Inqilab Logo

রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

মুখের রোগে অবহেলা নয়

| প্রকাশের সময় : ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

লালা দাঁত ও মাড়িকে ব্যাকটেরিয়া থেকে রক্ষা করে যার কারণে দন্তক্ষয় এবং মাড়ির প্রদাহ বা জিনজিভাইটিস হয়ে থাকে। তাই মাড়ি রোগের ক্ষেত্রে লক্ষ রাখতে হবে, আপনার লালার প্রবাহ স্বাভাবিক আছে কিনা? যদি আপনি গর্ভবতী হয়ে থাকেন এবং আপনার মাড়ি রোগ থাকে, তাহলে সে ক্ষেত্রে আপনার শিশু নির্দ্দিষ্ট সময়ের আগে জন্ম নিতে পারে এবং শুধু তাই নয়, ঐ শিশু আকার আকৃতিতে স্বাভাবিক এর চেয়ে ছোট হবে। গর্ভবতী মায়ের মাড়ি রোগে যথাযথ চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে নির্দ্দিষ্ট সময়ে। মাড়ি রোগের মাধ্যমে যদি ব্যাকটেরিয়া ‘ভিরিড্যানস্ স্ট্রেপটোকক্কাই’ রক্ত প্রবাহে সংক্রমিত হয় তাহলে হার্টের ভালব্ নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই মাড়ি রোগের ক্ষেত্রে কোনো অবহেলা করবেন না। যাদের মাড়ি রোগ নেই এবং মাড়ি সুস্থ তাদের চেয়ে সর্বসাধারণের মাঝে যাদের মাড়ি রোগ আছে তাদের হৃদরোগ হওয়ার সম্ভাবনা বেশী থাকে। হৃদরোগ ইতিমধ্যেই শীর্ষ ঘাতক ব্যাধি হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে যা মাড়ি রোগের সাথে সম্পৃক্ত। সম্প্রতি জরিপে দেখা গেছে মাড়ি রোগের ব্যাকটেরিয়া ইসোফেজিয়াল ক্যান্সার বা টিউমারের সাথে সম্পৃক্ত। শুষ্ক মুখ এবং জিহŸার কারণে লালার প্রবাহ কমে যায়, ফলে ঠিকভাবে খাদ্যদ্রব্য অপসারিত হয় না । তাই দাঁতে ক্ষয় হয়ে থাকে । স্ট্রেপটোকক্কাস মিউট্যানস্ এবং ল্যাকটোব্যাসিলাস ব্যাকটেরিয়া দাঁতের ক্ষয় করে থাকে। দাঁত শিরশির করলে আমরা ঠান্ডা খাবার খাই না। বিশেষ করে আইসক্রীম বা বরফ জাতীয় কিছু। বরফ কখনো চুষবেন না এবং কামড়াবেন না । বরফ চোষা বা কামড়ানো স্থায়ীভাবে দাঁতের ক্ষতি করতে পারে, দাঁতের এনামেলে ছোট ছোট ক্র্যাক বা ফাটল সৃষ্টির মাধ্যমে । এই ক্র্যাক বা ফাটল সময়ের সাথে সাথে বড় হয় এবং সবশেষে পুরো দাঁতটিতে ফ্র্যাক্চার বা ফাটল সৃষ্টি হয়। আপনার জিহŸার রঙ কমলার রঙের মত হতে পারে যদি ঠিকভাবে মুখ ও জিহŸার যতœ না নেয়া হয়। যেমন জিহŸা যদি নিয়মিত ব্রাশ বা পরিস্কার করা না হয়। ভিটামিন ‘বি’ এবং ফলিক এসিডের অভাবে জিহŸা লাল অথবা কমলা রঙ হতে পারে । অধিকাংশ সময় হারপিস সিমপ্লেক্স ভাইরাস অকার্যকর অবস্থায় অর্থাৎ সুপ্ত অবস্থায় নার্ভ সেলে থাকে । তাই এ ভাইরাসের সংক্রমণের ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। হাইপার থাইরয়ডিজমের ক্ষেত্রে রোগীরা মুখে জ¦ালাপোড়া এবং অস্বস্তির কথা বলে থাকেন বিশেষ করে জিহŸার উপর এবং গালের অভ্যন্তর ভাগে । চিকিৎসা না হলে মুখের জ্বালাপোড়া এবং অস্বস্তিভাব একটি লম্বা সময় ব্যাপী থাকতে পারে । আবার সাইকোসোমাটিক ব্যাথাও মুখে একটি লম্বা সময় ধরে থাকতে পারে । উভয় ক্ষেত্রেই রোগী রাতের বেলা ঠিকভাবে ঘুমাতে পারে না। রোগী কখনো কখনো অস্থিরতা ও মানসিক চাপে ভুগে থাকেন। রোগীদের উচিৎ মুখস্থ ঔষধ সেবন না করে চিকিৎসের নিকট সবকিছু খুলে বলা। তবেই একটি সমাধান বের হয়ে আসবে। ব্যাথানাশক ঔষধ যখন সেবন করবেন বিশেষ করে এন.এস.এ.আই.ডি গোত্রভুক্ত ঔষধ সেক্ষেত্রে আপনার এলকোহল সেবনের অভ্যাস থাকলে অবশ্যই এলকোহল সেবন করবেন না। আর এলকোহল সেবন বন্ধ করতে না পারলে আপনার অভ্যাসের কথা ডাক্তারকে খুলে বলুন। এক্ষেত্রে আপনি বিকল্প ব্যাথানাশক ঔষধ সেবন করবেন। কারণ এন.এস.এ.আই.ডি গোত্রভুক্ত ঔষধ সেবন করলে এবং পাশাপাশি এলকোহল পান করলে পাকস্থলিতে রক্তপাত হতে পারে । প্রায় চারশ‘র উপরে ঔষধ শুষ্ক মুখ সৃষ্টি করতে পারে । এর মধ্যে এন্টিহিসটামিন, ডিকনজেসটেন্টস, ব্যাথানাশক ঔষধ এবং বিষন্নতানাশক ঔষধ উল্লেখযোগ্য যা শুস্ক মুখের সৃষ্টি করে থাকে । আপনার টুথব্রাশ এমন কোনো জায়গায় রাখবেন না যেখানে বাথরুমে ফ্লাশ করা হয়, তা যত দামী বাথরুমই হোক না কেন । আপনার টুথব্রাশ অবশ্যই জীবাণুমুক্ত রাখতে হবে। বাথরুমের যেখানে ফ্লাশ করা হয় তার খুব কাছাকাছি যদি আপনার বেসিন হয়ে থাকে তবে সে বেসিনের উপর টুথব্রাশ না রাখাই ভাল । থাইরয়েড গ্রন্থির অচলাবস্থার জন্য আপনার পেরিওডন্টাল অবস্থার অবনতি ঘটবে। আপনার পেরিওডন্টাল স্বাস্থ্য খারাপ হলে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমনের মাধ্যমে আপনার হৃৎযন্ত্র আক্রান্ত হতে পারে । তাই মুখের রোগে কোন অবহেলা করবেন না। মুখস্থ কোনো চিকিৎসা গ্রহণ করবেন না। মুখের কোন রোগ সহজে ভাল না হলে আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করুন এবং সুস্থ থাকুন।

ষ ডাঃ মোঃ ফারুক হোসেন
মুখ ও দন্তরোগ বিশেষজ্ঞ
মোবাইল: ০১৮১৭-৫২১৮৯৭



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মুখ


আরও
আরও পড়ুন