পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
রাশিয়ায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন নিরঙ্কুশ ভোটের ব্যবধানে আবারো প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন । অন্যদিকে গত মাসে চিনা কমিউনিষ্ট পার্টির ন্যাশনাল কংগ্রেস প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের নেতৃত্বকে মাও সেতুংয়ের সমপর্যায়ে উন্নীত করে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ক্ষমতার মেয়াদ বৃদ্ধি নিশ্চিত করেছে। আর এ সপ্তাহে সপ্তাহে চিনা সংবিধানে পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে প্রেসিডেন্ট শি কে আমৃত্যু ক্ষমতায় থাকার সুযোগ করে দেয়া হয়েছে। চীন ও রাশিয়ায় দুই নেতার রাজনৈতিক কর্তৃত্ব সুদৃঢ় হওয়ার মধ্য দিয়ে আগামীদিনগুলোতে বিশ্বরাজনীতিতে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা আরো বেড়ে গেল। যদিও বিশ্বের পরাশক্তি হিসেবে রাশিয়া ও চীনের অবস্থান কখনো অগ্রাহ্য করার মত ছিলনা। তবে বিগত শতকের নব্বই দশকের শুরুতে সোভিয়েত সমাজতন্ত্রের পতনের মধ্যদিয়ে স্নায়ুযুদ্ধোত্তর পশ্চিমাবিশ্বে আক্রান্ত হওয়া এবং ক্ষমতার প্রতিযোগিতা হ্রাস পাওয়ার কথা থাকলেও উল্টো তা আগের চেয়ে বেড়ে যাওয়ার বাস্তবতায় বিশ্ব আরো অনিরাপদ হয়ে পড়ে। দেড় দশক আগে ইরাক, আফগানিস্তানে সাম্রাজ্যবাদি আগ্রাসন ও দখলদারিত্বের মধ্য দিয়ে যে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শুরু হয়েছিল তা ক্রমশ: আরো বিস্তৃত ও রক্তক্ষয়ী হয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের প্রায় সর্বত্রই যুদ্ধের আগুন, হুমকি ও ঝুঁকি ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে। বাশার আল আসাদের রিজিম পরিবর্তনের লক্ষ্যে পশ্চিমা সমর্থিত বিদ্রোহ ও সিরিয়া যুদ্ধে রাশিয়ার সামরিক হস্তক্ষেপ পশ্চিমা যুদ্ধবাদি রাজিনীতিতে এক নতুন বাস্তবতার জন্ম দিয়েছে। ইরানের সাথে ৬ জাতির পারমানবিক সমঝোতা চুক্তি এ ক্ষেত্রে অনেক বড় উদাহরণ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। ইঙ্গ-মার্কিন একপাক্ষিক বলয় থেকে বিশ্বের রাজনৈতিত শক্তির ভারসাম্য ও শান্তি প্রতিষ্ঠায় ভ্লাদিমির পুতিন এবং শি জিনপিংয়ের দীর্ঘ মেয়াদে ক্ষমতায় থাকার ব্যবস্থা নতুন সম্ভাবনার জন্ম দিয়েছে। রাশিয়া ও চীনের দুই নেতার পুনরায় ক্ষমতাসীন হওয়ায় আমরা তাদেরকে মোবারকবাদ জানাই।
চীন ও রাশিয়া ভূ-রাজনীতি ও সামরিক- অর্থনৈতিক প্রভাবক শক্তি হিসেবে ক্রমশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। বিশেষত: আর্ন্তজাতিক ও আঞ্চলিক শক্তি হিসেবে এই দুই দেশের রাজনৈতিক নেতৃত্বের মধ্যে ঐক্য ও সমঝোতামূলক অবস্থান পশ্চিমা ইউনিপোলার বিশ্বব্যবস্থার জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ কারণেই চীন, রাশিয়া এবং তাদের প্রভাব বলয়ে থাকা রাষ্ট্রগুলো মার্কিন নেতৃত্বাধীন সাম্রাজ্যবাদি সামরিক টার্গেটে পরিণত হয়েছে। বলাবাহুল্য টার্গেট কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠি না হলেও নেতৃত্ব পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে অপেক্ষাকৃত দুর্বল ও বশংবদ সরকার প্রতিষ্ঠাই পশ্চিমাদের রিজিম পরিবর্তনের মূল লক্ষ্য। এ ক্ষেত্রে রাশিয়া-চীনে পুতিন ও শিজিন পিংয়ের মত সুদৃঢ় ও মেধাবী নেতৃত্ব বিশ্বে ক্ষমতার ভারসাম্য ও শান্তি প্রতিষ্ঠায় অনেক বেশী কার্যকর ভ‚মিকা রাখতে পারে। চলমান বিশ্ববাস্তবতায় তারা এখন পশ্চিমা পুঁজিবাদি সাম্রাজ্য স্বার্থের জন্য কঠিন চ্যালেঞ্জ এবং তৃতীয়বিশ্বের স্বার্থরক্ষায় মুখপাত্রের ভ‚মিকা পালন করছেন। আমাদের এ অঞ্চলে রোহিঙ্গা সংকট, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ও সম্ভাব্য অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ ও রাজনৈতিক সংকট মোকাবেলায় চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সুসংহত নেতৃত্ব কার্যকর ও ইতিবাচক ভ‚মিকা পালন করতে পারে। এ ক্ষেত্রে আমাদের রাজনৈতিক নেতৃত্বে গণতান্ত্রিক স্বচ্ছতা ও জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হওয়া প্রয়োজন। পুতিন ও শি জিনপিংয়ের পুন:নির্বাচন এবং ক্ষমতা সুসংহত হওয়া রাশিয়া ও চীনের এই দুই নেতার কারণে যুক্তরাষ্টের মোড়লীপনা অনেকটাই হ্রাস পাবে, যা বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় একটি ভারসাম্য সৃষ্টি করবে।
কেজিবি’র গোয়েন্দা কর্মকর্তা থেকে বিশ্বের প্রভাবশালী রাজনীতিক হিসেবে আবিভর্‚ত হওয়া ভ্লাদিমির পুতিন এখন চৌকষ, মেধাবী ও সাহসী নেতৃত্বের উদাহরণ। আন্তর্জাতিক জরিপেও তিনি একাধিকবার মার্কিন ও পশ্চিমা রাজনৈতিক নেতাদের ডিঙিয়ে বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা হিসেবে লিডার অব দ্য ইয়ার নির্বাচিত হয়েছেন। সোভিয়েত সমাজতন্ত্রের পতনের পর থেকেই ভ্লাদিমির পুতিন রাশিয়ার রাজনৈতিক নেতৃত্বে কখনো প্রধানমন্ত্রী কখনো প্রেসিডেন্ট হিসেবে অন্যতম প্রভাবশালী চালকের আসনে আসীন আছেন। তার সুদৃঢ় নেতৃত্বের কারণেই বিশ্বশক্তি হিসেবে রাশিয়া তার হারানো অবস্থান পুন:প্রতিষ্ঠার দ্বারপ্রান্তে উপনীত হচ্ছে। অন্যদিকে বিনিয়োগ ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে চীনের অগ্রযাত্রায় রাশিয়াসহ আঞ্চলিক শক্তিগুলোর সুসংগঠিত অবস্থান বিশ্বে যে নতুন রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক মেরুকরণের জন্ম দিয়েছে তা অগ্রাহ্য করার শক্তি পশ্চিমাদের নেই। সাংহাই কো-অপারেশন বা ওয়ান বেল্ট ওয়ানরোড ইনিশিয়েটিভের মত বিশাল আঞ্চলিক অর্থনৈতিক উদ্যোগগুলোতে বাংলাদেশও গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। দলীয় ও গোষ্ঠিকেন্দ্রিক ক্ষমতার রাজনীতির বাইরে গিয়ে রাষ্ট্রীয় সম্পদকে জনগনের জীবনমান উন্নয়নে কাজে লাগাতে এবং আন্তর্জাতিক নদীর পানি সমস্যাসহ দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক সমস্যাগুলোর শান্তিপূর্ণ সমাধান নিশ্চিত করতে রাশিয়া ও চীনের বিনিয়োগ সম্ভাবনা ও রাজনৈতিক প্রভাবকে কাজে লাগানোর উদ্যোগ নিতে হবে। পুতিন ও শি জিনপিংয়ের নেতৃত্বে বর্তমান যুদ্ধপ্রবণ ও অস্থিতিশীল বিশ্বে যেমন একটি ভারসাম্যমূলক, শান্তিপূর্ণ ও স্থিতিশীল পরিবেশ প্রতিষ্ঠিত হতে পারে, তেমনি এশিয়া ও আফ্রিকার উন্নয়নশীল দেশগুলোর মুখপত্র হিসেবেও তারা তাদের গুরুত্বপূর্ণ তৎপরতা অব্যাহত রাখবেন। এই প্রত্যাশা আমাদের। রাশিয়ার নির্বাচনে পুনরায় প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হওয়ায় ভ্লাদিমির পুতিনকে আমাদের আন্তরিক অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।