পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
জোয়ার-ভাটায় ১৫ গ্রাম, সাগরে বিলীন আটশ পরিবার
শামসুল হক শারেক, কক্সবাজার অফিস : বাংলাদেশের মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে শাহপরীর দ্বীপ। এখন প্রতিদিন জোয়ার-ভাটা চলছে ১৫টি গ্রামে। এ পর্যন্ত সাগরে বিলীন হয়েছে প্রায় আটশ পরিবার। অমাবস্যা বলতে কথা নেই, স্বাভাবিক জোয়ারেও প্লাবিত হচ্ছে শাহপরীর দ্বীপ। ভিটিবাড়ি ছেড়ে আশ্রয়ের খোঁজে অন্যত্র চলে গেছে এলাকার শত শত মানুষ।
ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর আঘাতে নতুন করে মাঝেরপাড়া, ঘোলাপাড়া ও দক্ষিণপাড়াÑতিনটি অংশে ভেঙে যাওয়া বাঁধ দিয়ে পানি ঢুকে দুই দিন ধরে দিন-রাতে দুবার করে প্লাবিত হওয়ায় বাঁধভাঙা এলাকার ও বাঁধের বাইরে থাকা ঘোলাপাড়ার চরে বসবাসকারী কয়েক শতাধিক পরিবারসহ অন্তত ৪০ হাজার মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। তারা এই দুর্যোগের কবলে পড়ে চরম দুর্ভোগে আছে। জরুরী ভিত্তিতে বেড়িবাঁধ সংস্কার, শাহপরীর দ্বীপবাসীর এক কথা।
পানি উন্নয়ন বোর্ড টেকনাফের উপসহকারী প্রকৗশলী গিয়াস উদ্দিন বলেন, ২০১২ সালের ২২ জুলাই শাহপরীর দ্বীপের পশ্চিমপাড়া অংশের বাঁধটি জোয়ারের আঘাতে ভেঙে যায়। এরপর থেকে ওই এলাকার অধিকাংশ গ্রামে জোয়ার-ভাটায় জীবনযাপন করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। এরমধ্যে নতুন করে ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর আঘাতে আরও তিনটি অংশে বাঁধ ভেঙে যাওয়াই জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হচ্ছে ১৫টি গ্রাম।
স্থানীয় লোকজন জানান, রোববার দিবাগত রাত থেকে বঙ্গোপসাগরে অস্বাভাবিক জোয়ার শুরু হয়। যার উচ্চতা স্বাভাবিকের চেয়ে তিন-চার ফুট বেশি। সাবরাং ইউনিয়নের শাহপরীর দ্বীপের পশ্চিমপাড়া অংশের তিন কিলোমিটারের বেশির ভাগ এলাকায় বেড়িবাঁধ না থাকায় জোয়ারের পানি সহজেই ইউনিয়নের ভেতরে ঢুকে পড়ে। তার উপর ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর আঘাতে মাঝেরপাড়া, ঘোলাপাড়া ও দক্ষিণপাড়া তিনটি অংশে ভেঙে যাওয়া বাঁধ দিয়ে জোয়ারের পানি ঢুকে ওসব এলাকা প্লাবিত হচ্ছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শাহপরীর দ্বীপ ঘোলাপাড়া এলাকার একটি ভাঙা অংশ দিয়ে জোয়ারের লবণাক্ত পানি লোকালয়ে ঢুকছে। সেই পানিতে ভাসছে এলাকার অধিকাংশ বসতবাড়ি ও রাস্তাঘাট। বাড়ির লোকজন ঘরে তালা লাগিয়ে উঁচু স্থানে আশ্রয়ের খোঁজে ছুটছে।
ওই সময় কথা হয় মাঝেরপাড়ার কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে। তারা বলেন, রাতে ও দিনে দুবারের জোয়ারে তাদের ঘরবাড়ি বুকসমান পানিতে নিমজ্জিত হয়। রাতে তাঁরা পরিবার-পরিজন নিয়ে বাঁধের ওপরে আশ্রয় নিয়ে ছিলেন। দিনে রান্নাবান্নার কাজ করেন বাঁধের ওপরে। তাই নৌকায় ঘরের আসবারপত্র বোঝাই করে ভিটিবাড়ি ফেলে আশ্রয়ের খোঁজে অন্যত্রে চলে যাচ্ছেন তারা।
পাউবো সূত্র জানায়, অমাবস্যার অস্বাভাবিক লবণাক্ত জোয়ারের পানিতে হারিয়াখালী, কচুবনিয়া, কাটাবনিয়া, লাফাঘোনা, ঘোলাপাড়া, ক্যা¤পপাড়া, মাঝরডেইল, জালিয়াপাড়া, মগপুরা, উত্তরপাড়া, ডাংগরপাড়া, পশ্চিমপাড়া, মাঝরপাড়া, দক্ষিণপাড়া, হাজিপাড়া এলাকা পাবিত হয়েছে। এসব গ্রামের বেশিরভাগ গ্রামীণ সড়ক ও বাড়িঘর এখন জোয়ারের পানিতে নিমজ্জিত।
উত্তরপাড়ার আজিজুর রহমান ও ঘোলাপাড়ার নুর মোহাম্মদ বলেন, বেড়িবাঁধ না থাকায় ও নতুন করে ভেঙে যাওযা অংশ দিয়ে জোয়ারের পানি ঘরবাড়িতে পানি ওঠে এসেছে। বর্তমানে বেশির ভাগ বাড়িতে রান্না করে খাওয়ার অবস্থাও নেই। রমজানে তাদের কষ্টের কোন সীমা নেই। গত বছর জোয়ারের পানি অনেক দূরে থাকলেও এবার বসতভিটা ডুবে গেছে।
এলাকার লোকজন বলেন, সাগরের ঢেউ এসে বাড়িতে আঘাত করায় তাঁরা বর্তমানে আতঙ্কের মধ্যে আছেন। গত দুই দিনে মাঝেরপাড়া শতাধিক ঘরবাড়ী সাগরে বিলিন হয়ে যায়। এরমধ্যে এনাম উল্লাহ, আবদুস সালাম মিস্ত্রী, আব্দুস শুক্কুর, সাবের আহমদ, আব্দুল মতলব, মোহাম্মদ সালাম, আবু তৈয়ুব, জয়নাব বেগম, আনোয়ারা বেগম, আবদুল মালেক, আজিজুর হক, জুহুরা বেগম, মোহাম্মদ আমিনসহ শতাধিক পরিবার ভিটিবাড়ি হারিয়ে অন্যত্রে আশ্রয় নিতে উপজেলা সদরের বিভিন্ন স্থানে চলে গেছেন।
শাহ পরীর দ্বীপ আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক শাখার সভাপতি সোনা আলী বলেন, প্রায় চার বছর আগে বাঁধটি ভেঙে গেছে। স্থায়ীভাবে বাঁধ নিমার্ণ না করায় প্রতি বর্ষা মৌসুমে বঙ্গোপসাগরের ঢেউয়ের আঘাতে প্রায় আট শতাধিক বসতবাড়ি ও ফসলি জমি সাগরে বিলীন হয়ে গেছে। দ্বীপের মানুষ আজ বড় অসহায়ভাবে জীবনযাপন করছেন। প্রতিনিয়ত ভাঙনে ছোট হয়ে আসছে দ্বীপটি। তিনি জরুরি ভিত্তিতে এটি বাঁধটি সংস্কার করার দাবী জানান।
সাবরাং ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান নুর হোসেন বলেন, অস্বাভাবিক জোয়ারে তাঁর ইউনিয়নের বেশির ভাগ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ১৫ গ্রামের ডুবে যাওয়া অধিকাংশ বাড়িতে চুলায় আগুন দেওয়াও সম্ভব হচ্ছে না। এরমধ্যে প্রায় শতাধিক ঘরবাড়ি সাগরের বিলিন হয়ে অন্যত্রে চলে গেছে। বেড়িবাধটি জরার্জীণ হয়ে পড়ায় প্রায় ৪০ হাজার মানুষ আতঙ্কে জীবনযাপন করছে।
টেকনাফ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জাফর আহমদ বলেন, ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ত্রাণসামগ্রী বরাদ্দ দিতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও জেলা প্রশাসকের কাছে ইউএনও মাধ্যমে চিঠি পাঠানো হয়েছে।
কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিবার্হী প্রকৌশলী মো. সাবিবুর রহমান বলেন, ক্ষতিগ্রস্থ’ বেড়িবাধটি নির্মাণ করার জন্য ১০৬ কোটি টাকার বরাদ্দ চেয়ে প্রায় দুই বছর ধরে একটি প্রকল্প সংশিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন না পাওয়াই বাঁধটি নির্মাণ করা সম্ভব হচ্ছে না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।