Inqilab Logo

রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

মন্ত্রিত্ব ছেড়ে প্রচারণায় আসুন

ওবায়দুল কাদেরের উদ্দেশে ফখরুল

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১২ জানুয়ারি, ২০২০, ১২:০০ এএম

মন্ত্রীর পদ ছেড়ে ওবায়দুল কাদেরকে ঢাকা সিটি নির্বাচনের প্রচারণায় অংশ নেয়ার চ্যালেঞ্জ দিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ওবায়দুল কাদের সাহেব খুব দুঃখ করে বলেছেন যে, মির্জা ফখরুল যদি নির্বাচনের প্রচারণায় অংশ নিতে পারেন আমি পারবো না কেনো? এক‘শ বার পারবেন। এই মুহুর্তে মন্ত্রীত্ব থেকে পদত্যাগ করেন, আসেন এক সাথে প্রচারণা করি।আইন তো তাই বলে। আপনি মন্ত্রী এবং এমপি থাকলে এটা পারবেন না। সুতরাং মন্ত্রীত্ব ও এমপিপদ থেকে পদত্যাগ করেন। আসুন- আপনি নৌকার জন্য করেন, আমি ধানের শীষের জন্য প্রচারণা করি। লেট আস ফেইস দ্যা চ্যালেঞ্জ। দেখা যাক জনগণ কার দিকে থাকে?
গতকাল শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের উদ্যোগে কারাবন্দি বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসা ও মুক্তির দাবিতে আয়োজিত সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা এ কথা খুব পরিষ্কার করে বলতে পারি, আজকে ক্ষমতা থেকে নেমে আসুন লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করুন। একটা নিরপেক্ষ সরকার বসিয়ে দেন। নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের পরিচালনায় নির্বাচন করুক। সেই নির্বাচনে যদি আপনারা জিতেন মাথা পেতে নেবো। কিন্তু আপনারা জানেন সেটা কোনোদিন হবে না। সেজন্য কৌশল করে বিভিন্নভাবে মানুষকে বিভ্রান্ত করে তাদেরকে বোকা বানিয়ে আপনারা একদলীয় শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করছেন। এটা কখনোই জনগণ মেনে নেবে না।

তিনি বলেন, নির্বাচন দিচ্ছেন, নির্বাচন নির্বাচন খেলা করছেন আমরা জানি। তারপরও আমরা নির্বাচনে যাচ্ছি। কারণ আমরা এই নির্বাচনটাকে আমাদের গণতন্ত্রের মুক্তি ও দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির সংগ্রামের আন্দোলনের একটা হাতিয়ার হিসেবে আমরা নির্বাচনে যাচ্ছি।
বিভিন্ন ‘উৎসব প্রসঙ্গে’ মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আজকে সরকার উৎসব পালন করছেন খুব ভালো কথা। কিন্তু দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখে উৎসব পালন করছেন, গণতন্ত্রের নেত্রীকে কারাগারে রেখে উৎসব পালন করছেন। এই উৎসবে দেশের মানুষের হৃদয় কতটুকু থাকবে সেই কথাটা একটু চিন্তা করে দেখা দরকার আপনাদের। দেশের বেশির ভাগ মানুষকে অস্বস্তিতে রেখে, একটা দুরাবস্থায় রেখে এই উৎসব কতটুকু সফল হবে সেটা অবশ্যই আপনাদের ভেবে দেখতে হবে।

বল ক্ষমতাসীন দলের কোর্টে জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের মন্ত্রী অত্যন্ত প্রভাবশালী মানুষ, তিনি গণতন্ত্রের জন্যে সংগ্রামও করেছেন অনেকদিন, তিনি বলেছেন, ‘দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এমন কোনো অসুস্থ নন যে, তাকে চিকিৎসার জন্য বাইরে পাঠাতে হবে’। এই অন্যায়, এই ধরনের কথা আপনার কাছ থেকে আশা করি না। আমরা আশা করি, সত্যিকার অর্থে একজন রাজনৈতিক নেত্রী বাংলাদেশের মানুষ যাকে ভালোবাসে তার চিকিৎসার জন্য আপনারা সঠিক কথা বলুন। এখন আপনাদের কোর্টে বল, এখন আর আদালতে কোর্টে বল নেই, বল আপনাদের কোর্টে। বেগম খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের যে কোনো অবনতির দায়-দায়িত্ব সব আপনাদের। বেগম খালেদা জিয়ার কোনো ক্ষতি হলে সম্পূর্ণভাবে আপনাদেরকেই দায়ী থাকতে হবে।

খালেদা জিয়া কেনো জামিন পাবেন না প্রশ্ন রেখে মির্জা ফখরুল বলেন, এমন একটা মামলা যে মামলায় যেকোনো মানুষ জামিন পায়। উনি কেনো জামিন পাবেন না। আজকে ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা জামিন পায়, মহিউদ্দিন খান আলমগীর জামিন পায়, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া জামিন পায় তাহলে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া কেনো জামিন পাবেন না? কারণ দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া বাইরে থাকলে আপনাদের ওই তখতে তাউস, আপনাদের মসনদ জনগণ ভেঙে ফেলবে, থাকতে দেবে না। এই কারণে আপনারা তাকে আটকিয়ে রেখেছেন, রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় আপনারা আটকিয়ে রেখেছেন। আমরা খুব পরিষ্কার করে বার বার বলছি, এখনো বলছি, সময় থাকতে দেয়ালের লিখুন পড়ুন, মানুষের চোখের ভাষা দেখুন, মানুষের কথা বুঝার চেষ্টা করুন। এভাবে দখল করে, জোর করে দাবিয়ে রেখে, নির্যাতন, করে, গুলি করে, গুম করে চিরদিন ক্ষমতায় টিকে থাকা যায় না। শেখ মুজিবুর রহমানের কথা আপনাদের স্মরণ করিয়ে দিতে চাই- দাবায়ে রাখতে পারবা না। বাংলার মানুষকে দাবায়ে রাখা যাবে না।
মির্জা ফখরুল বলেন, পেশাজীবী পরিষদকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, তারা আজকে ১/১১ দিনে অর্থাৎ যে দিনটি বাংলাদেশের ইতিহাসে কলঙ্কময় দিন বলে লেখা আছে সেইদিনে তারা জনপ্রিয় নেত্রীকে সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে আটক করে রাখা হয়েছে তার মুক্তির জন্য এই সমাবেশের আয়োজন করেছে। এই সরকার রাষ্ট্র যন্ত্রকে দখল করে বিচার বিভাগকেও নিয়ন্ত্রণ দেশনেত্রীকে আটকিয়ে রেখেছে। আমরা বার বার প্রশ্ন তুলেছি, যে আইনে যে ধারায় সাজা দিয়েছেন সেই আইনে সেই ধারায় আরো অনেক লোককে আপনারা জামিন দিয়েছেন। এই প্রশ্ন আমার বিচার বিভাগের কাছে, মাননীয় বিচারকদের কাছে। জনগণের আস্থা আপনাদের ওপরে থাকার কথা। যেসব জায়গায় হেরে গেলে, নির্যাতিত হলে, নিপীড়িত হলে মানুষ বিচার বিভাগের কাছে যায়, বিচারকদের কাছে যায় তাদের আস্থা পাওয়ার জন্য যেন অন্যায় তাদের উপরে না হয়। কী দুর্ভাগ্য! আজকে সেইখান থেকেই আজকে বেশি অন্যায় করা হচ্ছে এমন একজন নেত্রীর উপরে যিনি ১৬ কোটি মানুষের প্রাণের নেত্রী।

কালক্ষেপণ না করে এই মুহুর্তে খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি করে তিনি বলেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে এতটুকু দেরি না করে এই মুহুর্তে মুক্তি দিন। তার শরীরটার অত্যন্ত খারাপ হয়ে গেছে। ডাক্তাররা বলেছেন, তার উচ্চতর সেন্টারে চিকিৎসা দরকার। বাংলাদেশে এমন কোনো সেন্টার নেই। সেজন্য তার পরিবারের সদস্যরা বলছেন যে, আমরা তার চিকিৎসা করতে চাই। এই কোনো ধরনের অমানবিকতা আপনারা দেখাচ্ছেন। ভালো নজির হচ্ছে না এটা, এই নজির সৃষ্টি করবেন না।
সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত আহবায়ক শওকত মাহমুদের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেনের পরিচালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন- সাংবাদিক নেতা রুহুল আমিন গাজী, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান, সাংবাদিক এম আবদুল্লাহ, কাদের গনি চৌধুরী, শহিদুল ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. এবিএম ওবায়দুল ইসলাম, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শামসুল আলম সেলিম, ড্যাবের অধ্যাপক ডা: আব্দুল কুদ্দুস, রফিকুল ইসলাম বাচ্চু, শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোটের অধ্যক্ষ সেলিম ভুঁইয়া, জাকির হোসেন, কৃষিবিদ হারুনুর রশীদ, শামীমুর রহমান শামীম, জাতীয়তাবাদী সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের রফিকুল ইসলাম প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রচারণায় আসুন
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ