মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
বিশ্ব ভূ-রাজনীতির বর্তমান অবস্থাকে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ‘গোল্ডেন বিলিয়ন’ বা স্বর্ণময় ১শ’ কোটি নামে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘গোল্ডেন বিলিয়ন বিশ্বকে প্রথম এবং দ্বিতীয় শ্রেণীর মানুষে বিভক্ত করে এবং সেকারণেই মূলত বর্ণবাদী এবং নব্য ঔপনিবেশিক।’ বুধবার মস্কোতে বক্তৃতায় পুতিন ঘোষণা করেন যে, তথাকথিত গোল্ডেন বিলিয়নের আধিপত্যের ধারাটি সম্পূর্ণ অন্যায্য। তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, ‘পৃথিবীর সমস্ত জনসংখ্যার মধ্যে এই সোনালী বিলিয়ন কেন সবার উপরে আধিপত্য বিস্তার করবে এবং নিজস্ব নিয়ম-নীতি চাপিয়ে দেবে?
ফেব্রুয়ারী থেকে রাশিয়া দাবি করে আসছে যে, ইউক্রেন সঙ্ঘাতের জন্য রাশিয়া দায়ী নয় বরং এর বিরুদ্ধে একটি অনিবার্য বৈশ্বিক ষড়যন্ত্র রয়েছে। পুতিন বলেন, ‘অবশ্যই, এই গোল্ডেন বিলিয়ন একটি কারণে স্বর্ণালী হয়ে উঠেছে। এটা অনেক অর্জন করেছে। তবে এটি কেবল কিছু বাস্তবায়িত ধারণার জন্যই এই অবস্থানে আসেনি, অনেকাংশে এটি এশিয়া এবং আফ্রিকায় অন্যান্য জনগণকে লুট করে তার অবস্থানে পৌঁছেছে। প্রকৃতপক্ষে এটাই ঘটেছে। দেখুন ভারত কিভাবে লুণ্ঠিত হয়েছে।’
‘গোল্ডেন বিলিয়ন’ তত্ত্ব¡টি ১৮ শতকের শেষের দিকে ব্রিটিশ অর্থনীতি ও জনসংখ্যাবিদ থমাস রবার্ট ম্যালথাস তৈরি। ১৯৯০-এর দশকে রাশিয়ান বুদ্ধিজীবী সের্গেই কারা-মুর্জা লিখেছিলেন যে, গোল্ডেন বিলিয়ন মানে উচ্চ আয়ের গণতন্ত্রের জনসংখ্যা যেমন, ওর্গানাইজেশন অফ ইকোনোমিক কো-অপারেশন এন্ডডেভেলপমেন্ট (ওইসিডি) বা জি-৭ এর অন্তর্গত দেশগুলি, যারা বিশ্বের সম্পদকে একটি অন্যায্য অনুপাতে ব্যবহার করে।
এ. কুজমিচ ছদ্মনামে আনাতোলি যিকুনভও ৯০’র দশকে তার ‘দ্য প্লট অফ ওয়ার্ল্ড গভর্নমেন্ট: রাশিয়া অ্যান্ড দ্য গোল্ডেন বিলিয়ন’ এ ধনীদেশগুলির রাশিয়ার বিরুদ্ধে পৃথিবীর শেষ সময়ের ষড়যন্ত্রের বর্ণনা দিয়েছেন। যিকুনভ তার বইয়ে লিখেছেন যে, ধনী পশ্চিমা অভিজাতরা পরিবেশগত পরিবর্তন ও বৈশ্বিক বিপর্যয়ের কারণে বিশ্ব সম্পদ দখলের আরও প্রতিযোগিতা ঘটবে বুঝতে পেরে শেষ পর্যন্ত তাদের ১ বিলিয়ন বা ১শ’ কোটি জনসংখ্যা বাদে সকলের জন্য বিশ্বকে বসবাসের অযোগ্য করে তুলবে। এই অভিজাতরা উপলব্ধি করে যে, রাশিয়ার প্রাকৃতিক সম্পদ বিশাল আয়তন এবং উত্তরে অবস্থানের কারণে তাদের নিজেদের টিকে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় যে কোনও উপায়ে দেশটিকে তাদের নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে।
রাশিয়ার নিরাপত্তা পরিষদের সচিব নিকোলাই পাত্রুশেভ, যাকে কেউ কেউ পুতিনের সম্ভাব্য উত্তরসূরি হিসাবে দেখেন, মে মাসে প্রকাশিত রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সংবাদপত্র আর্গুমেন্তি আই ফ্যাক্তির একটি সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘পশ্চিম মানবাধিকার, স্বাধীনতা এবং গণতন্ত্রের কথা বলতেই পারে, কিন্তু গোপনে এটি গোল্ডেন বিলিয়নের মতবাদ অনুসারে কাজ করছে।’ তিনি এও বলেন, ‘করোনা মহামারীটি এই উদ্দেশ্যে ঘটানো হতে পারে এবং সতর্ক করে দিয়েছিলেন যে, লন্ডন এবং ওয়াল স্ট্রিটের মুষ্টিমেয় কিছু ধনকুবেরের জন্য বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক সঙ্কট তৈরি করা হচ্ছে।’
দক্ষিণ এশিয়া, আফ্রিকা এবং লাতিন আমেরিকাতে আধিপত্য ও ঔপনিবেশিকতার বিরুদ্ধে ক্ষোভের গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। এবং এই তিনটি অঞ্চলে পশ্চিমারা মস্কোকে বিচ্ছিন্ন করতে ব্যর্থ হয়েছে। ১৯ মার্চ সাবেক রাশিয়ান প্রেসিডেন্ট এবং রাশিয়ান নিরাপত্তা পরিষদের ডেপুটি চেয়ারম্যান, দিমিত্রি মেদভেদেভ বলেছিলেন, ‘আপনারা নিজেকে যত খুশি গোল্ডেন বিলিয়ন ঘোষণা করতে পারেন, তবে বিশ্বের জনসংখ্যা বহুগুণ বেশি, এবং স্বর্ণের চেয়ে অন্য ধাতুগুলি অনেক বেশি ব্যয়বহুল।’
অনেক বিশ্লেষক যুদ্ধের মূল কারণকে রাশিয়ানদের জন্য পুতিনের আকাক্সক্ষা হিসাবে নয়, বরং আঞ্চলিক বৈধতা অব্যাহত রাখার জন্য পুতিনের ইচ্ছা হিসাবে দেখেন। ইতিহাসবিদ ইয়েকভ ফেইগেন এই সপ্তাহে লিখেছেন, ‘যুদ্ধটি পুতিনকে রাশিয়ার রাজনীতির শীর্ষে ফিরে আসার অনুমতি দিয়েছে যিনি অপূরণীয় ব্যক্তি হিসাবে দায়িত্বে আছেন।’ তবে প্রশ্ন হ’ল, এই মহান রাজনীতিবীদের কৌশল কি গোল্ডেন বিলিয়নের সর্বগ্রাসী আগ্রাসন এবং উপনিবেশ বিরোধী ভয়ের সাথে সহাবস্থান করতে পারবে? আপাতত, ক্রেমলিন তাই আশা করছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।