Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

স্বপ্নায়িত কাপ্তাই হ্রদের লাখো মৎস্যজীবী

| প্রকাশের সময় : ৮ মার্চ, ২০১৮, ১২:০০ এএম

সৈয়দ মাহাবুব আহমেদ, রাঙামাটি থেকে : তলদেশ ভরাট, দূষণ, অবৈধ দখল আর অসাধু মুনাফালোভী ব্যবসায়িদের নানামুখি অপতৎপরতায় দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার বৃহত্তম কাপ্তাই হ্রদে দেশীয় প্রজাতির মৎস্য সম্পদ ধীরে ধীরে বিলুপ্তির দিকে ধাবিত হওয়ার প্রাক্কালে রাঙামাটির মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশন বিএফডিসি’র নিজস্ব হ্যাচারিতে শতভাগ সফলভাবে উৎপাদিত মাছের পোনায় আবারো অত্রাঞ্চলের মৎস্যজীবীদের মনে আশার সঞ্চার ঘটিয়েছে। রাঙামাটি শহর থেকে কাপ্তাই হ্রদের অদূরে লংগদু উপজেলাধীন মারিশ্যাচর এলাকার অরন্যবেষ্টিত পাহাড়ে স্থাপিত বিএফডিসি’র রেনু পোনা উৎপাদন কেন্দ্রটিতে সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে প্রাকৃতিকভাবে উৎপাদিত দেশীয় কার্প প্রজাতির পোনা মাছ উৎপাদনের ফলে হ্রদে কার্প জাতীয় মাছের অভাব পূরণের পাশাপাশি অত্রাঞ্চলের পাহাড়ি ঘোনাগুলোতে মাছ চাষের সাথে জড়িত চাষীদের মাঝেও ব্যাপক আশার সঞ্চার ঘটিয়েছে। 

রাঙামাটি মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশ বিএফডিসি’র ব্যবস্থাপক নৌ-বাহিনীর কমান্ডার মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান জানিয়েছেন, বিগত সময়ে আমরা কাপ্তাই হ্রদে ২০ থেকে ২৫ মেট্রিক টন মাছের পোনা বাজার থেকে ক্রয় করে কাপ্তাই হ্রদে অবমুক্ত করতাম। এতে করে নানাধরনের প্রতিকুলতা কাটিয়ে উঠার পরেও আমরা বছরে এগারো কোটি টাকারও অধিক রাজস্ব আদায় করে সরকারি কোষাগারে জমা করতাম। এটি রাঙামাটি জেলার মৎস্য সেক্টরের সর্বোচ্চ পরিমান রাজস্ব আয়। তিনি বলেন, আমাদের বিএফডিসির চেয়ারম্যান দিলদার আহাম্মেদ সার্বিক নির্দেশনায় এবার আমরা বিএফডিসি’র নিজস্ব হ্যাচারীতে মাছের ডিম সংগ্রহপূর্বক হ্যাচিং করে রেনু পোনা উৎপাদন করে সেগুলোকে তিন মাস লালন-পালন শেষে কাপ্তাই হ্রদে অবমুক্ত করার সিদ্ধান্ত বিএফডিসি কর্তৃপক্ষ। হ্রদের পানি ব্যবহার করে পোনা লালন পালনের পর তা হ্রদে ছাড়া হলে যেমন, পোনা মৃত্যুর হার কমবে, তেমনি উৎপাদনও বৃদ্ধি পাবে বলে জানিয়েছেন ব্যবস্থাপক আসাদুজ্জামান। তিনি বলেন, এবছর রাঙামাটি বিএফডিসির এ নিজস্ব হ্যাচারিতে কমপক্ষে ৬০টন কার্প জাতীয় মাছের পোনা তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে রাঙামাটির বিএফডিসি। ইতিমধ্যে আমরা প্রাথমিক পাইলট সিষ্টেম হিসেবে লংগদুতে উৎপাদিত পোনা মাছ এখানকার মৎস্যচাষিদের মাঝে বিক্রিও করেছি। এক প্রশ্নের জবাবে বিএফডিসি’র ব্যবস্থাপক আসাদুজ্জামান জানান, আমাদের নিজস্ব হ্যাচারীতে পোনা উৎপাদন করতে বিগত দিনে মাছ ক্রয়ের অর্ধেকাংশ অর্থ খরছ হচ্ছে। এছাড়াও পোনাও উৎপাদিত হচ্ছে দুইগুন। তিনি জানান, ৬০ মেট্রিক টন পোনা উৎপাদনের আমাদের মাত্র ৪০ লাখ টাকার মতো খরছ হবে। বিএফডিসির হ্যাচারীটি যাতে করে অদূর ভবিষ্যতে বন্ধ না হয়, সেদিকে নজর দিয়ে বিএফডিসির কর্মপরিধি আরো বৃদ্ধি করলে অত্রাঞ্চলে মৎস্য সেক্টরে অর্থনৈতিক বিপ্লব ঘটানো সম্ভব।
লংগদুতে স্থাপিত মৎস্য হ্যাচারীটিতে রেনু উৎপাদনের কাজে নিয়োজিত নজরুল ইসলাম জানিয়েছেন, মা মাছ থেকে ডিম সংগ্রহ করে মাত্র ৯৬ থেকে ১২০ ঘন্টা সময়ের মধ্যে সেগুলো থেকে রেনু উৎপাদন করে তিনমাস হ্যাচারীতে রেখে ৩ থেকে ৫ ইঞ্চি মানের পোনা তৈরি করে সেগুলোকে আমরা কাপ্তাই হ্রদে অবমুক্ত করছি। তিনি জানান, আমি এরআগে ঢাকাস্থ গ্রামীন মৎস্য খামারে কাজ করেছি। কিন্তু সেখানে উৎপাদিত পোনার চেয়ে বিএফডিসির হ্যাচারীতে উৎপাদিত পোনার গুনগত মান অনেক ভালো। তাই এই মাছ শতভাগ টিকে যাচ্ছে। এই পোনা স্থানীয় মৎস্যচাষিদের মাঝে ইতোমধ্যেই ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। তিনি জানান, সঠিক পদ্ধতি অবলম্বনে বিএফডিসির হ্যাচারীতে প্রতি মৌসুমে ৬০ মেট্রিকটন পোনা উৎপাদন সম্ভব এবং বর্তমানে হচ্ছেও। বিএফডিসি সূত্রে জানা গেছে, বিগত বছরগুলোতে ২০ থেকে ২৫ মেট্রিক টন মাছের পোনা ক্রয় করে সেগুলোকে রাঙামাটিতে এনে পর্যায়ক্রমে কাপ্তাই হ্রদে অবমুক্ত করা হতো। এসময় উক্ত পোনার দৃশ্যমান একটি অংশ অবমুক্তের কয়েকদিনের মধ্যেই মরে হ্রদের পানিতে ভেসে উঠতো। তারপরও বছর শেষে বিএফডিসি কর্তৃপক্ষ ১১ কোটি টাকার মতো রাজস্ব আয় করতে পারতো। সম্প্রতি অবৈধ জাঁক, নিষিদ্ধ কারেন্ট জালসহ অসাধু তৎপরতা বন্ধে রাঙামাটি বিএফডিসি’র চলমান অভিযান ও নানামুখী পদক্ষেপের ফলে কাপ্তাই হ্রদে মাছের উৎপাদন বেড়েছে। এতে করে ধারনা করা হচ্ছে চলতি অর্থ বছরে কাপ্তাই হ্রদ থেকে রাজস্ব আদায় বিগত বছরগুলোকে ছাড়িয়ে যাবে। বিএফডিসি’র দায়িত্বশীল সূত্রের দাবি এবছর রাজস্ব আয় ১২ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। এমতাবস্থায় কাপ্তাই হ্রদ থেকে সংগৃহীত মা মাছ থেকে ডিম সংগ্রহপূর্বক নিজস্ব হ্যাচারীতে উৎপাদিত রেনু পরবর্তী মাছের পোনা (যার পরিমাণ ৬০ মেট্রিক টন) কাপ্তাই হ্রদে অবমুক্ত করা হলে বিলুপ্ত হতে যাওয়া দেশীয় কার্প প্রজাতীর মৎস্য সম্পদে আবারো ভরপুর হয়ে উঠবে দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার বৃহত্তম কাপ্তাই হ্রদ। স্থানীয় মৎস্য ব্যবসায়িদের অভিমত, এই ধারা অব্যাহত রাখতে পারলে আগামী ৪ থেকে ৫ বছর সময়ের মধ্যেই কাপ্তাই হ্রদের হারানো যৌবন ফিরে আসার পাশাপাশি যেমনিভাবে দেশের আমিষের চাহিদা পূরনে দৃশ্যমান অবদান রাখবে, তেমনিভাবে রাজস্ব খাতে বিরাট অর্থের যোগান দিবে রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মৎস্যজীবী


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ