Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শনিবারের সন্দেশ: হারিয়ে যাচ্ছে ছোট্ট পাখি বাবুই

কালিগঞ্জ (সাতক্ষীরা) থেকে রবিউল ইসলাম | প্রকাশের সময় : ৯ জুন, ২০১৮, ১২:০০ এএম

‘বাবুই পাখিরে ডাকি বলিছে চড়াই, কুড়ে ঘরে থেকে করো শিল্পের বড়াই, আমি থাকি মহাসুখে অট্টালিকার পরে, তুমি কত কষ্ট পাও রোদ বৃষ্টি ঝড়ে’। চেতনার কবি রজনীকান্ত সেন বাবুই পাখি ও চড়–ই পাখি নিয়ে অসাধারণ কবিতাটি লিখেছেন। ছোট্ট পাখি বাবুই। নামটি যেমন সুন্দর তেমনি সুন্দর তার গঠন। তারচেয়েও অতি সুন্দর তার নির্মাণ শৈল্পিক কারুকাজ।
এই তো আশির দশকের গোড়ার দিকে শহর কিংবা গ্রামের পথে প্রান্তরে এক পায়ে দাঁড়িয়ে থাকা তালগাছ দেখলেই চোখে পড়ত বাবুই পাখির সুন্দর দৃষ্টিনন্দন এক শৈল্পিক কারুকাজখঁচিত ঝুলে থাকা বাসা। তালগাছের পাতায় পাতায় হেলেদুলে দৃষ্টি আকর্ষণ করছে শত শত বাসা। পাতা থেকে কিছুটা নিচে ঝুলে এসেই বাবুই পাখি তৈরি করে স্বর্ণকমলবিশিষ্ট কাঁচা বাসা।
অপরদিকে দেখতে মন্দ না হলেও একটু অলস, আরামপ্রিয় ও পরভোগী প্রকৃতির চড়–ই পাখি। এদের বসবাস পরের বাসাবাড়িতে, বিভিন্ন চিলেকোঠায়। তাই তো কবি রজনীকান্ত সেন তার কলমের আঁচড়ে চড়ুই আর বাবুইকে নিয়ে অসাধারণ কবিতা লিখে গেছেন।
তালগাছ এখন আর ফেলে আসা সেই দিনগুলোর মতো নেই। চিরচেনা এই ঐতিহ্যবাহী তালগাছ নগরায়ন ও গ্রামের দৃশ্যপট পাল্টনোয় বিলুপ্তির পথে। আর সাথে সাথেই হারিয়ে যাচ্ছে বাবুই পাখি ও তালগাছে ঝুলন্ত তার বাসা। তালগাছ আর বাবুই পাখির বাসা যেন একে অপরের পরিপূরক।
শুধু বাবুই আর চড়–ই পাখিই নয়, কালের আবর্তে হারিয়ে যাচ্ছে নাম জানা এবং অজানা বিভিন্ন প্রজাতির পাখি। প্রকৃতি থেকে হারিয়ে যাচ্ছে মিষ্টিমধুর কলতান আর প্রকৃতির মনোরম দৃশ্যপট। যুগে যুগে কবি সাহিত্যিকরা প্রকৃতির নানা রূপ নিয়ে লিখেছেন কত না গল্প-কবিতা।
আজ ফেলে আসা দিনগুলোর সাথে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের গরমিল হচ্ছে। বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে আজ এই দৃষ্টিনন্দন মনোরম দৃশ্যগুলো কল্পনার মতো মনে হবে। পৃথিবীর বুকে প্রকৃতির এক অপরূপ সুন্দর মনোরম দৃষ্টিনন্দন বাবুই পাখির বাসা। এমন দৃশ্য প্রকৃতি থেকে হারিয়ে যাওয়ার আগেই প্রকৃতিতে প্রয়োজন তালগাছের সংখ্যা বৃদ্ধি করা। আশার কথা হলো, বজ্রপাতের হাত থেকে বাঁচতে এখন পরিবেশবাদীরা নতুন করে তালবীজ রোপণের পদক্ষেপ নিয়েছেন। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে লাগানো হচ্ছে তালবীজ।
দেশের বনাঞ্চলে হাজার রকমের গাছ থাকলেও বাবুই পাখির প্রথম পছন্দ বাসা ও বংশ বৃদ্ধির জন্য তালগাছই। স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন আসে বাবুই পাখি কেন তালগাছে বাসা বাঁধে। অনুসন্ধানে জানা যায়, বাবুই পাখির গুণের শেষ না থাকলেও রয়েছে প্রচন্ড রকমের ভয়। বিভিন্ন জন্তু, পোকা-মাকড়, সাপ, বিচ্ছু থেকে নিজেকে রক্ষায় তালগাছের পাতাকেই ঢাল হিসেবে নিয়েছে। পাতার সামনের দিকের শেষ অংশ থেকে ঝুলে শূন্যের উপরে তৈরি করে মনোরম বাসা যা বাতাসে দুলতে থাকে। কাল বৈশাখীর তান্ডব অথবা ঝড়োবাতাসে তালগাছের বড় বড় পাতাগুলো বিভিন্ন দিকে ঝুঁকে থেকে বাঁচতে সাহায্য করে। তা ছাড়া প্রকৃতিতে মনোরম দৃশ্যটি কেবল তালগাছেই শোভা পায়, এমনিভাবে গভীর বুদ্ধিমত্তায় গড়ে উঠে বাবুই পাখির বাসা। সে কারণেই প্রকৃতিতে তালগাছ ও বাবুই পাখির বাসা খুবই প্রয়োজন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: হারিয়ে যাচ্ছে


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ