পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মরণ বাঁধ ফারাক্কা এবং অন্যান্য অভিন্ন নদীতে বাঁধ দিয়ে ভারতের একতরফা পানি প্রত্যাহারের ফলে মৃত্যুর মুখে এদেশের নদ-নদী। পদ্মা-মেঘনা-তিস্তা, সুরমা, ব্রহ্মপুত্রসহ দেশের সব নদী এখন স্রোতহীন। নদীর বুকে ধু ধু বালু চর। এসব চরে হচ্ছে ফসলের চাষ। নদী শুকিয়ে যাওয়ায় জেলেরা মাছ না পেয়ে পেশা পরিবর্তনে বাধ্য হচ্ছে। বিভিন্ন এলাকায় সেচ সঙ্কটে কৃষকের মধ্যে হাহাকার চলছে। হাজার হাজার একর জমি মরুভূমিতে পরিণত হয়েছে। সেই সাথে অনেক এলাকায় খাবার পানির তীব্র সঙ্কট দেখা দিয়েছে।
ফারাক্কা ও গজলডোবা বাঁধের বিরূপ প্রভাবে হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত সীমান্তবর্তী দিনাজপুরের ভিতর দিয়ে বয়ে চলা ছোট- বড় ১৯ টি নদী শুকিয়ে গেছে। পানির অভাবে এগুলো মরা খালে পরিণত হয়েছে। মরণ বাঁধ ফারাক্কা ও গজলডোবা উত্তরের প্রধান প্রধান নদীগুলির পানির প্রবাহকে নিয়ন্ত্রিত করে রেখেছে। বর্ষায় বাঁধের গেট খুলে দেওয়ায় তলিয়ে যায় দিনাজপুর, রংপুর, লালমনিরহাট, গাইবান্ধা, চাপাইনবাবগঞ্জসহ বিস্তৃর্ণ এলাকা। আবার শুষ্ক মৌসুমে গেট লাগিয়ে ভারত নিজেদের কৃষি জমিতে সেচ দেয়ার কারনে এসব এলাকার নদীগুলো হয়ে পড়ে পানিশুন্য। বর্তমান শুষ্ক মৌসুমে এখন প্রতিটি নদী ধু ধু বালুর চরে পরিণত হয়েছে। নদী পরিণত হয়েছে মরা খালে। পানি কমে যাওয়ায় কমেছে মাছ। মাছ কমে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন মৎস্যজীবীরা। অন্যদিকে নদীতে পানি না থাকায় কৃষকরা সেচ সংকটে পড়েছেন। শুধু তাই নয়, নদীতে পানি না থাকায় কমে যাচ্ছে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর। গভীর নলকূপের মাধ্যমে সেচ দিচ্ছেন কৃষকরা। এতে ফসলের উৎপাদন খরচ বেড়ে যাচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন সাধারণ কৃষক।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নদীর গভীরতা কমে যাওয়ায় এবং খনন না হওয়ার কারণে নদীর পানি ভূগর্ভে প্রবেশ করছে না। ফলে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে। যদিও পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, এরই মধ্যে নদীগুলোর খনন কার্যক্রম শুরু হয়েছে। দিনাজপুরের পুনর্ভবা, আত্রাই, গর্ভেশ্বরী, কাঁকড়া, ছোট যমুনা, করতোয়াসহ ১৯টি নদীর একই চিত্র। নদীগুলোতে পানি নেই বললেই চলে। খড়স্রোতা নদীগুলো এখন পরিণত হয়েছে সরু নালায়। নদীর বড় অংশ জুড়েই পলি জমে ভরাট হয়েছে। অনেকেই সেই চরে চাষাবাদ করছেন। অনেক চর ব্যবহৃত হচ্ছে খেলার মাঠ হিসেবে। শুধু বর্ষাকাল ছাড়া সবসময়ই এমন চিত্র দেখা যায়।
দীর্ঘ দুই যুগেও কোনো নদীর খনন কার্যক্রম শুরু করা হয়নি। ফলে বছরের পর বছর ধরে এসব নদী মরা খালে রূপ নিয়েছে। এ অবস্থায় বর্ষাকালে সামান্য বৃষ্টিতেই নদীর পানি উপচে পড়ে আশপাশের এলাকা প্লাবিত হচ্ছে।
দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার সাহেব ডাঙ্গা হাট এলাকার মখসেদ আলী বলেন, আগে বাড়িতে মেহমান আসলে আমার বাবা-দাদারা নদীতে মাছ ধরে মেহমানদারী করতেন। গ্রামের অন্যান্যরা মাছ ধরে বাজারে বিক্রি করে সংসার চালাতো এখন মাছ তো দুরের কথা নদীতে পানিই নাই।
কৃষক বেনু রাম সরকার বলেন, এ মুহূর্তে বড় সমস্যা হলো ভূগর্ভস্থ পানিও ধীরে ধীরে নিচে নেমে যাচ্ছে। আর এ কারণে ফসল উৎপাদনে বেশি খরচ হচ্ছে।
দিনাজপুর জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, প্রতি বছরই খরা মৌসুমে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ৩ থেকে ৬ ফুট পর্যন্ত নিচে নেমে যাচ্ছে। শুধু খরা মৌসুমেই নয়, বর্ষা মৌসুমেও পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে। যার প্রভাব পড়ছে ফসলের মাঠেও। এখন শুধু বোরে মৌসুমেই নয়, বৃষ্টির অভাবে আমন মৌসুমেও শ্যালোর মাধ্যমে পানি সেচ দিতে হয় কৃষকদের।
দপ্তরটির তথ্যমতে, গত ১০ বছরে দিনাজপুর জেলায় স্থানভেদে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ২ থেকে ৪ ফুট পর্যন্ত নিচে নেমে গেছে। পানির এই স্তর যতই নিম্নগামী হবে, ততই বাড়বে সেচ খরচ। এখন আগের তুলনায় পানি সেচের খরচ বেড়েছে স্থানভেদে ৬ থেকে ৮ শতাংশ পর্যন্ত। ফলে কৃষি উৎপাদনে উভয় সংকটে পড়েছেন উত্তরের জেলা দিনাজপুরের কৃষকরা।
জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, জেলায় ছোট-বড় মিলিয়ে নদীর সংখ্যা রয়েছে ১৯টি। সাম্প্রতিক সময়ে নদীর খনন কার্যক্রম শুরু হয়েছে। পুনর্ভবা, আত্রাই, ঢেপা, গর্ভেশ্বরী, ছোট যমুনা, ইছামতি নদীরও খনন কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এর মধ্যে আত্রাই ও পুনর্ভবা নদীর খনন কার্যক্রম করছে বাংলাদেশ নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়।
দিনাজপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, বৃহত্তর দিনাজপুর জেলার (দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও ও পঞ্চগড়) ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ১৯টি নদীর মোট দৈর্ঘ্য ৭২৮ কিলোমিটার। নদীগুলোর উৎসস্থল হিমালয় পর্বত। কালের বিবর্তনে ও নদী সংস্কারের অভাবে পুনর্ভবা, করতোয়া, আত্রাই, ঢেপা, গর্ভেশ্বরী, তুলাই, কাঁকড়া, ইছামতি, ছোট যমুনা, তুলসী গঙ্গা, টাঙ্গন এসব নদী এখন পরিণত হয়েছে ধু ধু বালুচরে। এসব নদ-নদী পানির অভাবে হারিয়ে যেতে বসেছে। বর্তমানে অনেক স্থানেই এসব নদীর কোনো অস্তিত্বই দেখা যায় না। বর্ষাকালে এসব নদীতে সামান্য পানি থাকলেও শীত মৌসুমে নদীতে পানি থাকে না। তখন নদী তীরের মানুষ নদীর বুকে চাষাবাদ করে।
দিনাজপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিবুল ইসলাম বলেন, অনেক নদীরই খনন কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এগুলোর খনন মূলত করছে নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়। কিছু খনন হচ্ছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্াবধানে। নদীগুলো খনন হলে খরা মৌসুমেও পানি পাওয়া যাবে এবং কৃষি ও মৎস্যখাতের উপকার হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।