Inqilab Logo

শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

এক কিংবদন্তির বিদায়

স্পোর্টস ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২২ মে, ২০১৮, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১০:৪৩ পিএম, ২১ মে, ২০১৮

সকল আনুষ্ঠানিকতা শেষ। বিষন্নভরা এক আনন্দউৎসবের মধ্য দিয়ে আগেই নিশ্চিত করা লা লিগা ট্রফি তুলে দেওয়া হয়েছে বার্সেলোনার হাতে। আতশবাজি আর বাহারি আলোকসজ্জার মাঝে থেকে থেকে জ্বলে উঠা ক্যামেরার ফ্লাশও তখন বন্ধ। ক্লান্ত শরীরে মাঠ ত্যাগ করেছেন খেলোয়াড়, দর্শক এমনকি কর্মকর্তা-কর্মচারিরাও। ৯৯ হাজার দর্শক ধারণক্ষম বিশাল ন্যু ক্যাম্পে তখন শুনশান নীরবতা। এমন নীরবতাকে সঙ্গী করে মাঠের ঠিক মাঝে বসে আছেন কেবল একজন-আন্দ্রেস ইনিয়েস্তো।
শেষবারের মত প্রিয় মাঠটাতে এককী কিছু সময় কাটালেন স্প্যানিশ মিডফিল্ডার। সে সময় কি ভাবছিলেন আন্দ্রেস? স্মৃতির ভেলায় চড়ে নিশ্চয় ফিরে গিয়েছিলেন ২২ বছর আগে। বার্সার একাডেমি লা মেসিয়ায় বেড়ে ওঠা, এরপর বিশ্বের অন্যতম সেরা ক্লাবের সিনিয়র দলে কাটানো ১৬ বছরের টুকরো টুকরো সব মধুময় স্মৃতি নিশ্চয় দোলা দিয়ে গেছে তার মনে। যে সময়ে তিনি নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেছেন সময়ের সেরা মিডফিল্ডার হিসেবে। স্থান করে নিয়েছেন বিশ্বের লক্ষ-কোটি ফুটবল রোমান্টিকদের মনিকোঠায়। যার ফলসরুপ দু’হাত ভরে সাফল্যের দেখা পেয়েছে বার্সেলোনা। বিনিময়ে ক্লাবের কাছ থেকেও পেয়েছেন প্রাপ্য সম্মান। তবুও বিদায়বেলায় বিষাদ এসে তো মনকে ছুঁবেই।
ঘরের মাঠে মৌসুমের ও প্রিয় তারকার শেষ ম্যাচ। রিয়াল সোসিয়াদাদের বিপক্ষে ম্যাচটি ১-০ গোলে জিতে ইনিয়েস্তার বিদায়কে রঙ্গিন করে তোলে কাতালান দলটি। অধিনায়কের বন্ধনী হাতেই শুরু থেকে মাঠে ছিলেন ইনিয়েস্তা। ৮২তম মিনিটে উঠে যাওয়ার সময় বন্ধনীটা পরিয়ে দিয়ে যান বিশ্বস্থ সতীর্থ মেসির বাহুতে। হলুদ-কমলা রঙে সাজা ন্যু ক্যাম্প তখন দাঁড়িয়ে বিদায়ী শুভেচ্ছা জানায় তাদের কিংবদন্তিকে। সবার মন আজ বিষন্ন, দু’ফোঁটা অশ্রæও গড়িয়ে পড়েছে অনেক ভক্তের বদন বেয়ে।
ম্যাচের শুরু থেকেই ছিল প্রিয় তারকাকে বিদায় দেয়ার প্রস্তুতি। প্রথমে প্রতিপক্ষ খেলোয়াড়দের কাছ থেকে পেয়েছেন ‘গার্ড অব অনার’, ম্যাচ শেষে একই সম্মান পেয়েছেন সতীর্থদের কাছ থেকে। কিক অফের আগে ক্যামেরার ফোকাস গিয়ে পড়ে গ্যালারিতে, যেখানে দর্শক মোজাইকে লেখা ‘ফরেভার ইনিয়েস্তা’। বল মাঠে গড়ানোর পর যখনই তার কাছে বল গেছে তখনই উল্লাসে ফেটে পড়েছে দর্শকরা। তারা খুব করে চাইছিল বিদায় বেলা প্রিয় তারকা যেন একটা গোলের দেখা পান। কয়েকবার ভালো সুযোগও তৈরি করেছিলেন। কিন্তু অদৃষ্টে বসে যিনি সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করছেন তিনি হয়ত সবকিছু সাজিয়েছেন অন্যভাবে। যার হাতে সপে দিয়ে যাচ্ছেন মাঝমাঠ সেই ফিলিপ কুতিনহোর গোলেই ইনিয়েস্তার বিদায় উৎসব সাজায় বার্সা। ব্রাজিল তারকা যেন বোঝাতে চাইলেন, ইনিয়েস্তার বিশাল ভার বহন করতে তিনি প্রস্তুত।
ম্যাচ শেষে লিগ ট্রফি বুঝে নেয়ার পর ইনিয়েস্তার বিদায়ী ভাষণটাও ছিল আবেগে ঠাসা। ভাঙা ভাঙা কন্ঠে ৩৪ বছর বয়সী বলেন, ‘এটা আমার জন্যে কঠিন একটা দিন। কিন্তু ভালো লাগার বিষয় হলো, এখানেই আমি কাটিয়েছি অবিশ্বাস্য ২২টা বছর। বিশ্বের সেরা এই ব্যাজ ধারণ করে দলকে নেতৃত্ব দেয়া আমার কাছে একই সঙ্গে আনন্দ ও গর্বের।’
সংক্ষিপ্ত ভাষণে অশ্রুসজল বদনে বিশ্বকাপজয়ী নয়ক বলেন, ‘আমার সতীর্থের প্রত্যোককে ধন্যবাদ জানাই। আমি সব সময়ই তোমাদের অভাব অনুভব করব। এবং ধন্যবাদ জানাচ্ছি ভক্তদের, তোমাদের ভালোবাসার জন্যে। তোমরাই আমাকে সবকিছু অনুভব করতে শিখিয়েছো। আমি এখানে এসেছিলাম বালক বেশে, বিদায় নিচ্ছি পূর্ণ মানুষ রূপে। সারা জীবন তোমরা আমার মনের গহীনে থাকবে।’
১২ বছর বয়সে বার্সায় নাম লেখান ইনিয়েস্তা। ২২ বছরের ক্যারিয়ারে সিনিয়র দলের হয়ে অংশ নিয়েছেন ৬৭৪ ম্যাচে। ক্লাবের হয়ে তার চেয়ে বেশি ম্যাচ খেলেছেন কেবল তারই বন্ধু ও সতীর্থ জাভি হার্নান্দেস (৭৬৭)। বিদায়বেলা স্টেডিয়ামেই উপস্থিত ছিলেন আরেক ক্লাব লিজেন্ড। এই সময়ে ইনিয়েস্তা লা লিগা জিতেছেন নয়টি, চারটি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শিরোপা, তিনটি ক্লাব বিশ্বকাপ ও ছয়টি কোপা দেল রে ট্রফি। চ্যাম্পিয়ন্স লিগে নিজের শেষ মৌসুমটা প্রত্যাশা অনুযায়ী না কাটলেও লিগ ও কাপ শিরোপা জিতেই বিদায় নিয়েছেন বার্সা কিংবদন্তি। আগের ম্যাচে লেভান্তের কাছে অপ্রত্যাশিতভাবে হেরে না গেলে ৩৮ ম্যাচের লিগ ইতিহাসের প্রথম দল হিসেবে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন ওয়ার গৌরব অর্জন করত ইনিয়েস্তার বার্সা।
প্রিয় শিষ্যকে বিদায়বেলা ‘আনরিপিটেবল’ ও ‘হিস্টোরিক্যাল’ উপাধী দিয়েছেন কোচ আর্নেস্তো ভালভার্দে। তিনি মনে করেন, ‘এই মানের খেলোয়াড়দের নিয়ে অবিষ্যতে অনেকদিন আলোচনা হবে।’ বিদায় দিনে একটা পুরস্কার পেয়েছেন ইনিয়েস্তা। অবশ্য ব্যপারটা নিশ্চিতই ছিল। স্পেনের ঘোষিত বিশ্বকাপ দলে আছে ইনিয়েস্তার নাম।
একই রাতে অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের হয়ে শেষবারের মত মাঠে নেমেছিলেন আরেক স্প্যানিশ তারকা ফার্নান্ডো তোরেস। বিদায়ী ম্যাচে জোড়া গোল করেও অবশ্য দলকে জেতাতে পারেননি তিনি। এইবারের সঙ্গে ঘরের মাঠে ২-২ ড্র করে ডিয়েগো সিমিওনের দল। ৩৪ বছর বয়সী স্ট্রাইকার দুই কিস্তিতে ক্লাবের হয়ে ৪০৪ ম্যাচে অংশ নিয়ে করেছেন ১২৯টি গোল।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: কিংবদন্তি

৩ ডিসেম্বর, ২০২১

আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ