পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সংসদ সদস্যদের দলীয় প্রচারে অংশ নেয়ার সুযোগ রেখে নির্বাচন কমিশন আচরণ বিধিমালায় সংশোধন এনেছে। এটি একটি নজিরবিহীন ঘটনা। এমনকি এই সংশোধনীর বিরোধিতা করে একজন নির্বাচন কমিশন নোট অব ডিসেন্ট দিলেও তা অগ্রাহ্য করে সংশোধনী আনা হয়েছে। নির্বাচন বিশ্লেষকরা নির্বাচন কমিশনের এ সিদ্ধান্তকে অত্যন্ত খারাপ দৃষ্টান্ত বলে অভিহিত করেছেন। সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন, সংসদ সদস্যরা যখন এলাকায় যান, তখন নানা ধরনের প্রভাব তৈরি হয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে পুলিশ, প্রশাসন তাদের কথা শোনে। স্থানীয় পর্যায়ে সংসদ সদস্যরা সবকিছুর শীর্ষে থাকেন। সবকিছু নির্বাচন কমিশনের অধীনে থাকে না। নির্বাচন কমিশনের এই সিদ্ধান্ত ভালো হয়নি। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন এবং সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করার যে ধারণা তার বিবেচনায় সঠিক হয়নি। স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, সিটি করপোরশন আচরণবিধির এমন সংশোধনী ইসির ভাবমর্যাদাসঙ্কট আরও ঘনীভ‚ত করবে। তিনি বলেন, খুলনা সিটি নির্বাচনে গণগ্রেপ্তারে নীরব ভ‚মিকা, ভোটের দিন পুলিশের ওপর কন্ট্রোল না থাকা- এসব নিয়ে ইসিকে প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে। এমপিদের প্রচারণার সুযোগের সিদ্ধান্ত জনমনে আরও প্রশ্ন ও সন্দেহ বাড়াবে; ইসির নিরপেক্ষতার সঙ্কটও তৈরি করবে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, জাতীয় নির্বাচনের বছরে নির্বাচন কমিশনের যেখানে তার সক্ষমতা ও নিরপেক্ষতা এবং ভাবমর্যাদা উন্নত করার ক্রমাগত চেষ্টা করা প্রয়োজন, সেখানে এ ধরনের এক তরফা সিদ্ধান্ত নেয়ায় তা তার জন্য বুমেরাং হয়ে উঠবে।
প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমামের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধিদল গত ১২ এপ্রিল ইসির সঙ্গে বৈঠক করে সংসদ সদস্যদের সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রচারণার সুযোগ দিয়ে আচরণ বিধিমালা সংশোধনের দাবী জানান। দেখা গেল, নির্বাচন কমিশন অন্য কোনো অংশীজনের সাথে আলাপ-আলোচনা না করেই শাসক দলের চাওয়া পূরণ করে দিয়েছে। এর মধ্য দিয়ে বর্তমান কে এম নুরুল হুদার কমিশন বিগত রকিব কমিশনকেও হার মানিয়েছে। রকিব কমিশন এ পরিবর্তন আনতে গেলে সমালোচনার মুখে সরে আসে। দেখা যাচ্ছে, জাতীয় নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে বর্তমান নির্বাচন কমিশনও ততই সরকারের আজ্ঞাবহ হয়ে উঠছে। খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে তা বিশেষভাবে পরিস্কার হয়েছে। আপাত দৃশ্যমান শান্ত নির্বাচনের আড়ালে অনিয়ম, ভোট কারচুপি এবং প্রশাসন ও ক্ষমতাসীন দলের নীরব প্রভাব বিস্তারে বিরোধী দলকে যে মাঠছাড়া করা হয়েছে, তার প্রমাণের অভাব নেই। এক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের প্রতিকারমূলক কার্যকর কোনো ভূমিকাই ছিল না। সেখানে তার কাজ নামমাত্রে পরিণত হয়। সবকিছুই ছিল প্রশাসন ও শাসক দলের নিয়ন্ত্রণে। কারচুপি ও ভোটচুরির নির্বাচনী সংস্কৃতিতে খুলনা সিটি করপোরেশন এক নতুন সংস্করণ হয়ে থাকবে। সামনে গাজীপুর সিটি করপোরেশনসহ আরও যে তিনটি সিটি করপোরেশন নির্বাচন রয়েছে সেগুলোতে নতুন কোনো সংস্করণ দেখলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। তার ওপর ক্ষমতাসীন দলের এমপিদের নির্বাচনী প্রচারণায় অংশগ্রহণের সুযোগ করে দেয়ায় নির্বাচন বলে কিছু থাকবে কিনা, তা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ রয়েছে। যেখানে এলাকার পুরো কর্তৃত্ব এমপির ওপর নির্ভরশীল, সেখানে তার প্রভাব উপেক্ষা করে নির্বাচন কমিশনের পক্ষে নির্বাচনী কর্তৃত্ব নেয়ার হিম্মত থাকবে, এটা এখন আর আশা করা যায় না। দুর্ভাগ্যের বিষয় হচ্ছে, ক্ষমতাসীন দল এমনভাবে নির্বাচন কমিশন গঠন করে যে, তাতে নিরপেক্ষ, দৃঢ় মেরুদন্ডের অধিকারী এবং সংবিধান কর্তৃক কমিশনের প্রদত্ত ক্ষমতা ব্যবহারে সাহসী লোকের অভাব পরিলক্ষিত হয়ে আসছে। নির্বাচন কমিশন বরবাবরই সরকারের সিদ্ধান্তের দিকে তাকিয়ে থাকে। সরকার কিসে খুশি হয়, কিসে নাখোশ হয়-সেদিকেই মনোযোগ থাকে বেশি। যে কোনো নির্বাচন সরকার যদি বলে সুষ্ঠু হয়েছে, সেও একই সুরে বলে সুষ্ঠু হয়েছে। ধারণা করা হয়েছিল, নির্বাচন কমিশনের ইতিহাসে রকিব কমিশনই সবচেয়ে বিতর্কিত কমিশন। এখন দেখা যাচ্ছে, বর্তমান নির্বাচন কমিশনও সেদিকেই হাঁটছে। সরকারি দলের সিদ্ধান্তের বাইরে যেতে পারছে না। প্রধান নির্বাচন কমিশনার প্রথমে জিয়াউর রহমানের বন্দনা করে নিজেকে বিরোধী দলের কাছে গ্রহণযোগ্য করার প্রয়াস চালিয়েছিলেন। তারপর বঙ্গবন্ধুর বন্দনা করে ক্ষমতাসীনদের খুশি করেছিলেন। এর মাধ্যমে তিনি নিজেকে নিরপেক্ষ হিসেবে প্রমাণের প্রয়াস চালিয়েছিলেন। এখন যতই দিন অতিবাহিত হচ্ছে, ততই দৃশ্যমান হয়ে উঠছে যে, এসবই ছিল প্রধান নির্বাচন কমিশনারের এক ধরনের চালাকি বা আইওয়াশ। আর জাতীয় নির্বাচন যতই কাছে আসবে, সরকারের প্রতি তার আনুগত্যের চিত্রটি যে আরও স্পষ্ট হয়ে উঠবে, তা নিশ্চিত করে বলা যায়। ফলে প্রশ্ন উঠেছে, এ নির্বাচন কমিশনকে দিয়ে আগামী জাতীয় নির্বাচন করা কি সম্ভব?
সিটি করপোরেশনের মতো স্থানীয় নির্বাচনে এমপিদের প্রচারণার সুযোগ দেয়া নির্বাচন কমিশনের কান্ডজ্ঞানসম্পন্ন সিদ্ধান্ত নয়। এতে নির্বাচনগুলো একতরফা হয়ে যাবে। কারণ, বর্তমান শাসকদলের বাইরে সিটি করপোরেশনগুলোতে অন্য কোনো দলের এমপি নেই। একদিকে শাসকদলের অনুগত প্রশাসন, অন্যদিকে এলাকায় নেতা-কর্মীদের দোর্দন্ড প্রতাপে দেখা যাবে, তাদের বিরোধী কোনো পক্ষকেই থাকতে দেয়া হবে না। নির্বাচন কমিশন কি শাসক দলের অনুগত প্রশাসন, এমপি ও দলীয় নেতাকর্মী-এই তিন শক্তির প্রভাব বিস্তারকে উপেক্ষা করে নিজের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে পারবে? পারবে না। কারণ শাসক দলের বিপরীতে যাওয়ার মতো সাহস নির্বাচন কমিশনের নেই। যেখানে কমিশনের একজন কমিশনার দ্বিমত পোষণ করে নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছে এবং তার বক্তব্য উপেক্ষা করা হয়েছে, তাতে স্পষ্টতই বোঝা যায়, নির্বাচন কমিশন যে কোনো মূল্যে ক্ষমতাসীন দলের কথা অনুযায়ী কাজ করবে। জাতীয় নির্বাচনের আগে নির্বাচন কমিশনের এ ধরনের আচরণ তার দক্ষতা, নিরপেক্ষথা ও গ্রহণযোগ্যতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলছে। নির্বাচন কমিশন যদি নিজের বলে বলীয়াণ হতে না পারে, তাবে আগামী যে কোনো নির্বাচনই সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে করা তার পক্ষে সম্ভব হবে না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।