নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
ম্যাচের শেষ বল। জয়ের জন্য এক কিংবা দুই নয়, প্রয়োজন ৪, ৫ কিংবা ৬ রান। ক্রিকেটীয় উত্তেজনার পারদ তুঙ্গে পৌঁছে দেওয়া শেষ বলে ছক্কার ঘটনা খুব বেশি যে ঘটেছে, তা কিন্তু নয়। শেষ বলের এক ছক্কায় নায়ক হয়ে যাওয়ার সেই সব বীরত্বগাথা গেলপরশু নিদাহাস ট্রফির ফাইনালে শেষ বলে ছক্কা হাঁকিয়ে ভারতকে চ্যাম্পিয়ন বানানো দীনেশ কার্তিত ফিরিয়ে আনলেন যে গল্পগুলো তাতে মিশে থাকলো বাংলাদেশের বেদনাও-
জাভেদ মিয়াঁদাদ (পাকিস্তান-ভারত) শারজা, ১৯৮৬
কঠিন পরিস্থিতিতে ব্যাটিং করতেই যেন বেশি ভালোবাসতেন জাভেদ মিয়াঁদাদ। পাকিস্তানের ইতিহাসে সর্বকালের অন্যতম সেরা এই ব্যাটসম্যান ম্যাচের শেষ বলে ছক্কা মেরে ১৯৮৬ সালে চিরপ্রতিদ্ব›দ্বী ভারতের বিপক্ষে দেশকে এনে দিয়েছিলেন অবিস্মরণীয় এক জয়। ছিয়াশির এপ্রিলে অস্ট্রেলেশিয়া কাপের ফাইনালের শেষ ওভার ছিল ওটা। ভারতীয় পেসার চেতন শর্মার শেষ বলটিতে পাকিস্তানের জয়ের জন্য দরকার ছিল ৪ রানের। মোটামুটি বল করা শর্মা শেষ বলটি ফুলটস দিয়েই সর্বনাশ করেন। উইকেটে জমে থাকা মিয়াঁদাদ ফুলটসটি লং অনের ওপর দিয়ে পাঠিয়ে দিলেন। পাকিস্তান জিতল ইতিহাসের প্রথম অস্ট্রেলেশিয়া কাপ। ইতিহাসেও জায়গা করে নিল মিয়াঁদাদের সেই ছক্কা।
ল্যান্স ক্লুজনার (দ.আফ্রিকা-নিউজিল্যান্ড) নেপিয়ার, ১৯৯৯
দক্ষিণ আফ্রিকা ও নিউজিল্যান্ডের মধ্যকার ওয়ানডে সিরিজের একটি ম্যাচ ছিল এটি। প্রোটিয়া অলরাউন্ডার ল্যান্স ক্লুজনার দারুণ ফর্মে। নেপিয়ারে সিরিজের চতুর্থ ওয়ানডেতে নিউজিল্যান্ডের ২৫৭ রান তাড়া করতে নেমে ম্যাচটাকে প্রায় নিজেদের দিকেই টেনে এনেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। ম্যাচের শেষ বলে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রয়োজন ছিল ৪ রানের। বল হাতে তখন কিউইদের ভরসা ডিওন ন্যাশ। হার্ড হিটিং ক্লুজনার ন্যাশের মিডিয়াম পেসকে নেপিয়ারের মোটামুটি ছোট মাঠে বাউন্ডারির বাইরে আছড়ে ফেলে দলকে এনে দেন দারুণ এক জয়।
ব্রেন্ডন টেলর (জিম্বাবুয়ে-বাংলাদেশ) হারারে, ২০০৬
হারারের এই ম্যাচটা দুঃস্বপ্ন হয়েই আছে বাংলাদেশের ওয়ানডে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজার জন্য। জিম্বাবুয়ে ও বাংলাদেশের মধ্যকার ওয়ানডে সিরিজের চতুর্থ ম্যাচ ছিল এটি। সিরিজে জিম্বাবুয়ে এগিয়ে ২-১ ব্যবধানে। আগে ব্যাট করে বাংলাদেশ ২৩৭ রান তুলে জিম্বাবুয়েকে ভালোই চাপে রেখেছিল। কিন্তু জিম্বাবুইয়ানদের হয়ে সেদিন আস্থার প্রতীক হয়ে ছিলেন ব্রেন্ডন টেলর। ম্যাচের শেষ ওভারে জিম্বাবুয়ের দরকার ছিল ১৭ রান। বল করছিলেন মাশরাফি। সেদিন মাশরাফির বোলিং যেন একটু বেশিই নিয়ন্ত্রণের বাইরে ছিল। প্রথম পাঁচ বলেই ব্যবধানটা কমে গেল ১২ রান। শেষ বলে দরকার ৫ রান। মাশরাফি শেষ বলটাও দিয়ে দিলেন টেলরের একেবারে নাগালে। ছক্কা! ম্যাচটি জিতে সেবার ঘরের মাঠে ওয়ানডে সিরিজ নিশ্চিত করেছিল জিম্বাবুয়ে।
শিবনারায়ণ চন্দরপল (ও.ইন্ডিজ-শ্রীলঙ্কা) পোর্ট অব স্পেন, ২০০৮
চামিন্ডা ভাসের শেষ বলে ছক্কা মেরে দল ওয়েস্ট ইন্ডিজকে জিতিয়েছিলেন শিবনারায়ণ চন্দরপল! ‘ঠুক-ঠুক’ ইনিংসের জন্যই মূলত যার পরিচিতি। ২০০৮ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সেই ম্যাচটায় চন্দরপল কেন যেন নিজেকে একটু অন্য রূপেই তুলে ধরেছিলেন। জয়ের জন্য ম্যাচের শেষ বলে ওয়েস্ট ইন্ডিজের দরকার ছিল ৬ রান। ভাসের বলটি বাউন্ডারি সীমানার বাইরে ফেলে ক্যারিবীয়দের চন্দরপল এনে দেন স্মরণীয় এক জয়।
এড রেইনসফোর্ড (জিম্বাবুয়ে-আয়ারল্যান্ড) হারারে, ২০১০
ব্রেন্ডন টেলরের পর দ্বিতীয় জিম্বাবুইয়ান হচ্ছেন এড রেইনসফোর্ড, যিনি ম্যাচের শেষ বলে ছক্কা মেরে দেশকে জয় এনে দিয়েছেন। তবে টেলরের সঙ্গে রেইনসফোর্ডের ছক্কায় একটু পার্থক্য আছে। আইরিশ বোলার কেভিন ও’ব্রায়ানের শেষ ওভারের শেষ বলটিতে অবশ্য জয়ের জন্য অত বিশাল শটের প্রয়োজন ছিল না। শেষ বল থেকে জিম্বাবুয়ের যখন মাত্র ১ রান দরকার, তখন রেইনসফোর্ড ছক্কাই মেরে দেন। ২০১০ সালে হারারে স্পোর্টস ক্লাব মাঠে খেলাটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
রায়ান ম্যাকক্লারেন (দ.আফ্রিকা-নিউজিল্যান্ড) পচেফস্ট্রুম, ২০১৩
নেপিয়ারে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ক্লুজনারের সেই বিখ্যাত ‘শেষ বল ছক্কা’র এক যুগ পর কিউইদের বিপক্ষেই একই কাহিনীর পুনরাবৃত্তি করেছিলেন আরেক প্রোটিয়া ব্যাটসম্যান রায়ান ম্যাকক্লারেন। ২০১৩ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার পচেফস্ট্রুমে শেষ বলে ছয় মেরে দলকে জিতিয়েছিলেন ম্যাকক্লারেন। এই ম্যাচে হতভাগ্য বোলার ছিলেন জেমস ফ্র্যাংকলিন।
ব্রেন্ডন ম্যাককালাম (নিউজিল্যান্ড-শ্রীলঙ্কা) হাম্বানটোটা, ২০১৩
হাম্বানটোটার সেই ম্যাচের রঙ্গনা হেরাথের শেষ ওভারের শেষ বল থেকে ১ রান তুলে নিতে পারলেই ম্যাচটা নিজেদের করে নিতে পারত নিউজিল্যান্ড। কিন্তু ব্রেন্ডন ম্যাককালাম করতে চাইলেন আরও বড় কিছু। তিনি মেরে দিলেন বড়সড় এক ছক্কাই।
ক্রিকেট ইতিহাসে এই ম্যাচগুলো বিখ্যাত হয়ে আছে শেষ বলে ছয় মেরে দলের জয় ছিনিয়ে নেওয়ার জন্য।
দীনেশ কার্তিক (ভারত-বাংলাদেশ) কলম্বো, ২০১৮
সর্বশেষ এই তালিকায় নাম লিখিয়েছেন দীনেশ কার্তিক। আর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে নিদাহাস ট্রফির ফাইনাল। মুখোমুখি বাংলাদেশ ভারত।
ব্যাটসম্যানদের আসা যাওয়ার মিছিলে ভারতের সামনে ‘মামুলি’ ১৬৭ রানের লক্ষ্য দাঁড় করায় সাকিবের দল। তবে ছন্দে ফেরা মুস্তাফিজ-রুবেলদের গতির সামনে অসহায় আত্মসমর্পনই করতে যাচ্ছিল রোহিতের ভারত। তবে ঠিক এই সময় দলের ত্রাতা হয়ে আবির্ভাব ঘটে দীনেশ কার্তিকে। জয়ের জন্য শেষ ৩ ওভারে প্রয়োজন ৩৫। কাটার মাস্টার নিলেন মেইডেন উইকেট। একটি রান আসে অতিরিক্ত থেকে।
ক্রিজে এলেন অভিজ্ঞ কার্তিক। রুবেলের প্রথম বল থেকেই আগ্রাসী, ছক্কা, চারে এল ২২ রান। ভরসাভরে শেষ ওভারে বল তুলে দিয়েছিলেন অনিয়মিত বোলার সৌ সরকারের হাতে। তখনও প্রয়োজন ১২ রান। সেই অঙ্ক শেষ বলে ছক্কায় বাজিমাত করেন ভারতের এই উইকেটরক্ষক বাটসম্যান। ঠিক এভাবে না হলেও আগের ম্যাচেই শেষ ওভারের ৫ম বলে ছক্কা মেরে শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে বাংলাদেশকে টুর্নামেন্টের ফাইনালে তুলেছিলেন মাহমুদউল্লাহ।
ব্যতিক্রমও আছে ...
জয়ের ব্যতিক্রমও আছে। ১৯৯২-৯৩ মৌসুম অস্ট্রেলিয়ার ওয়ার্ল্ড সিরিজ প্রতিযোগিতায় পাকিস্তান ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যকার একটি ম্যাচে শেষ বলে ছয় মেরে ‘টাই’ করেছিলেন পাকিস্তানের আসিফ মুজতবা। স্টিভ ওয়াহর শেষ বলে সেদিন পাকিস্তানের জয়ের জন্য দরকার ছিল ১৭ রান। নব্বইয়ের দশকে পাকিস্তানের অন্যতম ‘ফিনিশার’ খ্যাতি পাওয়া বাঁ হাতি ব্যাটসম্যান মুজতবা ওয়াহর শেষ বলে বিশাল ছক্কায় দলকে জেতাতে পারেননি ঠিকই, কিন্তু ম্যাচটা বাঁচিয়েছিলেন দারুণভাবেই। পরিসংখ্যান বইয়ের এই ম্যাচটা হয়তো ‘টাই’ হিসেবে লেখা, কিন্তু মুজতবার ছক্কাটি সেদিন পাকিস্তানকে দিয়েছিল জয়ের আনন্দই।
আরও দু’টি ঘটনার উল্লেখ না করলেই নয়। ১৯৮০-৮১ মৌসুমে অস্ট্রেলিয়ার ওয়ার্ল্ড সিরিজ প্রতিযোগিতার সেই ম্যাচটিতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে শেষ বলে ছক্কা মারলেই ‘টাই’ করার আনন্দ নিয়ে মাঠ ছাড়তে পারত নিউজিল্যান্ড। কিন্তু অস্ট্রেলীয় অধিনায়ক গ্রেগ চ্যাপেল সেদিন তার সতীর্থ, ছোট ভাই ট্রেভর চ্যাপেলকে দিয়ে যে কান্ড ঘটিয়েছিলেন ,তা কুখ্যাত হয়ে আছে ক্রিকেট ইতিহাসে। আন্ডার আর্ম বোলিং করে সেদিন নিউজিল্যান্ডকে বঞ্চিত করা হয়েছিল লড়াইয়ের অধিকার থেকে। তবে এই ঘটনাই ক্রিকেট থেকে চিরতরে দূর করেছিল ‘আন্ডার আর্ম’ বোলিং। এ জন্য চ্যাপেল ভ্রাতৃদ্বয় বড় একটা ধন্যবাদ পেতেই পারেন।
এই ঘটনাগুলোর সঙ্গে মিশে থাকতে পারতো মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের নামও। তবে শেষ বলের বদলে ৫ম বলে ছক্কা মেরে নিদাহাস ট্রফির ফাইনাল জয় নিশ্চিতের পরও এমন কীর্তির টালিতে নিজের নামটি ওঠাতে পারেন নি মাহমুদউল্লাহ।
শেষ ওভারে জয়ের জন্য টাইগারদের প্রয়োজন ছিল ১২ রান। শেষ ওভারে বোলিংয়ে এসে প্রথম দুই বল নো করেন ইসুর উদানার। লেগ আম্পায়ার নো বলের কল করার পরও সেটা নো হিসেবে গণ্য করা হয়নি। যে কারণে প্রতিবাদ করেন বাংলাদেশি ক্রিকেটাররা। আম্পায়ারকে বিষয়টি বলা হলেও তাতে কান দেননি। আম্পায়ারদের এমন সিদ্ধান্তে একটা সময়ে মাঠের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা সাকিব আল হাসান, মাঠে থাকা মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ এবং রুবেল হোসেনকে খেলা ছেড়ে চলে আসতে বলেন। কিন্তু রিয়াদ নিজের ওপর আস্থা রেখে ম্যাচ শেষ করতে ফের ব্যাটিং করেন।
ওভারের প্রথম দুই বলে কোনো রান না করেই এক উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে যায় বাংলাদেশ। জয়ের জন্য শেষ ৪ বল দরকার ১২ রান। ওভারের তৃতীয় বলে চার মেরে জয়ের পথ অনেকটাই সহজ করেন রিয়াদ। পরের বলে রুবেলকে সঙ্গে নিয়ে ডাবল নেন। পঞ্চম বলে ব্যাকওয়ার্ড স্কয়ার লেগের উপর দিয়ে ছক্কা মেরে দলের জয় নিশ্চিত করেন মাহমুদউল্লাহ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।