Inqilab Logo

মঙ্গলবার ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বিএনপি চায় নতুন মুখ, আ.লীগ চায় দলীয় প্রার্থী, জাপায় একক

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ : সরাইল-আশুগঞ্জে বইছে নির্বাচনী হাওয়া

আশুগঞ্জ (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) থেকে মোঃ হুমায়ূন কবির | প্রকাশের সময় : ২৭ এপ্রিল, ২০১৮, ১২:০০ এএম

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনটি সরাইলের ৯টি ও আশুগঞ্জ ৮টিসহ মোট ১৭টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। এর মধ্যে আশুগঞ্জ প্রায় ১ লাখ ২১ হাজার এবং সরাইলে প্রায় ২ লাখ ৯ হাজার ভোটার রয়েছে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দলীয় মনোনয়ন পেতে বড় দুই দলের একাধিক সম্ভাব্যপ্রার্থী এলাকায় দলীয় কর্মসূচি ছাড়াও শুক্র ও শনিবার মাঠে ঘাটে প্রচার-প্রচারণা ও গণসংযোগ করতে দেখা গেছে। যতদিন যাচ্ছে ততই এ আসনে দলের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের তালিকা দীর্ঘ হচ্ছে। মনোনয়ন পেতে দৌড়-ঝাঁপ শুরু করেছে দু‘দলই। জাতীয় পার্টিতে একক প্রাথী থাকায় মাঠের সুবিধা ভোগ করছে। ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোটের এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন ইসলামী ঐক্যজোটের মুফতি ফজলুল হক আমিনী। পরবর্তীতে ১/১১ এর সময় আসনটি পূর্ণবিন্যাস করে আশুগঞ্জ উপজেলার ৮টি ইউনিয়নকেই এর আসনে অর্ন্তভূক্ত করা হয়। ২০০৮ সালের নির্বাচনে ২০ দলীয় জোটের প্রার্থী মুফতি আমিনীকে পরাজিত করে মহাজোটের জাতীয় পার্টির প্রার্থী এড. জিয়াউল হক মৃধার জয়লাভ করেন। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির বিতর্কিত নির্বাচনে অংশ নেয়নি বিএনপি জোট। মহজোটের মনোনয়ন পেয়ে এড. জিয়াউল হক মৃধা পুর্নরায় নির্বাচিত হন। একাদশ নির্বাচনকে সামনে রেখে আ.লীগ ও বিএনপি দু‘টি দলই দলীয় প্রার্থীকে মনোনয়ন দেয়ার দাবি করছেন নেতাকর্মীরা।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে আ.লীগে রয়েছে সীমাহীন অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও গ্রুপিং। আওয়ামী লীগ কার্যত দুই ভাগে বিভক্ত। দলীয় কোন্দলে ২০১২ সালের ২১ অক্টোবর সরাইলে নৃশংস হত্যাকান্ডের শিকার হন আ.লীগ নেতা এ কে এম ইকবাল আজাদ। তবে কোন্দলের আর গ্রুপিং-এর মধ্যেও থেমে নেই সম্ভাব্য প্রার্থীদের তৎপরতা ও গণসংযোগ। দীর্ঘদিন ধরে অবহেলিত বঞ্চিত এই আসনটি পাওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে আওয়ামী লীগ। এদিকে আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতারা চায় দলীয় প্রার্থী। দলের কোন্দল, গ্রুপিং, দলাদলি মিটিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে পারলে তা উদ্ধার করা সম্ভব বলে মনে করেন তৃর্ণমূল নেতাকর্মীরা।
একাদশ সংসদ নির্বাচনে এ আসনে আওয়ামী লীগের যেসব সম্ভাব্য প্রার্থীরা মাঠে রয়েছেন তারা হলেন, বাংলাদেশ আইন সমিতি সভাপতি ও সাবেক কেন্দ্রীয় আওয়ালীগ নেতা এড. কামরুজ্জামান আনসারি, জেলা আ.লীগের যুগ্ম সম্পাদক ও স্বেচ্ছা সেবকলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি আলহাজ্ব মো: মঈনউদ্দীন মঈন, সরাইল উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ন আহবায়ক উম্মে ফাতেমা নাজমা বেগম (শিউলী আজাদ), শহীদ বুদ্ধিজীবী সন্তান ও বিশিষ্ট আইনজীবী এড. সৈয়দ তানভীর হোসেন কাউসার, আশুগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মো. আনিছুর রহমান, আশুগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের আহবায়ক হাজী মো. ছফিউল্লাহ মিয়া, মুক্তিযোদ্বা যুব-কমান্ড কেন্দ্রীয় কর্মীটির সাধারণ সম্পাদক মোঃ মাসুদুর রহমান (মাসুদ)।
মনোনয়ন প্রত্যাশী ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারন সম্পাদক আলহাজ্ব মো: মঈনউদ্দীন মঈন বলেন, উন্নয়ন বঞ্চিত অবহেলিত এ জনপদের মানুষের প্রত্যাশা অনেক। আমাকে মনোনয়ন দেয়া হলে মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে দীর্ঘদিনের হারানো আসনটি উদ্ধার করতে সক্ষম হবো ও এলাকাবাসীর প্রত্যাশা পূরনে কাজ করবো।
আ.লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী বাংলাদেশ আইন সমিতি সভাপতি এড. কামরুজ্জামান আনসারী জানান, ছাত্র রাজনীতি থেকেই আন্দোলন ও সংগ্রামে দলের জন্য কাজ করছি। নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে এলাকায় গণসংযোগ করছি। আমি মনোনয়ন পেলে বিজয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী।
উম্মে ফাতেমা নাজমা বেগম (শিউলী আজাদ) বলেন, আমার স্বামী শহীদ ইকবাল আজাদ ২২ বৎসর এই আসনে আ.লীগের রাজনীতি করেছেন। এলাকায় তার ব্যাপক জনপ্রিয়তা রয়েছে। স্বামীর অসমাপ্ত কাজ বাস্তবায়ন করার জন্য দল মূল্যায়ন করবে বলে আমি বিশ্বাস করি।
ক্লিন ইমেজের মানুষ হিসেবে ব্যাপকভাবে পরিচিতি বলে দাবি করেন আ.লীগের আরেক মনোনয়ন প্রত্যাশী শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবারের সন্তান এড. সৈয়দ তানবির হোসেন (কাউসার)। আমাকে এই আসনে নৌকার প্রতীকে মনোনয় দেয়া হলে এলাকায় গণজোয়ার সৃষ্টি হবে।
আ.লীগের আরেক মনোনয়ন প্রত্যাশী আশুগঞ্জ উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান মো. আনিছুর রহমান। এলাকায় আমি জনপ্রিয় ও নির্বাচনের অভিজ্ঞতা বিবেচনায় দল আমাকে মনোনয়ন দিলে জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী।
সীমানা পুনঃনির্ধারণ হবার আগে দীর্ঘদিন এই আসনটি বিএনপির দখলে ছিল। এই আসনে পরপর চারবার এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন বিএনপি চেয়ারপার্রসনের উপদেষ্টা ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী উকিল আবদুস সাত্তার ভূঁইয়া। ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোটের এমপি নির্বাচিত হন ইসলামী ঐক্যজোট প্রার্থী মুফতি ফজলুল হক আমিনী। কিন্তু ২০০৮ সালের আমিনী মহাজোটের কাছে পরাজিত হন। উকিল আবদুস সাত্তার ভূঁইয়া বার্ধ্যকজনিত কারনে কিছু সামাজিক অনুষ্ঠানে যোগ দেয়া ছাড়া তেমন কোন রাজনীতিক কর্মকান্ডে দেখা যায়নি। বিএনপির হারানো আসনে নতুন মুখের সন্ধ্যান করছেন তৃণমূলের নেতাকর্মীরা।
সাবেক প্রতিমন্ত্রী উকিল আবদুস সাত্তার ভূঁইয়া মনোনয়ন চাইবেন বলে জানা যায়। এছাড়া বিএনপি থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশীরা হলেন, বিএনপি’র জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাবেক ছাত্র নেতা শেখ মোহাম্মদ শামীম, আশুগঞ্জ উপজেলা বিএনপি’র সভাপতি ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আবু আসিফ আহমেদ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বিএনপি সহ-সভাপতি নেতা ড. আজিজ আহমেদ।
জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য শেখ মোহাম্মদ শামীম হারানো আসনটি পুর্ণরায় উদ্ধারের জন্য মাঠে কাজ করছেন বলে দাবি করে তিনি বলেন, আমি নিয়মিত এলাকায় আসা যাওয়া ও নেতাকর্মীদের খোজ খবর নিচ্ছি এবং গণসংযোগ করছি। মনোনয়ন পেলে বিএনপি‘র হারানো দূর্গ পূণরুদ্ধার করতে পারব।
আশুগঞ্জ বিএনপির সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান আবু আসিফ আহমেদ চেয়ারম্যান হওয়ার সুবাধে এলাকায় গ্রহণযোগ্যতা ও পরিচিত রয়েছে বলে তিনি দাবি করেন। দলের সকল নেতাকর্মীদের সাথে আমার সার্বক্ষনিক যোগাযোগ রয়েছে। আমাকে মনোনয়ন দিলে হারানো এই আসনটি পূর্নরুদ্ধার সম্ভব বলে তিনি জানান।
জাতীয় পাটির্র কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান ও জেলা জাতীয় পার্টি আহবায়ক এড. জিয়াউল হক মৃধা এমপি একক প্রার্থী। তিনি এ আসন থেকে মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে দুই বারের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। দলীয় ভাবেও তার মনোনয়ন প্রায় নিশ্চিত। এবারও মহাজোটে থাকলে তার মনোনয়ন নিশ্চিত বলে দাবি করছে তার ঘনিষ্ঠজনরা।
এড. জিয়াউল হক মৃধা এমপি বলেন, ২০০৮ ও ২০১৪ সালে এই আসনের জনগণ আমাকে বিজয়ী করেছেন। বিগত ৯ বছর আমার নির্বাচনী এলাকায় ব্যাপক উন্নয়নে কাজ করেছি। এবারও জনগণ আমাকে বিপুল ভোটে নির্বাচিত করবেন বলে বিশ^াস করি।
ইসলামী ঐক্যজোটের মরহুম মুফতি মাওলানা ফজলুল হক আমিনী ছেলে দলের ভাইস চেয়ারম্যান মুফতি মাওলানা আবুল হাসনাত আমিনী এই আসনে প্রার্থী হয়ে লড়বেন বলে জানা যায়।
মুফতি আবুল হাসনাত আমিনী জানান, এই আসনে তার পিতার অসমাপ্ত কাজগুলো বাস্তবায়ন করার জন্য নির্বাচন করবেন। তবে জোটগতভাবেও করতে পারেন।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বিএনপি


আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ