Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

খুলনাঞ্চল থেকে হারিয়ে যাচ্ছে নানা পাখি ও উপকারী কীটপতঙ্গ

মাত্রাতিরিক্ত সার ও কীটনাশক ব্যবহার

প্রকাশের সময় : ৫ নভেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

আবু হেনা মুক্তি, খুলনা থেকে : বৃহত্তর খুলনাঞ্চলের মানুষের প্রধান জীবিকা আমন চাষ। এটি প্রধান ফসল বটে। এ পেশার সাথে অন্যান্য পেশার সাময়িক সংযোগ থাকলেও মূলত আমন চাষমুখী কৃষকরা যুগ যুগ ধরে আমনের প্রাধান্যই দিয়ে আসছেন। কৃষকের আমন ক্ষেত সম্ভাবনার সোনালী রোদ্দুরে তাই চকচক করছে। থোড় এসেছে ধানের চারাগাছে। হাসি ফুটছে কৃষককুলে। কিন্তু লোনা অঞ্চল বলে খ্যাত উপকূলীয় অঞ্চলের ফসলি জমিতে ক্ষতিকর রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহারের ফলে প্রাকৃতিক পরিবেশ বিনষ্ট হচ্ছে। কারণ সিডর ও আইলায় এ অঞ্চলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। কৃষক তাই বিগত দিনের লোকসান কাটিয়ে উঠতে এবং অধিক ফলনের আশায় ঝুঁকেছে রাসয়নিক সারের দিকে। যে কারণে হারিয়ে যাচ্ছে অনেক প্রাণী পশুপাখি কীটপতঙ্গ। বিশেষজ্ঞদের অভিমত, প্রাকৃতিক জৈবসারের ব্যবহার বাড়াতে হবে এবং ফসলি জমিতে রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের ব্যবহার কমাতে হবে। তা না হলে ভবিষ্যতে কৃষি খাতে ভয়াবহ বিপর্যয় নেমে আসতে পারে। এমনিতেই খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা এবং উপকূলীয় অঞ্চল দেশের অন্য যে কোনো স্থানের তুলনায় অধিক লবণাক্ত। তারপর সিডর-আইলার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ রয়েছে। নানা প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে এ অঞ্চলের মানুষ ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে জমিতে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অধিক ফসল ফলাতে প্রাণান্ত চেষ্টা করে। চলতি আমন মৌসুমে এ অঞ্চলের কৃষকরা গত বছরের তুলনায় বেশি রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার করছে। ফলে কৃষি খাতে এ অঞ্চলে আপাতদৃষ্টিতে কৃষি বিপ্লব ঘটলেও ভবিষ্যতে চরম কৃষি বিপর্যয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। সংশ্লিষ্টদের সাথে আলাপকালে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
কৃষিপ্রধান আমাদের এ দেশে কৃষির জমি ক্রমশ কমছে। দেশের মোট জাতীয় আয়ের শতকরা ২২ ভাগ অর্জিত হয় কৃষি খাত থেকে। শ্রমজীবী মানুষের সংখ্যা ৬ কোটির ওপর। যার মধ্যে ৮১ ভাগ মানুষ গ্রামীণ শ্রমজীবী। তাদের মধ্যে আবার ৬৮ দশমিক ৫ শতাংশ শ্রমজীবী মানুষ সরাসরি কৃষির সাথে সম্পর্কিত। খুলনাঞ্চলের কয়েক জেলায় সবজির চাষ হয়। এতদঞ্চলের কৃষকরা অধিক উৎপাদনের আশায় ফসলি জমিতে সার ও কীটনাশক ব্যবহারের পাশাপাশি হাইব্রিড জাতের বীজ ব্যবহার করেন। আর হাইব্রিড জাতের বীজ থেকে ভালো ফসল পেতে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার অপরিহার্য হয়ে পড়ে। অধিক উৎপাদনক্ষম এসব শস্য শিশুর মতো। প্রকৃতির রুক্ষতা তারা সইতে পারে না। যে কারণে রাসায়নিক সার প্রয়োগ করে, কীটনাশক ব্যবহার করে ফসল উৎপাদনে সহায়তা করা হয়। ফলে বাড়তে থাকে সার ও কীটনাশকের ব্যবহার।
এ প্রসঙ্গে কৃষিবিদ রুবায়েত আরা বলেন, জমিতে অব্যাহতভাবে সার ও কীটনাশক ব্যবহারের ফলে পাখিরা কিচিরমিচির করতে শুরু করে। শস্যদানা খাওয়ার লোভে পাখিরা শস্যদানা খেয়ে বিষক্রিয়ার মারা যাচ্ছে। এখন অনেক প্রজাতির পাখি হারিয়ে গেছে। বিলুপ্তি ঘটেছে ফসলের ক্ষেত্রে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক প্রয়োগের। ফলে প্রাকৃতিক লাঙ্গল বলে খ্যাত কেঁচো দেখা যায় না। এক সময়ে বিল-খালে-জলাশয়ে শামুকের অবাধ বিচরণ ছিল। শামুক প্রায় হারিয়ে গেছে। মিষ্টি পানির ছোট প্রজাতির মাছেরও বিলুপ্তি ঘটেছে।
কৃষি বিশেষজ্ঞ রুবায়েত আরা মাঠপর্যায়ের অভিজ্ঞতার আলোকে ইনকিলাবকে আরো বলেন, কীটপতঙ্গ ধ্বংসের জন্য আমরা ফসলের ক্ষেত্রে কীটনাশক ব্যবহার করি। কিন্তু সব কীটপতঙ্গ ক্ষতিকর নয়। কীটনাশক প্রয়োগের ফলে সকল প্রকারের কীটপতঙ্গ নষ্ট হচ্ছে।
কৃষিবিদ শফিউর রহমানের মতে, হাইব্রিড জাতীয় ফসলের উৎপাদন বাড়াতে রাসায়নিক সার ব্যবহার না করে জৈবসার ব্যবহার করা যায়। এক্ষেত্রে জমিতে জৈবসার ব্যবহার বৃদ্ধি করতে হবে। আমাদের দেশের প্রাকৃতিক পরিবেশ যথেষ্ট উপযোগী।
মৎস্য বিশেষজ্ঞ মসিউর রহমান বলেন, ফসলের ক্ষেতে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার করার ফলে সেসব ফসলের ক্ষেত থেকে জলাশয়ে পড়ায় মাছসহ অন্যান্য জলজ প্রাণীর বিলুপ্তি ঘটছে। তিনি বলেন, কৃষকেরা ফসল উৎপাদনে অতিরিক্ত সার ও যথেচ্ছভাবে কীটনাশক ব্যবহারের প্রক্রিয়া থেকে বেরিয়ে আসতে পারছে না। এতে কৃষক ব্যক্তিগতভাবে যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন তেমনি সামাজিকভাবে আমাদের কৃষি ও জাতীয় অর্থনীতি পিছিয়ে পড়ছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: খুলনাঞ্চল থেকে হারিয়ে যাচ্ছে নানা পাখি ও উপকারী কীটপতঙ্গ
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ