নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ জিতলেই ফাইনাল নিশ্চিত পাকিস্তানের। আর সেটা হলে বিদায় ঘন্টা বাজবে আফগানদের সঙ্গে ভারতেরও। ফাইনালে খেলবে পাকিস্তান-শ্রীলঙ্কা। গতকাল শারজায় এমন সমীকরণের ম্যাচে লোয়ার অর্ডারের ব্যাটার নাসিম শাহ’র দুই ছক্কায় আফগানিস্তানকে ১ উইকেটে হারিয়ে ফাইনালে পৌঁছে গেল পাকিস্তান। ফলে এশিয়া কাপের ফাইনালে এখন শ্রীলঙ্কার সঙ্গি হলো তারা। ইতিহাসের অন্যতম সেরা এক ম্যাচের সাক্ষী হলো শারজা ক্রিকেট স্টেডিয়াম। আফগানদের করা ৬ উইকেটে ১২৯ রানের জবাবে ১৯.২ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে ১৩১ রান করে দারুণ জয় তুলে নেয় বাবর আজমের দল। শ্বাসরুদ্ধকর এই ম্যাচে ১৭ ওভার শেষে পাকিস্তানের রান ছিল ৫ উইকেটে ১০৫। জয়ের জন্য তখন দরকার ১৮ বলে ২৫। হাতে যথেষ্ট উইকেট থাকায় বাবর আজমদের পক্ষেই ছিল ম্যাচটি। কিন্তু এরপরই ঘটে নাটকীয়তা। ১৮তম ওভারে মাত্র ৪ রান দিয়ে মোহাম্মদ নওয়াজ (৪) আর খুশদিল শাহকে (১) তুলে নেন আফগান পেসার ফজল হক ফারুকি। পরের ওভারে আসিফ আলির ছক্কায় ১০ রান তুললেও আরও দুই উইকেট হারায় পাকিস্তান। ফরিদ আহমেদের ওই ওভারে হারিস রউফ শূন্য আর আসিফ ৮ বলে ১৬ করে ক্যাচ আউট হলে ম্যাচ থেকে প্রায় ছিটকে পড়ে পাকিস্তান। শেষ ওভারে দরকার ছিল ১১। কিন্তু হাতে মাত্র ১ উইকেটে, তার চেয়েও বড় কথা ব্যাটিংয়ে ছিলেন না কোনো স্বীকৃত ব্যাটার। লোয়ার অর্ডারের নাসিম শাহ ও মোহাম্মদ হাসনাইন মিলে ম্যাচটি জেতাতে পারবেন? এমন প্রশ্ন ছিল সবার মনেই। তবে পারলেন তারা। অসাধ্য সাধন করলেন নাসিম। শেষ ওভারের প্রথম দুই বলেই দুই ছক্কা হাঁকিয়ে পাকিস্তানকে অবিশ্বাস্য এক জয় এনে দিলেন তিনি।
তবে লক্ষ্য মাত্র ১৩০ রান হলেও ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুতেই জোড়া উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে পাকিস্তান। দলীয় ১৮ রানের মধ্যে সাজঘরে ফেরেন বাবর আজম আর ফাখর জামান। ইনিংসের দ্বিতীয় বলেই বাবরকে এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে ফেলেন ফজল হক ফারুকি। আফগান এই পেসারের বলে গোল্ডেন ডাকে ফেরেন পাকিস্তান অধিনায়ক। চতুর্থ ওভারের প্রথম বলে দ্রুত এক রান নিতে গিয়ে ননস্ট্রাইকে রানআউট হন ফাখর জামান (৯ বলে ৫)। এরপর মোহাম্মদ রিজওয়ান আর ইফতিখার আহমেদ ৩৩ বলে ২৭ রানের ধীরগতির এক জুটি গড়েন। ইনিংসের অষ্টম ওভারে রিজওয়ানকে (২৬ বলে ২০) এলবিডব্লিউ করে এই জুটি ভাঙেন রশিদ খান। ৪৫ রানে ৩ উইকেট হারায় পাকিস্তান। সেখান থেকে আফগানদের চমকে দিয়ে শাদাব খানকে ব্যাটিংয়ে পাঠায় পাকিস্তান। শাদাব প্রমোশন পেয়ে খেলার গতি বাড়ান, ২ ছক্কা হাঁকিয়ে পাকিস্তানকে অনেকটা ভালো অবস্থানে পৌঁছে দেন। কিন্তু ইফতিখার খেলছিলেন একদম বেশি সতর্কতার সঙ্গে। ৩৩ বলে ৩০ রান করে ফরিদ আহমেদের শিকার হন ডানহাতি এই ব্যাটার। ভাঙে ৪১ বলে ৪২ রানের জুটি। জয়ের জন্য পাকিস্তানের তখন দরকার ২৭ বলে ৪৩ রান। আফগান বোলাররা চাঙা হয়ে উঠলেও মারমুখী খেলছিলেন শাদাব খান। ১৭তম ওভারের প্রথম বলে রশিদ খানকে ছক্কাও হাঁকিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু পরের বলে আবারও মারতে গিয়ে ব্যাটের কানায় লেগে ক্যাচ হন শাদাব (২৬ বলে ৩৬)। শাদাব আউট হলে বড় চাপে পড়ে পাকিস্তান। তবে শেষ পর্যন্ত সব চাপ আর শঙ্কা পেছনে ফেলে নাটকীয় এক জয় তুলে নিয়ে এশিয়া কাপের ফাইনালে নাম লেখায় দলটি।
এর আগে টস হেরে পাকিস্তানী বোলারদের তোপের মুখে পড়ে কম পুঁজিতে নির্ধারিত ওভার শেষ করে আফগানিস্তান। তবে শারজায় এশিয়া কাপের মহাগুরুত্বপূর্ণ এই ম্যাচে টস হারলেও ব্যাটিংয়ে শুরুটা দুর্দান্ত করেছিল মোহাম্মদ নবীর দল। ২৯ বলে ৪৩ রানের উদ্বোধনী জুটি গড়েন হজরতউল্লাহ জাজাই ও রহমানুল্লাহ গুরবাজ। প্রথম দুই ওভারে ২০, চার ওভারে ৩৭ রান। এই সংগ্রহই বলে দেয় ইনিংসে উড়ন্ত সূচনাই করেছিল আফগানিস্তান। ওভার প্রতি তার তুলছিল প্রায় ১০ রান করে। তবে হঠাৎই দারুণভাবে লড়াইয়ে ফেরেন বাবর আজমরা। পাকিস্তানী বোলারদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে রানের গতি অনেকটাই কমে যায় আফগানদের। ইনিংসের চতুর্থ ওভারে হারিস রউফকে টানা দুই বাউন্ডারি হাঁকিয়ে তৃতীয় বলেই ক্যাচ তুলে দিয়েছিলেন জাজাই। কিন্তু শর্ট থার্ডম্যান বাউন্ডারিতে সহজ ক্যাচ ড্রপ করেন নাসিম শাহ। অবশ্য এক বল পরেই দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে গুরবাজকে (১১ বলে ২ ছক্কায় ১৭) বোল্ড করেন রউফ।
পরের ওভারে হাসনাইন বোল্ড করেন জাজাইকেও (১৭ বলে ২১)। ৭ রানের ব্যবধানে ২ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে আফগানরা। পাওয়ার প্লের ৬ ওভারে তারা তোলে ২ উইকেটে ৪৮ রান। এরপরই পাকিস্তানী বোলাররা রীতিমত চেপে ধরেন আফগান ব্যাটারদের। প্রমোশন পেয়ে চার নম্বরে নেমেছিলেন করিম জানাত। কিন্তু নিজেকে ঠিক মেলে ধরতে পারেননি তিনি। ১৯ বলে মাত্র ১৫ রান করে মোহাম্মদ নওয়াজকে তুলে মারতে গিয়ে ক্যাচ হন জানাত। ১৪তম ওভারে শাদাব খানকে ছক্কা হাঁকিয়েছিলেন নাজিবুল্লাহ জাদরান। তবে ওই ওভারেরই শেষ বলে আরেকটি ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে লংঅনে ধরা পড়েন এই ব্যাটার। করেন ১১ বলে ১০ রান। পরের ওভারের প্রথম বলে আরও এক উইকেট হারায় আফগানরা। নাসিম শাহর দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে ইনসাইডেজ হয়ে স্টাম্প হয়ে গোল্ডেন ডাকে ফেরেন অধিনায়ক মোহাম্মদ নবী । ৯১ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে কোণঠাসা হয়ে পড়ে আফগানিস্তান। ইব্রাহিম জাদরান ধীরগতিতে খেলছিলেন। ১৭তম ওভারে তাকে তুলে নেন হারিস রউফ। পাকিস্তানী পেসারের গতিময় এক ডেলিভারিতে ব্যাট চালিয়ে উইকেটরক্ষকের ক্যাচে পরিণত হন ইব্রাহিম (৩৭ বলে ৩৫)। শেষদিকে রশিদ খানের ১৫ বলে ১৮ আর ওমরজাইয়ের ১০ বলে ১০ রানের ইনিংসে ১২৯ পর্যন্ত যায় আফগানরা। পাকিস্তানী বোলারদের মধ্যে সবচেয়ে সফল ছিলেন হারিস রউফ। ৪ ওভারে ২৬ রান দিয়ে ২ উইকেট নেন এই পেসার। আরেক পেসার নাসিম শাহ ৪ ওভারে মাত্র ১৯ রানে নেন এক উইকেট।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।