২০৩৫ সালের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত মোটা হবেন ৪০০ কোটি মানুষ
২০৩৫ সালের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত ওজন বা মোটা হবেন বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি মানুষ। সংখ্যার বিচারে যা
আত্মহত্যা মানে একটি সুন্দর জীবনের করুণ, অনাকাঙ্খিত ও অকাল মৃত্যু। আত্মহত্যা একটি আত্মধ্বংসী সিদ্ধান্ত। যা ঘটে গেলে সে জীবনে ফিরে পাওয়ার আর কোন সম্ভাবনা নেই। তবে আত্মহত্যা একটি প্রতিরোধযোগ্য স্বাস্থ্য সমস্যা।
পৃথিবীতে অধিকাংশ দেশেই মৃত্যুর প্রথম দশটি কারণের মধ্যে আত্মহত্যা একটি। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার মতে, প্রতিবছর বিশ্বে প্রায় ৮ লাখ লোক আত্মহত্যা করে। মৃত্যুর হার প্রতি লাখে ১৬জন অর্থাৎ প্রতি সেকেন্ডে এক জন।
কারণঃ
যারা প্রায়ই আত্মহত্যার কথা বলে তাদের একটি বড় অংশ আত্মহত্যা করে। আত্মহত্যার ৯৫ শতাংশ কারণ মানসিক আর ৫ শতাংশ অন্যান্য কারণ। আত্মহত্যার কারণ হিসেবে বিভিন্ন গবেষণায় যে বিষয়গুলো লক্ষ্য করা যায়Ñ
১. ব্যক্তিগত, সামাজিক ও পারিবারিক জীবনে সমস্যা।
২. দাম্পত্য কলহ, পরকীয়া, প্রেম, যৌতুক ও পারিবারিক নির্যাতন।
৩. পরীক্ষায় ব্যর্থতা, ব্যবসায়ের অপুরনীয় ক্ষতি, চাকুরী চ্যুতি।
৪. কোন নির্যাতনে শিকার হওয়ার পর নিজের প্রতি ঘৃণাবোধ।
৫. শিক্ষাক্ষেত্রে ও কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি।
৬. উত্যক্ত করা ও আত্মহত্যায় প্ররোচিত করা।
৭. দারিদ্র, অপ্রাত্তি, অর্থনৈতিক মন্দা।
৮. আত্মহত্যার উপকরণের সহজপ্রাপ্যতা।
৯. নৈতিক অবক্ষয় ও সামাজিক অস্থিরতা।
১০. নগরায়ন ও পরিবারতন্ত্রের বিলুপ্তি।
১১. দুরারোগ্য ও জটিল রোগ যন্ত্রনা থেকে আত্মাহুতি।
১২. চরম হতাশা ও হতাশাজনিত মানসিক রোগ।
১৩. মাদকাসক্তি ও অ্যালকোহলে আসক্তি।
১৪. সিজোফ্রেনিয়া, মৃগীরোগ।
১৫. ব্যক্তিত্বের সমস্যা।
১৬. বংশগত কারণ অর্থাৎ যে বংশে বা পরিবারে আত্মহত্যার ইতিহাস আছে সে বংশ বা পরিবারে নিকটাত্মীয়দের মধ্যে আত্মহত্যা প্রবণতা বেশি।
১৭. যারা কোন কষ্ট পেলে নিজেকে আঘাত করে, ধারালো অস্ত্র দিয়ে নিজের শরীরে ক্ষত করে, দেয়ালে মাথায় আঘাত করে, অল্পতেই রেগে যায় ইত্যাদি।
আত্মহত্যার ক্ষেত্রে এমনটি ভাবা যাবে নাঃ
১) অনেকেই ভাবেন যারা আত্মহত্যা করে তারা কোন প্রমান বা সতর্কসংকেত রাখে না। এমনটি ভাবা যাবে না। যারা আত্মহত্যা করে তারা অনেক আগে থেকেই কিছু সংকেত দেয়, যা হয়ত কেউ গুরুত্ব দেয় না।
২) অনেকেই ভাবেন যে, কেউ আত্মহত্যা হতে বেঁচে গেলে পরবর্তীতে আর করবে না। এটাও ভূল ধারণা।
৩) যারা আত্মহত্যার হুমকি দেয় বা জীবনের প্রতি বিতৃষ্ণা দেখায় তারা কখনোই আত্মহত্যা করবে না। এমনটাও ভুল।
৪) অনেকে মনে করেন, যারা আত্মহত্যা করার কথা বলে, এ বিষয়ে তাদের সাথে কথা বললে আত্মহত্যার পথে এগিয়ে দেয়। এমনটাও ভাবা ভুল, বরং তার সাথে খোলামেলা কথা বলে সমস্যা চিহ্নিত করে সমাধানের পথ খুঁজেত হবে।
৫) যেসব পরিবারে কেউ আত্মহত্যা করেছে, এমন পরিবারে নিকটাত্মীয়রা শিক্ষা পেয়ে করবে না, এটাও ভুল। গবেষণায় দেখা গেছে এসব পরিবারের নিকটাত্মীয়দের মধ্যে আত্মহত্যা করার প্রবণতা বেশি।
আত্মহত্যাপ্রবণ ব্যক্তিকে কিভাবে শনাক্ত করা যায়?
আত্মহত্যাপ্রবণ ব্যক্তির মধ্যে লক্ষ্য করলে যে বিষয়গুলো লক্ষণীয়:
১. নিজেকে অন্যের উপর বোঝা মনে করা।
২. অসহনীয় ও জীবনের প্রতি বিতৃষ্ণা, মনে করে পৃথিবীতে তার কোন প্রয়োজন নেই।
৩. সরাসরি বা পরোক্ষভাবে আত্মহত্যার কথা প্রকাশ করা।
৪. নিজেকে সবার কাছ হতে সরিয়ে নেয়া ও সম্পর্ক না রাখা।
৫. এক বা একাধিকবার আত্মহত্যার চেষ্টা করা।
৬. যেকোন সুইসাইড নোট লেখা।
৭. হঠাৎ করে নিজের প্রয়োজনীয় ও মূল্যবান বস্তুসমূহ অন্যদের নিকট বুঝিয়ে দেওয়া বা হঠাৎ উইল করে ফেলা।
৮. অসংলগ্ন আচরণ, বিষন্নতা, হতাশা প্রকাশ করা।
৯. প্রিয়জনের কাছ হতে ক্ষমা চেয়ে নেয়া।
১০. বড় ধরনের অপরাধবোধ, নিজের প্রতি ঘৃণা, ধিক্কার প্রকাশ করা।
১১. স্বাভাবিক কাজ হতে নিজেকে গুটিয়ে নেওয়া।
১২. আত্মহত্যায় ব্যবহৃত বস্তুসমূহ যেমন বিষ, রশি, ঘুমের ঔষধ, ধারালো অস্ত্র, আগ্নেয়াস্ত্র লুকিয়ে রাখা।
১৩. অথবা কান্নকাটি করা, কম ঘুম বা বেশী ঘুমানো।
১৪. নিজের প্রতি যত্ন না নেওয়া ইত্যাদি।
প্রতিরোধের উপায়ঃ
১) কারো মধ্যে এমন আচরণ দেখা গেলে তাকে উপহাস, ঠাট্টা করা যাবে না।
২) পরিবারের কারো মধ্যে এমন আচরণ দেখা গেলে বিষয়টিকে অতি গুরুত্বের সাথে দেখতে হবে। মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞের শরনাপন্ন হতে হবে।
৩) মানসিক কষ্ট লাঘবের জন্য সর্বাত্মক কাউন্সেলিং করতে হবে।
৪) ঐ ব্যক্তির মনের কথা সহমর্মিতা দিয়ে শুনতে হবে।
৫) তার কাছ হতে সরাসরি আত্মহত্যা করার কারণ সম্পর্কে আলোচনা করতে হবে।
৬) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ সম্পর্কে কোন লেখা দেখলে তার সাথে অতিসত্বর দেখা করে এ বিষয় সম্পর্কে কথা বলতে হবে।
৭) আত্মহত্যাপ্রবণ ব্যক্তিকে কখনোই একা রাখা চলবে না।
৮) এ ধরনের ব্যক্তির কাছ হতে আত্মহত্যায় ব্যবহৃত সমস্ত বস্তুকে সরিয়ে রাখতে হবে।
৯) প্রয়োজন হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে যথাযথ চিকিৎসা করাতে হবে ইত্যাদি।
আত্মহত্যা প্রবণ ব্যক্তি নিজে কি করবেনঃ
১. এ ধরনের চিন্তা আসলে নিকট জনের সাথে খোলামেলা কথা বলতে হবে।
২. নিজ হতেই মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞের নিকট গিয়ে এ সম্পর্কে আলোচনা করতে হবে।
৩. এ ধরনের কাজে চিন্তা এলে নিজেকে থামাতে হবে, জীবনকে সুযোগ দিতে হবে। কারণ খারাপ সময় দীর্ঘস্থায়ী নয় এটা মনে রাখতে হবে।
৪. নেতিবাচক চিন্তা বাদ দিয়ে ইতিবাচক চিন্তায় মনোনিবেশ করতে হবে।
৫. সমস্যা দেখা দিলে ঠান্ডা মাথায় সেগুলোকে সমাধানের পথ খুঁজতে হবে।
৬. মনে রাখবেন, জীবনকে সুযোগ দিন এটা সুনিশ্চিত যে, জীবন আপনাকে কখনোই ঠকাবেনা।
আরো কিছু বিষয়ে পরিবার ও সমাজ ভূমিকা রাখতে পারে। সেগুলোঃ
৭. পারিবারিক, সামাজিক বন্ধনকে সুদৃঢ় করতে হবে।
৮. একে অপরকে যথেষ্ট সময় দিতে হবে।
৯. কাছের মানুষের দুঃখের কথাগুলোকে মনোযোগ দিয়ে শুনতে হবে।
১০. বিনোদনের জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থা থাকতে হবে।
১১. প্রতি সমস্যাকে চ্যালেঞ্জ নিয়ে মোকাবেলা করতে হবে।
১২. কীটনাশক ব্যবহারে নিয়ন্ত্রণ ও বিক্রয়ে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
১৩. মিডিয়াকে আত্মহত্যার সংবাদ প্রচারে আরো সতর্কতা অবলম্বন করে আরো দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে।
১৪. সর্বোপরি আত্মহত্যা প্রতিরোধে সবাইকে এ ব্যাপারে বিশেষ সতর্ক ও সজাগ হতে হবে।
১৫. মনে রাখতে হবে আত্মহত্যাই চুড়ান্ত সমাধান নয়। বরং সব সমস্যার সমাধান করে সুন্দর জীবন যাপনই চুড়ান্ত সমাধান।
মোঃ হুমায়ুন কবীর
হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক
রেনেসাঁ হোমিও মেডিকেয়ার
২৫/৩, নবাব কাঁটারা, নিমতলী, চাঁনখারপুল, ঢাকা- ১০০০।
মোবাইল নম্বরঃ- ০১৭১৭-৪৬১৪৫০, ০১৯১২-৭৯২৮৯৪।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।