Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪, ৩১ বৈশাখ ১৪৩১, ০৫ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

কালের বিবর্তনে মির্জাপুর থেকে হারিয়ে যাচ্ছে আরামদায়ক কোঠাঘর

প্রকাশের সময় : ১২ জুলাই, ২০১৬, ১২:০০ এএম

জাহাঙ্গীর হোসেন, মির্জাপুর (টাঙ্গাইল) থেকে

মির্জাপুর উপজেলার কোঠাঘর বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। আর্থিক স্বচ্ছতা বৃদ্ধি এবং ডাকাতের উপদ্রব কমে যাওয়ায় আরাম দায়ক শত বর্ষের ঐতিহ্যবাহী এ বিশেষ ধরনের তৈরি ঘর বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে বলে জানা গেছে। এলাকাবাসী জানান, এ উপজেলার পাহাড়ি অঞ্চলের বাঁশতৈল, তরফপুর, আজগানা এবং গোড়াই ইউনিয়নের আংশিক এলাকার লোকজন এটেল মাটির দেয়াল দিয়ে তৈরি ঘরে বসবাস করতেন। প্রথম দিকে অধিকাংশই ছন বা খর দিয়ে ছাওনি দিতেন। পরে আর্থিকভাবে স্বচ্ছলরা টিন দিয়ে ছাওনি দিতেন। এটেল মাটির সাথে পাটের টুকরো এবং তাতে তুষ মিশিয়ে মন্থন করে প্রায় দুই সপ্তাহ পর তা দিয়ে প্রায় দেড় ফুট পুরো দেয়াল দিয়ে তৈরি ঘরে বসবাস করতেন। মাটির দেয়াল দিয়ে তৈরি এ ধরনের ঘরই এলাকায় কোঠাঘর হিসেবে পরিচিত। পাহাড়ী অঞ্চলের সকলেই এ ধরনের ঘরে এক সময় বসবাস করতেন। এলাকাবাসী আরও জানান, যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন বন-জঙ্গলে ঘেরা পাহাড়ী এলাকায় ডাকতের উপদ্রব ছিল খুব বেশি। এছাড়া বাঘ-ভাল্লুক ও নানা প্রকার হিং¯্র বন্য প্রাণীর ভয়ও ছিল। এজন্য আর্থিকভাবে স্বচ্ছল হলেও ইট বালু সিমেন্ট না থাকায় সে সময় নিরাপত্তার জন্য পাহাড়ী অঞ্চলের মানুষ এভাবেই ঘর তৈরি করতেন। মাটির দেয়াল দিয়ে তৈরি কোঠাঘরের আরেকটি বিশেষত্ব ছিল। আর তা হলো এসব ঘরে গরমের সময় ঠা-া এবং শীতের সময় গরম অনুভূত হতো বলে এলাকাবাসী জানিয়েছেন। কিন্তু কালের বিবর্তনে এলাকাবাসী আর্থিক স্বচ্ছলতা বৃদ্ধি চোর ডাকাত এবং হিং¯্র প্রাণির উপদ্রব না থাকায় যুগ যুগান্তরের এসব কোঠাঘর এখন এ উপজেলার পাহাড়ী অঞ্চলে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। কদাচিৎ দু-একটি ঘর চোখে পরলেও তাও কিছু দিনের মধ্যে বিলুপ্ত হয়ে যাবে বলে এলাকাবাসী মনে করছেন। এ ব্যাপারে এ উপজেলার পাহাড়ী অঞ্চলের বাঁশতৈল ইউনিয়নের নয়া পাড়া গ্রামের বাসিন্দা মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রাজ্জাক বিএসসি এবং পাঁচগাও গ্রামের ফজলু মাস্টার সহ প্রমুখরা জানান, তাদের বাব-দাদারাও কোঠাঘরে বসবাস করতেন। কিন্তু বর্তমানে মানুষের আর্র্থিক স্বচ্ছলতা বৃদ্ধি, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, চোর-ডাকাতের উপদ্রব হীনতার কারণে লোকজন কোঠাঘরের পরিবর্তে টিনের বেড়া দিয়ে ঘর তৈরি করে তাতে বসবাস করছেন। এছাড়া কেউ কেউ দালান দিয়েও বসতবাড়ি তৈরি করছেন। তাছাড়া পাহাড়ী এলাকার প্রতি জনপদেই বিদ্যুৎ গিয়েছে। সেজন্য এ উপজেলার পাহাড়ী অঞ্চল থেকে শত বছর পুররনো ঐতিহ্যবাহী মাটি দিয়ে তৈরি সেই কোঠাঘর বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে বলে তারা উল্লেখ করেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: কালের বিবর্তনে মির্জাপুর থেকে হারিয়ে যাচ্ছে আরামদায়ক কোঠাঘর
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ