Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সমুদ্রসীমার বিপুল সম্ভাবনাতেও বড় বাধা ভারত: মৎস্যজীবী দল

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৪ অক্টোবর, ২০২১, ৭:১০ পিএম

বাংলাদেশের সমুদ্রসীমায় বিপুল সম্ভাবনা থাকলেও সেখানে ভারত বড় বাধা হয়ে দেখা দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে জাতীয়তাবাদী মৎস্যজীবী দল। সোমবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এই অভিযোগ করা হয়। দলটির সদস্য সচিব আবদুর রহিম স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে বলা হয়, ভারত এবং মিয়ানমারের কাছ থেকে বুঝে নেয়ার পর প্রায় প্রতি বছর সমুদ্রসীমায় বাংলাদেশী মৎস্য সম্পদ আহরণের পরিমাণ বেড়েছে। সমুদ্রসীমা হতে প্রথম বছর ৩০০ কোটি ডলারের বেশি জলজ সম্পদ হাতে পায় বাংলাদেশ। যার মূলেই মৎস্যজাত পণ্য। বর্তমানে বাংলাদেশ প্রায় ৯৬০ কোটি ডলারের মত জলজ মৎস্য সম্পদ পাচ্ছে বাংলাদেশের জলসীমা হতে। কিন্তু এখানেও বাধ সেধেছে ভারতীয় এবং থাইল্যান্ডের জেলেরা। উচ্চ প্রযুক্তির বিজ্ঞান নির্ভর জলযান এবং অতিরিক্ত সুক্ষ জাল ব্যবহার করে সমুদ্রের গভীর হতে রাতের আধারে মূল্যবান জলজ সম্পদ চুরি করছে তারা।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশ কোস্টগার্ড ইতোমধ্যে প্রায় ১০০’র বেশি ভারতীয়কে বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা হতে আটক করে কারাগারে পাঠিয়েছে। কিন্তু, সাগরের ভারতীয় অংশে তাদের নির্বিচারে মৎস্য আরোহণ করার ফলস্বরুপ সেখানেও মাছে অভাব দেখা দিয়েছে। এজন্য কোস্টগার্ডের চোখ ফাঁকি দিয়ে বাংলাদেশে মৎস্য শিকারই এখন তাদের বড় লক্ষ্য। বে অব বেঙ্গলে ''সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ড'' এখনো প্রাকৃতিক সম্পদে ভরুপুর। বাংলাদেশ চাইলে ২ হাজার থেকে ৩ হাজার কোটি টাকার মৎস্য সম্পদ সমুদ্র থেকে পেতে পারে। কিন্তু নির্বিচারে সমুদ্র সীমায় মাছ ধরার ফল হতে পারে ভয়াবহ। তাই গভীর সাগরে মাছ ধরার পারমিট দেয়ার বেলায় বাংলাদেশকে আরো হিসেবি হতে হবে। একই সাথে সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ড নীল তিমি, শুশুক, ডলফিনের মত বিলুপ্তপ্রায় প্রাণীদের আবাসস্থল। সেসব স্থানকেও পরিপূর্ণ নিরাপত্তা দিতে হবে।

বিবৃতিতে আবদুর রহিম বলেন, ভূমিতে ১ লাখ ৪৭ হাজার ৫৭০ বর্গ কিলোমিটার স্থানে টহল এবং নিরাপত্তা দেয়ার জন্য সেনা, বিমান, পুলিশ, বিজিবি, ফায়ার সার্ভিস, আনসারসহ বিভিন্ন বাহিনী থাকলেও প্রায় ১ লাখ ১৮ হাজার ৮০০বর্গ কিলোমিটার এলাকায় নিরাপত্তার ভার নৌবাহিনী এবং কোস্টগার্ডের উপর ন্যস্ত। ২০০৯ থেকে আজ পর্যন্ত কোস্টগার্ড বিভিন্ন ক্লাসের নেভাল ভেসেল অপারেট করছে। কিন্তু এখনো এ বাহিনীটিকে দ্বিমাত্রিক বাহিনীতে রুপান্তরিত করা যায়নি। সাগরে টহল দেয়া দূরুহ এবং সময়সাপেক্ষ। যার দরুন কোস্টগার্ডের উপস্থিতি টের পেয়েই অনেক সময় ভারতীয় মাছ চোরেরা পালিয়ে যায়। এয়ার ক্যাপাবিলিটি এবং ড্রোন সিস্টেম হাতে থাকলে কোস্টগার্ডের জন্য সাগরে টহল আরো সুবিধাজনক হতো। যদিও কোস্ট গার্ডের জন্য হেলিকপ্টার, ড্রোন এবং মেরিটাইম এয়ারক্রাফট নেয়ার পরিকল্পনা আছে তবুও নৌবাহিনী এবং কোস্টগার্ডের আকাশে উপস্থিতি আরো বাড়ানো উচিত।

একই সাথে সমুদ্রে সেনাবাহিনীর ভূমিকা না থাকলেও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় মেরিটাইম স্ট্রাইকার এবং ড্রোন সিস্টেম বিমান বাহিনীর হাতে থাকা আবশ্যক।উল্লেখ্য ভারত এবং মিয়ানমার উভয় দেশই এখন বে অব বেঙ্গলে মেরিটাইম সুপিরিয়রিটি অর্জন করেছে কিংবা শীঘ্রই অর্জন করবে(বার্মা)..সে তুলনায় ৪ টি আপগ্রেডেড মিগ-২৯ ই বর্তমান ভরসা।

শুধুমাত্র জলজ সম্পদ দিয়েই বছরে ৩০০০ কোটি ডলারের সম্পদ পেতে পারে বাংলাদেশ। সেখানে তেল-গ্যাস আহরন করে বাংলাদেশ কি পরিমাণ সম্পদ পেতে পারে তা কল্পনা করাও কষ্টকর।

মৎস্যজীবী দলের বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশের বিজ্ঞানীরা এখনো সমুদ্রের গভীর অঞ্চলগুলো নিরলসভাবে সার্ভে করে যাচ্ছেন। এখন প্রয়োজন নিজের অঞ্চলে নিজের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় কোস্টগার্ড, নেভী এবং এয়ার ফোর্সকে প্রয়োজনীয় ফান্ডিং, বাজেট, জনবল এবং সরঞ্জাম দিয়ে সজ্জিত করা।

চোরদের জন্য প্রয়োজনে অস্ত্র তাক করা এবং দরকারে শ্যুট করা। যা অতীতেও বাংলাদেশ নেভি করেছে গর্বের সাথে। বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা শুধু বাংলাদেশেরই, আর কারো নয়। তাই এ সীমার রক্ষা অত্যন্ত জরুরী। মহীসোপানে ইতোমধ্যে ভারতের নজর পড়েছে। আন্তর্জাতিক আদালতে এর বিচার হবে এবং বাংলাদেশ তার ন্যায্য হিস্যাও আদায় করে নেবে।একই সাথে বাহিনীগুলোকে যুগোপযোগী করার কোন বিকল্প নেই।কেননা আমাদের ৬৫% বাণিজ্যই হয় সমুদ্রপথে,তাই ভবিষ্যতের যুদ্ধ হবে সাগরে,স্থলে না।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ