Inqilab Logo

শুক্রবার ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

দামুড়হুদা থেকে হারিয়ে যাচ্ছে চিরচেনা কাঠের লাঙ্গল

প্রকাশের সময় : ৩১ অক্টোবর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

নুরুল আলম বাকু, দামুড়হুদা (চুয়াডাঙ্গা) থেকে

চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার অধিকাংশ গ্রাম থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে কৃষিকাজে ব্যবহৃত গ্রামবাংলার চিরচেনা ঐতিহ্যবাহী কাঠের লাঙ্গলের ব্যবহার। বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রায় নতুন নতুন যন্ত্র আবিষ্কার হওয়ায় বর্তমানে কৃষি কাজেও লেগেছে আধুনিকতার ছোঁয়া। তাই নানান যন্ত্রপাতির সাথে কৃষি ক্ষেত্রে ব্যবহারের জন্যও আবিষ্কৃত হয়েছে সিডার, ট্রাক্টর, পাওয়ার ট্রেলারসহ নানান যন্ত্রপাতি। আর স্থানীয়ভাবে তৈরি মান্ধাত্বা আমলের চাষযন্ত্র কাঠের লাঙ্গলের স্থান দখল করে নিয়েছে ট্রাক্টর ও পাওয়ার ট্রেলার। ধান রোপণ, কাটা থেকে শুরু করে বস্তায় ভরা পর্যন্ত এখন সবই হচ্ছে মেশিনের সাহায্যে। তারপরও ছোট আয়তনের কিছু জমি চাষের জন্য লাঙ্গলের ব্যবহার থেকেই যায়। জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে কৃষি জমিও ভাগ হতে হতে বর্তমানে ছোট হয়ে কমে আসছে জমির আয়তনও। আর ছোট আয়তনের এসব জমি চাষ করতে ট্রাক্টর বা পাওয়ার ট্রেলার ঘোরানো যায় না। তাই এসব জমি ও বাগানের মধ্যে চাষ দেওয়ার জন্য এখনও কাঠের লাঙ্গলের ব্যবহার রয়েছে। কৃষিকাজে কাঠের লাঙ্গলের ব্যবহার পরিবেশবান্ধব হলেও স্বল্প সময় আর সহজলভ্য হওয়ায় বর্তমানে প্রায় ৯৫ ভাগ কৃষক কাঠের লাঙ্গলের পরিবর্তে ব্যবহার করছে যান্ত্রিক লাঙ্গল ট্রাক্টর ও পাওয়ার ট্রেলার। এদিকে কাঠের লাঙ্গল টানার জন্য গরু পালনে নানান ঝক্কি-ঝামেলা এড়াতে কাঠের লাঙ্গলের পরিবর্তে যান্ত্রিক লাঙ্গল, ট্রাক্টর ও পাওয়ার ট্রেলারের দিকে ঝুঁকে পড়েছেন এলাকার চাষিরা। উপজেলার হাউলী ইউনিয়নের জয়রামপুর গ্রামের প্রবীণ চাষি আওয়াল মিয়া জানান, বাংলাদেশ কৃষি প্রধান দেশ। আর কৃষকরাই এ দেশের মানুষের জন্য খাদ্যের জোগান দিয়ে থাকেন। ঝড়-বৃষ্টি, রোদ-গরম ও প্রচ- শীত উপেক্ষা করে ফসল ফলায় এই কৃষকরাই। আদিকাল থেকেই আমাদের দেশে খাদ্যশস্য উৎপাদনসহ নানা ধরনের ফসল ফলাতে কৃষকরাই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। মাটির সাথে চাষিদের রয়েছে আজন্ম সম্পর্ক। বর্তমানে হালের একজোড়া ভাল বলদগরুর দাম প্রায় এক লক্ষ বিশ হাজার থেকে দেড় লক্ষ টাকা। এ ছাড়াও আছে গো-খাদ্য সংগ্রহসহ লালন-পালনের নানা ঝামেলা। তার উপর আছে রোগ-বালাই ও চুরির ঝুঁকি। আগেকার দিনে খুব ভোরে চাষিরা কাঁধে লাঙ্গল-জোয়াল, মাথায় মাথাল দিয়ে ও হাতে পাচন দিয়ে হালের গরু বা মহিষ তাড়িয়ে নিয়ে যেত জমি চাষ করতে। সে দৃশ্য এখন আর চোখে পড়ে না। কিন্তু বর্তমান সময়ে সে দৃশ্য তেমন চোখে না পড়লেও বেশিরভাগ কৃষকদের বাড়ির উঠানে পাওয়ার ট্রেলার, ধানঝাড়া মেশিন দেখতে পাওয়া যায়। কাদিপুর গ্রামের প্রবীণ কৃষক আমির হোসেন বলেন, কাঠের লাঙ্গল দিয়ে জমি চাষ দিলে বেশি গভীরের মাটি উপরে উঠে আসে। সে কারণে মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি পায় ফলে সারের পরিমাণ কম লাগে এবং খাবার ফসলের স্বাদও অক্ষুণœ থাকে। এ বিষয়ে উপজেলার বেশ কয়েকজন প্রবীণ কৃষক জানান, কৃষিকাজে লাঙ্গলের ব্যবহার পরিবেশবান্ধব এবং গ্রামবাংলার ঐতিহ্যও বটে। আবহমান বাংলার এ প্রাচীন ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখতে শখের বশে হলেও কৃষকদের মাঝেমধ্যে এ পরিবেশবান্ধব কাঠের তৈরি লাঙ্গল-জোয়াল তুলে নেওয়ার কোন বিকল্প নেই।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: দামুড়হুদা থেকে হারিয়ে যাচ্ছে চিরচেনা কাঠের লাঙ্গল
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ