Inqilab Logo

শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ডায়রিয়া প্রতিরোধে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে

| প্রকাশের সময় : ২৭ মার্চ, ২০২২, ১২:০৭ এএম

রাজধানীসহ আশপাশের এলাকায় ডায়রিয়ার প্রকোপ বৃদ্ধি পেয়েছে। গত কয়েকদিনে মহাখালিস্থ আইসিডিডিআর’বি হাসপাতালে রেকর্ড সংখ্যক রোগী ভর্তি হয়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, প্রতিদিন গড়ে ১২শ’ থেকে ১৩শ’ রোগী হাসপাতালে আসছে। এদের অধিকাংশরই চিকিৎসার জন্য ভর্তি করতে হচ্ছে। এতে স্থান সংকুলান করা অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়েছে। চিকিৎসকদের চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। আইসিডিডিআর’বি জানিয়েছে, বিগত ৬০ বছরে এত রোগীর চাপ দেখা যায়নি। এ এক ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। হাসপাতালের বেডের সংখ্যার চেয়ে রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় বাইরে তাবু টানিয়ে বিছানা পেতে চিকিৎসা দিতে হচ্ছে। চিকিৎসকদের মতে, শীত আর গরেমের শুরুতে বছরে দুইবার ডায়রিয়া আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ে। সাধারণত মার্চের শেষ সপ্তাহ থেকে রোগীর সংখ্যা বাড়তে শুরু করে। এপ্রিলের মাঝামাঝি থেকে শেষ সপ্তাহে রোগীর সংখ্যা চূড়ান্তভাবে বৃদ্ধি পায়। এ সময়টা ডায়রিয়ায় আক্রান্তের জন্য অত্যন্ত নাজুক। এক্ষেত্রে, সচেতনতা অবলম্বন ও স্বাস্থ্যের প্রতি বিশেষ নজর দেয়া দরকার।

ডায়রিয়া এক সময় মহামারি হিসেবে চিহ্নিত হলেও চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নতিতে তা এখন নিরাময়যোগ্য হয়ে উঠেছে। তারপরও এ রোগে আক্রান্ত হলে এবং সঠিক চিকিৎসা না নিলে মৃত্যুর শঙ্কা থাকে। ডায়রিয়া চিকিৎসায় বাংলাদেশস্থ আইসিডিডিআর’বি সর্বপ্রথম সাফল্য লাভ করে। তার উদ্ভাবিত সহজ চিকিৎসা পদ্ধতি অনুসরণের মাধ্যমে ডায়রিয়া থেকে মুক্ত হওয়া যায়। তারপরও রোগীর অবস্থা গুরুতর হলে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়। বর্তমানে ডায়রিয়ার যে প্রকোপ বৃদ্ধি পেয়েছে, তা স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে অত্যন্ত বেশি। এ রোগ মূলত পানিবাহিত হলেও এর সাথে রাজধানীর বায়ূ ও পরিবেশ দূষণের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। এ দূষণের কারণে মানুষ শুধু ডায়রিয়া নয়, অন্যান্য জটিল রোগেও আক্রান্ত হচ্ছে। বসবাস অনুপযোগী শহরে নানা রোগ-বালাই ছড়াবে এবং মানুষ আক্রান্ত হবে, তা বলা বাহুল্য। ঢাকা শহরের পরিবেশ এখন এতটাই ভয়াবহ যে, বুকভরে নিঃশ্বাস নেয়া যায় না। প্রতি মুহূর্তে নিঃশ্বাসের সাথে বিষ ঢুকছে। রাজধানীকে পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন ও দূষণমুক্ত রাখার দায়িত্ব যে দুই সিটি করপোরেশনের তারা বরাবরই ব্যর্থতার পরিচয় দিয়ে আসছে। এই ব্যর্থতার কারণে রাজধানীতে মশার উপদ্রব বৃদ্ধি এবং এর মাধ্যমে ডেঙ্গু রোগের বিস্তার ঘটেছে। মশা নিধনে দুই সিটি করপোরেশনেরই নিদারুণ ব্যর্থতা রয়েছে। এছাড়া সময়মতো গৃহস্থালী ও অন্যান্য বর্জ্য অপসারণও যথাসময়ে করা হয় না। এর ফলে গরম ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের কারণে অনেকে ডায়রিয়ার মতো রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। ঢাকা ওয়াসাও রাজধানীতে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে পারেনি। ওয়াসার পানি সরাসরি ও নিশ্চিন্তে পান করে এমন লোকের সংখ্যা রাজধানীতে নেই বললেই চলে। নগরবাসীকে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের ক্ষেত্রে ওয়াসার এই ব্যর্থতা অমার্জনীয়। ওয়াসার পানির মাধ্যমে ডায়রিয়া ছড়াচ্ছে কিনা, তাও খতিয়ে দেখার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। দেখা যাচ্ছে, করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে থাকার পাশাপাশি রাজধানীতে ডেঙ্গু ও ডায়রিয়াসহ অন্যান্য রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি পেয়েছে। এ থেকে বুঝতে অসুবিধা হয় না, রাজধানীর পরিবেশ কতটা ভয়াবহ অবস্থায় রয়েছে।

ডায়রিয়ার চিকিৎসা সহজ ও সহজলভ্য হলেও এ রোগে যাতে আক্রান্ত না হতে হয়, তার জন্য মানুষকে সতর্ক থাকতে হবে। ফুটপাত কিংবা খোলা বাজারের খাবার ও পানীয় গ্রহণ থেকে বিরত থাকতে হবে। বাসি খাবার বর্জন করতে হবে। রোগে আক্রান্ত হওয়ার আগেই রোগ প্রতিরোধক ব্যবস্থা ও সচেতনতা অবলম্বন করতে হবে। ডায়রিয়া পানিবাহিত হওয়ায় পানি পানের ক্ষেত্রে সতর্ক হতে হবে। পানি পান করতে হলে ফুটিয়ে কিংবা বিশুদ্ধ করে পান করতে হবে। খাবার গ্রহণের আগে হাত ভালো করে ধুতে হবে। পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতার ওপর জোর দিতে হবে। সিটি করপোরেশনকে নগরীর পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করতে হবে। যথাসময়ে ময়লা-আবর্জনা পরিস্কার করতে হবে। জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে বিশেষ পদক্ষেপ নিতে হবে। ঢাকার পরিবেশ দূষণ রোধে প্রত্যেক সেবাদানকারি প্রতিষ্ঠানকে একযোগে কাজ করতে হবে।

 

 

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ডায়রিয়া প্রতিরোধ
আরও পড়ুন