Inqilab Logo

বুধবার ২০ নভেম্বর ২০২৪, ০৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বর্ষায় বন্যা ও পানিবদ্ধতার আশঙ্কা

| প্রকাশের সময় : ৮ জুন, ২০১৮, ১২:০০ এএম

বর্ষাকে সামনে রেখে এবার ঢাকার নাগরিক জীবনে নানামুখী আশঙ্কার বিষয় আলোচিত হচ্ছে। নগরবিদ ও নগরবাসীর এমন আশঙ্কার যথেষ্ট কারণ আছে। বৈশাখ ও জৈষ্ট্য মাসের বৃষ্টিপাতে রাস্তায় পানিবদ্ধতার কারণে নাগরিক জীবনে সৃষ্ট অচলাবস্থার অভীজ্ঞতা থেকেই বর্ষায় পানিবদ্ধতাসহ নাগরিক দুর্ভোগ অনেক বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরী হয়েছে। বেশ কয়েক বছর ধরেই আন্তর্জাতিক র‌্যাংকিংয়ে ঢাকা শহর বিশ্বের অন্যতম দূষিত, অপরিকল্পিত, অনিরাপদ ও বসাবাসের অযোগ্য শহরের তালিকায় স্থান পাচ্ছে। একই সঙ্গে ঢাকা শহরের নাগরিক দুর্ভোগের কারণগুলোও দেশি-বিদেশি নানা মাধ্যমে আলোচিত হচ্ছে। ঢাকার রাস্তায় পানিবদ্ধতা নিয়ে গত বছর জার্মানভিত্তিক গণমাধ্যম ডয়েসে ভেলে থেকে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে পানিবদ্ধতার ১২টি কারণ চিহ্নিত করা হয়। এগুলো হচ্ছে, অপরিকল্পিত নগরায়ণ, যততত্র ময়লা আবর্জনা ফেলা, বর্ষায় রাস্তা খোঁড়াখুড়ি, ঢাকার চারপাশের নদীগুলোতে ভরাট ও দখলবাজি, ঢাকার খালগুলো দখল ও ভরাট হওয়া, জলাধার ও নিম্নাঞ্চল ভরাট করে আবাসিক এলাকা গড়ে তোলা, বুড়িগঙ্গায় ভয়াবহ দূষন ও দখ, অপরিকল্পিত বক্স কালভার্ট নির্মান, সংস্কার ও উন্নয়ন কাজে সমন্বয়হীনতা, পলিথিন ব্যাগের ব্যাপক ও অবাধ ব্যবহার, পয়:নালার ময়লা যথাযথভাবে অপসারণ না করা ইত্যাদি। সেই সাথে ফ্লাওভার প্রকল্প বাস্তবায়নে অস্বাভাবিক দীর্ঘসুত্রিতা এবং অব্যবস্থাপনাকে রাস্তায় পানিবদ্ধতা ও যানজটের সাম্প্রতিক কারণ হিসেবে যুক্ত হয়েছে।
ঢাকার যানজট ও পানিদ্ধতার কারণগুলো যথাযথভাবেই সুচিহ্নিত হয়েছে। এসব প্রতিবন্ধকতা উত্তরণে বিশেষজ্ঞ মতামতসহ বেশকিছু সুপারিশও নানা মাধ্যমে পাওয়া গেছে। যানজট, পানিবদ্ধতা নিরসনসহ নাগরিক দুর্ভোগ লাঘবে বেশকিছু উচ্চাভিলাসি প্রকল্পও হাতে নিয়েছে সরকার। বুড়িগঙ্গাসহ চারপাশের নদীগুলোর দূষণ ও দখলমুক্ত করাসহ গত এক দশকে এসব প্রকল্পে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় হলেও অবস্থার কোন ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটেনি। এখন শুধু রাস্তায় পানিবদ্ধতার আশঙ্কাই নয়, আগামী বর্ষায় ঢাকা শহর বন্যার ঝুঁকিতে রয়েছে বলেও জানা গেছে। গতাকাল ইনকিলাবে প্রকাশিত প্রতিবেদনে এ আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। বিগত তিরিশ বছরে অন্তত চারবার( ১৯৮৮, ১৯৯৮, ২০০৪ এবং ২০০৭) বড় ধরনের বন্যার সম্মুখীন হয়েছে দেশ। এর মধ্যে ১৯৮৮ সালের বন্যায় পুরো ঢাকা শহর পানিতে তলিয়ে যাওয়ার পর বন্যা নিয়ন্ত্রণে ঢাকার চারপাশে যে সব বাঁধ ও দেয়াল নির্মান করা হয়েছিল গত দুই দশকে তার অনেকটাই বেহালদশায় পতিত হয়েছে। বিশেষত: ঢাকার উত্তর ও পূর্বাঞ্চল পুরোপুরি অরক্ষিত অবস্থায় থাকায় যে কোন মাত্রার বন্যায় শহরে অবাধে পানি প্রবেশ করতে পারে বলে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে বন্যা ছাড়াই দু’তিন ঘন্টার বৃষ্টিতেই যে হারে ঢাকার রাস্তাগুলো হাটু পানিতে তলিয়ে যান চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে এবং নিচু এলাকার বাড়িঘরে পানি ঢুকে পড়ে তাতে ঢাকার পানিবদ্ধতা বন্যা নিয়ন্ত্রনের চেয়ে অনেক বেশী জটিল ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এই মুহূর্তে দেশের মানুষ যখন পবিত্র রমজান মাসের শেষপাদে এসে ঈদের বাজারের ব্যস্ততা ও ঘরে ফেরার প্রহর গুণছে, তখন ভাঙ্গাচোরা, ঝুঁকিপূর্ণ রাস্তার বিড়ম্বনা অনেক বড় দুশ্চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। সারাদেশে হাজার হাজার কিলোমিটার সড়ক-মহাসড়ক বেহালদশায় রয়েছে। ঈদের আগে সব রাস্তা মেরামতের গতানুগতিক আস্বাস শোনা গেলেও এসব এখন ফাঁকাবুলি ছাড়া আর কিছুই নয়। খোদ ঢাকা শহরেরই ৩০ভাগ সড়ক নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত অবস্থায় রয়েছে বলে গতকাল পত্রিকান্তরে প্রকাশিত রিপোর্ট থেকে জানা গেছে। বর্ষার আগে এসব রাস্তা মেরামতের তেমন কোন সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। তড়িঘড়ি করে রাস্তায় যে সব মেরামতি কাজ করা হয় তা কয়েক মাসও টেকেনা। আমাদের সড়ক-মহাসড়ক, ফ্লাইওভার নির্মাণ ও সংস্কারের ব্যয় ইউরোপ-আমেরিকার মত উন্নত দেশের নির্মাণ ব্যয়ের চেয়েও বেশী। সবচে বেশী অর্থ ব্যয় করে সবচেয়ে স্বল্পস্থায়ী ও খারাপ মানের অবকাঠামো নির্মানের পেছনে রয়েছে বিভিন্ন সংস্থার সীমাহীন দুর্নীতি ও লুটপাটের যোগসাজশ। সমন্বয়হীনভাবে বিভিন্ন সংস্থার যত্রতত্র রাস্তা খোঁড়াখুড়ি বন্ধে অনেক লেখালেখি হলেও অবস্থার কোন পরিবর্তন দেখা যাচ্ছেনা। নগর কর্তৃপক্ষ শহরের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, পয়:নিস্কাশন ব্যবস্থা কিংবা উন্নয়ন কর্মকান্ডের সমন্বয় কোনটিই ঠিকভাবে সম্পন্ন করতে পারছেনা। যানজটে গতিহীন, বিশৃঙ্খল গণপরিবহন ব্যবস্থা, অপরিচ্ছন্ন ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশসহ রাজধানী শহরকে পানিবদ্ধতা, বন্যার ঝুঁকিসহ নানাবিধ নাগরিক দুর্ভোগের মুখে রেখে দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নেয়া সম্ভব নয়। ঢাকার বিভিন্ন সংস্থার নগর উন্নয়ন পরিকল্পনা, পানি উন্নয়ন বোর্ড, সড়ক ও জনপথ বিভাগের মত গুরুত্বপূর্ণ বিভাগের প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়নে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা জরুরী।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বর্ষায়

৩ আগস্ট, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন