পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
বিগত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্যতা না পাওয়ায় একটি মধ্যবর্তী নির্বাচনের সম্ভাবনা ছিল। তারচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, নির্বাচন মধ্যবর্তী হোক আর মেয়াদশেষেই হোক, নির্বাচনের আগে প্রধান রাজনৈতিকদলগুলোর মধ্যে একটি জাতীয় সংলাপ ও সমঝোতা সৃষ্টির মধ্য দিয়ে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টির প্রতিই ছিল সরকারের বাইরে সংশ্লিষ্ট সকলের তাগিদ। বলাবাহুল্য, দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল, নাগরিক সমাজ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পুন:পুন: আহŸান উপেক্ষা করে ক্ষমতাসীনরা সংবিধানের দোহাই দিয়ে নিজেদের অধীনেই জাতীয় নির্বাচনের কথা বলে আসছে। শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রীর পদে এবং সংসদ বহাল রেখে বিএনপি নির্বাচনে যাবেনা এমন ঘোষনার পরেও সরকার একদিকে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের কথা বলছে, অন্যদিকে নির্বাচনকালীন সরকার প্রশ্নে বিএনপির সাথে আলোচনায় না বসা বা ছাড় না দেয়ার ঘোষনায়ও অনড় ভ’মিকায় রয়েছে। এতকিছুর পরও দেশে সবেমাত্র একটি নির্বাচনী আবহ তৈরী হতে শুরু করেছিল। নির্বাচনকালীন সরকার পশ্নে দাবীদাওয়া ও শর্ত আরোপ করলেও বিএনপি’র পক্ষ থেকে নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণা অনেক আগেই দেয়া হয়েছে। একে নি:সন্দেহে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য একটি আশাব্যঞ্জক অবস্থান বলা যায়। কিন্তু নির্বাচনের বছরে এসে বিএনপি নেত্রীর মামলা নিয়ে যে জটিল রাজনৈতিক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে তা থেকে অনুমান করা যায় আগামী নির্বাচনেও বিএনপি অংশগ্রহণ এক ধরণের দোলাচলের মধ্যে রয়েছে।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার কারাদন্ড ঘোষিত হওয়ার পর স্বাভাবিকভাবেই দেশে একটি অস্থিতিশীলতা, উত্তাল-উত্তুঙ্গ পরিস্থিতি তৈরী হওয়া অস্বাভাবিক ছিলনা। তবে বিএনপি নেত্রী তার রায় ঘোষণার আগেই দলীয় নেতা-কর্মীদেরকে শান্তিপূর্ণ ও সুশৃঙ্খলভাবে আন্দোলন কর্মসূচি পালনের নির্দেশ দিয়েছেন। সেই সাথে অনুপ্রবেশকারিরা যাতে দলের অভ্যন্তরে নাশকতা ও অর্ন্তকোন্দলের সৃষ্টি করতে না পারে সেদিকেও সর্তক থাকার পরামর্শ দিয়েছিলেন। খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার পর থেকেই তার মুক্তির দাবীতে বিএনপি নেতাকর্মীরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করে যাচ্ছে। মানব বন্ধন, অবস্থান ও অনশনের মত শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে স্বত:স্ফুর্তভাবে নেতাকর্মীদের অংশগ্রহণের যে দৃশ্য দেখা যাচ্ছে তাতে বিএনপি সমর্থকদের মধ্যে নতুন উদ্দীপনার সঞ্চার করছে। ফেব্রæয়ারীর ৮ তারিখ খালেদা জিয়ার রায় ঘোষণা ও কারাগারে যাওয়ার কয়েকদিন আগে থেকেই আইনশৃঙখলা বাহিনীর নিñিদ্র নিরাপত্তা, যানবাহন বন্ধ রেখে সারাদেশ থেকে রাজধানীকে কার্যত বিচ্ছিন্ন করে ফেলা এবং বিএনপি নেতাকর্মীদের ব্যাপক ধরপাকড়ের মধ্যেও আদালতে যাওয়ার পথে বিপুল নেতাকর্মীর উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মত। শান্তিপূর্ণভাবে তারা কর্মসূচি পালন করে। তবে বিএনপি নেত্রী জেলে যাওয়ার পর থেকে বিএনপির ধারাবাহিক শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে পুলিশ বাধা দেয়নি, এটা নি:সন্দেহে একটি ইতিবাচক দিক।
বিএনপি নেত্রীর মামলার আইনগত ও রাজনৈতিক বিবেচনা যাই থাক, দেশের মানুষ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক জাতীয় নির্বাচনের দিকে। দেশে একটি স্থিতিশীল, ভারসাম্যপূর্ণ ও গণতান্ত্রিক নির্বাচনী পরিবেশ সৃষ্টির লক্ষ্যেই রাজনৈতিক সমঝোতা ও স্বাভাবিক আইনগত প্রক্রিয়ায় বিএনপি নেত্রীর কারামুক্তি ও নির্বাচনে অংশগ্রহণ জরুরী। মূলত এক-এগারোর সেনাসমর্থিত সরকারের সময় থেকেই বিনিয়োগসহ অর্থনীতিতে যে মন্দাভাব দেখা দিয়েছিল ২০১৪ সালের ৫ ফেব্রæয়ারীর ভোটারবিহীন নির্বাচনের পর থেকে তা আরো প্রকট আকার ধারণ করে। দেশের অর্থনীতি ইতিবাচক অবস্থানে নেই। আগামীতে একটি বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন করতে ব্যর্থ হলে তা আরও প্রকট আকার ধারণ করতে পারে। খালেদা জিয়ার রায়সহ দেশের সামগ্রিক অবস্থার উপর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নিবিড় পর্যবেক্ষণ রয়েছে। ইতিমধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তরফ থেকে তা জানানো হয়েছে। বিএনপি যেমন নিজেদের অবস্থান ও সরকারের ভ‚মিকা সম্পর্কে ক‚টনীতিকদের অবহিত করছে, একইভাবে সরকারও এ বিষয়ে ক‚টনৈতিক তৎপরতা চালাচ্ছে। বিএনপি’র শান্তিপূর্ণ আন্দোলন কর্মসূচি পালন এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিবর্তিত ইতিবাচক ভ‚মিকা দেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যত নিয়ে একটি নতুন আশার সঞ্চার করছে। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন, আইনের শাসন ও মানবাধিকার নিশ্চিত করার মত বিষয়গুলো কোন গণতান্ত্রিক সমাজে উপেক্ষণীয় নয়। বাংলাদেশে এসব ক্ষেত্রে লক্ষ্য অর্জনের জন্য প্রায় ৯ কোটি ডলারের আর্থিক ফান্ড ঘোষণা করেছে মার্কিন প্রশাসন। ইউরোপীয় ইউনিয়নের পক্ষ থেকেও বাংলাদেশে একটি রাজনৈতিক সমঝোতা ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের তাগিদ দেয়া হচ্ছে। এ থেকেই বোঝা যায়, খালেদা জিয়ার বিচারিক আদালত থেকে শুরু করে বাংলাদেশে চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও আগামী নির্বাচন নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের বিশেষ আগ্রহ ও পর্যবেক্ষণ রয়েছে। এই মুহুর্তে বিএনপি যেমন সংঘাতের পথ এড়িয়ে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের কর্মসূচি পালন করে চলেছে, পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহনশীল আচরণের মধ্য দিয়ে গণতান্ত্রিক ও সহাবস্থানমূলক পরিবেশ তৈরী হতে পারে। বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের উপযুক্ত পরিবেশ, জননিরাপত্তা, মানবাধিকার, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, আইনের শাসন নিশ্চিত করার মাধ্যমেই দেশে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং অর্থনৈতিক লক্ষ্য অর্জন নিশ্চিত করতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।