পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি-আন্দোলনের অংশ হিসেবে দলটির কালো পতাকা প্রদর্শনের মতো একেবারে নিরীহ কর্মসূচিও পুলিশ সহ্য করতে পারল না। গত শনিবার বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ এবং কয়েকশ’ নেতা-কর্মী পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে কালো পতাকা প্রদর্শনের কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করে। কর্মসূচিতে সমবেত হয়ে তারা বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবীতে শ্লোগান শুরু করলে পুলিশ তাদের লাঠিপেটা শুরু করে। এ সময় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ জ্যেষ্ঠ নেতাদের লক্ষ্য করে পুলিশ পানিকামান থেকে রঙিন পানি ছোড়ে। পুলিশের হামলা থেকে দুই সংবাদকর্মীও রেহাই পায়নি। তাদের মারধর এবং নাজেহাল করা হয়। ঘটনার পর বিএনপির পক্ষ থেকে দাবী করা হয়, দলীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে ১৫০ জনের বেশি নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং পুলিশের লাঠিপেটায় অন্তত ২৩০ জন নেতা-কর্মী আহত হয়েছে। আহতদের মধ্যে বেশ কয়েক জন কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ রয়েছেন। বেলা দেড়টার দিকে কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে বের হওয়া মাত্র সাদাপোশাকের পুলিশ বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলালকে টুটি চেপে ও গায়ের জামা টেনে সিএনজিতে তুলে নিয়ে যায়। পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, অনুমতি না থাকা এবং সড়ক দখলের অভিযোগে লাঠিপেটা ও পানিকামান ব্যবহার করে সমাবেশ ছত্রভঙ্গ করে দেয়া হয়। ঘটনার পর দলীয় কার্যালয়ে তাৎক্ষণিক সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বিএনপির শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে বিনা উস্কানিতে পুলিশ হামলা করেছে। অসংখ্য নেতাকর্মীকে আহত ও আটক করেছে। কার্যালয়ের ভেতরে ঢুকে নারী নেতাকর্মীদের টেনেহিঁচড়ে নিয়ে গেছে। সরকার উস্কানি দিয়ে পরিস্থিতি ঘোলাটে ও সংঘাতপূর্ণ করতে চাইছে।
বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবীতে দলটি ধারাবাহিকভাবে অহিংস ও শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করে আসছে। মানববন্ধন, প্রতিবাদ সমাবেশ, গণস্বাক্ষর কর্মসূচি, জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি পেশের মতো অত্যন্ত নরম কর্মসূচির মধ্যে সীমাবদ্ধ রেখেছে। এই ধারাবাহিকতায় গত ২২ ফেব্রæয়ারি সোহরাওয়ার্দি উদ্যানে বা নয়াপল্টনস্থ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করতে চেয়েছিল দলটি। পুলিশ সমাবেশের অনুমতি না দেয়ায়র প্রতিবাদে কালো পতাকা মিছিলের কর্মসূচি দিয়েছিল। পরবর্তীতে তা পরিবর্তন করে কালো পতাকা প্রদর্শনের কর্মসূচি ঘোষণা করে। এ কর্মসূচির মধ্যেই পুলিশ যেভাবে দলটির শীর্ষ নেতৃবৃন্দসহ নেতাকর্মীদের ওপর চড়াও হয়ে পানিকামান, লাঠিপেটা ও টিয়ারশেল ব্যবহার করে, তা অত্যন্ত দুঃখজনক ও নিন্দনীয়। অথচ খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবীতে ধারাবাহিক কর্মসূচির শুরুর দিকে পুলিশ যথেষ্ট সহনশীল আচরণ করে। বিএনপির শান্তিপূর্ণ ও অহিংস আন্দোলন যেমন সচেতন ও সাধারণ মানুষের কাছে প্রশংসনীয় হয়, তেমনি পুলিশের আচরণও প্রশংসা লাভ করে। হঠাৎ করে কেন পুলিশ বিএনপির কর্মসূচি পালনের ক্ষেত্রে আক্রমণাত্মক হয়ে উঠল তা বোধগম্য নয়। পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, বিএনপির এ ধরনের ধারাবাহিক শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি দলটির পক্ষে জনমত গঠনে ভূমিকা রাখছে, যা সরকার গ্রহণ করতে পারছে না। ইতোমধ্যে ক্ষমতাসীন দলের বিভিন্ন মন্ত্রী ও নেতার বিএনপির এ ধরনের কর্মসূচি এবং দলটির সাংগঠনিক দক্ষতা নিয়ে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যপূর্ণ মন্তব্য ও প্রশ্ন তুলতে দেখা গেছে। বিএনপি ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের এ ধরনের বক্তব্যকে উস্কানিমূলক হিসেবে ধরে নিয়ে ধৈর্যসহকারে তার ধারাবাহিক কর্মসূচি পালন করে চলেছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বিএনপির এ ধরনের কর্মসূচি ক্ষমতাসীন দলের কাছে অসহনীয় হয়ে উঠছে। এই অসহিষ্ণুতারই বহিঃপ্রকাশ ঘটছে বিএনপির শান্তিপূর্ণ কর্মসূচীতে পুলিশের বেপরোয়া আচরণের মাধ্যমে। অথচ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী গত শুক্রবার বলেছেন, বিএনপির শান্তিপূর্ণ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনে বাধা দেয়া হবে না। এ বক্তব্যের পরদিনই দলটির কালো পতাকা কর্মসূচিতে পুলিশকে অত্যন্ত মারমুখী ও অসহিষ্ণু হয়ে উঠতে দেখা গেল। অগ্রহণযোগ্য কারণ দেখিয়ে কর্মসূচিতে পুলিশের এ হামলা উস্কানিমূলক। এতে প্রতীয়মাণ হচ্ছে, বিএনপির প্রতি পুলিশ উস্কানি এবং দমনÑএ নীতি অবলম্বন করছে। এর আগে হবিগঞ্জে বিএনপির শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ কর্মসূচিতেও পুলিশ হামলা এবং গুলি চালায়। বিএনপির কালো পতাকা প্রদর্শন কর্মসূচি যে অজুহাত দেখিয়ে পুলিশ পÐ করে দিয়েছে, তার বিপরীতে রাস্তা দখল করে ক্ষমতাসীন দলের অঙ্গসংগঠনের মিছিল করে ব্যাপক শোডাউনের চিত্রও সাধারণ মানুষ দেখেছে। সেক্ষেত্রে পুলিশকে জনদুর্ভোগের কথা চিন্তা করে কোনোরূপ ব্যবস্থা নিতে দেখা যায় না। বরং মিছিলের সামনে পিছনে পুলিশের নিরাপত্তা বেষ্টনি থাকে। পুলিশের এই বিপরীতধর্মী আচরণ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। পুলিশ কোনো দলীয় বাহিনী নয়, রাষ্ট্রের বাহিনী, তাই তার কাছ থেকে সমআচরণই প্রত্যাশিত।
গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় প্রত্যেক রাজনৈতিক দলেরই শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালনের অধিকার রয়েছে। এ অধিকার সংবিধানই তাদের দিয়েছে। বর্তমান সরকার সংবিধানের প্রতি খুবই সংবেদনশীল এবং সাংবিধানিক অধিকার রক্ষায় বদ্ধপরিকর। এ প্রেক্ষিতে, বিরোধী রাজনৈতিক দলের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালনে সরকারের সহায়তা করা দায়িত্ব ও কর্তব্য। দুঃখজনক হলেও বলতে হচ্ছে, সরকার বিরোধী দলের এ ধরনের কর্মসূচির ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করছে, যা গণতান্ত্রিক আচরণের পরিপন্থী। ক্ষমতায় থাকলে রাষ্ট্রের বাহিনীকে সরকার তার ইচ্ছামাফিক ব্যবহার করতে পারে। তবে তা যৌক্তিক এবং গণতান্ত্রিক আচরণের মধ্যেই ব্যবহার করা শ্রেয়। তা নাহলে গণতান্ত্রিক পরিবেশ বিঘিœত হয়। বিএনপির শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে পুলিশকে যেভাবে মারমুখীভাবে ব্যবহার করা হয়েছে, তা সাধারণ মানুষের কাছে সরকারের প্রতিহিংসা বলে মনে হওয়া অস্বাভাবিক নয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে শুরু করে সর্বত্র এ নিয়ে সমালোচনার ঝড় বইছে। আগামী দিনগুলোতে যদি সরকারের এ মনোভাব অব্যাহত থাকে, তবে তা দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে খাদের কিনারে নিয়ে দাঁড় করাবে, যা মোটেই কাম্য হতে পারে না। আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক করার ক্ষেত্রে সরকারের এ আচরণ বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। কাজেই সরকারের উচিত হবে নির্বাচনকে অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক করতে বিরোধী রাজনৈতিক দলের যে কোনো শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালনের অধিকারকে নির্বাধ করা। নিপীড়ন, নির্যাতন, গ্রেফতার, হামলা-মামলার মতো নেতিবাচক পথ পরিহার করে সরকারকে ইতিবাচক নির্বাচনী পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।