বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
দেশি বিদেশি মুসল্লিদের আগমনে আমিন আমিন ধ্বনিতে টঙ্গীর তুরাগ তীর মুখরিত হয়ে উঠেছে। দেশবাসীর নজর এখন টঙ্গির তুরাগ তীরের দিকে।
শুক্রবার আনুষ্ঠানিকভাবে বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব শুরু হওয়ার কথা থাকলেও বৃহস্পতিবার বাদ ফজর বিশ^ইজতেমায় আগত মুসুল্লীদের জন্য প্রাথমিক আ’ম বয়ান শুরু হয়েছে।
মুসলমানদের দ্বিতীয় বৃহত্তম এ সমাবেশের মূল কার্যক্রম শুরু হবে শুক্রবার বাদ ফজরের বয়ানের মধ্য দিয়ে । আর রোববার আখেরি মোনাজের আগ পর্যন্ত চলবে তাবলীগের ৬ উসুলের এ বয়ান। বাংলাদেশ ভারত ও পাকিস্তানের বিশিষ্ট আলেমগণ মূল বয়ান করবেন। মূল বয়ান বাংলাসহ বিভিন্ন ভাষা-ভাষীদের জন্য তাৎক্ষণিক তরজমা করা হয়।
ইজতেমার আয়োজক কমিটির সদস্য প্রকৌশলী মো. মাহফুজ জানান, বিশ্ব ইজতেমার মূল পর্ব শুক্রবার থেকে শুরু হওয়ার কথা থাকলেও বুধবার থেকেই দলে দলে তাবলীগ মুসল্লীরা ইজতেমা ময়দানে এসে অবস্থান নিয়েছেন। মুসল্লীর দল মাঠের ভেতরে ঢুকে নিজ নিজ জেলার খিত্তায় অবস্থান নিতে শুরু করেছেন। লাখ লাখ মুসল্লীর উপস্থিতিতে ইজতেমা ময়দান প্রায় পূর্ণ হয়ে গেছে। বাস, ট্রাক, ট্রেন পায়ে হেঁটে টুপী-পাঞ্জাবী পরিহিত মুসল্লীরা টঙ্গীর ইজতেমা ময়দানে আসছেন। রোববার আখেরি মোনাজাতের আগ পর্যন্ত মুসুল্লীদের এ আগমন অব্যাহত থাকবে।
বৃহত্তম জু’মার নামাজ- বিশ^ইজতেমার প্রথম দিন শুক্রবার দেশের বৃহত্তম জু’মার নামাজ অনুষ্ঠিত হবে। দুপুর দেড়টার দিকে কাকরাইলের মুরুব্বী মাওলানা জোবায়ের এ জু’মার নামাজে ইমামতি করবেন। বৃহত্তম জু’মার এ নামাজে অংশ নিতে প্রতি ইজতেমায় তাবলীগের মুসুল্লী ছাড়াও গাজীপুর ও আশে-পাশের জেলা থেকে বৃহস্পতিবার রাতেই ইজতমা ময়দানে অবস্থান নিতে থাকেন। শুক্রবার জু’মার নামাজ শুরুর আগ পর্যন্ত এ নামাজে অংশ নিতে আসতে থাকেন। ১৬০ একরের পুরো ইজতেমা ময়দান ছাঁপিয়ে কামারপাড়া, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কসহ আশে-পাশের অলি-গলিতেও কাতারবদ্ধ হয় জু’মার নামাজে অংশ নিতে।
ময়দানের পশ্চিমে তুরাগ নদীর পূর্ব পাশে নামাজের মিম্বর এবং উত্তর-পশ্চিম পাশে বিদেশী মুসুল্লীদের কামড়ার পাশে বয়ান মঞ্চ নির্মান করা হয়েছে। নামাজের মিম্বর থেকে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের ইমাম এবং বয়ানের মঞ্চে বয়ানকারী অবস্থান করেন। বয়ান মঞ্চ থেকে আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করা হবে।
করোনার কারণে গত দুবছর ইজতেমা অনুষ্ঠিত না হওয়ায় এবার তাবলীগের এ মহাসম্মেলনে যোগ দিতে আগেভাগেই এবার মুসল্লীর মাঠে এসে উপস্থিত হচ্ছেন। ময়দানে আসা মুসুল্লীদের জমিয়ে রাখতে বৃহস্পতিবার বাদ ফজর থেকে শুরু হয় আ’ম বয়ান। ঈমান-আমলের এ বয়ান শুনতে ইজতেমা ময়দানের মুসুল্লীরা মশগুল রয়েছেন।
বিশ^ইজতেমার আয়োজক কমিটির সদস্য প্রকৌশলী আব্দুন নূর জানান, দেশী-বিদেশী মুসুল্লীরা আসতে শুরু করেছেন। ইতোমধ্যে পুরো ময়দান পূর্ণ হয়ে গেছে। শুক্রবার থেকে মূল পর্ব শুরু হলেও বৃহস্পতিবার বাদ ফজর থেকে শুরু হয় আম বয়ান।
প্রায় ১ বর্গ কিলোমিটারের বিশাল মাঠটিকে বাঁশের খুঁটির উপর চটের ছাউনির প্যান্ডেলে মুসুল্লীদের বয়ান শোনার জন্য লাগানো হয়েছে বিশেষ ছাতা মাইক। লাগানো হয়েছে পর্যাপ্ত বৈদ্যুতিক বাতি। দেশীয় তাবলীগের মুসুল্লীদের জন্য জেলাওয়ারী আলাদা ৯১ ভাগে (খিত্তায়) ভাগ করা হয়েছে। শীত উপেক্ষা করে মঙ্গলবার রাত থেকেই দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে মুসুল্লীরা ইজতেমা ময়দানে নির্ধারিত খিত্তায় এসে অবস্থান নিচ্ছেন। বুধবার সন্ধ্যার আগেই প্রায় পুরো ময়দান পূর্ণ হয়ে গেছে। টুপী-পাঞ্জাবী পড়া মুসুল্লীরা বাস-ট্রাক, নৌকা, ব্যক্তিগত গাড়িসহ বিভিন্ন যানবাহনে করে এখনও মুসুল্লীরা ইজতেমা ময়দানে আসছেন। করোনার কারণে দীর্ঘ দুই বছর ইজতেমা বন্ধ থাকার পর এবার সুন্দর পরিবেশে ইজতেমা অনুষ্ঠিত হচ্ছে বলে বিপুল উৎসাহ নিয়ে মুসুল্লীরা ইজতেমাস্থলে আসছেন।
টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমায় বিদেশি মুসুল্লী যারা আসেন তাদেরকে এয়ারপোর্টে ইজতেমা আয়োজকরা রিসিভ করে থাকেন। বিদেশি মুসুল্লীরা যাতে স্বাচ্ছন্দে ইজতেমায় আসতে পারেন সেজন্য ইমিগ্রেশন থেকে বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হয়ে হয়েছে।
বিদেশি তাবলীগ অনুসারী মুসল্লীদের জন্য মাঠের উত্তর-পশ্চিম কোণে আধুনিক সুবিধা সম্বলিত আলাদা থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। পুরো ময়দান এলাকায় থাকছে গাজীপুর জেলা প্রশাসন, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন, পুলিশ, র্যাবের কন্ট্রোল রুম। আরব, ইউরোপসহ কয়েকটি দেশের মুসুল্লীরাও ইতোমধ্যে ইজতেমা মাঠের বিদেশী মেহমানদের প্যান্ডেলে অবস্থান নিয়েছেন।
জেলা প্রশাসক আনিসুর রহমান জানান, গাজীপুর জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রট টিম অনিয়মের বিচারে থাকবে পুরো টঙ্গী জুড়ে। ইজতেমা ময়দান ও আশেপাশের এলাকালায় বিশুদ্ধ খাবার সরবরাহ নিশ্চিত করতে এবং ছিনতাই-পকেটমারসহ নানা অপরাধ কার্যকলাপ রুখতে টহল টিম ও মোবাইল কোর্ট কাজ করবে, থাকবে পর্যাপ্ত ওয়াচ টাওয়ার ও সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ। প্রতিদিন কয়েকভাগে ভাগ হয়ে মোবাইল কোর্ট পরিচালিত হবে।
যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মো. জাহিদ আহসান রাসেল বলেন, প্রতিবার বিশ^ইজতেমায় তুরাগতীরে বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দেয়। তাই এবার আরো দুইটি নলকুপ স্থাপন করা হয়েছে। বুধবার ইজতেমাস্থল পরিদর্শন করে তিনি জানান, আধুনিক পয়ো:নিষ্কাশন ব্যবস্থা ছাড়াও মুসুল্লীদের চিকিৎসা সেবা দিতে শহীদ আহসান উল্লাহ জেনারেল হাসপাতালে ১৮টি আধুনিক বেড উপহার দেন তিনি।
শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালের তত্বাবধায়ক মো. জাহাঙ্গীর আলম জানান, স্বাস্থ্য বিভাগের সেবা কার্যক্রম প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন হয়েছে। মুসুল্লীদের বিনামূল্যে স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করণে স্বাস্থ্য বিভাগ ৫টি ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে। এখান থেকে ২৪ঘন্টা মুসুল্লীদের বিনামূল্যে ওষুধ ও চিকিৎসাসেবা প্রদান করা হবে। এসব ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প ছাড়াও টঙ্গী হাসপাতালে ডায়রিয়া, অ্যাজমা. ট্রমা, বক্ষব্যাধি, ডায়রিয়া, ডেঙ্গু, নাক-কান-গলা,চক্ষু ও বার্ণ ইউনিটের কার্যক্রম চলবে। এজন্য পর্যাপ্ত কেবিন ও বেড বাড়ানো হয়েছে। ইজতেমা উপলক্ষে টঙ্গীর এ হাসপাতালে ৭টি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দল মোতায়েন থাকবে। এছাড়া বেসরকারি উদ্যোগে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংগঠণের তরফ থেকেও মেডিকেল ক্যাম্প বিন্যামূল্যে চিকিৎসা দেবে। চিকিৎসা বিভাগ ছাড়াও বিদ্যুৎ, ফায়ার সার্ভিস সার্বক্ষণিক সেবাদান অব্যাহত রাখবে। ইজতেমা উপলক্ষে বিশেষ ট্রেন ও বিআরটিসির স্পেশাল বাস চলাচল করবে।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী আলমগীর মিয়া জানান, ৩১ টি টয়লেট বিল্ডিংয়ে এক সঙ্গে ৯ হাজার মুসল্লী তাঁদের প্রস্রাব-পায়খানার কাজ সম্পন্ন করতে পারবেন। বিআরটিসি এবং বাংলাদেশ রেলওয়ে ইজতেমার মুসল্লীদের আনা নেয়ায় বিশেষ বাস ট্রেন সার্ভিসের ব্যবস্থা নিয়েছে। ইজতেমা ময়দানের পশ্চিম পাশে তুরাগ নদীর উপর বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ৫টি ভাসমান সেতু নির্মাণ করেছে মুসল্লীদের এপারওপার হওয়ার জন্য।
গাজীপুর মহানগর পুলিশের কমিশনার মোল্যা নজরুল ইসলাম জানিয়েছেন, ইজতেমা ময়দান ও আপফাশের এলাকায় সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। দুই পর্বে পোশাকে, সাদা পোশাকে পুলিশসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলার দায়িত্বে থাকবেন ১০ সহস্রাধিক সদস্য। গাজীপুর মেট্টোপলিটন পুুলিশ বিভাগ ১৪টি কন্ট্রোলরুম তৈরি করেছে। র্যাবের কন্ট্রোল রুম থাকবে, ডিএমপি তার এলাকায় কন্ট্রোল রুম খুলেছে, ওয়াচ টাওয়ার, রুটটফ ডিউটিসহ সিআইডি, নৌপুলিশ, অবজারভারভেশন টিম থাকবে, র্যাবের হেলিকপ্টার টহল থাকবে। ডগ স্কোয়াড টিম, মোবাইল পেট্টোল টিম, বোম ডিস্পোজাল টিম থাকবে। ১০হাজারেরও বেশি পুলিশ আনসার,র্ ্যাব সদস্য পোষাক এবং সাদা পোষাকে ইজতেমার ভেতর বাহিরসহ টঙ্গী উত্তররার পুরো এলাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে অবস্থান করবেন।
ইজতেমার দুইপর্বেই বিভিন্ন অঞ্চল থেকে মুসুল্লীদের নিয়ে আসা গাড়ির নির্ধারিত পার্কিং ও মোনাজাতের আগের দিন শনিবার রাত থেকে মোনাজাতের দিন পর্যন্ত বিশেষ ট্রাফিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
তুরাগতীরে টঙ্গী ইজতেমা ময়দানে শুক্রবার থেকে প্রথম পর্বের বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হচ্ছে১৩, ১৪ ও ১৫ জানুয়ারি । ৪ দিন বিরতি দিয়ে আবার ২০, ২১ ও ২২ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে দ্বিতীয় পর্বের বিশ্ব ইজতেমা। প্রথম পর্বের নেতৃত্ব দিচ্ছেন আলেমওলেমা গ্রুপের যোবায়ের পন্থী অনুসারীরা। দ্বিতীয় পর্বের নেতৃত্বে থাকছেন, আদি তাবলীগ জামাতের নয়া দিল্লির মুরুব্বি মাওলানা সাদ পন্থী গ্রুপের অনুসারী মুসল্লীগন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।