২০৩৫ সালের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত মোটা হবেন ৪০০ কোটি মানুষ
২০৩৫ সালের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত ওজন বা মোটা হবেন বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি মানুষ। সংখ্যার বিচারে যা
প্রতি বছর প্রায় ১১ লক্ষেরও বেশী রুগী থাইল্যান্ডের বামরুনগ্রাড হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা নেয়। যারা আসে পৃথিবীর প্রায় ১৯০টি দেশ থেকে। তাই এলাকাভেদে রোগের প্রকোপ এবং বিভিন্ন কারনের যোগসূত্র বের করা এদের জন্য সহজই বলা যায়। তারা দেখতে পেয়েছে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার মানুষের মধ্যে ক্যান্সার এবং হৃদরোগ খুব দ্রæতই বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই বাংলাদেশের মানুষকে সচেতন করতে হাসপাতালটির ইন্টারনেশনাল মেডিকেল ডিরেক্টর মি. এরিক হারলেন ফ্লেশম্যান, ডা. সুরেশ নারুলা এবং ইন্টারন্যাশনাল মার্কেটিংয়ের এক্সিকিউটিভ মি. সারাওং সিরিবুনপান ঢাকা এসেছিলেন সম্প্রতি।
সংবাদকর্মী, ডাক্তার এবং স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টদের সাথে কয়েকটি সেমিনারে ও মতবিনিময় সভায় তারা তাদের অভিজ্ঞতার বিষয়টি তুলে ধরেন। তারা সবাইকে সচেতন হতে আহবান জানান। ডা. ফ্লেশম্যান কথা বলেন ক্যান্সার ঝুঁকি ও এর প্রতিরোধ নিয়ে। তিনি জানান, যদিও স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনায় পৃথিবী অনেকদুর এগিয়ে গিয়েছে তবুও বলা যায় ক্যান্সার নিয়ে আমরা একটা ক্রিটিক্যাল সময় পার করছি। আমাদের অভ্যাশ বা বদঅভ্যাশ যাই বলি না কেন, ধুমপান এবং তামাক সেবন এই অঞ্চলে ক্যান্সারের ঝুঁকি অনেক অনেক বাড়িয়ে দিচ্ছে। যদিও এই ধুমপান ইউরোপ-আমেরিকানদের মধ্যে ক্যান্সার ঝুঁকি এত বেশী মাত্রায় বৃদ্ধি করছে না বলেই গবেষকরা জানাচ্ছেন। গবেষণায় আরও বলা হচ্ছে, মুটিয়ে যাওয়াও কিন্তু ক্যান্সার ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। মহিলাদের স্তন ক্যান্সারই এর ভাল উদাহরণ। যা বাংলাদেশের মহিলাদের জন্যও সত্য। মুটিয়ে যাওয়া পুরুষরাও বিভিন্ন ক্যান্সারে বেশী আক্রান্ত হচ্ছে।
আমরা অর্থ খরচ করেও নিজেদের জন্য ক্যান্সার ঝুঁকি ক্রয় করছি। সপ্তাহে মাত্র একটা কোমল পানীয় খাওয়ার অভ্যাস এই ক্যান্সার ঝুঁকি অন্যদের চেয়ে বহুগুণ বাড়িয়ে দিচ্ছে বলে গবেষণা বলছে। আর ক্যান্সার বাড়াচ্ছে সবার হাতের নাগালের জাঙ্ক ফুড বা ফাষ্ট ফুড।
২০ বছর আগেও কিন্তু জীবন ক্যান্সারের জন্য এত ঝুঁকিপূর্ণ ছিলনা। শুনে মনে হচ্ছে হৃদরোগ, ডায়াবেটিসের মত ক্যান্সারেরও একই সব ঝুঁকি। আসলেও তাই, কিন্তু সমস্যা হল ডায়াবেটিস বা হৃদরোগের যেমন ওষুধ বা স্টেন্ট দিয়েই চিকিৎসা করলে আরও বেশ কিছু সময় জীবনটাকে আবারও একটু সচল করা যাচ্ছে, ক্যান্সারে এত সহজে তা হচ্ছে না। আর বাংলাদেশর মানুষত দেখতে পাচ্ছি ক্যান্সার নিয়ে আসছে স্টেজ থ্রি বা ফোরে। যাকে নিয়ে কাজ করতে আমাদের বেশ বেগ পেতে হয়। তাই বলব, ক্যান্সার প্রতিরোধ করুন, ঝুঁকি এড়িয়ে চলুন।
আমাদের হাসপাতালে এইসব রুগীদের জন্য আছে তিনটি সেন্টার। স্ক্রিনিং সেন্টার, চেক আপ সেন্টার এবং ভাইটাল লাইফ সেন্টার। এখানে সাধারণ স্ক্রিনিং, রোগ নির্ণয়ের যাবতীয় পরীক্ষা, কাউন্সেলিং থেকে শুরু করে ডিএনএ এনালাইসিস পর্যন্ত হয়। যার খরচ আমাদের এশিয় দেশ সিঙ্গাপুর থেকে তিন ভাগের এক ভাগ। সর্বোপরি, আমরা ক্যান্সার রুগীদের শুধু চিকিৎসাই করি না রুগীদের ভাল থাকতেও সাহায্য করি। নি:র্দ্বিধায় এ ব্যাপারে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় আমরাই সবচেয়ে এগিয়ে।
ডা. সুরেশ নারুলা আলোকপাত করেন হৃদরোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ নিয়ে। এ অঞ্চলের মানুষের মধ্যে হৃদরোগের কারন আসলে ভুল ভাবে অভ্যস্থ জীবন যাপন। তিনি বলেন, ধুমপান আমাদের খুব দ্রæতই হৃদরুগী বানিয়ে ফেলে। আবার জীনগত ব্যপারটাও একটা বিরাট ভুমিকা রাখছে। ৪০ বছরের কাছাকাছি সময়েই আমরা হৃদরোগে আক্রান্ত হই। অন্যদিকে ইউরোপীয়রা হয় ৬০ বছরের দিকে। আমাদের ২০% মানুষ ব্যয়ামের চেষ্টা করে আর ওদের অন্তত ৫০%ই এটা করে। ওরা সকাল ৭টা হতে বিকাল ৪টা পর্যন্ত কাজ করে। তারপর বিশ্রাম, ব্যয়াম, পরিবারকে সময় দেয়া, রাতে আগে আগে খেয়ে নেয়ার কাজটা করে। আর আমরা কাজ শুরুই করি সকাল ১০টায়, যা শেষ হয় রাত ৮-৯টায়। তারপর বড় একটা খাবার খেয়ে শুয়ে পরি। যদিও রাতের খাবারটা খাওয়া উচিৎ রাতে শোয়ার ৪ঘন্টা আগে। আমরা কিন্তু করছি, রাতে শুতে যাওয়ার ঠিক আগে আগে। তাই বিশ্রামে যেহেতু কোন এনার্জির প্রয়োজন নাই, এটা শরীরের জন্য বাড়তি বোঝা হয়ে জমে থাকছে। দেখলেনত কিভাবে আমরা ভুল টাইমিংয়ের জন্য অস্বাস্থ্যকর জীবন যাপন করছি। আবার আমাদের খাদ্য তালিকায় বড় একটা অংশ থাকছে মাছ-মাংশ-ডিম, অনেক অনেক কম শাক-সবজি-ফল-মূল। হৃদরোগের অন্য একটা কারণ হল দূষিত বায়ু। ধুলাবালি আমাদের শহর বন্দরের একটা অংশ। যা আমাদের শরীরকে প্রদাহময় করে রাখে। যা আমাদের ফুসফুসের রোগ, হৃদরোগ এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।
যখন রুগী এসে বলে ওষুধ দিন। তখন আমি বলি, এটা আপনাকে হয়ত এখনকারমত সমাধান দিবে। কিন্তু আপনাকে রোগের মূলে যেতে হবে। যা করলে এটা আবার ফিরে আসবে না, বা একেবারেই হয়ত নির্মূল হবে।
তারা তাদের এই বার্তাগুলি সমাজের সব স্তরে ছড়িয়ে দেয়ার আহবান জানান। আবার অংশগ্রহনকারীরাও বাংলাদেশিদের নিয়ে তাদের মনোযোগের প্রশংশা করেন।
৩ দিনের এই পর্বগুলি আয়োজনের মূল দায়িত্বে ছিলেন বাংলাদেশে অবস্থিত হাসপাতালটির রেফারেল সেন্টারের কর্মকর্তাবৃন্দ। তারাও বরাবরের মতই হাসিমুখে সেবা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেন। সেবার জন্য প্রস্তুত আছেন বলে জানালেন, ইন্টারন্যাশনাল মার্কেটিংয়ের এক্সিকিউটিভ মি. সারাওং সিরিবুনপানও। যে কোন স্বাস্থ্য সেবা বিষয়ক সেবার জন্য যোগাযোগের অনুরোধ করলেন সেন্টারটির প্রধান কর্মকর্তা মি. কামালুর রহমান, কর্মকর্তা মি. দেলোয়ার হোসেন এবং মিঃ শাহ মোঃ রোকনুজ্জামান। ঢাকায় তারা আছেন, স্যুট : ৩, লেভেল : ১১, ইউটিসি বিল্ডিং ৮, পান্থপথ, ঢাকা-১২১৫, ফোন-০১৭১৩০২৭৬২৮, ০১৭৫৫৫৫৯৬৩১, ই-মেইল : : [email protected] ঠিকানায়।
-ডা. জহুরুল হক
ই-মেইল : [email protected]
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।