পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন দৃশ্যত: শান্তিপূর্ণ হলেও নানা ধরনের অনিয়ম, জালভোট, নির্বাচনী কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রশ্নবিদ্ধ ভ’মিকার অনেকগুলো নজির প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এই সব ঘটনার মধ্য দিয়ে সুষ্ঠু, অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশনের ব্যর্থতা আবারো প্রমানিত হল। মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আওয়ামীলীগের প্রার্থী তালুকদার আব্দুল খালেক ১৭৬, ৯০২ ভোট পেয়ে বেসরকারীভাবে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্ব›দ্বী বিএনপি মনোনীত প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু পেয়েছেন ১০৮,৯৫৬ ভোট। নির্বাচনের সামগ্রিক পরিবেশে তেমন কোন উত্তেজনা বা উত্তাপ সৃষ্টি নসা হলেও নির্বাচনের আগে বিএনপি’র শত শত নেতাকর্মীকে গ্রেফতার, এবং গ্রেফতার আতঙ্কে হাজার হাজার নেতাকর্মী মাঠ ছেড়ে আত্মগোপনে যেতে বাধ্য হওয়ার মধ্য দিয়ে নির্বাচনের লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড বিঘিœত হয়। যদিও নির্বাচনের আগের দিন এক রীট আবেদনের প্রেক্ষিতে গ্রেফতার হয়রানি বন্ধের নির্দেশ জারি করেছিল হাইকোর্ট, তথাপি এ ধরনের ভারসাম্যহীন পরিবেশ নিশ্চিতভাবে অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য বড় ধরনের অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়। ভোটের দিন বিভিন্ন টিভি চ্যানেল, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং গতকালের জাতীয় দৈনিক পত্রিকাগুলোতে যে চিত্র বেরিয়ে এসেছে তা যে কোন নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে যথেষ্ট।
উন্নয়নের প্রত্যাশা বাস্তবায়নে অধিকতর গ্রহণযোগ্য প্রার্থী হিসেবেই হয়তো খুলনাবাসির সমর্থন নিয়ে তালুকদার আব্দুল খালেক ভোটের স্বাভাবিক প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়েই নির্বাচিত হতে পারতেন। স্থানীয় প্রশাসন, পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও নির্বাচনী কর্মকর্তাদের বিতর্কিত ভ‚মিকা জনগণের রায়কে ঠিক কতটা প্রভাবিত করতে পারে তা নিয়ে মতভেদ থাকলেও জালভোট এবং সংঘবদ্ধ চক্রের মাধ্যমে সিল মেরে বাক্স ভরে দেয়ার ঘটনাগুলো শেষ পর্যন্ত ধামাচাপা থাকেনি। বিরোধিদলের প্রার্থী ভোটের দিন সকালেই নানা অনিয়মসহ বেশ কিছু কেন্দ্র থেকে তার পোলিং এজেন্টদের বের করে দেয়ার অভিযোগ করলেও নির্বাচন কমিশন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দৃশ্যমান তেমন কোন পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি। মাত্র তিনটি কেন্দ্রের ভোট গ্রহণ স্থগিত করে দেয়ার মধ্য দিয়ে হয়তো এটাই প্রমান করা হয় যে, বাকি ২৮৬াট ভোটকেন্দ্রে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হয়েছে। আদতে তা নয়, বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী সংবাদ সম্মেলনে ১৫০ টি কেন্দ্র দখল করে আওয়ামীলীগ কর্মীরা সিল মেরেছে বলে দাবী করেছেন। বিএনপি প্রার্থ নজরুল ইসলাম মঞ্জু ফলাফল বাতিল করে শতাধিক আসনে পুন: নির্বাচন দাবী করেছেন। স্থানীয় নির্বাচনে পরাজিত প্রার্থীদের পক্ষে এমন অভিযোগ তোলা কোন নতুন বিষয় না হলেও খুলনা সিটি নির্বাচনের সামগ্রিক পরিস্থিতি ইতিপূর্বে অনুষ্ঠিত কুমিল্লা বা নারায়নগঞ্জ সিটি নির্বাচনের সাথে তুলনীয় হতে পারেনা। সংঘবদ্ধ চক্র কেন্দ্র দখল করে অত্যন্ত স্বল্প সময়ে ব্যালটে সিল মেরে বাক্সে ভরে দেয়ার পর প্রকৃত ভোটাররা ভোট দিতে না পারার অনেক উদাহরণ এখানে সৃষ্টি হয়েছে। কোন কোন পত্রিকা খুলনা সিটি নির্বাচনকে ‘নির্বাচনের নতুন মডেল’ বলে অভিহিত করে শিরোনাম দিয়েছে।
নির্বাচন কমিশনের পরিকল্পিত শিডিউল অনুসারে অক্টোবরে বহু প্রতিক্ষিত জাতীয় নির্বাচনের কার্যক্রম শুরু হবে। ইতিপূর্বে প্রকাশিত মতামত অনুসারে দেশী বিদেশী কোনো মহলই ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারীর ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মত আরেকটি একপাক্ষিক নির্বাচন করতে চায়না। অথচ সব দলের অংশগ্রহণ, সবদলের সমান সুযোগসুবিধা নিশ্চিত করে একটি অবাধ ও প্রভাবমুক্ত নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ দেখা যাচ্ছেনা। বিএনপিসহ বিরোধি দলগুলোর দাবী অনুসারে নির্বাচনকালীন সরকারের ইস্যুতে সমঝোতা না হলে নির্বাচনের সময় নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষ ভ‚মিকা এবং সক্ষমতাই হতে পারে সুষ্ঠু নির্বাচনের অন্যতম গ্যারান্টি। নির্বাচন কমিশন, পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসনের নিরপেক্ষতা এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশনের সক্ষমতাকেই প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। এ ধরনের বাস্তবতায় এই কমিশনের অধীনে এবং ক্ষমতাসীন সরকারের অধীনে অবাধ, নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচন কতদূর সম্ভব হতে পারে তা সহজেই অনুমেয়। এখানে গণআস্থা যেভাবে মার খেয়েছে তা পুনরুদ্ধার করা অত্যন্ত কঠিন। আগামী মাসগুলোতে আরো বেশ কয়েকটি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। খুলনার নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতির হার এবং নানা অনিয়মের যে চিত্র পাওয়া গেছে তা আগামী নির্বাচনগুলোতে নেতিবাচক প্রভাব রাখতে পারে। তবে প্রায় ৫ লাখ ভোটারের এ নির্বাচনের শুরু থেকে ফলাফল ঘোষনা পর্যন্ত দৃশ্যত শান্তিপূর্ণভাবেই শেষ হওয়া এবং কোন সংঘাত-সংঘর্ষ বা হতাহতের ঘটনা না ঘটার যে বাস্তবতা দেখা গেছে তা নি:সন্দেহে ইতিবাচক। নেতা-কর্মীদের গণগ্রেফতার, নানা অনিয়মের অভিযোগ সত্বেও বিএনপি প্রার্থী শেষ পর্যন্ত মাঠে থাকায় নির্বাচনটি আপাতত প্রতিদ্ব›িদ্বতাপূর্ণ ছিল। নির্বাচন কমিশন এবং স্থানীয় প্রশাসন সরকারীদলের আজ্ঞাবহ ভ‚মিকা না নিলে চমৎকার ও আস্থাপূর্ণ স্থানীয় নির্বাচনের দৃষ্টান্ত হতে পারত খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন। নির্বাচনের ত্রæটিবিচ্যুতির দায় মূলত: নির্বাচন কমিশন এবং স্থানীয় প্রশাসনের। নির্বাচনের মান যেমনই হোক, খুলনা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হওয়ায় তালুকদার আব্দুল খালেককে অভিনন্দন। সেই সাথে নানা অনিয়ম সত্বেও বয়কট না করে শেষ পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ রাখতে সহযোগিতা করায় নজরুল ইসলাম মঞ্জু ও বিএনপি নেতাকর্মীরাও একটি চমৎকার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।এই নির্বাচনের অভিজ্ঞতার আলোকে আগামীতে অনুষ্ঠিতব্য স্থানীয় ও জাতীয় নির্বাচনকে ত্রæটিমুক্ত ও গ্রহণযোগ্য করতে এখনি রাজনৈতিক উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন বলে আমরা মনে করি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।