Inqilab Logo

শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

হারিয়ে যাচ্ছে দেশি প্রজাতির মাছ রক্তদহ বিলে কচুরিপানা জট জেলে পরিবারে কান্না

প্রকাশের সময় : ২৭ আগস্ট, ২০১৬, ১২:০০ এএম

মো. মনসুর আলী, আদমদীঘি (বগুড়া) থেকে

বগুড়ার সান্তাহারের এককালের খোড়স্রোত রক্তদহ বিলে ছেয়ে গেছে কচুরিপানায়। দিনের পর দিন এর বিস্তার লাভ করায় গোটা বিল এলাকার কোথাও বিন্দুমাত্র খালি না থাকায় এ বিল থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে দেশি প্রজাতির মাছ। আগের মতো আর নুনা, পবা, কানোছ, মাগুর, পুঁটি, ট্যাংরাসহ দেশি প্রজাতির মাছ পাওয়া যায় না। আগে এই বিলের মাছ দিয়ে সান্তাহার শহরসহ পার্শ্ববর্তী রাণীনগর, আদমদীঘিসহ আশপাশের এলাকায় আমিষের চাহিদা মিটতো। এছাড়াও দেশের বিভিন্ন জেলায় এই বিলের মাছের চাহিদা থাকায় রাজধানীসহ বেশকিছু জেলাতে এই বিলের সুস্বাধু মাছ সরবরাহ করা হতো। কালের বিবর্তনে এবং বিল পাড়ের অপ্রয়োজনীয় বেশকিছু সুইজগেট নির্মাণের কারণে বর্ষা মৌসুমেও স্রোত দেখা যায় না। গত কয়েক বছর যাবত পানির নিচে কাশ্যাল এবং গোটাবিল জুরে কচুরিপানায় ছেয়ে যায়। এতে প্রতিদিন বিলের দেশি প্রজাতির মাছ মরে যাচ্ছে। বিলের কচুরিপানা পরিষ্কারের অভাবে দিনদিন মরা খালে পরিণত হচ্ছে। ফলে একদিকে এলাকায় মাছের সংকট বাড়ছে, অন্যদিকে বিলপাড়ের প্রায় ২৫ গ্রামের জেলে পরিবারের আগের মত আর ভালোভাবে দিন কাটছে না। এক সময় বিলপাড়ের গ্রামগুলোর জেলেরা বেড়া, টানা তোড়া, খয়রা জাল, খলসান পলি, প্যাঁচা ও বরশিসহ ইত্যাদি দিয়ে মাছ ধরে স্থানীয় হাটবাজারে বিক্রি করে পরিবার-পরিজন নিয়ে স্বাচ্ছন্দ্যে দিন কাটাত। বর্তমানে বিলের চিত্র পাল্টে যাওয়ায় জেলেদের জালে আর মাছের দেখা মিলছে না। তাই জেলে পরিবারের অনেকে তাদের এ আদি পেশা ছেড়ে দিয়ে অন্য পেশায় জড়িয়ে পড়ছে। বিলপাড়ে সান্দিড়া গ্রামের হজরত আলী বলেন, এ বিলে আমি আমার দাদার সাথে মাছ ধরেছি এবং মাছ ধরে হাটবাজারে বিক্রি করে সুখে শান্তিতে সংসার চলত। আমার বয়স হয়েছে এখন আমার ছেলেরা মাছ ধরে। বর্তমান বিলে আগের মতো আর পানি থাকে না। খড়া মৌসুমে হাঁটু পানিও থাকে না। এ পরিস্থিতির কারণে আমাদের সংসারে অভাব-অনটন লেগেই আছে। সরকারের পক্ষ থেকে বিলটি খনন করলে সারা বছর মাছ পাওয়া যাবে তাতে এলাকায় মাছের চাহিদাও মিটবে আমাদের সংসারও ভালোভাবে চলবে বলে স্থানীয় জেলেরা জানান। বোদলা গ্রামের আবু মুসা বলেন, সরকার প্রতি বছর এই বিলে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ অবমুক্ত করে। এর পাশাপাশি খনন করে সুইসগেটের মাধ্যমে পানি বন্ধ করে রাখলে সারা বছর পানি থাকবে। তাতে কৃষকদের ফসল নিয়ে চিন্তা থাকবে না এবং মাছ বৃদ্ধি পাবে। সান্তাহারের মৎস্য ব্যবসায়ী লোকমান হাকিম বলেন, এই বিলে সারা বছর পনি রাখা সম্ভব যদি সুইজগেট বন্ধ করে রাখা হয়। বিলের জমির অবৈধ দখলদারেরা সুইজগেট খুলে দিয়ে পানি ছেড়ে দিয়ে বিলের জমিতে ধান চাষ করার কারণে বিলের এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। এ ব্যাপারে আদমদীঘি উপজেলার আইনশৃঙ্খলা কমিটির আলোচনা সভায় স্থানীয় সাংবাদিকরা বিলের কচুরিপানা পরিষ্কার নিয়ে মৎস্য কর্মকর্তাদের সাথে কথা বললে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান, সহকারী মৎস্য কর্মকর্তা শ্রী রতন কুমার কন্ডুর বলেন, এই বিলে আমাদের আড়াইশ’ একরের মত জায়গা আছে বাকি পার্শ্ববর্তী রানী নগর আত্রাই উপজেলার এবং সামান্য কিছু ব্যক্তি মালিকানা রয়েছে। এত বড় বিল এই মুহূর্তে সংস্কার করার মতো লোকবল ও অর্থ বরাদ্দ দুটোই নেই। পরিকল্পনা আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, পরিকল্পনা আছে উন্নয়ন প্রকল্পের প্রস্তাব পাঠানোর পর অনুমদন হলে প্রর্যাক্রমে সংস্কার করা হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: হারিয়ে যাচ্ছে দেশি প্রজাতির মাছ রক্তদহ বিলে কচুরিপানা জট জেলে পরিবারে কান্না
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ