পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
কোরীয় যুদ্ধের পর প্রায় ৭ দশক ধরে পারস্পরিক বৈরীভাবাপন্ন দেশ উত্তর কোরিয়া ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে প্রথমবারের মতো আনুষ্ঠানিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হলো। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে দুই দেশের দুই শীর্ষ নেতা পরস্পরের প্রতি পারমাণবিক হুমকিসহ আক্রমণাত্মক ভাষায় কথা বলছিলেন। হুমকি-পাল্টা হুমকি এমন পর্যায়ে উপনীত হয়েছিল, যে কোন সময় তা সামরিক সংঘাতে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছিল। গত সোমবার সিঙ্গাপুরের সান্তোসা দ্বীপের একটি হোটেলে অনুষ্ঠিত দুই নেতার বৈঠকের মধ্য দিয়ে যুদ্ধপরিস্থিতি এখন একটি বিশেষ সম্পর্কের দিকে মোড় নিতে যাচ্ছে বলে অনেকের ধারণা। কিমের সাথে বৈঠক শেষে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কিমকে একজন সৎ, অকপট ও মেধাবী নেতা বলে অভিহিত করার পাশাপাশি উত্তর কোরীয় নেতার সাথে একটি স্পেশাল টাই বা বিশেষ বন্ধনের ইঙ্গিত দিয়েছেন। পক্ষান্তরে উত্তেজনা কমিয়ে সম্পর্ক স্বাভাবিক পর্যায়ে আনতে কিম জং উন মিসাইল পরীক্ষা স্থগিত রাখতে সম্মত হয়েছেন। দুই নেতার বৈঠক, যৌথ ঘোষণায় যা’ই থাক না কেন, এতদিনের উত্তপ্ত বৈরিতা সিঙ্গাপুরে এসে শীতল ও বিশেষ সম্পর্কে রূপ নেয়ার একটি প্রাথমিক লক্ষণ অনেকটাই স্পষ্ট। দুই পক্ষ থেকেই বৈঠকের সাফল্যের দাবি করায় একে একটি উইন উইন সিচুয়েশন বলা যায়। দুই নেতার বৈঠকের মধ্য দিয়ে কোরীয় উপদ্বীপে শান্তির বার্তা কতটা বাস্তব রূপ লাভ করে তা তাদের পরবর্তী কর্মকান্ড থেকেই স্পষ্ট হয়ে উঠতে পারে।
কোরীয় যুদ্ধ ও কোরিয়া বিভক্তি বিংশ শতকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর আঞ্চলিক- আন্তর্জাতিক যুদ্ধ ও রাজনৈতিক বিরোধগুলোর অন্যতম। কোরিয়ার দুই অংশের রাজনৈতিক সংঘাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জড়িয়ে পড়া এবং তা বর্তমান সময় পর্যন্ত জিইয়ে রাখার পেছনে তাদের ভূ-রাজনৈতিক ও সাম্রাজ্যবাদী স্বার্থ আছে। সত্তর বছরে উত্তর কোরিয়ার সাথে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক সম্পর্ক গড়ে উঠেনি। ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর দুই দেশের সম্পর্ক যখন অতীতের যে কোন সময়ের চেয়ে উত্তপ্ত ও বিস্ফোরণমুখী হয়ে ওঠে আবার এই সময়েই দুই বৈরী শক্তির শীর্ষ নেতার হাস্যমুখে করমর্দন ও এক টেবিলে বসার পর সমঝোতা ও ইতিবাচক মন্তব্য করার মধ্য দিয়ে এক নতুন ইতিহাস সৃষ্টি হল। কোরীয় ও পশ্চিমা গণমাধ্যমে এই বৈঠকের সাফল্য-ব্যর্থতা নিয়ে নানামাত্রিক মূল্যায়ণ প্রকাশিত হচ্ছে। তবে এ কথা নিশ্চিত করেই বলা যায়, আন্তরিকতা থাকলে বরাবর বৈরী শক্তি এক টেবিলে বসে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধানে ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারে। অসম্ভব নয় এ ক্ষেত্রে ট্রাম্প-কিমের বৈঠক অস্থিতিশীল, উত্তেজনাপূর্ণ মধ্যপ্রাচ্য ও বিশ্বের জন্য একটি চমৎকার ঐতিহাসিক দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। বরফ গলার শুরু হয়েছিল গত এপ্রিলে দুই কোরীয় সীমান্তে শীর্ষ নেতার মিলিত হওয়া ও আন্তরিক শুভেচ্ছা বিনিময়ের মধ্য দিয়ে। গত ২৭ এপ্রিল উত্তর কোরীয় নেতা কিম জং উন এবং দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জায়ে’র মধ্যকার সীমান্তে সম্প্রীতি বৈঠকটি দুই কোরিয়ার সম্মিলন ও সম্পর্কের ক্ষেত্রে নতুন প্রত্যাশা জাগিয়ে তুলেছিল।
সিঙ্গাপুরে ঐতিহাসিক বৈঠক ও তিনদফা চুক্তি স্বাক্ষরের পর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছেন, ‘বিশ্ব একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন প্রত্যক্ষ করবে’। তিন দফা সমঝোতা চুক্তির মধ্যে উত্তর কোরিয়া ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে কাজ করা, কোরীয় উপদ্বীপে শান্তি প্রতিষ্ঠার অঙ্গিকার এবং এপ্রিলের ২৭ তারিখে পানমুনজন সীমান্তে অনুষ্ঠিত দুই কোরীয় নেতার শীর্ষ বৈঠকের ঘোষণা নিশ্চিতকরণ ও পারমাণবিক অস্ত্রমুক্ত করার কথা বলা হয়েছে। সিঙ্গারপুর বৈঠকে অর্জিত সমঝোতাকে স্বাগত জানিয়েছে চীন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে আরোপিত অবরোধ প্রত্যহারের কোন ঘোষণা দেয়নি। ইতিপূর্বে আর কখনো কোন মার্কিন প্রেসিডেন্ট উত্তর কোরিয়ার কোন শীর্ষ নেতার সাথে এমন বৈঠক করেননি। তবে হোয়াইট হাউজ থেকে বিদায় নেয়ার পরে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার ও সেক্রেটারি অব স্টেট হেনরি কিসিঞ্জার উত্তর কোরিয়ার প্রতিষ্ঠাতা কিম উল সুংয়ের সাথে সাক্ষাৎ করেছিলেন। এরপর সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিন্টন ২০০৯ সালে উত্তর কোরিয়া সফর করে কিম জং উনের পিতা কিম জং ইলের সাথে সাক্ষাৎ করেছিলেন। এসব অনানুষ্ঠানিক সাক্ষাৎ দুই দেশের সম্পর্কোন্নয়নে তেমন কোন ভূমিকা রেখেছে বলে কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় না। অনেক দেরিতে হলেও উত্তর কোরিয়া এবং মার্কিন শীর্ষ নেতার মধ্যকার বৈঠক বিশ্বসম্প্রদায়ের কাছে শান্তির বার্তা দিয়েছে। এ জন্য দুই নেতার প্রতি আমাদের অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা। একইভাবে মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও মধ্যপ্রাচ্যের নেতাদের অনেক কিছুই করণীয় আছে। ট্রাম্প-কিম বৈঠকের পথ ধরে বিশ্বের বৈরী ও সংঘাতময় শক্তিগুলোর কাছে শান্তির সপক্ষে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনের প্রত্যাশা করছে বিশ্বসম্প্রদায়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।