নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
স্পোর্টস রিপোর্টার : বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) সহ-সভাপতি ও জাতীয় দলের সাবেক তারকা ফুটবলার বাদল রায় বলেছেন, ‘বাফুফে এখন দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে।’ বাফুফে সাধারণ সম্পাদক আবু নাইম সোহাগের দেয়া হুমকির ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে গতকাল মোহামেডান স্পোর্র্টিং ক্লাব প্যাভিলিয়নে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি কথাটি বলেন। বাদল রায়ের কথায়, ‘বাফুফের কোন কাজেরই স্বচ্ছ¡তা নেই। যা আমি সহ্য করতে পারি না। আমি সব সময়েই জবাবদিহীতার মধ্যে কাজ করতে পছন্দ করি। কিন্তু এখানে কোন জবাবদিহীতা নেই।’ তিনি আরো বলেন, ‘ফিফা বয়স ভিত্তিক দলগুলোর জন্য বাংলাদেশে যে টাকা পাঠায় তা ডেভেলপমেন্ট খাতে খরচ হয় না। কর্মচারীরা চার মাস বেতন পান না। ফুটবল একাডেমির জন্য ফিফার দেয়া সাত লাখ ডলারের মধ্যে এক টাকাও খরচ হয়নি। ব্যাংক অ্যাসোসিয়েশন বাফুফেকে দেশের ফুটবল উন্নয়নের জন্য যে ১৫ কোটি টাকা দিয়েছিল তারও কোন হদিস নেই। এমন সব অনিয়ম ও দুর্নীতিকে আমি প্রশ্রয় দিতে পারিনা বলেই বাফুফের নীতি-নির্ধারকদের চোখে আমি খারাপ। আমাকে হুমকি দেয়া হচ্ছে।’
জানা গেছে, সম্প্রতি সাবেক এই তারকা ফুটবলার ও সংগঠকের স্ত্রী মাধুরী রায়কে মুঠো ফোনে হুমকি দিয়েছেন বাফুফে সাধারণ সম্পাদক আবু নাইম সোহাগ। কাল মিডিয়ার সামনে এমন ঘটনার ব্যাখ্যা দিলেন বাদল রায় নিজেই। তিনি বলেন, ‘বাফুফের সাধারন সম্পাদক পদে এই আবু নাইম সোহাগকে আমরাই নিয়োগ দিয়েছি। একজন বেতনভুক্ত কর্মচারী হয়েও কি করে বাফুফের নির্বাচিত সহ-সভাপতির স্ত্রীকে মোবাইল ফোনে হুমকি দেয় সোহাগ। বাফুফেতে আমার যাওয়া নিয়ে গত ২৬ মার্চ আমার স্ত্রী মাধুরী রায়কে মুঠোফোনে বিধি নিষেধ আরোপ করে সে। তার ধৃষ্টতা দেখে আমি অবাক হই।’ এ ব্যাপারে ওয়ারী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন মাধুরী। যার নং-১৮৫৯। বাদল রায় বলেন, ‘মোহামেডান আমার প্রিয় ক্লাব। এই ক্লাব থেকেই তারকা হয়েছি। অনেক দিন ক্লাবে আসি না। আজ (কাল) মোহামেডানে এসেছি বলে ভালো লাগছে। তবে একটি অনাকাঙ্খিত ঘটনা আমাকে নাড়া দিয়েছে।’
বাফুফে সভাপতি কাজী সালাহউদ্দিনের গত দুই মেয়াদে আর্থিক বিষয়ে নানা প্রশ্ন রয়েছে। যে ব্যাপারে বাদল রায় সব সময়ই সোচ্চার। সম্প্রতি ফিফা থেকে অনেক অর্থ এসেছে বাফুফেতে। সেই অর্থের হিসাব জানতে চান সাবেক এই ফুটবলার। কিন্তু বাফুফের বেতনভুক্ত সাধারণ সম্পাদক আবু নাইম সোহাগ ঠিক মতো উত্তর দেন না। এই নিয়ে সোহাগের সঙ্গে একদিন উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয় বাদলের। এ প্রসঙ্গে বাফুফের অন্যতম এই সহ-সভাপতি বলেন, ‘সোহাগ বেতনভুক্ত কর্মচারী। সে আমাদের প্রশ্নের জবাব দিতে বাধ্য। কিন্তু সে সব ব্যাপার এড়িয়ে যায়। তার কাছে কোন কিছু জানতে চাইলে, কোন সদুত্তর পাওয়া যায় না। সোহাগের কাজ হলো কো-অর্ডিনেট করা। উল্টো আমার স্ত্রীকে বলে আমি যেন ফেডারেশনে না আসি এবং আসলেও যেন এক কাপ চা খেয়ে চলে যাই।’ জিডির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমার স্ত্রী একজন আইনজীবি। সালাহউদ্দিন ভাইয়ের সঙ্গে এ বিষয়ে সে কথা বলেছে। তিনি আমার স্ত্রীকে বলেছেন, বাদল বাফুফে ভবনে বসে সাংবাদিক ও ফুটবল সংশ্লিস্ট লোকদের উস্কানি দেয়। বাদলের বিরুদ্ধে আমি মামলা করব। আমি কি এমন অন্যায় করেছি যে, সালাউদ্দিন সাহেব আমার বিরুদ্ধে মামলা করবেন? এমন কথা শোনার পর আমার স্ত্রী জিডি করাই শ্রেয় মনে করেছে।’
বাফুফের এই সহ-সভাপতি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের বসিয়েছেন ফুটবল উন্নয়নে কাজ করতে। নিজের কর্মদক্ষতায় উনি দেশকে এগিয়ে নিয়ে গেলেও আমরা ফুটবলকে ধ্বংস করে দিয়েছি। এর পেছনে কাজী সালাউদ্দিনের খামখেয়ালীপনাই দায়ী। কেননা তিনি চান না দেশের ফুটবলের উন্নয়ন ঘটুক এবং তার অপকর্মের কেউ সমালোচনা করুক।’ তিনি দৃঢ় কণ্ঠে বলেন, ‘আমি বাদল রায়, সরাসরি শেখ হাসিনার শিষ্য। কোন অনৈতিক কাজ কখনো আমি করি না। কাউকে অসম্মানও করি না। গত দু’বার সালাউদ্দিনকে নির্বাচনে জয়ী করানোর জন্য নিরলস কাজ করেছি। অথচ ফুটবল আজ কবরে ঢুকে গেছে। মানুষ আমাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে। জবাবদিহিতা চায়। কোন উত্তর দিতে পারি না। আমার সঙ্গে কে থাকলো না থাকলো তা বড় কথা নয়। আমি প্রতিবাদ করেই যাবো। এতে আমার চেয়ার থাকুক বা না থাকুক।’
বাফুফে ভবনের কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েও বিরক্ত সাবেক এই ফুটবলার। তিনি বলেন, ‘বাফুফে ভবনে অহেতুক চার স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। এটা এমন কোন কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান নয় যে, এখানকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা কঠোর করতে হবে? এই নিরাপত্তা ব্যবস্থার কারণেই বরেণ্য ফুটবল সংগঠকরা ধীরে ধীরে দুরে সরে যাচ্ছেন। কারণ তারা বাফুফে ভবনে এসে দেড় থেকে দু’ঘণ্টা বসে থাকেন কিন্তু দায়িত্বশীল কোন কর্মকর্তার দেখা পান না।’
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত সাবেক তারকা ফুটবলার আবদুল গাফফার বলেন, ‘বাদল রায় শুধু ফুটবলার নন, উনি একজন ইনস্টিটিউট। অসুস্থ হওয়ার পর যে বাদল রায়কে প্রধানমন্ত্রী বিদেশে চিকিৎসা করিয়েছেন, তাকেই একজন বেতনভুক্ত কর্মচারী হুমকি দিবে, তা হতে পারে না। আমরা সোহাগের অপসারন চাই।’
আবেগ আপ্লুত কণ্ঠে সাবেক ফুটবলার হাসানুজ্জাান খান বাবলু বলেন, ‘বাদল দেশের সম্পদ। তাকে এমনভাবে হুমকি দেয়ার কি যৌক্তিকতা থাকতে পারে? বাফুফের সভাপতির কাছে আমার প্রশ্ন, একজন বেতনভুক্ত কর্মচারী কি একজন নির্বাচিত সহ-সভাপতিকে হুমকি দিতে পারে? আমরা এমন ধৃষ্টতার উপযুক্ত বিচার চাই। যার একমাত্র সাজা সোহাগকে চাকুরিচ্যুত করা। মনে রাখতে হবে, বাদল একা নয়, সাবেক ও বর্তমান সব ফুটবলাররাই তার সঙ্গে রয়েছে।’
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।