আয়োজন করা যে দুরুহ হবে তা নিশ্চিত করেই বলা যায়। যদি গাজীপুর সিটি কর্পরেশনের নির্বাচন খুলনার মতোই হয়, তবে এ কমিশনকে যে অত্যন্ত কঠোর সমালোচনার মুখোমুখি হতে হবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। ইতোমধ্যে বিএনপির শীর্ষস্থানীয় নেতারা স্পষ্টতই ঘোষণা দিয়েছেন, গাজীপুরের নির্বাচন তার পর্যবেক্ষণ করছেন। এ নির্বাচনের সুষ্ঠুতার ওপর বাকী তিন সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে তার অংশগ্রহণ করা না করার বিষয়টি নির্ভর করছে। যদি তাই হয়, তবে তা আগামীতে রাজনীতিকে অস্থিতিশীল ও সংঘাতের দিকে ঠেলে দিতে পারে, যা মোটেই কাম্য হতে পারে না। অনিবার্যভাবে এর দায়ভার নির্বাচন কমিশনের ওপর বর্তাবে। বলা যায়, আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে নির্বাচন কমিশনের জন্য গাজীপুরসহ বাকী সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন ‘এসিড টেস্ট’ হয়ে আছে। আমরা মনে করি, গাজীপুরে পুলিশ কর্তৃক বিএনপির নেতাকর্মীদের হয়রানি, গ্রেফতার ও ভয়ভীতি দেখানোর যে অভিযোগ উঠেছে, তা অনতিবিলম্বে খতিয়ে দেখে নির্বাচন কমিশনকে দ্রæত ব্যবস্থা নিতে হবে। সবদলের জন্য সমতল মাঠ নিশ্চিত করার জন্য সক্রিয় হয়ে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।