Inqilab Logo

সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ট্রাম্প-কিম বৈঠক‘নতুন সম্পর্কে’ নজর উ. কোরিয়ার, ‘মতপার্থক্য কমিয়ে আনতে’ তৎপর যুক্তরাষ্ট্র

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১২ জুন, ২০১৮, ১২:০০ এএম

ট্রাম্প-কিম বৈঠকের মধ্য দিয়ে ওয়াশিংটন-পিয়ংইয়ং ‘নতুন সম্পর্ক’ প্রতিষ্ঠা হতে পারে বলে আভাস দিয়েছে উত্তর কোরীয় রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম। এদিকে মার্কিন কর্মকর্তারা মতপার্থক্য কমিয়ে আনতে এই বৈঠকে বসেছেন উত্তর কোরীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে। তাদের আশা, বৈঠকের মধ্যে দিয়ে কোরীয় উপদ্বীপে পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ সম্ভব হবে। বৈঠকের সফলতা নিয়ে সোমবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও আশাবাদ ব্যক্ত করছেন।
১২ জুন সিঙ্গাপুরে বৈঠকে বসার কথা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও উত্তর কোরীয় নেতা কিমের। বারবার বাতিল হয়ে যাওয়ার শঙ্কা থাকলেও সর্বশেষ ২৬ মে দক্ষিণ কোরীয় প্রেসিডেন্ট মুন জায়ে ইন বৈঠকে ব্যাপারে জানিয়েছিলেন। পরে সংবাদ সম্মেলনে ১২ জুন বৈঠকের কথা নিশ্চিত করেছে যুক্তরাষ্ট্রও। সিঙ্গপুরের সান্তোসা দ্বীপে স্থানীয় সময় সকাল ৯টায় শুরু হবে এই বৈঠক।
বৈঠকের একদিন আগে ১১ জুন সোমবার উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমের এক সম্পাদকীয়তে বলা হয়, এই বৈঠকের মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ‘নতুন সম্পর্কের শুরু’ হতে পারে দেশটির। এদিকে ট্রাম্পও নিজেও বহুল প্রতীক্ষিত এই বৈঠককে নিয়ে আশাবাদী।
উত্তর কোরীয় সংবাদমাধ্যম রোদোং সিনমুনের সম্পাদকীয়তে বলা হয়, কিম সিঙ্গাপুরে গেছেন ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকের মাধ্যমে ‘নতুন সম্পর্ক’ প্রতিষ্ঠা এবং ‘নতুন সময়ের দাবি’ মেটাতে। সংবাদমাধ্যমটি জানায়, কোরীয় উপদ্বীপে একটি শান্তি প্রতিষ্ঠা ও পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণসহ সাধারণ সমস্যাগুলো সমাধান করার লক্ষ্যে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
সম্পাদকীয়তে আরও বলা হয়, পূর্বে আমাদের সঙ্গে বৈরী সম্পর্ক থাকলেও আমাদের অবস্থান হচ্ছে তারা যদি আমাদের শাসনব্যস্থাকে সম্মান করে তবে সবকিছু ঠিকঠাক রাখবো আমরা। ১৯৫০-১৯৫৩ সালের কোরীয় যুদ্ধের পর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র আর উত্তর কোরিয়া শত্রু রাষ্ট্র। সা¤প্রতিক সময়ে উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক পরীক্ষার জের ধরে দুই দেশের সম্পর্কের আরও অবনতি হতে থাকে।
মঙ্গলবার বৈঠককে সামনে রেখে দুই ঘণ্টা আলোচনা করেছেন দুই দেশের কর্মকর্তারা। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও বলেছেন, পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ নিয়ে বৈঠকে ফলপ্রসূ ও বিস্তারিত আলোচনা করা হয়।
সোমবার সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী লি সেন লুংয়ের সঙ্গে মধ্যাহ্নভোজের সময় তিনি বলেন, ‘আমরা আগামীকাল দুর্দান্ত একটি বৈঠক করতে যাচ্ছি। আমার মনে হয় এটা সফল হবে।’
সেসময় তিনি লিকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘আপনার আতিথিয়েতা, পেশাদারিত্ব ও সৌজন্যে আমরা মুগ্ধ।’
সোমবার এক টুইটবার্তায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, তিনি ‘বাতাসে উত্তেজনা’ অনুভব করছেন। তিনি আশা করেন, এই বৈঠকের মাধ্যমে পারমাণবিক পরীক্ষা বন্ধের ব্যাপারে কিম জং উনকে বোঝানো সম্ভব হবে।
তবে কিম জংয়ের পক্ষ থেকে এখনও কোনও বক্তব্য পাওয়া যায়নি। কড়া নিরাপত্তায় সেন্ট রেজিস হোটেলে অবস্থান করছেন তিনি। কোনও কথা বলেননি তার সঙ্গে আসা বোন কিম ইউ জংও।
দুই দেশের কর্মকর্তারাই পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণের বিষয়ে আলোচনার আভাস দিয়েছেন। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও এক টুইটবার্তায় বলেন, কোরীয় উপদ্বীপে সম্পূর্ণরুপে পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণে প্রতিশ্রæতিবদ্ধ যুক্তরাষ্ট্র। তবে একপক্ষীয় নিরস্ত্রীকরণের সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়েছে উত্তর কোরীয় কর্মকর্তারা। তাদের দাবি, পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ বলতে তারা বুঝিয়েছেন কোরীয় উপদ্বীপ থেকে দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানকে রক্ষা করতে নিজেদের ‘পারমাণবিক বলয়’ সরিয়ে নেবে যুক্তরাষ্ট্র।
উত্তর কোরিয়া বিশেষজ্ঞদের দাবি, উত্তর কোরিয়ার ব্যাপারে কিছু নিশ্চিতভাবে বলা যায় না। তাই তারা পারমাণবিক পরীক্ষা ত্যাগ করবে কিনা তা এখনও নিশ্চিত নয়। তাদের বিশ্বাস, কিমের সা¤প্রতিক আচরণ মূলত তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা শিথিল করারই প্রয়াস।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ট্রাম্প প্রশাসনের এক কর্মকর্তা বলেন, যুক্তরাষ্ট্র একইসঙ্গে অনেক আশা ও সন্দেহ নিয়েই এই বৈঠকে বসতে যাচ্ছে। তিনি বলেন, ‘আমরা যেকোনও কিছুর জন্যই প্রস্তুত।’ ওই কর্মকর্তা জানান, ট্রাম্প ও কিম একটি একক বৈঠকও করবেন। এরপর কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়ে আরও এক ঘণ্টা বৈঠক করবেন তারা।
শনিবার কানাডায় ট্রাম্প বলেছিলেন, এই সম্মেলনকে ঘিরে পূর্ববর্তী কোনও পরিকল্পনা নেই। এটা ‘শান্তির মিশন’। তবে পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ নিয়ে কিম জংকে বোঝানোর চেষ্টা করবেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, এই আলোচনায় মূলত কিমের সঙ্গে নতুন করে সম্পর্কের শুরু হবে। এরপর সমঝোতা আসতে একাধিক বৈঠক করতে হতে পারে।
পূর্বনির্ধারিত সূচি অনুযায়ী আগামী ১২ জুন সিঙ্গাপুরে ট্রাম্প ও কিমের মধ্যে বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। তবে ২৪ মে বৃহস্পতিবার কিমের সঙ্গে বৈঠকটি বাতিলের ঘোষণা দেন ট্রাম্প। কিমের কাছে লেখা চিঠিতে ট্রাম্প বলেন, ‘আপনার সঙ্গে বৈঠকের জন্য আমি খুবই উন্মুখ ছিলাম। দুঃখজনকভাবে, ভয়ানক ক্ষোভ এবং প্রকাশ্য শত্রুতার ওপর ভিত্তি করে দেওয়া আপনার অতি সা¤প্রতিক বিবৃতির প্রেক্ষিতে আমি মনে করি এটি বৈঠকের যথার্থ সময় নয়।’ ট্রাম্পের এ সিদ্ধান্তে উত্তর কোরিয়াসহ আন্তর্জাতিক বিশ্ব হতাশা প্রকাশ করে। এরপর শুক্রবার (২৫ মে) ট্রাম্প ১২ জুন সিঙ্গাপুরে কিমের সঙ্গে বৈঠক হতে পারে বলে নতুন করে ইঙ্গিত দেন। ২৬ মে সংবাদ সম্মেলনেও এ বিষয়ে নিজের অবস্থান পরিষ্কার করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। ২৬ মে আকস্মিক বৈঠক করেন উত্তর কোরিয়া ও দক্ষিণ কোরিয়ার নেতারা। রবিবার (২৭ মে) সকালে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জায়ে-ইন বলেন, উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক করার ব্যাপারে সম্মত হয়েছেন।
বৈঠকে অংশ নিতে ইতোমধ্যে সিঙ্গাপুরে পৌঁছেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প ও কিম জং-উন। রবিবার সন্ধ্যায় ট্রাম্পকে বহনকারী বিমান সিঙ্গাপুরের পায়া লেবার বিমান ঘাঁটিতে অবতরণ করে। এর কয়েক ঘণ্টা আগে দেশটিতে পৌঁছান কিম জং-উন। মঙ্গলবার দেশটির সানতোসা দ্বীপে দুই নেতার এই ঐতিহাসিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। সিঙ্গাপুরের বিখ্যাত অরচার্ড রোড এ দুইটি পৃথক বিলাসবহুল হোটেলে অবস্থান করছেন ট্রাম্প ও কিম। এর মধ্যেই রয়েছে বিলাসবহুল এপার্টমেন্ট, অফিস ও শপিংমল।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ট্রাম্প-কিম


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ