Inqilab Logo

বুধবার ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ২১ কার্তিক ১৪৩১, ০৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

চিকিৎসার নামে প্রতারণা

আর কে চৌধুরী | প্রকাশের সময় : ১১ এপ্রিল, ২০১৮, ১২:০০ এএম

চিকিৎসার নামে চলছে প্রতারণা। আর্তমানবতার সেবার বদলে যেভাবেই হোক অর্থ আদায় এ পেশার সুনামকে জিম্মি করে ফেলা হয়েছে। প্রতারণার ক্ষেত্রে ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে ওঠা তথাকথিত হাসপাতাল বা ক্লিনিক শুধু নয়, অভিজাত হাসপাতালগুলোও পিছিয়ে নেই। নিরাপদে সন্তান প্রসবের জন্য কেউ হাসপাতাল বা ক্লিনিকে ভর্তি হলেই তাকে পাঠানো হচ্ছে সিজারিয়ানের জন্য। স্বাভাবিক সন্তান প্রসবের বদলে রোগী ও প্রসূতির জীবন নিয়ে শঙ্কার ভয় ঢুকিয়ে অস্ত্রোপচারের আশ্রয় নেওয়া হচ্ছে। অতি সম্প্রতি চোখের ছানি অপারেশনের নামে ২০ রোগীর চোখ নষ্ট করে ফেলেছে চুয়াডাঙ্গার একটি চক্ষু হাসপাতাল।
সরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোর কার্যক্রমেও রয়েছে অস্বস্তিকর অবস্থা। সরকারের কর্তাব্যক্তিরা চিকিৎসা খাতের অনিয়ম অবহেলার বিরুদ্ধে সতর্ক বাণী উচ্চারণ করেই খালাস। ফলে কাটছে না বেহাল অবস্থা। দেশে প্রতিবছরই সরকারি খরচে তৈরি হচ্ছে একের পর এক ক্লিনিক ও হাসপাতাল। যন্ত্রপাতি ওষুধপথ্যের ব্যবস্থাও করা হচ্ছে সরকারি তহবিল থেকে। এসব চিকিৎসালয়ে চিকিৎসক, নার্স, আয়াসহ কর্মকর্তা-কর্মচারী থাকলেও থাকে না কাক্সিক্ষত চিকিৎসাসেবা। রাজধানী থেকে নিভৃত পল্লী পর্যন্ত বিরাজ করছে অভিন্ন অবস্থা। চিকিৎসকের বদলে নার্স, ওয়ার্ডবয়, আয়ারা রোগী দেখা থেকে শুরু করে অস্ত্রোপচার পর্যন্ত করছে অবলীলায়। যে কারণে মাঝেমধ্যেই রোগীর পেটের ভিতর গজ-ব্যান্ডেজ, ছুরি-চাকু রেখে সেলাই করে দেওয়ার মতো ঘটনাও ঘটছে। সরকারি হাসপাতালগুলোতে চালু রয়েছে দালালদের রাজত্ব। তারা নানা কায়দা-কৌশলে অসহায় রোগীদের কাছ থেকে অবৈধ উপায়ে হাতিয়ে নিচ্ছে অর্থ।
দেশের স্বাস্থ্যসেবার বেহাল দশা কাটছেই না। হাসপাতাল আছে, যন্ত্রপাতি ওষুধপথ্যের সরবরাহ যাচ্ছে নিয়মিত, আছে চিকিৎসক, নার্স, আয়াসহ কর্মকর্তা-কর্মচারী; শুধু নেই কাক্সিক্ষত চিকিৎসাসেবা। রাজধানী থেকে শুরু করে নিভৃত পল্লী পর্যন্ত সর্বত্রই অভিন্ন অবস্থা। ওয়ার্ডবয়-আয়ার ‘ডাক্তার সাজা’র মধ্যেই সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা সীমাবদ্ধ থাকছে না, আছে বহিরাগত দালালদের অন্তহীন উৎপাত। দালালরা নানা কায়দা-কৌশলে অসহায় রোগীদের কাছ থেকে অবৈধ উপায়ে হাতিয়ে নিচ্ছে অর্থ। এসব দেখভালের যেন কেউ নেই। খোদ রাজধানীতেই সরকারি হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসাসেবা নাজুক পর্যায়ে পৌঁছেছে। বড় বড় হাসপাতাল আছে, চিকিৎসা সরঞ্জামেরও অভাব নেই, শুধু সংশ্লিষ্টদের দায়িত্বহীনতায় সেবাবঞ্চিত থাকছে রোগীরা। ডাক্তারের অবর্তমানে ওয়ার্ডবয় আর নার্সদের গাফিলতিতে আয়ারা হয়ে ওঠেন সর্বেসর্বা। হাসপাতালে ভর্তি করতে দালাল, ওয়ার্ডে বেড পাওয়া নিশ্চিত করতে দালাল, পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতেও দালালদের সাহায্য নেওয়া ছাড়া কোনো উপায় থাকে না। পঙ্গু ও সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে রোগীর জন্য ট্রলি ব্যবহার করতেও গুনতে হয় টাকা। রোগীদের জন্য বরাদ্দ থাকা ট্রলি নিয়ন্ত্রণে রেখে মিটফোর্ড হাসপাতালেও বাড়তি টাকা কামায় বহিরাগতরা। ছুটির দিন আর রাতের বেলায় হাসপাতালগুলোর চেহারা যেন আমূল পাল্টে যায়। বহু খোঁজাখুঁজি করেও কর্মরত ডাক্তারদের সন্ধান মেলে না। দরজা আটকে বিশ্রামে থাকা নার্সদের ডাকলে রীতিমতো রক্তচক্ষু দেখতে হয়। অন্যদিকে কানে মোবাইল ফোন লাগিয়ে খোশগল্প করার ফাঁকে ফাঁকে রোগী দেখা ডাক্তারদের দুর্ব্যবহারের শেষ নেই। অতিসম্প্রতি এক নারী-ডাক্তারকে আপা বলার কারণে রোগী ও তার স্বজনদের লাঠিপেটা পর্যন্ত খেতে হয়েছে। কোনো রোগীর খারাপ পরিস্থিতি জানাতে গেলেও তেড়ে আসেন ডাক্তার। জের হিসেবে রোগীকে অযথা যন্ত্রণা দেওয়ার শাস্তি প্রদানের মতো গুরুতর অভিযোগও পাওয়া গেছে।
দেশের প্রতিটি সরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে বিরাজ করছে আয়া দারোয়ানসহ চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের রাজত্ব। হাসপাতালের আঙিনায় তারা পরিচালনা করছে দোকানপাট। দেশের স্বাস্থ্য খাতে সরকার প্রতি বছর শত শত কোটি টাকা ব্যয় করলেও তার সুফল অনেকাংশে পৌঁছাচ্ছে না সাধারণ মানুষের কাছে। দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার ওপর মানুষের আস্থা উঠে যাওয়ায় চিকিৎসার জন্য বিদেশমুখী হওয়ার প্রবণতা বাড়ছে। নাগরিকদের একটি গুরুত্বপূর্ণ মৌলিক অধিকার স্বাস্থ্যসেবার প্রতি সম্মান জানাতে এই অকাম্য অবস্থার অবসানে সরকারকে যত্নবান হতে হবে। নিশ্চিত করতে হবে সরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিক তথা স্বাস্থ্য খাতের শৃঙ্খলা।
লেখক: মুক্তিযোদ্ধা ও শিক্ষাবিদ, সাবেক চেয়ারম্যান রাজউক, প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি আর কে চৌধুরী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, মহান মুক্তিযুদ্ধে ২ ও ৩ নং সেক্টরের রাজনৈতিক উপদেষ্টা।



 

Show all comments
  • গনতন্ত্র ১৩ এপ্রিল, ২০১৮, ১০:৫২ এএম says : 0
    এটা কি “ফাষ্টফোড চেইনের আওতাভুক্ত” পেটে বড্ড ক্ষিদে পেয়েছে,তাড়াতাড়ি কিছু খাবার চাই, তাই দৌড়ে ছুটে এলাম “মেকডুনাল্ড” রেষ্টুরেন্টে ৷লাইনে দাড়াতে হলো,তারপর কাউন্টারে দাড়ানো সেল্স কর্মীকে কি কি খাব তালিকা দিলাম,বললো মোট …এত টাকা ৷ আগে টাকা পরিশোধ করে তারপর বসতে হলো,খাবার তৈরি হয়ে আসার অপেক্ষায় ৷পেটের ক্ষিদে যতই লাগুগ না কেন,ফরমালিটি আগে পালন করুন ৷এবার আসা যাক আসল কথায়,যার জন্য আমাকে লিখতে বসা, দেখুনত’ আমার অবস্হার সাথে কত কাটা পা হাতে নিয়ে শহরের দু’টি বেসরকারি হাসপাতালে ঘুরে বেড়ালেন এক রোগী৷ কেউ ভর্তি নিল না৷ উল্টে চরম অমানবিকতার নির্দশন দেখিয়ে একটি হাসপাতাল রোগীকে জানিয়ে দেয়, আগে ৫০ হাজার জমা করুন, তারপর রোগী ভর্তি নেব৷ পরে পিজি (এসএসকেএম) হাসপাতাল যখন রোগীকে ভর্তি নেয় তখন অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে৷ পেরিয়ে গিয়েছে প্রায় ১০ ঘণ্টা৷ রাত পর্যন্ত পিজির তরফেও ‘কাটা পা’ সংরক্ষণের কোনও ব্যবস্থা হয়নি৷ চোখে পড়েনি জোড়া লাগানোর কোনও চেষ্টাও৷( March 16, 2017 0 Comment #CMRI, #MedicalNegligence)
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: চিকিৎসা

২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন