নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
একটা ম্যাচ কতটা নাটকীয় হতে পারে? কতটা উপরে উঠতে পারে এর উত্তেজনার পারদ? কতটা রোমাঞ্চিত হলে পূর্ণতা পায় একটি ফুটবল ম্যাচ?
এর উত্তর হয়ত তারাই দিতে পারবেন যারা পরশু রাতে বার্নাব্যুর ম্যাচের সাক্ষ্যি হয়েছেন। যে ম্যাচ বার বার মনে করিয়ে দিচ্ছিল আগের রাতেই রোমার মাঠে বার্সেলোনার অবিশ্বাস্য পরাজয়ের সেই কথা। তবে জুভেন্টাস যে পথে হাটছিল সেই পথের গন্তব্যে পৌঁছাতে পারলে বার্সা ম্যাচকেও ছাড়িয়ে ফুটবলের ইতিহাসে জন্ম নিত এক অবিশ্বাস্য রূপকথা। উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ঘরের মাঠে ৩-০ গোলের হারের পর প্রতিপক্ষের মাঠে তিন গোলের ঘাটতি মিটিয়ে জয়!
না, গন্তব্যের সেই চূড়ান্ত শিখরে পৌঁছাতে পারেনি জুভেন্টাস। পৌঁছাতে দেয়নি ম্যাচের যোগ করা সময়ে রেফারির বাঁজানো পেনাল্টির বাঁশি। যার সহায়তায় ৩-১ গোলে হেরেও দুই লেগ মিলে ৪-৩ ব্যবধানে জিতে টানা অষ্টমবারের মত চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমিফাইনালে উঠেছে রিয়াল মাদ্রিদ।
কি ছিল না এই ম্যাচে? দুই দলের খেলোয়াড় মিলে দেখেছে ৯টি হলুদ কার্ড। রেফারির পেনাল্টি সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করতে গিয়ে ১১৭ ম্যাচের চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মত লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়তে হয়েছে জিয়ানলুইজি বুফনকে। আর মাঠে আক্রমণ আর পাল্টা আক্রমণে ঠাসা টান টান উত্তেজনা তো ছিলই। সব মিলে এমন একটি উত্তেজনায় ঠাসা ম্যাচ ফুটবল প্রেমীরা নিকট অতীতে দেখেছেন কিনা এ নিয়েও বিতর্ক হতে পারে।
ম্যাচের শুরু থেকেই স্বাগতিক দর্শকদের থাকতে হয়েছে পাহাড়সম চাপ বুকে নিয়ে। একে একে প্রথম লেগের তিন গোলের ঘাটতি মিটিয়ে নেয় জুভেন্টাস। আর একটি গোল করতে পারলেই শেষ চারে উঠে যাবে সফরকারীরা। সেক্ষেত্রে রিয়ালকে করতে হবে দুই গোল। বার বার আক্রমণে গিয়েও ব্যর্থ হওয়া লস বø্যাঙ্কোস শিবির তখন যেন প্রেরণার ভাষাও হারিয়ে ফেলেছে। সেই উত্তেজনা নিমিশে মিলিয়ে যায় ম্যাচের যোগ করা সময়েরও শেষ মুহূর্তে রেফারির পেনাল্টি সিদ্ধান্তে। রোনালদোর হেডে করা ক্রস পোস্টের সামনে থেকে নাগালে নেয়ার চেষ্টায় ছিলেন ভাসকুয়েজ। কিন্তু পেছন থেকে ডিফেন্ডার মেধি বেনাশিয়া বাম পা বাড়িয়ে বলের নিয়ন্ত্রণ নিতে গিয়ে ভাসকুয়েজের পিঠে ধাক্ক দেন। সঙ্গে সঙ্গে পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি। এ নিয়ে ৫ মিনিট নানা নাটকীয়তা চলার পর ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর সফল লক্ষ্যভেদ। হিমালয়সম চাপ যেন নেমে যায় মাদ্রিদ ভক্তদের বুকের উপর থেকে।
শুরুতেই ম্যাচের উত্তেজনা বাড়িয়ে দেয় মারিও মানজুকিচের করা গোল। মাদ্রিদ খেলোয়াড়রা কিছু বুঝে ওঠার আগেই ম্যাচের ৭৬তম সেকেন্ডের মাথায় সামি খেদিরার নিখুঁত ক্রস আরো নিখুঁত হেডে জালে পাঠান মানজুকিচ। ইউরোপিয়ান আসরে সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে যা দ্রুততম গোলের রেকর্ড। ৩৭তম মিনিটে আবারো মানজুকিচের হেড এবং গোল। এবার সুইস ডিফেন্ডার স্টেফান লিখস্টাইনের নিখুঁত ক্রস থেকে। স্তব্ধ হয়ে যায় সাদা শিবির। আগের ম্যাচে বার্সার বিপক্ষে তিন গোলের ঘাটতি পূরণ করে রোমার শেষ চারে ওঠার গল্পটা তখন প্রতিটা ফুটবলপ্রেমীর মনে। আরেক ইতালিয়ান ক্লাবের হাত ধরে রূপকথার জন্ম দিয়ে তবে কি বিদায় নেবে আরেক স্প্যানিশ দল রিয়ালও!
এমন তুমুল উত্তেজনার মধ্যে দ্বিতীয়ার্ধে ভিন্ন রিয়ালকেই দেখার জন্য প্রস্তুত হয়ে ছিল বার্নাব্যু। গ্যারেথ বেল ও কাসিমিরোর পরিবর্তে লুকাস ভাসকেস ও মার্কো আসেনসিওকে মাঠেও নামান জিনেদিন জিদান। কিন্তু কিসে কি! ৬০তম মিনিটে ব্লেইজ মাইতুদির গোলে রূপকথার আরো কাছাকাছি চলে যায় ‘দ্য ওল্ড লেডি’রা। বার্সা-রোমার ম্যাচ তখন বারবার এসেছে ঘুরে ফিরে। দুর থেকে ব্রাজিলিয়ান মিডফিল্ডার কস্তার ভাসিয়ে দেয়া ক্রস নাগালে পেয়েও বুকে ঠিকমত নিতে পারেননি গোলরক্ষক কেইলর নাভাস। ফসকে যাওয়া বল মাইতুদি বাঁ পায়ের টোকায় পাঠিয়ে দেন যেন জালে নয়, মাদ্রিদ ভক্তদের হৃদয় ভেদ করে। এর ঠিক এক মিনিট আগে রোনালদোকে অসাধারণ ক্ষিপ্রতায় গোলবঞ্চিত করেন বুফন।
পুরো ম্যাচে আরো অনেকগুলো গোলের সুযোগ তৈরী করে দুই দলই। নির্ধারিত সময় শেষে চার মিনিট যোগ করা সময়েও আক্রমণের বান বইয়েও জালের দেখা পাচ্ছিল না স্বাগতিকরা। ম্যাচ অতিরিক্ত সময়ে গড়াতে যাওয়ার ঠিক আগ মুহূর্তেই ইংলিশ রেফারি মিচেল ওলিভারের সেই পেনাল্টি বাঁশি। যে বাঁশি তীর হয়ে বিদ্ধ করে ইতালিয়ান ফুটবল ভক্তদের হৃদয়। আর একরাশ স্বস্তি হয়ে আসে বার্নাব্যু শিবিরে। হেরেও এমন বিজয়োল্লাস হয়ত কখনো করেনি তারা।
এমন ম্যাচের নায়ক হতে পারতেন জোড়া গোল করা ক্রোয়েশিয়ান ফরোয়ার্ড মানজুকিচ। কিন্তু পরাজিতদের যে ইতিহাস মনে রাখে না।
রিয়াল মাদ্রিদ ১ : ৩ জুভেন্টাস
(দুই লেগ মিলে ৪ : ৩ গোলে জিতে
শেষ চারে রিয়াল মাদ্রিদ)
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।