পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
অবশেষে সকল অপেক্ষার পালা শেষে মহাকাশে উড়ল বাংলাদেশের প্রথম স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১। গত শুক্রবার দিবাগত রাত ২টা ১৪ মিনিটে মহাকাশের পথে পাড়ি দেয় এই স্যাটেলাইট। এর মাধ্যমে ৫৭তম দেশ হিসেবে স্যাটেলাইটের অভিজাত ক্লাবে যুক্ত হলো বাংলাদেশ। উৎক্ষেপণের পর ৩ হাজার ৭০০ কেজি ওজনের স্যাটেলাইট নিয়ে মহাকাশেরপানে ছুটে চলে যুক্তরাষ্ট্রের বেসরকারি মহাকাশ অনুসন্ধান ও প্রযুক্তি কোম্পানি ‘স্পেসএক্স’-এর ফ্যালকন-৯ রকেট। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ নিজস্ব স্যাটেলাইটের মাধ্যমে বিশ্বের সাথে সরাসরি যুক্ত হলো। বিশ্বের অন্যান্য দেশের সাথে মহাকাশেও বাংলাদেশের পতাকা দেখা যাবে। মহাকাশের নির্দিষ্ট কক্ষপথে স্যাটেলাইটটিকে যেতে পাড়ি দিতে হবে ৩৬ হাজার কিলোমিটার। এ প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হতে সময় লাগবে দশ দিন। কক্ষপথের নির্দিষ্ট স্থানে জায়গা করে নিতে সময় লাগবে বিশ দিন। এ প্রক্রিয়ায় স্যাটেলাইটটির নির্দিষ্ট কক্ষপথ ১১৯.১ ডিগ্রী পূর্ব দ্রাঘিমাংশে স্থাপিত হতে সময় লাগবে এক মাস। স্যাটেলাইটটি কার্যকর হওয়ার পর এর নিয়ন্ত্রণ যাবে যুক্তরাষ্ট্র, ইটালি ও কোরিয়ায় অবস্থিত তিনটি গ্রাউন্ড স্টেশনে। এই তিনটি স্টেশনের মাধ্যমে স্যাটেলাইটটির নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ফ্রান্সের থ্যালেস অ্যালেনিয়া স্পেস পর্যবেক্ষণ করবে। এই সময়ে সক্ষমতা তৈরি হয়ে গেলে এর দেখাশোনার দায়িত্ব বাংলাদেশের ওপর ছেড়ে দেয়া হবে। এজন্য বাংলাদেশে দুটি গ্রাউন্ড স্টেশন তৈরি করা হয়েছে। এর মধ্যে জয়দেবপুরের গ্রাউন্ড স্টেশনটি মূল নিয়ন্ত্রক হিসেবে কাজ করবে। বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা হবে রাঙামাটি বেতবুনিয়া গ্রাউন্ড স্টেশন। গ্রাউন্ড স্টেশনে কাজ করার জন্য ১৮ জন বাংলাদেশী তরুণকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে নির্মাতা প্রতিষ্ঠান থ্যালেস। স্যাটেলাইটটি তৈরি করতে খরচ হয়েছে ২ হাজার ৯৬৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে বাংলাদেশ সরকারের খরচ হয়েছে ১ হাজার ৩১৫ কোটি টাকা এবং বাকি ১ হাজার ৬৫২ কোটি টাকা ঋণ হিসেবে নেয়া হয়েছে। উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ৩টা ৪৭ মিনিটে স্যাটেলাইটটি উৎক্ষেপণের নির্ধারিত সময়ের ৪২ সেকেন্ড আগে কারিগরি ত্রæটি দেখা দেয়ায় তা থেমে যায়।
মহাকাশে বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট স্থাপনের মাধ্যমে তথ্য-প্রযুক্তির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ যে অনেক দূর এগিয়ে গেল তাতে সন্দেহ নেই। এটি একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। পরিপূর্ণভাবে চালু হওয়ার পর স্যাটেলাইটের ক্ষেত্রে আমাদের পরনির্ভরশীলতা কমে যাবে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশে নিরবিচ্ছিন্ন টেলিযোগাযোগ সেবাসহ টেলিমেডিসিন ই-লার্নিং, ই-এডুকেশন, ডিরেক্ট টু হোম (ডিটিএইচ) সেবা পাওয়া যাবে। এই স্যাটেলাইটে রয়েছে ৪০টি ট্রান্সপন্ডার। এর মধ্যে ২০টি রাখা হবে বাংলাদেশের ব্যবহারের জন্য। স্যাটেলাইট ডিজাইন লাইফ ১৫ বছরের মধ্যে বাংলাদেশের জনগণের প্রয়োজনীয় চাহিদা পূরণে এই ২০টি ট্রান্সপন্ডার যথেষ্ট। বাকি ২০টি ভাড়া বা বিক্রি করা হবে। এর ফলে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা যাবে। নিজেদের ২০টি ট্রান্সপন্ডারের মাধ্যমে দেশের টেলিভিশন চ্যানেল এবং ডিটিএইচ পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানগুলো ভাড়া নিতে পারবে। বিটিআরসি জানিয়েছে, বর্তমানে বিদেশী স্যাটেলাইট ফ্রিকোয়েন্সি ভাড়া নিয়ে টেলিভিশন চ্যানেল, টেলিফোন, রেডিওসহ অন্যান্য যোগাযোগ ব্যবস্থা চালানো হচ্ছে। এতে প্রতি বছর ভাড়া বাবদ বাংলাদেশ থেকে ১৪ মিলিয়ন ডলার চলে যাচ্ছে। বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটের কার্যক্রম শুরু হলে এই বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা যেমন সাশ্রয় হবে, তেমনি স্যাটেলাইটের অব্যবহৃত অংশ নেপাল, ভুটান ও মিয়ানমারের মতো দেশে ভাড়া দিয়ে প্রতি বছর প্রায় ৫০ মিলিয়ন ডলার আয় করা যাবে। ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স ও ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের এক অধ্যাপক বলেছেন, স্যাটেলাইটটির অবস্থান হবে ইন্দোনেশিয়ার উপরে। দেশটির পেছনের দিক পুরোটাই সাগর। ফলে এর সামনের দিকে মালয়েশিয়া, মিয়ানমার ও সিঙ্গাপুরসহ যেসব দেশ রয়েছে সবগুলোই এই স্যাটেলাইটের আওতার মধ্যে থাকবে। এর মাধ্যমে চাকরির নতুন ক্ষেত্রও তৈরি হবে। উল্লেখ্য, সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে নিজস্ব স্যাটেলাইট রয়েছে ভারত (১৯৭৫), পাকিস্তান (১৯৯০) এবং শ্রীলঙ্কার (২০১২)। নিজস্ব স্যাটেলাইটের মাধ্যমে দেশগুলো যেমন বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় করছে, তেমনি আয়ও করছে। এ ধারায় যুক্ত হলো বাংলাদেশ। আশা করা যায়, বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটের মাধ্যমে তথ্য ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ যেমন অগ্রসর হলো, তেমনি এর সুফলও অচিরেই পাওয়া শুরু করবে।
তথ্য ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে বাংলাদেশ একটি অগ্রগামী দেশ। ধাপে ধাপে এর উন্নতি হচ্ছে। ইতোমধ্যে ফোর জি ইন্টারনেট সেবা চালু করা হয়েছে, মোবাইল ফোন কোম্পানিগুলো একের পর এক প্রযুক্তিগত সেবা যুক্ত করছে। তবে ইন্টারনেটের যে প্রত্যাশিত মান, তা নিয়ে গ্রাহকদের মধ্যে যথেষ্ট অসন্তোষ রয়েছে। ইন্টারনেটের শ্রেণীভিত্তিক যে ধরনের স্পীড থাকা প্রয়োজন তা যথাযথভাবে পাওয়া যাচ্ছে না। অথচ তথ্য ও যোগাযোগ ক্ষেত্রে ইন্টারনেটের মান ও স্পীড বৃদ্ধির বিকল্প নেই। এ নিয়ে আরও অনেক কাজ করা দরকার। প্রযুক্তি শুধু আনলেই হবে না, তার মাধ্যমে কার্যকর সেবা দেয়া অপরিহার্য। তা নাহলে গ্রাহকদের মধ্যে হতাশা দেখা দেবে। আমরা মনে করি, বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটের মাধ্যমে দেশে তথ্য ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে যে নবযুগের সূচনা হলো, তা যথাযথভাবে ব্যবহারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সচেতন থাকবে। এর মাধ্যমে যাতে দেশের প্রযুক্তিসুবিধা নিরবিচ্ছিন্ন ও সহজ হয় এবং বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা যায়, সেদিকে বেশি মনোযোগ দিতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।