Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নির্বাচন নিয়ে ভয়

মীর আব্দুল আলীম | প্রকাশের সময় : ১০ এপ্রিল, ২০১৮, ১২:০০ এএম

নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী খুলনা ও গাজীপুর সিটি করপোরেশনে আগামী ১৫ মে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আরো কয়েকটি সিটি করপোরেশনে এরপর নির্বাচন হবে। এ বছরই জাতীয় সংসদ নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে। বলা যায়, নির্বাচনের বছর এটা। পুরো বছরটাই নির্বাচন ঘিরেই কাটবে। তাই ভয় হচ্ছে, ভীষণ ভয়। চুন খেয়ে মুখ পোড়া মানুষ আমরা, তাই মিষ্টি দই দেখলেও ভয় পাই। আর দেশের স্বভাবটাই আমাদের ভয় পাইয়ে দিচ্ছে। কারণ সরকারের মেয়াদের শেষ বছরটা ভালোয় ভালোয় কাটে না। মারামারি, খুনোখুনি আর নানা হাঙ্গামায় উত্তপ্ত থাকে দেশ। কোন প্রকার হাঙ্গামা না থাকলেও বর্তমানে রাজনৈতিক দলগুলোর তৎপরতা আর হুঙ্কারে আমরা যারা সাধারণ মানুষ তারা ভড়কে যাচ্ছি। কী জানি কী হয়, এই ভয় মনের ভেতর। 

নির্বাচনকে সামনে রেখে এমন ভয় হচ্ছে। বিগত নির্বাচনগুলো একতরফা হলেও এবার মনে হচ্ছে তা হবে না। যে কোন মূল্যে বিএনপি নির্বাচনে যাবে এমন আভাসই পাওয়া যাচ্ছে। ৩১ মার্চের এক সভায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘আন্দোলনের অংশ হিসেবে বিএনপি খুলনা ও গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে।’ বড় দু’দল নির্বাচনে গেলে যা হয় তাই হয়তো হবে। আবহাওয়াটা ফের গুমোট ঠেকছে। বোধকরি আলোর দেখা মিলবে না। রাজনৈতিক যুদ্ধ আবারও হবে। আবারও অশান্তির দাবানলের ভয়, পেট্রোল বোমে মানুষ পুড়ে মরার ভয়, পুলিশের গুলিতে জীবন যাওয়ার ভয়, শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন নষ্টের ভয়, মামলা-হামলার ভয়, জীবন-জীবিকা অনিশ্চিত হওয়ার ভয়, সম্পদ নষ্টের ভয়, সর্ব্বোপরি ব্যবসা বাণিজ্য ধ্বংসের ভয় আমাদের বেশ পেয়ে বসেছে। গণতন্ত্র, সুষ্ঠু রাজনীতি, অপরাজনীতি এসব নিয়ে আলোচনায় আসতে চাই না। তবে এটাই বলতে চাই, কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া এ সরকারের সময়টা খুব একটা খারাপ যায়নি। দেশে বিদেশি বিনিয়োগ শুরু হয়েছে, দৃশ্যমান উন্নয়ন পরিলক্ষিত হয়েছে। গণতন্ত্রের ঘাটতি থাকলেও হরতাল অবরোধ না থাকায় জনমনে স্বস্তি ছিলো। ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করতে পেরেছে, শিল্প কারখানায় উৎপাদন হয়েছে। ভয় এখানেই, এ ধারা ঠিক থাকবেতো? সামনের দিনগুলো ভালো যাবে তো? আবার জ্বালাও-পোড়াও, ভাংচুর, হরতাল-অবরোধ এসব হবে নাতো?
বিরোধী দলের পক্ষ থেকে ঘোষণা আসছে নির্বাচনে তারা যাবেই। পাল্টা হুঙ্কার দেয়া হচ্ছে রাজপথ দখলের। তাদের কথায় বোঝা যাচ্ছে সেই যুদ্ধ আবারও শুরু হবে। যুদ্ধ যুদ্ধ খেলায় আবার হয়তো মানুষ হতাহত হবে। পূর্বের স্টাইলে মানববিরোধী আন্দোলন হলে অশান্তি বাড়বে। অর্থনীতি ধ্বংস হবে। দেশে বেকার বাড়বে, ব্যাবসা-বাণিজ্যে অচলাবস্থ দেখা দেবে। সাধারণ মানুষের জীবন-জীবিকা অনিশ্চিত হবে। এমনটা আমরা আর চাই না। বিরোধী দলের রাজনীতি করার পরিবেশ দিতে হবে সরকারকে। সে পরিবেশ পাচ্ছে না তারা। দেশের স্বার্থে সরকারকে ছাড় দিতে হবে, তবেই দেশে শান্তি বিরাজ করবে। বিরোধীদলকে মনে রাখতে হবে, কোনভাবেই জানমাল নষ্ট হয় এমন কর্মসূচি পালনে তাদের আর সুযোগ দেয়া ঠিক হবে না।
বাংলাদেশের নির্বাচন মানেই অস্থিরতা আর ভয়। এবারও রাজনৈতিক মাঠে এমন পরিবেশের আশঙ্কা রয়েছে। প্রকৃতিতে যেমন কাল বৈশাখী শুরু হয়ে গেছে তেমনই, রাজনৈতিক অঙ্গনেও উথালপাথাল হাওয়া বইতে শুরু করেছে। পত্রিকা খুললেই গরম খবর দেখতে পাই। রাজনৈতিক দলের নেতারা নির্বাচনকে ঘিরে বক্তৃতা-বিবৃতি দিয়ে উত্তাপ ছড়াচ্ছেন। সাধারণ মানুষের মধ্যেও নির্বাচনকে ঘিরে বেশ উদ্দীপনা দেখা যাচ্ছে। তবে তারা নির্বাচনকে ঘিরে আর কোন অশান্তি দেখতে চায় না।
এ অবস্থায় কী করবে নির্বাচন কমিশন? আমরা জানি, নির্বাচন অনুষ্ঠানের দায়িত্ব সাংবিধানিকভাবে নির্বাচন কমিশনের উপরই ন্যা¯ত। প্রধান নির্বাচন কমিশনার সকল নির্বাচন সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ করার জন্য ওয়াদা করেছেন। তিনি তাঁর ওয়াদা রক্ষা করবেন এটাই আমরা কায়মনে চাই। অবশ্য এদেশে ওয়াদা ভঙ্গের যথেষ্ট রেওয়াজ আছে। এ নির্বাচন কমিশনের কাছে আমরা এমনটা প্রত্যাশা করি না।
এ কথা বলতেই হয়, সুস্থ গণতান্ত্রিক ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত হতে না পারাটা বাংলাদেশের রাজনীতির জন্য সবচেয়ে দুর্ভাগ্যজনক দিক। আর আতংকের দিক হলো, এ অবস্থা থেকে দেশ খুব সহসা মুক্তি পাচ্ছে না।
নির্বাচন নিয়ে বাংলাদেশের মানুষের আগ্রহ-উদ্দীপনায় কোনো ঘাটতি নেই। মানুষ ভোট দিতে যে কতটা উদগ্রীব, তা মোটামুটিভাবে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনগুলোর ভোটের হারে বোঝা যায়। নির্বাচনে সততা বা ভোটের পবিত্রতা রক্ষার বিষয়টি তাই রাজনৈতিকভাবে খুবই স্পর্শকাতর। সে জন্যই এ দেশে ‘আমার ভোট আমি দেব যাকে খুশি তাকে দেব’ স্লোগান দিয়ে যেমন আন্দোলন হয়েছে। কিন্তু গণতন্ত্রের কয়েক যুগ পরও আমরা একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনী ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারিনি। সন্দেহ নেই, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন বলতে আমরা প্রকৃত নির্বাচনই বুঝে থাকি। তাই, নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়ে বিতর্কের অবসান ঘটতেই হবে।
আমরা গঠনমূলক রাজনীতি চাই। ব্যক্তি স্বাধীনতা চাই। ধ্বংসাত্মক রাজনীতির পরিবর্তন চাই। সরকারি দলের উচিৎ হবে বিরোধী দলের দাবিগুলোকে সম্মান জানানো। আবার বিরোধী দলেরও উচিৎ হবে সরকারকে সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন করার সুযোগ দেয়া এবং দেশ পরিচালনায় সহায়তা করা।
লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: নির্বাচন

২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন